৪৭ বছর পুরোনো বাঙালির ঐতিহ্যবাহনকারী বিলুপ্তপ্রায় পালঙ্ক খাট
আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।আমিও ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। আজকে আমি আপনাদের সাথে বিলুপ্তপ্রায় একটি ঐতিহ্যবাহী বিষয়বস্তু নিয়ে লিখব। আজকে আমি আপনাদের সাথে যে বিষয় নিয়ে লিখব সেটি আজ থেকে ৪৭ বছরেরও বেশি সময় আগে তৈরি করা হয়েছে । চলুন শুরু করি,
পালঙ্ক খাটের সাথে আমরা মোটামুটি সবাই ভালোভাবেই পরিচিত। আগে যুগের রাজার গল্প কিংবা জীবনী পড়লে সেখানে আমরা পালঙ্ক খাটার কথা জানতে পারি।আদিকালে আভিজাত্যের প্রতীক ছিল পালঙ্ক খাট।
ইদের ছুটিতে আমি আমার গ্রামে এসেছি। পাশের বাড়িতে একটি পালঙ্ক খাট রয়েছে।অনেক ছোটবেলা থেকেই তাদের ঘরে এই পালঙ্ক খাটটি আমি দেখে আসছি। আমি তাদের কাছে এই খাটের বয়স জানতে চাইলে তারা বলেন এই খাটের বয়স কমপক্ষে ৪০ বছর হবে। আমাদের পুরো গ্রামে এই বাড়ি ছাড়া আর কোন বাড়িতে পালঙ্ক খাট নেই। তাই আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য এই পালঙ্ক খাটের কিছু ছবি তুলে রাখি।
সম্প্রতি ঢাকার আন্তর্জাতিক শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় একটি কাঠের তৈরি পালঙ্ক ভাইরাল হয়েছিল যেটির বাজার ছিল ১ কোটি টাকা।সেই পালঙ্ক খাটটি পরী পালঙ্ক নামে পরিচিত। সুতরাং আমরা বুঝতেই পারছি যে পালঙ্ক খাটের বাজার দর এবং চাহিদা বেশ।এছাড়াও এই খাট আসলে সকলের জন্য নয় শুধুমাত্র যারা সৌখিন মানুষ তাদের জন্য এই এ সকল পালঙ্ক খাট বানানো হয়ে থাকে।
আমি যখন এই পালঙ্কের ছবি তুলতে যাই তখন দেখি কাঠের এই পালঙ্কে কাঠে খোদাই করে লেখা আছে এর নির্মাণ কাল বা তৈরি করার সময়। এটি ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের তৈরি করা হয়েছে কোন এক কাঠের মিস্ত্রির হাতে। বর্তমানে হচ্ছে ১৪৩০ বঙ্গাব্দ এই পালঙ্কটির বর্তমান বয়স ৪৭ বছর। এত বছর ধরে এই খাটটি ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এই খাটটির বর্তমান মালিকের বয়স এবং খাটটির বয়স প্রায় কাছাকাছি। কেননা এই খাটটি তার বাবা তার জন্মের সময় কিনে এনেছিলেন। এই খাটের উপরে খাটটির তৈরির সাল ছাড়াও খাটটির মালিক এবং স্থানের নাম লেখা রয়েছে। এখানে স্পষ্ট ভাবে লেখা রয়েছে এই খাটে মালিক মোঃ আঃ মোতালেব।
পালঙ্ক খাটটিতে অনেকগুলো নকশা করা হয়েছে। দুপাশে খাটের বড় বড় দুটি মাথায় অনেককিছু আঁকানো আছে। বিছানাটির একপাশের ওপরে একটি বড় গোলাপ ফুলের নকশা করা রয়েছে। এবং এই গোলাপ ফুলটি একটি হাত দিয়ে ধরা হয়েছে। এই খাটটিতে সম্পূর্ণ হাতের ছবি না থাকলেও হাতের একটি অংশ রয়েছে। এটাই হল এই খাটের প্রধান নকশা। এই গোলাপ ফুলের নকশার দুই পাশে দুইটি ময়ূর বসানো রয়েছে। ময়ূর দুটির লেজ অনেক বড় করে নকশা করা হয়েছে। নিচে আমি এগুলোর সম্পূর্ণ ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। যেহেতু এই পালঙ্কটি একটি গ্রামের বাড়িতে থাকে তাই এর চারপাশে ধুলাবালি রয়েছে। ঠিকমতো বার্নিশ করা হলে এটিও চকচকে হয়ে যাবে। বিছানাটির ওপর পাশে ময়ূরের ছবি নেই সেখানে কেবল বড় একটি ফুল এবং ফুলের মাথায় তিনটি বড় বড় পাতা দেওয়া রয়েছে।পাশের ছোট গোলাপের নকশাও রয়েছে।
পালঙ্কটিতে মোট ৬টি স্তম্ভ রয়েছে এবং এর চারপাশে বক্সের মত করে ঘেরাও করে দেয়া রয়েছে। ওঠার জন্য দুইপাশে একটু করে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে যেখান দিয়ে পালঙ্কটির উপর উঠে বসতে হয়। খাটকে বেষ্টন করে রাখা বিভিন্ন রকমের নকশা করা হয়েছে। কিছু লম্বা আকৃতির ডিজাইন করা হয়েছে যেটির নাম আমি আসলে জানিনা। আবার কাঠে চারকোনা আকৃতির খোদাই করা ডিজাইন করা হয়েছে এটির নামও আমি জানিনা। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে আমি উপর ছবি সংযুক্ত করে দিয়েছি।
ধন্যবাদান্তে,
@pea07
TEAM 4
Congratulations! Your post has been upvoted through steemcurator07. Good post here should be..টুইটার শেয়ার লিংক
https://twitter.com/pea079/status/1676959031624368131?t=OidJXuXE9WficjtpfIULww&s=19
আপু এরকম খাট আমি ছোটবেলায় গ্রামের বাড়িতে দেখেছি। আপনার পোস্ট দেখে অনেক পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আমাদের ব্যতিক্রমধর্মী একটি কমিউনিটি আছে বলেই হয়তো এরকম পুরাতন জিনিসগুলো সম্পর্কে আমরা জানতে পারতেছি।অনেক ধন্যবাদ আপু এত পুরনো একটি জিনিস নিয়ে পোস্ট করার জন্য। শুভকামনা রইল
ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া
পালঙ্ক খাটের নাম অনেক শুনেছি কিন্তু আজকে জীবনে প্রথম দেখলাম। আমাদের বাড়িতেও ২০ বছরের পুরনো একটি খাট আছে। পালঙ্ক খাট সম্পর্কে সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।
ধন্যবাদ ভাইয়া
আপু আমাদের বাসায় দুইটি পালঙ্ক খাট রয়েছে একটি আমাদের আর একটি ছোট কাকার। এই খাট গুলোর ডিজাইন দেখার জন্য এখনো মানুষ আসে।শাল গাছের কাঠ দিয়ে বানানো হওয়ার কারনে অনেক বেশি মজবুত। ঢাকার পালঙ্ক খাটের দৃশ্যতে পরি আর্ট করার জন্যেই হয়ত অনেক মুসলমান কিনতে চায়নি।
তাদের বানানো পালঙ্ক খাটে মোট ১৬ টা পরী ছিল! মুসলমানদের কেনার কথা না আবার কাঠও ছিল ফাইবার সেগুন তাই অনেকেই কিনে নি।
জি আপু।
অনেকদিন পর এই পালঙ্ক দেখলাম।এগুলো আগের যুগে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হতো। এখন আমাদের পুরো গ্রামে একটিও এমন খাট নেই। অনেক সুন্দর লিখেছেন। ধন্যবাদ আপু।
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু
এত বছরের পুরাতন খাট এখনো টিকে আছে এটাই অবাক করা বিষয়। এই খাট যে কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে তা অবশ্যই মজবুত এবং ভালোমানের কাঠ। তাই এখনো ঘুন পোকা কোন ক্ষতি করতে পারেনি। সুন্দর লিখেছেন।
আমাদের বাড়িতে এইরকম এখনো দুইটি খাট রয়েছে। খাটগুলো অবশ্য এখনো টিকিয়ে রয়েছে। তবে ঘন ধরেছে অনেক জায়গায়। গ্রামীন ঐতিহ্যের এক অন্যতম নিদর্শন হলো এইসব খাট দারুন লিখেছেন আপু ধন্যবাদ আপনাকে।
পুরনো এই পালঙ্ক দেখে অবাক হয়ে গেলাম। পালঙ্ক টি এখনো মজবুত এবং শক্তপুক্ত আছে। সচারচর পুরনো খাট পালঙ্ক এখন আর দেখা যায় না। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোষ্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।