একটি অস্থায়ী ঝালমুড়ির দোকান

in Steem For Traditionlast year (edited)
স্টিম ফর ট্রেডিশন

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুগণ।আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। আজ আমি একটি অস্থায়ী ঝালমুড়ির দোকান নিয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ। আশা করি সবার ভাল লাগবে।

IMG-20230821-WA0004.jpg
অস্থায়ী ঝালমুড়ির দোকান

আমাদের সমাজে আমরা নানা ধরনের পেশার সাথে জড়িত। কেউ উচ্চ শ্রেণীর পেশার কাজে নিয়োজিত আবার কারো পেশা নিম্ন শ্রেণীর।তবে আমার কাছে সব ধরনের পেশাই সম্মানজনক।সব ধরনের কাজেই শ্রম দিতে হয়। কেউ শারীরিক শ্রম দেয় আবার কেউ মানসিক শ্রম দেয়। যেমন কেউ তার নিজের শ্রম দিয়ে যেকোনো জিনিস তৈরী করছে,কেউ অন্যকে সেবা দিচ্ছে। এগুলো হলো শারীরিক শ্রম। আর মানসিক শ্রমের মধ্যে রয়েছে ছাত্রকে পড়ানো,কম্পিউটারে কাজ করা ইত্যাদি। এগুলো হলো মানসিক শ্রম। আমরাও কিন্তু মানসিক শ্রম করে থাকি। তবে আমাদের দেশে শারীরিক শ্রমের পেশাই বেশি।আবার অনেকে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার মধ্যে স্বল্প বিনিয়োগের ব্যবসা অধিক লাভজনক। এমনই একটি ব্যবসা নিয়ে আজ আমি আলোচনা করতে যাচ্ছি। আর সেই ব্যবসাটি হল ঝাল মুড়ির দোকান।

IMG-20230821-WA0017.jpg
IMG-20230821-WA0009.jpg
IMG-20230821-WA0011.jpg
IMG-20230821-WA0014.jpg
IMG-20230821-WA0019.jpg
IMG-20230821-WA0006.jpg
IMG-20230821-WA0008.jpg
IMG-20230821-WA0007.jpg

যেসব দোকানের ঝালমুড়ি বা অন্যন্য মুখরোচক খাবার বিক্রি করা হয় তাকে ঝালমুড়ির দোকান বলে।এটি মূলত একটি স্বল্প বিনিয়োগের ব্যবসা।এই ধরনের দোকান বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়। তাছাড়া হাটে বাজারেও এসব দোকান দেখতে পাওয়া যায়।এই দোকানগুলোতে ঝালমুড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবারও পাওয়া যায়। যেমন চিড়া মাখা,চানাচুর মাখা,ছোলা মাখা ইত্যাদি পাওয়া যায়। এই ধরনের দোকানগুলো মূলত একটি ভ্যান জাতীয় গাড়ির ন্যায় তৈরী করা হয়। তবে এগুলোর চারটি চাকা থাকে।দোকানটির পিছনের দিকে গাড়ি ঠেলার জন্য হাতল থাকে। এই হাতলগুলি হাত দিয়ে ধরে সামনের দিকে ঠেলে গাড়িকে এগিয়ে নেওয়া হয়। এই দোকানগুলোর ডেকোরেশন অনেক জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে থাকে। আগে এ ধরনের দোকানগুলোতে বিভিন্ন সিনেমার পোস্টার লাগানো থাকত।

IMG-20230821-WA0012.jpg

তাছাড়া দোকানের সামনের দিকে অনেক প্রকারের স্টিলের বাটি ও ট্রে পেরেক দিয়ে সংযুক্ত করা থাকে। এগুলোর সাথে আবার বিভিন্ন রঙের মরিচ বাতি লাগানো থাকে।এই বাতিগুলো রাতের বেলা জ্বালিয়ে দেওয়া হয় যার কারণে অনেক দূর থেকেই দোকানগুলো দেখা যায়। এই দোকানগুলোতে গান বাজানোর ছোট বক্সগুলো লাগানো থাকে। এরা মূলত ভাওয়াইয়া গাণ লাগিয়ে থাকে।এই দোকানগুলোতে দোকানদারের খাবারের বৈয়ম রাখার জন্য দুই সারিতে জায়গা থাকে। যেগুলোতে বৈয়মগুলো সুসজ্জিত করে রাখা যায়। তাছাড়া এতে মুড়ি,চিড়া ইত্যাদি রাখার পাত্র,ছুরি,শসা,টমেটো বা আচারের গামলা রাখার জায়গা থাকে।

IMG-20230821-WA0013.jpgIMG-20230821-WA0016.jpg

ছবিতে আপনারা যে ঝালমুড়ির দোকানটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি আমাদের স্কুলের একটি ঝালমুড়ির দোকান।এই দোকানের মালিকের নাম মো: আনারুল ইসলাম।আমরা সবাই তাকে আনারুল ভাই বলে ডাকি।তিনি বিগত প্রায় ২৫ বছর বছর ধরে এ পেশার সাথে জড়িত আছেন। আনারুল ভাইয়ের বাড়ি মন্মথপুর বাজার পাড়ায়।তাদের মূল বাড়ি পীরগাছায়।নদী ভাঙ্গনের কারণে তার বাবা সপরিবারে এখানে চলে এসেছেন বহু বছর আগে। যতদিন থেকে আমি বুঝতে শিখেছি ততদিন থেকেই আমি তার ঝালমুড়ির দোকান দেখেছি।তার ঝালমুড়ির মতো স্বাদ আমি এখন পর্যন্ত কোথাও পাইনি।তার দোকানে ঝালমুড়ির পাশাপাশি আমড়া,শসা,চালতার আচার,বরই আচার,আমের আচার,আমসত্ব,তেঁতুলের আচার,মুড়ি মাখা,চানাচুর মাখা,ছোলামাখা,ভাজা বাদাম,ছোলা,চানাচুর,ডাল ভাজা ও আরও বেশ কয়েক প্রকার খাবার পাওয়া যায়। আমার স্কুলজীবনে আমি যে কত বার তার ঝালমুড়ি খেয়েছি তার ইয়াত্তা নেই। আশেপাশে তার ঝালমুড়ির বেশ খ্যাতি রয়েছে। স্কুল শুরু থেকে টিফিন টাইম এর শেষ পর্যন্ত তিনি এখানে থাকেন।তারপর বিকেলে তিনি ভবের বাজারের উদ্দেশ্য রওনা দেন।তার বাড়ি থেকে ভবের বাজার প্রায় ১০ মিনিটের দুরত্ব।কিন্তু সবাই তার ঝালমুড়ি এত কিনে নেয় যে তার বাড়ি থেকে ভবের বাজার যেতে তার বিকেল থেকে রাত হয়ে যায়। ভবের বাজারে বটতলার নিচে সে তার দোকান দাঁড় করায়।রাতে সেখানে সে তার ব্যবসা চালায়।তার এই ব্যবসা খুবই ভাল চলে।প্রতিদিন তার ১০০০-১৫০০ এর বেশি তার ইনকাম হয়।

IMG-20230821-WA0024.jpg
IMG-20230821-WA0023.jpg
IMG-20230821-WA0020.jpg
IMG-20230821-WA0021.jpg

আর একটা কথা না বললেই নয়।মন্মথপুরে দুই ঈদে স্কুল মাঠে মেলা বসে।সেখানেও সে তার দোকান বসায়।কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা রূপে।ওই দুইদিন সেখানে সে অনেক বড় দোকান দেয়।ওইদিন তার দোকানে তার বাবা,ভাই ছাড়াও আরও তিন-চারজন লোক ভাড়া করা থাকে।তারপরেও তার ঝালমুড়ির এত চাহিদা থাকে যে সবকিছু শেষ হয়ে যায় এবং সেদিন ভিড়ের কারণে তারা একটুও দম নিতে পারেন না।সেদিন তারা ২০০০০-২৫০০০ টাকা ইনকাম করেন।আমি আমার স্কুলজীবনে বহুবার তার ঝালমুড়ি খেয়েছি এবং এখন অবধি খাই।তার এই ঝালমুড়ির কথা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।

ডিভাইজ সংক্রান্ত তথ্যঃ
ডিভাইসরেডমি ১০ সি
ক্যামরা৫০ মেগাপিক্সেল
ফটোগ্রাফার@tamannafariah
লোকেশনভবের বাজার,পার্বতীপুর

4i88GgaV8qiFU89taP2MgKXzwntUGAvkoQiKU7VxyD37q94i8e38qvF9HBknYTWLbKs3wg1cbtfZvU44CUYbBqLEEX6YDgQznQURMvBExn7FCAPjAUKLwJ1kpe.png

পোস্টটি পড়ার জন্য সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Sort:  
Loading...
 last year 

ঝালমুড়ি আমাদের প্রত্যেকেরই পছন্দের খাবার। অস্থায়ী ভ্রাম্যমান ঝালমুড়ির দোকানটার ডেকোরেশন আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো। আমি পার্বতীপুর গেলে ঝালমুড়ি কিনে খাই। পার্বতীপুর স্টেশন এর ঝালমুড়ি আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। জি আপু ঠিক বলেছেন কোনো কাজ ছোট নয়। আমার মনে হয় প্রত্যেকটা কাজই সম্মানের। ঝালমুড়ির পাশাপাশি সে অনেক ধরনের আচার বিক্রি করে এটা খুব ভালো দিক। কাস্টমার তার পছন্দ অনুযায়ী খাবার কিনতে পারবে। আপনি অনেক সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন আপু। ফটোগ্রাফি দারুন করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।

 last year 

শারীরিক এবং মানসিক শ্রমের সংজ্ঞা আপনি অনেক সুন্দর দিয়েছেন আপু। অস্থায়ী ঝালমুড়ির দোকান গুলোতে অল্প টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে ভালো টাকা ইনকাম করা সম্ভব হয়। এমন অস্থায়ী দোকান গুলো কোনো কলেজ বা স্কুলের সামনে বসে থাকে। এদের গানের আওয়াজে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা বাসা থেকে বাহিরে আসে। বক্সের তালে তালে এদের বক্সের আলোগুলো জ্বল জ্বল করে। আপনি অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন আপু।

 last year 

ধন্যবাদ।

 last year 

ঝালমুড়ি একটি মুখরোচক খাবার। ঝাল মুড়ি খেতে আমরা সবাই খুব পছন্দ করি। আপনি আপনার স্কুলের সামনের এই ঝাল মুড়ির দোকান নিয়ে অসাধারণ একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আপু। লিখিত দোকানটির বিক্রেতা ২৫ বছর ধরে এই কাজে লিপ্ত যা সত্যি চমৎকার একটা বিষয়। লেবু কুচি দিয়ে বানানো ঝাল মুড়ি আমার খুব ভালো লাগে। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

ধন্যবাদ আপু।

 last year 

অস্থায়ী ঝালমুড়ির দোকান নিয়ে সুন্দর লেখছেন আপনি।ঝালমুড়ি পছন্দ করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া অনেক মুশকিল। তবে সব ধরনের পেশা জীবিকে এক চোখে দেখতে হবে।আপনি ঠিক বলছেন আগে এইরকম ভ্যানের পিছনে মুভির পোষ্টার লাগানো ছিল। বর্তমান এগুলো আর লক্ষ্য করা যায় না। তবে তিনি ২৫ বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত শুনে খুব ভালো লাগলো। আপনি ঝালমুড়ি এবং তার দোকান নিয়ে সুন্দর আলোচনা করছেন। আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 last year 

ধন্যবাদ।

 last year 

ঝালমুড়ি সবারই পছন্দের খাবার।এমন ফেরি করে নিয়ে বেড়ানো ব্যবসায়ী সব সময় সব জায়গায় দেখা যায়।ঝালমুড়ি ভালো হলে তার ক্রেতাদের খাবার দিতে দিতে হাপিয়ে উঠে প্রায়।এতে অনেক অর্থ উপার্জন হয়ে থাকে।আমারও অনেক পছন্দ ঝালমুড়ি।আপনি অনেক সুন্দর করে বিস্তারিত লিখেছেন।আপনার ছবি গুলো সুন্দর হয়েছে।ধন্যবাদ আপনাকে

 last year 

ধন্যবাদ।

 last year 

এরকম ঝালমুড়ির দোকান গুলো বেশিরভাগ অস্থায়ী হয়ে থাকে। এরা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করে থাকেন। এদের ঝালমুড়িতে অন্য রকমের স্বাদ হয়ে থাকে। আমাদের এলাকায় ও দুই ইদে এরকম ঝালমুড়ি বিক্রেতা অনেক আশে। অস্থায়ী ঝালমুড়ি বিক্রেতা নিয়ে অনেক সুন্দর আলোচনা করেছেন। আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 last year 

ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 63566.44
ETH 2483.51
USDT 1.00
SBD 2.67