ঐতিহ্যবাহী মাটির চুলাই ছিল রান্নার একমাত্র অবলম্বন।

in Steem For Traditionlast year (edited)
আসসালামু আলাইকুম

স্টিম ফর ট্রেডিশন কমিউনিটির সকল সদস্যকে আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করি সকলেই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। আমি আজ আপনাদের সবার কাছে ঐতিহ্য বাহী মাটির চুলা সম্পর্কে আমার মনোভাব শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করি আপনাদের সবার ভালো লাগবে ইনশাআল্লাহ।

মাটির তৈরি উনুন বা চুলাঃ

মাটির চুলা হলো মাটি দিয়ে তৈরি এক প্রকার বিশেষ চুলা।এইসব উনুনগুলো এঁটেল মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়।এই উনুনগুলোর দীর্ঘকাল স্থায়িত্ব হয়। এগুলোর ১৫-২০ বছর পর্যন্ত টেকসই হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। বহুবছর হয়ে গেলে উনুনগুলোর ভিতরের মাটি পুড়ে লালবর্ণ ধারণ করে। যা ইটের ন্যায় শক্ত হয়ে যায়। এই চুলাগুলোয় যখন কালি মেখে কালো রঙের হয়ে যায় তখন এগুলো মাটি দিয়ে লেপন করে দিলে পুনরায় নতুন দেখা যায়।

IMG-20230401-WA0010.jpg
মাটির তৈরি চুলা
মাটির উনুনের ইতিহাসঃ

বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি আমাদের মৌলিক চাহিদা গুলোর মধ্যে একটি। প্রচীনকালের মানুষ কাঁচা ফল বা মাংস খেয়ে বাঁচত। হয়তো হঠাৎ একদিন তারা দাবানলে পোড়া কোনো প্রাণীর মাংস খায়।দেখলো যে কাঁচা মাংসের থেকে পোড়া মাংসের স্বাদ বেশি। তখন তারা মাংস পুড়িয়ে খেতে শুরু করল। এভাবে তারা বিভিন্ন কাঠখোট্টা পুড়িয়ে মাংস পোড়াতে লাগল।কিন্তু ভালো গঠন না হওয়ার কারণে তারা তা ভালোভাবে করতে পারত না। আর এভাবেই ধীরে ধীরে চুলার উদ্ভব শুরু হয়।

উনুনের প্রকারভেদঃ

উনুন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন একচুলা উনুন,দুইচুলা উনুন,তিনচুলা উনুন ও তোলা উনুন।যেসব চুলায় একটিমাত্র পাতিল বসানোর জায়গা থাকে সেগুলো একচুলা উনুন আবার যেসব উনুনের দুটি পাত্র রাখার ব্যবস্থা থাকে সেগুলো দুইচুলা উনুন।এভাবে তিনটি পাত্র রাখার জায়গা থাকলে তাকে তিনচুলা উনুন বলে।তবে তিনচুলা উনুন সচারাচর দেখা যায় না। এগুলো শুধু ধান সিদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়

উনুন তৈরির কার্যপ্রণালীঃ

উনুন তৈরির জন্য প্রথমে কাদামাটি ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর সাইজমতো মাটি খুঁড়ে নিতে হবে। এটপর কাদামাটি দিয়ে চুলার আকৃতি গড়ে তুলতে হবে।এভাবে দু একদিন পর ছুরি দিয়ে সুন্দর আকৃতি কেটে নিতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে শুকিয়ে গেলে কাদার প্রলেপ ঢেলে লেপন করে দিতে হবে। ব্যাস সুন্দর একটি উনুন তৈরি হয়ে গেল।

IMG-20230401-WA0007.jpgIMG-20230401-WA0008.jpg
IMG-20230401-WA0009.jpg
উনুনের ব্যবহার

আগে কোনো বৈদ্যুতিক চুলা বা গ্যাসের চুলা ছিল না।তাই মাটির উনুনই ছিল অপরিহার্য। মাটির উনুনেই ভাত,তরকারি,রুটি,পিঠা,পায়েস,পোলাও সবকিছুই রান্না হত।আর রান্নার স্বাদও অতুলনীয়। যা গ্যাস বা ইনডাকশন- ইনফ্রারেড কোনটিতেই পাবেন না।

উনুনের জ্বালানিঃ

মাটির উনুনের জ্বালানি খুবই সহজলভ্য।এগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়। শুকনো খড়কুটো,পাটখড়ি, বাঁশ, কাঠ, ফসলের আগাছা,কয়লা,শুকনো পড়ে থাকা পাতা এসব দিয়ে আমরা মাটির উনুন জ্বালাতে পারি।আর এগুলো তে আমরা সহজেই যেকোনো জায়গায় পেতে পারি।সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে মাটির উনুন জ্বালানো অনেক সহজ।

IMG-20230401-WA0011.jpg
উনুনের উপকারিতাঃ

মাটির উনুনের বেশ কিছু উপকারী দিক রয়েছে। মাটির উনুনের রান্না মানসম্মত ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন।মাটির উনুনে অপ্রয়োজনীয় আগাছা পুড়িয়ে ফেলা যায় যা আমাদের চারপাশের ময়লা পরিষ্কার করে। চুলা থেকে যে পরিত্যক্ত ছাই বের হয় তা দিয়ে তৈজসপত্র পরিষ্কার করা যায়।যা খুবই স্বাস্থ্যসম্মত একটি উপায়।চুলার পোড়ামাটি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা যায়।এছাড়া এ ছাই জমিতে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।সুতরাং বলা যায় মাটির উনুনের যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে।

IMG-20230401-WA0012.jpg
ইতিকথাঃ

মাটির উনুন একটি হস্তশিল্প। আগে রান্নার একমাত্র অবলম্বন ছিল এই মাটির তৈরি উনুন।কিন্তু এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগুলোর ব্যবহার কমেছে।কিন্তু এর উপকারিতা ভোলার মতো নয়। তাই আমাদের সকলের উচিৎ এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা। নাহলে এটিও হারিয়ে যাবে স্মৃতির সাগর থেকে।আশা করি আমার ব্লগ টি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে এখানেই শেষ করছি। আবার নতুন কোনো বিষয় নিয়ে হাজির হব।ইনশাআল্লাহ।

4i88GgaV8qiFU89taP2MgKXzwntUGAvkoQiKU7VxyD37q94i8e38qvF9HBknYTWLbKs3wg1cbtfZvU44CUYbBqLEEX6YDgQznQURMvBExn7FCAPjAUKLwJ1kpe.png

‍♀️আমার পরিচয়‍♀️
IMG-20230302-WA0004.jpg
আসসালামুআলাইকুম,সকলেই কেমন আছেন? আশা করি সকলেই ভাল আছেন আমিও আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। আমার নাম মোছাঃতামান্না ফারিহা। আমার স্টিমিট ইউজার নেম @tamannafariah। আমি দিনাজপুর জেলার, পার্বতীপুর উপজেলার একজন বাসিন্দা। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতেছি।অংকন করতে ভালবাসি এবং এর পাশাপাশি আমি ড্রাফট ক্রিয়েটে মোটামুটি পারদর্শী। সকলেই সুস্থ ও নিরাপদে থাকবেন।
3zpz8WQe4SNGWd7TzozjPgq3rggennavDx3XPY35pEAVnpvDGTmz6yM4BdeUwpQ8vMxtR3sQse9kG46R2Lk4NBaGfzPmL5tiA85DdFd7TDvbMGaNMAY2RBgSWfNp5kM1Qjr3515gWKvjxzADBcu4.png
Vote for @bangla.witness
Sort:  
 last year 

আপনি মাটির চুলা নিয়ে বেশ চমৎকার কিছু তথ্য শেয়ার করেছেন। আগে মাটির চুলায় সব রান্না করা হত।মাটির চুলার আগুনের রান্না বেশ মজাদার হয়। এখন মানুষ আধুনিক যুগে প্রবেশ করে চুলায় রান্না তেমন করে না।

 last year 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।

 last year 

গ্রামের ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্য হচ্ছে মাটির চুলা। মাটির চুলা সবার বাড়িতে পাওয়া যায়। মাটির চুলা বিভিন্ন ধরনের হয়।যেমন একচুলা,দুইচুলা,বন্ধু চুলা ইত্যাদি। মাটির চুলা সবাই তৈরি করতে পারে না। গ্রামের অনেক জন মহিলা এই মাটির চুলা তৈরি করতে পারে। মাটির চুলার রান্না সুস্বাদু হয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মাটির চুলা। আপনি মাটির চুলা নিয়ে খুব সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন। ধন্যবাদ আপু

 last year 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।

Loading...
 last year 

মাটির চুলা নিয়ে অনেক সুন্দর লেখছেন আপু, মাটির চুলা এখন খুব কম দেখা যায়, আগের মানুষ এই মাটির চুলায় রান্না করে তারা মেহমান আপ্যায়ন করতো,আর এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি চুলা। তবে মাটির তৈরি চুলায় রান্না করার যে স্বাদ বাকি চুলার মধ্যে এটা হলো অন্যতম স্বাদ,মাটির চুলায় যে সব কাঠ বা লাকড়ি দিয়ে চুলা জালায় ঐ সব ময়লা গুলো দিয়ে আমরা আমাদের আসবাবপত্র পরিষ্কার করা যায়, আপনি অনেক সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন। আপনার পোস্ট পরে খুব ভালো লাগলো, আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটা পোস্ট করার জন্য।

 last year 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।

 last year 

মাটির চুলার ব্যবহার এখনো গ্রামে রয়েছে। বর্তমানে গ্যাস এবং ইলেকট্রিক চুলার ব্যবহারের কারণে অনেক কমে গেছে। মাটির চুলার রান্নার স্বাদ সত্যিই অসাধারণ। আপনি লিখেছেন অনেক ভালো। শুভকামনা রইল আপনার জন্য

 last year 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।

 last year 

প্রাচীন কাল থেকে আমাদের দেশে মাটির চুলায় রান্না হয়ে আসতেছ।বর্তমানে এখন মাটির চুলা প্রায় বিলুপ্তির পথে।আধুনিকতার ছোঁয়া এবং ইলেকট্রিসিটির যুগে হারিয়ে যাচ্ছে এইসকল মাটির চুলা।তবে গ্রামাঞ্চলে কিছু বাড়িতে এখন মাটির চুলা দেখতে পাওয়া যায় । আপনি অনেক সুন্দর লিখেছেন এবং উপস্থাপন করেছেন আপনাকে ধন্যবাদ।

 last year 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।

 last year 

মাটির তৈরি চুলা গ্রাম অঞ্চলে ব্যবহার করা হয় বেশি। তবে মাটির চুলার রান্নায় অনেক স্বাদ পাওয়া যায়। যা আধুনিক মেশিনের রান্নায় পাওয়া যায় না। সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।

 last year 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।

 last year 

মাটির তৈরি চুলায় রান্না করা স্বাদ অনেক, আগের মানুষ সবাই এই মাটির তৈরি চুলায় রান্না করতো,আর এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই মাটির তৈরি চুলা দেখা যায় না, এই মাটির তৈরি চুলা সবাই তৈরি করতে পারে না, এটা তৈরি করান জন্য কিছু মহিলা থাকে।আপনি অনেক সুন্দর লেখছেন আপু, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু

 last year 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।

 last year 

গ্রামের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী মাটির চুলা। যা গ্রাম অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আরছে। মাটির চুলার রান্না খুবই সুস্বাদু। আমাদের বাড়িতে এখনো মাটির চুলায় রান্না করা হয়। আপনি অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করছেন আপু। আদী ইতিহাস তুলে ধরছেন, মানুষ আগে জানতো না কেমন করে মাংস খেতে হয়। দাবানলে পুরে মাংস খাওয়া শিখছে, বিষয় টা শুনে ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এতো সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য।

 last year 

মাটির তৈরি চুলা নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।প্রাচীনকাল থেকেই এই মাটির চুলা গ্রামঅঞ্চলের মানুষ ব্যবহার করে আসতেছে।সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে সেয়ার করেছেন।সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন আপু। ধন্যবাদ।

 last year 

ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64573.45
ETH 3441.06
USDT 1.00
SBD 2.51