ঐতিহ্যবাহী হাত পাখার নকশায় ফুটে ওঠে গ্রাম বাংলার লোকশিল্পই
স্টিম ফর ট্রেডিশন কমিউনিটির সকল সদস্যকে জানাই পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা ।আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমিও মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ কৃপায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।শীতকাল তো প্রায় চলেই গেল। আসছে গ্রীষ্মকাল। আর এ সময় প্রচুর গরম থাকে। আর আমাদের দেশে বিদ্যুৎ সংকটও খুব। লোডশেডিং হয় ঘনঘন। এর কারণে বিদ্যুৎ থাকেনা। তাই অসহ্য গরমে একটু স্বস্তির জন্য আমরা হাতপাখা ব্যবহার করি। হাত পাখার মৃদু হাওয়ায় প্রাণে সজীবতা ফিরিয়ে আসে। তো বুঝতেই পারছেন আজকে আমি লিখতে যাচ্ছি ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা নিয়ে। যা দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ। তাহলে চলুন আজকের পোস্টটি শুরু করা যাক।
![]() |
---|
হাতপাখা হলো অতিরিক্ত গরমে হাতে চালিত এক প্রকার বিশেষ পাখা।লোডশেডিং এর সময় এটিই যেন সস্তির একমাত্র অবলম্বন। প্রাচীণকাল থেকেই কৃত্রিম বাতাসের একমাত্র উৎস ছিল এই হাতপাখা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের পাখা ব্যবহৃত হত।রাজদরবার থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাড়িগুলো সবার একমাত্র আরামের উৎস ছিল এই হাতপাখা। কিন্তু বর্তমান যুগে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এর প্রসার অনেকাংশে কমে গেছে।
হাত পাখার ইতিহাস বহু প্রাচীন। প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে হাত পাখার প্রচলন ও ব্যবহার শুরু হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিক রোমানদের রাজপ্রাসাদে ময়ূরের পালক কিংবা রেশমি কাপড় দিয়ে হাত পাখা তৈরি করা হতো। এগুলো ছিল বেশ বড়সড়।এগুলোতে একটি লম্বা হাতল থাকতো যেটা দিয়ে সিংহাসনের উভয় পার্শ্বে বাতাস করানো হতো। এটা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। পরে উচ্চবিত্ত মানুষগণ এরকম পাখার ব্যবহার শুরু করেন। অনেকেই হাতপাখা ঘরের ছাদে কড়ি কাঠে ঝুলিয়ে রাখতেন। যেগুলো কাপড়ের তৈরি ছিল। এগুলো নিচের লম্বা রশি ঝুলানো থাকে যা টেনে টেন পাখা চালানো হতো। পরে এই হাত পাখার প্রচলন সারা বিশ্বের ছড়িয়ে পড়ে। এই হলো প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী হাত পাখার ইতিহাস।
কালের বিবর্তনে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা আজ বিলুপ্তির পথে। বিজ্ঞানের উন্নতিতে হাত পাখার ব্যবহার বহুলাংশে কমে গেছে। আগে বাড়িতে নতুন জামাই এলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করানো হতো। ঘরে অতিথি এলেও হাত পাখা দিয়ে বাতাস করানো হতো। কৃষক স্বামী যখন ক্ষেতে কাজ করত স্ত্রী তখন দুপুরে ভাত নিয়ে যাওয়ার সময় হাতপাখা সাথে করে নিয়ে যেত। ভাত খাওয়ার সময় তার স্বামীকে পরম যত্নে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতো। সারাদিন বাইরে কাজ করার পর বাড়ি থেকে ফিরে যখন হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা হতো ক্লান্ত শরীরে যেন প্রাণ ফিরে আসতো। রাজ দরবারেও হাতপাখা দিয়ে বাতাস করানো হতো। ধনী দরিদ্র সবার বাড়িতেই হাত পাখা ছিল। কারণ এটিই ছিল প্রচন্ড গরমে স্বস্তির একমাত্র মাধ্যম।
হাতপাখা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন তালের পাতার তৈরি হাত পাখা, কাপড়ের তৈরি পাখা, নকশি পাখা এবং বাঁশের চাটাই-এর তৈরি হাতপাখা। এক এক পাখার সৌন্দর্য একেক রকম। তালপাতা ও ডাল দিয়ে তালপাখা তৈরি করা হয়। কাপড়ের তৈরি পাখা তৈরি করার জন্য প্রথমে বাঁশ কেটে গোল চাক তৈরি করা হতো।তারপর সেখানে হাতল লাগানো হত।তারপর কাপড় লাগানো হত। গোল চাকতিতে আবার কাপড়ে কুচি দিয়ে সুন্দর করে ঝালর দেওয়া হত। পাখার জমিনে রং বেরঙের সুতা দিয়ে নকশা করা হত। এটাকে নকশী পাখা বলে। তবে নকশা খুব বেশি হতো না। কারণ পাখার জমিনের পরিধি কম। বাঁশের তৈরি পাখা তৈরি করার জন্য প্রথমে বাঁশের চাটাই বুনা হত।এরপর এটাতে হাতল লাগিয়ে দেওয়া হত। কেউ কেউ এগুলোতে ঝালর লাগাতো। এই হলো পাখার বুননকৌশল।
হাত পাখার ছবি সংগ্রহঃ
হাতপাখার বানিজ্যিক প্রসারও রয়েছে। ট্রেনে- বাসে হকাররা তালপাখা ও প্লাস্টিকের পাখা বিক্রয় করেন।গ্রামেও কিছু ফেরিওয়ালা পাখার চাক ও সুতার পাখা বিক্রি করেন।আবার হাটে বাজারে বাঁশের চাটাই-এর পাখা, তালপাখা এসব বিক্রি করে। কিন্তু বর্তমানে তালগাছ অনেক কমে যাওয়ায় তালপাখা তৈরির হারও কমে যাচ্ছে। এসব তৈরি করে তারা তাদের সংসার চালান।
![]() | ![]() |
---|
বর্তমানে শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের ফলে হাতপাখার প্রসার কমে গেছে। যার ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহ্য। যা আমাদের ধরে রাখতে হবে চিরকাল।
কেমন লাগলো আমার আজকের ব্লগটি। আশা করি সবার ভালো লাগবে।সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকেই শেষ করছি।
হাতপাখা নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।এই হাতপাখা আমাদের গ্রাম অঞ্চলের ঐতিহ্য। গরমের সময় আমরা বিদ্যুৎ না থাকলে হাতপাখা ব্যবহার করে থাকি।সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে সেয়ার করেছেন।ধন্যবাদ আপু।
ধন্যবাদ
বর্তমান ইলেকট্রিসিটির যুগে হাতপাখা প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রামাঞ্চলে হাতপাখায় অনেক সুন্দর সুন্দর নকশা করা হয়ে থাকে। আপনি সেই নকশা আরও সুন্দরভাবে তুলে ধরে উপস্থাপন করেছেন।অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি সুন্দর পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।
আগে যখন ইলেকট্রিসিটি ছিল না তখন এই হাত পাখার ব্যবহারে সব থেকে বেশি দেখা যেত। হাতপাখা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে তালের পাখা, কাপড়ের পাখা, বাঁশের পাখা,নকশী কাঁথার পাখা ইত্যাদি। গ্রামাঞ্চলে হাতপাখায় অনেক সুন্দর সুন্দর নকশা করা হয়ে থাকে। বিলুপ্ত এই পাখাকে এখনো ধরে রেখেছে গ্রাম অঞ্চলের মানুষেরা। যারা এখনো ব্যবহার করে থাকে অনেক সময় এ হাত পাখাকে। আপনার ফটোগ্রাফি সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি উপস্থাপন করা জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।
একসময় নকশা করা হাতপাখা অনেক দেখা যেত। আগে গ্রামের মহিলারা অবসর সময় পেলেই এসব তৈরি করত। বর্তমানে অবসর সময় পেলেই টিভি সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত থাকে সবাই। হাত-পাখা নিয়ে অসাধারণ লিখেছেন আপনি। শুভকামনা রইল আপনার জন্য আপু
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে অনেক সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
হাত পাখা নিয়ে অসাধারণ লেখছেন আপু, এখ সময় এই হাত পাখার অনেক ব্যবহার ছিল, মানুষ আগে এই হাত পাখা দিয়ে তারা তাদের শরিলে প্রশান্তি আনতো,আমি দেখতাম আগে সবার ঘরে ঘরে এই হাত চালিত পাখা আছে,আগে সবার ঘরে ইলেক্ট্রনিক ছিল না,আবার কারো কারো বাসায় ইলেকট্রনিক ছিল কিন্তু আগে অনেক বেশি লোডশেডিং ছিল যার কারনে এই হাত চালিত পাখা অনেক ব্যবহার হয়েছিল, আর এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই হাত চালিত পাখার ব্যবহার খুব কম দেখা যায়, আপনি অনেক সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন, আপনার পোস্ট পরে আমি অনেক কিছু জানতে পারলাম, আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটা পোস্ট উপস্থাপন করেছেন।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।
হাতপাখা এক গরমের প্রশান্তি। যখন আগে বিদ্যুৎ ছিল না তখন মানুষের ভরসা ছিল এই হাতপাখা। হাতপাখা কয়েক ধরনের থাকে, তালের পাখা কাপড়ের পাখা নকশী কাঁথার পাখা ইত্যাদি। আপনি অনেক সুন্দর করে ঐতিহ্যবাহী পাখা নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। এখনো মাঝে মাঝে লোডশেডিং হলে এই পাখার প্রয়োজন পরে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে মন্তব্য করার জন্য।
সেই কাল থেকে বিশেষ করে গ্রামবাংলায় হাত পাখার প্রচলন রয়েছে।যখন বিদ্যুৎ গ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলে ছিল না তখন ইলেকট্রিক কোন পাখা ছিল না তখন একমাত্র উপায় ছিল এই হাতপাখা।যা বর্তমানে দিন দিন হারিয়ে যাওয়ার পথে। হাতপাখা সম্পর্কে খুব সুন্দর লিখেছেন নকশা সম্পর্কে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।
হাতপাখা নিয়ে আপনি অসাধারণ একটি পোস্ট লিখেছেন আপু।একসময় এই হাতপাখার কদর ছিল অনেক কিন্তু আধুনিক যুগে ইলেকট্রিসিটির প্রভাবে হাতপাখার ব্যবহার বহুলাংশে কমেছে। এখন হাতপাখার পরিবর্তে অনেকই লোডশেডিং হলেও চার্জার ফ্যান ব্যবহার করে। এর ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু হাতপাখা নিয়ে এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।
সুতো দিয়ে তৈরি হাতের কাজের এই হাত পাখাগুলো আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। যদিও এখন এ সকল হাত পাখাগুলো খুব বেশি দেখা যায় না। তবে এক সময় গ্রামের মেয়েরা একসাথে সবাই বসে এই হাত পাখাগুলো তৈরি করত। প্রযুক্তির উন্নয়নে এ সকল হাতপাখা এখন বিলুপ্তপ্রায়। ধন্যবাদ আপনাকে এই পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু।