Contest: Write a Short Story Taken From Your Life || My Story ||The nightmare of the golden past ||

in Steem Bangladesh3 years ago

আসসালামু আলাইকুম!!

পৃথিবীর এই ক্লান্তি লগ্নে আশা করছি সবাই ভালো আছেন।৷ আজ আমি আমার জীবনের এক বিশেষ গল্প শোনাবো আপনাদের। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।

ধন্যবাদ @Steem-Bangladesh কে, আমাকে গল্প বলার সুযোগ করে দেওয়া জন্য।



সোনালী অতীতের দুঃস্বপ্ন!!

SAVE_20210509_035706.jpg
Image Source :

কালবৈশাখী ঝড় কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা কেউই অনুভব করতে পারবে না, যদি না আপনি তার মুখোমুখি হন। আজ আমি তেমনি এক বাস্তব অভিজ্ঞতার গল্প শোনাবো।

এটি আমার ছোট বেলার বাস্তব সত্য গল্প। আমি তখন গ্রামে আমার ফ্যামিলির সাথে থাকতাম। সাল ১৯৯৮। আমাদের নতুন বাড়ি করা হয়েছে একটা খালি মাঠের পাশে। এখনো বাড়ির সব কাজ সম্পূর্ণ রূপে সম্পন্ন হয়নি,এরি মাঝে আমাদের বসবাস শুরু হয়ে গিয়েছে। ভালোই যাচ্ছিলো আমাদের সময়। হঠাৎ আমাদের সুখের সংসার ভেঙে চুরমার হয়ে যায় কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুর। হঠাৎ আকাশের কোনে একটুকরো মেঘের দেখা তার কিছুক্ষণ পরেই বিষাদময় কালবৈশাখী ঝড় শুরু।

আমি তখন বাড়ি থেকে অনেক দূরে মাঠে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলাম আমার কাজিনদের সাথে। হটাৎ করে ঝড় শুরু হওয়ায় আমি বাড়ি ফিরে আসার জন্য ছুটে আসি কিন্তু তার আগেই ঝড় শুরু হয়ে যায়। বাতাসের বেগ এতো বেশি থাকে যে খালি মাঠে আমাকে যেনো উড়িয়ে নিয়ে যাবে এমন অবস্থা। বহুকষ্টে আমি বাড়ি ফিরে আসি। বাড়ি ফিরে এসে যা দেখলাম যা কখনোই কারো পক্ষে কাম্য নয়। আমাদের ঘরের ভেতর থেকে আমি দেখতে পাচ্ছি আমাদের গোয়াল ঘরের ছাউনি যা টিন দিয়ে করা ছিলো, সেই ছাউনি বাতাসে পাতার মতো উড়ে যাচ্ছে। আমাদের বাড়ির পাশের নারিকেল গাছ গুলো যেন ঝড়ের কাছে হার মেনে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। আর কিছু সময়ের মধ্যেই আমাদের রান্না ঘর ও গোয়াল ঘর ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। যা দেখে আমরা খুবি ভয় পাই, আমি এবং আমরা ছোট ভাই-বোন জোরে চিৎকার করে কান্না করতে থাকি আর আব্বু-আম্মুদের শিখিয়ে দেওয়া দোয়া "লা ইলাহা ইল্লা আংন্তা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতুম মিনাজ জ্বালিমিন।" পড়তে থাকি, ঝড়ের তান্ডব থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য।

আমাদের ঘরে সেই ভয়াবহ দুঃসময়ে ছিলেন, আমার আব্বু, আম্মু, দাদা-দাদী, একজন কাকা, আমার ছোট বোন এবং আমি। তখন আমাদের থাকার ঘর ছিলো কাঁচা এবং টিন-কাঠ দিয়ে তৈরি করা।

ঝড় ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতোটাই বৃদ্ধি পায় যে, হঠাৎ করে আমাদের থাকার ঘর উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে ভেঙে পড়তে শুরু করে। যা দেখে আমাদের কান্না আর ভয়ে আমরা সবাই প্রায় ভীতসন্ত্রস্ত। এই সব দেখে আমার আব্বু এবং কাকা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন যে আমরা যতদ্রুত সম্ভব আমাদের ঘর থেকে বের হয়ে যাবো এবং আমার অসুস্থ দাদাকে আমাদের পাকা বাথরুমে কিছু সময়ে জন্য রেখে দিবো। কারণ তখন ওটাই একমাত্র নিরাপদ। সেই অনুযায়ী আমরা খুব দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যাই। এবং একজন আরেক জনকে খুব শক্ত করে ধরে রাখি যাতে বাতাসে দূরে চলে না যাই।

আমরা বহু কষ্টে আমাদের ঘরের পাশে একটা খালি মাঠে গিয়ে দাঁড়াই। আর তখন অনুভব করি আমাদের শরীরের ভেতর যেন বৃষ্টির ফোটা গুলো সুঁইয়ের মতো ঢুকে যাচ্ছে। আর মূহুর্তের মধ্যে দেখতে পাই আমাদের ঘর ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বাতাসে উড়ে বেড়েছে আমাদের সব স্বপ্ন। আমাদের আগামীর গচ্ছিত সব সম্পদ। ঝড়ে আমরা এতোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি যে আমাদের আসবাবপত্র, জামাকাপড়, আমাদের বই-খাতা আমাদের ঘরের টিন ঝড়ের জোরো হাওয়া কোথায় নিয়ে ফেলেছে, যার অনেক কিছুই আমরা আর খুজে পাই নি।

তারো কিছু সময় পরে আস্তে আস্তে ঝড় থেমে যায়। আমরা ফিরে আসি আমাদের বড় যত্নে সাজানো ঘরে, যা কালবৈশাখীর তান্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিনত হয়ে যায়। যে খানে দাঁড়িয়ে আমরা শুধু আমাদের হাহাকার টাই শুনতে পাই।

তবে সব কিছুর মাঝেও উপর ওয়ালার নিকট অশেষ শুকরিয়া যে, এমন প্রলয়ঙ্কারী ঝড়ে আমাদের সব কিছু কেড়ে নিলেও আমারা সবাই ছিলাম অক্ষত, কিছু হাল্কা আঘাত ছাড়া।

প্রলয়ঙ্কারী কালবৈশাখী ঝড় যেমন আমাদের সাজানো সব কিছু কাড়ে নিয়েছে ঠিক তেমনি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে আমাদের সকলের মনে, যা আজো আমরা দুঃস্বপ্ন এর মতো উপলব্ধি করি। আসলে কি ভীষণ খারাপ মূহুর্তের মুখোমুখি আমরা হয়েছি তা কখনো বলে বুঝানো যাবে না এটা, যদি না কেউ এর মুখোমুখি হয়।

কালবৈশাখী ঝড় আমাদের সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিলেও কিছু বিষয় আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে। যেমন দুঃসময়ে সাহস হারাতে নেই, বিপর্যয়ের মুহূর্ত তাৎক্ষণিক যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়, যা বাঁচিয়ে দেয় অনেক মূল্যবান প্রাণ, দুর্ঘটনাকে মেনে নিয়ে নিজেদের যা সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে নতুন করে শুরু করা। যা আমাদের বিভীষিকাময় অতীত ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।

সমাপ্ত

image.png

সবাই ভালো থাকবেন!!
সাবধানে থাকবেন!!
সুস্থ থাকবেন!!
শুভকামনা রইলো সবার জন্য!!

115.png

Sort:  
 3 years ago 

জীবনের কিছু কিছু গল্প সত্যিই কষ্টকর। তবুও জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে 💕
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য 💞
#bdcomment

ধন্যবাদ আপনাকে।।

 3 years ago 

অসাধারণ লিখেছেন। আসলেই প্রতি বছর কালবৈশাখী/ঘুর্ণিঝড়ে অনেক মানুষ তাদের গড়ে তোলা বাসযোগ্য জায়গা হারায়।

থ্যাঙ্কিউ সো মাস ভাইয়া, আপনার কমপ্লিমেন্ট এর জন্য।

হ্যাঁ ভাইয়া। কালবৈশাখী/ঘুর্ণিঝড় কখনো কখনো ভয়ংকর রূপে হানা দেয়। যার ভুক্তভোগী এক সময় আমরা হয়েছি।

 3 years ago 

Eta kokhonkar kahini?

১৯৯৮ সালের।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65733.39
ETH 3506.40
USDT 1.00
SBD 2.51