আমার জীবনের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা

আমার জীবনের সেরা তিক্ত অভিজ্ঞতার

▪স্কুল জীবনঃ

স্কুল জীবন আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই স্কুল জীবনে তৈরি হয়, জীবনের নানা মধুর এবং তিক্ত অভিজ্ঞতার।
জীবনের একটা সময়ে এসে, যখন হঠাৎ মাঝে মধ্যে স্কুল জীবনের কোন বন্ধুর সাথে দেখা হয়। তখন আবার আমরা ফিরে যাই স্কুল জীবনের ঐ দিনগুলোতে...
আর ভালই লাগে, সেই সকল স্মৃতি নিয়ে আবার আলোচনা করতে, আবার তর্কে জড়াতে।
স্কুল জীবন অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতার অনুভূতি আজও মনকে নাড়া দেয়।

আমার স্কুল জীবনের সম্পূর্ণটা কেটেছে গ্রামে। আমার গ্রামের নাম শ্যামগ্রাম। আমার বাবা ছিলেন কৃষক এবং তখন আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভাল ছিল না। যাইহোক আমাদের সময় গ্রামের স্কুলের শিক্ষকরা যেমন ছাত্রদের ভালোবাসতেন তেমনি খুব শাস্তিও দিতেন।

20221006_142319.jpg

তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতিঃ

এবার আসা যাক আসল ঘটনায়। আমি সবসময় সাধারণ মানের ছাত্র ছিলাম। আর স্কুলে গেলে প্রায়ই
পড়া দিতে না পারা অথবা হোমওয়ার্ক না করার জন্য শাস্তি পেতে হত। আর এই ভয়ে বেশিরভাগ সময় স্কুলে যেতাম না।

সময় ২০০৫ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর, সেইদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আজও মনে পড়ে আর হাসি পায়। আমি তখন অষ্টম শ্রেনীতে পড়ি, সেইদিন ক্লাসের তৃতীয় ঘন্টা ছিল গণিত ক্লাস। বরাবরের মত, আমি সেদিনও হোমওয়ার্ক করিনি। (যদিও অন্য ক্লাসের হোমওয়ার্ক করতাম না কিন্তু গণিতের হোমওয়ার্ক অবশ্যই করতাম) কারণ আমাদের গণিতের শিক্ষক ছিলেন খুব কড়া স্বভাবের মানুষ। হোমওয়ার্ক না করলে তিনি কঠিন শাস্তি দিতেন। স্যার অনেক সময় মারতে মারতে লাঠি ভেঙ্গে ফেলতেন এমন রেকর্ডও ছিল অহরহ।

যাইহোক আমি সহ আরো কয়েকজন হোমওয়ার্ক করেনি। স্যার তখন ক্লাস ক্যাপ্টেনকে বলেন, যাও পাশের জঙ্গল থেকে শক্ত ও মোটা একটা লাঠি নিয়ে এসো। এই সময় ক্লাস ক্যাপ্টেন এই কাজটা খুব খুশি মনে আর আগ্রহ নিয়ে করতো এবং সবসময় খুব শক্ত আর মোটা লাঠিই সে নিয়ে আসতে পারতো, জানিনা কেন সে এই কাজটা খুব নিখুঁতভাবে করত।

বরাবরের মত ক্লাস ক্যাপ্টেন যখন সুন্দর একটা লাঠি নিয়ে আসলো। তখন সমগ্র ক্লাস নিস্তব্ধ, আর আমার ভয়ে হাত-পা কাপছে, এই স্যারের মাইর এখন পর্যন্ত খাইনি জানিনা কি হয় আজকে। মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছিলাম আর ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল।

স্যারের মাইর দেয়ার সিস্টেম ছিল, যারা যারা হোমওয়ার্ক করেনি তাদেরকে সামনে নিয়ে মেঝেতে ব্যাঙ এর মত করে বসিয়ে কান ধরিয়ে রাখা হতো। তার পর ক্লাস শেষে তিনি একএক করে মারতেন।

তাই যথারীতি আমরা যারা হোমওয়ার্ক করেনি, তারা
ব্যাঙ এর মত হয়ে কান ধরে বসেছিলাম।

কিন্তু একসময় ক্লাসে তুমুল হাসি আর হইহুলা শুরু হয়। আর স্যার তখন খুব মনযোগ সহকারে বোর্ডে একটি উপপাদ্য পড়াছিলেন। এতে স্যার বিরক্ত হয়ে এর কারণ জানতে চাইলেন?

আমার ক্লাসমেটরা বললো স্যার লিটনের সবকিছু দেখা যাচ্ছে। তখন স্যার বিরক্ত ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে একবার তাকালেন, বললেন এই তোরা সব এখান থেকে তাড়াতাড়ি যা।

তখন আমিও ব্যাপারটা বুঝতে পারি। আমার প্যান্টের পিছনের সেলাই বরাবর পুরোটা ছিঁড়ে গেছে। তখনও প্যান্টের নীচে হাফ প্যান্ট পরা শুরু করিনি। কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না। আমি ফিরে গিয়ে আমার নির্দিষ্ট বেঞ্চে বসি। কিন্তু পোলাপানের হাসি আর থামে না। স্যার আবার বিরক্ত হয়ে বললেন এই লিটন তুই আজ বাড়িতে চলে যা।

তারপর স্যার অন্যদের শাস্তি দিয়েছিলেন কিনা না, জানি না। তবে আমার এই ঘটনা পুরো স্কুলে একটা হাসির খোরাক হয়েছিল কয়েকদিন। দেখা হলেই সবাই আমার ঐদিনের বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-ইয়ারকি করত। আর আমি খুব লজ্জা পেতাম।

আজও পুরোনো স্কুল বন্ধুদের সাথে দেখা হলে এই প্রসঙ্গটি আসে এখনও ঠাট্টা-ইয়ারকি হয়। কিন্তু এখন আর আগের মত লজ্জার ব্যাপারটা আসে না।

ধন্যবাদ সবাইকে

subscriber my channel

https://m.youtube.com/c/BestBanglaMotivation

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 61852.61
ETH 3084.08
USDT 1.00
SBD 3.83