শত বছরের পুরনো নদী পারাপারের ঘাট
আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।আমিও ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। আজকে আমি আপনাদের সাথে পুরাতন এবং ঐতিহ্যবাহী জিনিস নিয়ে লিখবো । আর সেই বিষয়টি হল খেয়া ঘাট যা ১০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে স্থানীয় মানুষ জন ব্যবহার করে আসছেন। আশা করি আপনাদের সবার অনেক ভালো লাগবে। চলুন শুরু করি,
আমরা ঐতিহ্যবাহী বিষয়বস্ত বলতে যুগ যুগ ধরে বা প্রজন্মের পর প্রজন্মে হয়ে বা চলে আসছে এরূপ বিষয়বস্তুকে বুঝিয়ে থাকি। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী সংজ্ঞায়িত করলে আমাদের এলাকায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যে ঘাটটি দিয়ে মানুষ নদী পার হচ্ছেন সেটিকে অনায়াসে ঐতিহ্যবাহী ঘাটপাড় বলা চলে। এই ঘাটপাড় দিয়েই আমার দাদা, বাবা এবং এখন আমি নদীর ঐ পারে এবং এই পারে যাতায়াত করি তাদের পূর্বে যারা ছিলেন তারাও এটাই করেছেন ।এই ঘাট পাড়টির বয়স অনেক বেশি। স্থানীয় ভাষায় এই ঘাটপাড়কে বলা হয় নারায়ণখোলা ঘাটপাড়।
আমরা যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করি তখন সবসময় চেষ্টা করি যতটা দ্রুত সম্ভব গন্তব্য স্থলে পৌঁছানোর। আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটে। আমি যখন দীর্ঘ বিরতির পর আমার গ্রামের বাড়িতে যাই তখন চেষ্টা করি যত দ্রুত সম্ভব ভ্রমণ কমিয়ে বাড়িতে পৌঁছানো যায়। তাই আমি এই আমাদের এলাকার ঐতিহ্যবাহী ঘাটপাড়টি ব্যবহার করে থাকি আমার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে। এই ঘাটপাড় ছাড়াও হাইওয়ে রাস্তা দিয়ে আমার বাড়িতে যাওয়া সম্ভব কিন্তু তাতে অতিরিক্ত তিন ঘণ্টার মতো সময় ব্যয় হয়। তাই আমি এবং আমার মত অনেকেই এই নদীটি পার হওয়ার জন্য নৌকা ব্যবহার করে সময় বাঁচিয়ে নেন।
বর্ষাকালে এই নদীটি পার হতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগে সেটিও আবার ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে কেননা তখন নদীটি কানায় কানায় পানিতে পূর্ণ থাকে। তাই মাঝিকে অতি সাবধানে আস্তে আস্তে নৌকা চালাতে হয় এবং তখন নদীর প্রশস্ততা অনেক বেশি বেড়ে যায়। কিন্তু বর্ষাকাল ছাড়া সারা বছরে ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যেই আপনি এই নদীটি পার হতে পারবেন।
এই জায়গাটিতে আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের যে জিনিসটি লাগে সেটি হল নদীর তীরে ছোট করে একটি মাচা করে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে এটি করা হয়েছে। এটির মাধ্যমে নৌকায় উঠলে পা ভেজার সম্ভাবনা থাকে না। আবার নৌকাটি এনে এখানে বেঁধে রাখতে সুবিধা হয়। চারদিকে মাঠ আর পানির মাঝখানে এরকম একটি মাচা দেখতেই আসল অন্যরকম ভালো লাগে। এছাড়াও এখানে আরো মজার বিষয় হলো একটি নৌকাতে আপনি অনেক কিছু দেখতে পারবেন। যেমন একই নৌকায় করে ছাগল, মানুষ, সাইকেল এবং মোটরসাইকেল একসাথে নদী পার হয়। এই নদীটি পার হতে ১০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয় এবং বর্ষাকালে ভাড়া বেড়ে ২০ টাকা হয়ে যায় । বাচ্চা, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই এই নৌকা ব্যবহার করে যাতাযাত করেন।
অনেক আগে বেশিরভাগ মানুষ এই নদীটি সাঁতরে পার হত যার ফলে এখানে ক্রমাগত দুর্ঘটনা বেড়েই যাচ্ছিল। তারপর এখানে স্থায়ীভাবে একটি ঘাটপাড় করা হয়েছিল। আপনি এই স্থানটিতে আসলে সব সময় নৌকা পাবেন। সকাল, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত কিংবা গভীর রাত সব সময় এখানে একটি নৌকা ও মাঝি পাবেন। শুধু আপনাকে আপনার উপস্থিতি জানান দিতে হবে এবং কিছুক্ষণ পরেই নৌকা নিয়ে একজন মাঝি আপনার কাছে চলে যাবে। আপনি যদি নদীর পাড়ে কোন নৌকা দেখতে না পান তাহলে জোরে জোরে মাঝি বলে ডাকলে নৌকার মাঝি সেখানে এসে আপনাকে নদী পার করিয়ে দেবে।
সম্প্রতি ৭ দিন আগে ২৫ বছর বয়সের দুইজন যুবক রাত ১২ দিকে নদীর পাড়ে নৌকা না দেখে সাঁতরে নদী পারের উদ্দেশ্যে নদীতে নেমে পড়েন।অল্প কিছু দূর নদী পার হওয়ার পর তারা জোরে জোরে চিল্লানো শুরু করে। পাশে একজন নৌকা নিয়ে মাঝি ছিলেন তিনি দ্রুত তাদের শব্দ শুনে তাদের কাছে চলে যান। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি তার নৌকায় একজনকে তুলতে পারে তবে আরেকজনকে অনেক খোঁজাখুজির পরও পাননি। তিনি একজনকে বাঁচাতে পারলেও আরেকজনকে বাঁচাতে পারেন নি।অথচ নদীতে না নেমে মাঝিকে ডাকলে মাঝি তাদের পার করিয়ে দিতেন। তারপর একদিন পর আর একজন ব্যক্তির মৃত দেহ অনেক দূরের একটি বাঁধে পাওয়া যায়।এই ঘটনাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করার কারণ হলো একটি এই ঘাটটির প্রয়োজনীয়তা আপনাদের বোঝানোর জন্য। আশা করি এই ঘাটটির প্রয়োজনীয়তা আপনারা উপরোক্ত ঘটনার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন।
ধন্যবাদান্তে,
@pea07
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, নদী পারাপারের জন্য অসংখ্য ঘাট রয়েছে। মাঝি নৌকা দ্বারা মানুষ কে এ পার থেকে ওপারে পারাপারের জন্য ঘাট ব্যবহার করে থাকে। আপনি ১০০ বছরের পুরাতন ঘাট নিয়ে অনেক সুন্দর লিখছেন। তবে শুনে খারাপ লাগলো সাম্প্রতিক একজন মারা গিয়েছে নদীতে ডুবে। অসংখ্য ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া
আপনি ১০০ বছরের পরাতন নারায়ণখোলা ঘাটপাড় নিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন। আপনার পোস্টটির মাধ্যমে এতো পুরনো একটি ঘাট দেখার সৌভাগ্য হলো। শুনে খুব খারাপ লাগলো আপু যে কিছুদিন আগে এখানে একজন মারা গেছে।আমাদের অসাবধানতার কারনেই এসব দূর্ঘটনা ঘটছে।আপনারন প্রতিটি ফটোগ্রাফিই দারুন হয়েছে।নারায়ণখোলা ঘাটটির অনেক তথ্য আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন। ধন্যবাদ আপু
অনেক ধন্যবাদ আপু
ধন্যবাদ আপনাকে
আপনি ১০০ বছরের পুরনো একটি নদী পারাপারের ঘাট নিয়ে সুন্দর একটা পোস্ট উপস্থাপন করেছেন। আপনি নদী পারাপারের ঘাটের দারুণ ফটোগ্রাফি করছেন। আমি কখনো নৌকার মধ্যে নদী পার হয়নি।নৌকায় নদী পার হলে আমাকে ভয় লাগে। তাহলে ওই অঞ্চলের মানুষ সবাই নৌকার মধ্যে নদী পার হয়।আপনার পোস্ট পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু।আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
নদী, নৌকা আমার খুবই পছন্দ (তবে সেটা কম পানিতে)।ধন্যবাদ আপনাকে
এরকম পুরনো একটি ঘাট আমাদের এখানেও আছে, ওই ঘাটের নাম হলো ঘোড়ারঘাট। আপনাদের ঐ ঘাটে রাতে দুজন নদী পার হতে গিয়ে যেমন একজন মারা গিয়েছিল। আমাদের এইখানেও নৌকা বাইস মেলার সময় এই ঘোড়াঘাট নৌকা ডুবে দুইজন মারা যায়। এইজন্য কিছু অসাবধানতা এবং ভুল সিদ্ধান্তের কারনে অনেক সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। পুরনো নদী পারাপারের ঘাট সম্পর্কে খুব সুন্দর উপস্থাপন এবং অসাধারণ কিছু ফটোগ্রাফি করেছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ করেছেন।
নৌকা বাইচে অনেক মানুষ থাকে তাই তখন দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা বেশী। ধন্যবাদ আপনাকে
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী পারাপারের জন্য অসংখ্য ঘাট রয়েছে বাংলাদেশে। আপনি আপনার পোস্টে যে ঘটনাটা উল্লেখ করেছেন সেটি আসলেই এটি মর্মান্তিক ঘটনা আপু। আপনার শেয়ারকৃত ঘটনার দ্বারা আমরা আসলেই নদী পারাপারের জন্য ঘাট গুলোর উপকারিতা বুঝতে পারি। ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ আপু
এক্স শেয়ার লিংক
https://twitter.com/pea079/status/1690063855156871168?t=y7_NHwe7iR3H3v_KzxZq3A&s=19
১০০ বছরে বেশ পুরাতন একটি ঘাট পাড় নিয়ে সুন্দর লিখেছেন আপু। বর্ষাকালে নৌকা ডুবে যাওয়ার বেশি ভয় থাকে যার কারনেই অনেক আস্তে ধীরে নদী পার করায় মাঝি। আপনি ভালো কাজ করেন এতো সময় ধরে রাস্তায় না ঘুরে নৌকায় অল্প সময়ে বাড়ি যেতে পারেন। নদীতে ছেলে গুলো বেশি সাহস দেখাতে গিয়েছিলো যদিও নিখোঁজ হওয়ার খবরে অনেক খারাপ লাগতেছে। ছবি গুলো অনেক সুন্দর তুলেছেন আপু।
ধন্যবাদ আপনাকে
এমন পুরনো ঘাটগুলো আমাদের ঐতিহ্য, প্রাচীন যুগে এমন খাট প্রায় সব এলাকাতেই ছিলো, তবে দেশ আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে এখন উঠে গিয়ে পুলে পরিণত হয়েছে। এরকম একটি ঘাট আমাদেরও ছিল, পুরনো ঘাট সম্পর্কে অনেক সুন্দর আলোচনা করেছেন আপু, বিশেষ করে আপনার ফটোগ্রাফি গুলো অসম্ভব সুন্দর হয়েছে, ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া