বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার ঐতিহ্যবাহী সিল্ক শিল্প
আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।আমিও ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। আজকে আমি আপনাদের সাথে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী জেলার সিল্ক কাপড় নিয়ে লিখব। চলুন শুরু করি,
সিল্কের শাড়ি বা কাপড় সম্পর্কে ধারণা নেই এমন মানুষ আমার মনে হয় না পাওয়া যাবে। আমার কাছে রাজশাহী সিল্ক মানেই অপূর্ব সুন্দর কিছু শাড়ি, জামা। সিল্ক, জামদানি, মসলিন এগুলো হলো বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কাপড়।
সিল্ক কাপড়ের প্রধান উপাদান হলো রেশম।রেশম পোকার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। রেশম পোকা থেকে কিভাবে সিল্কের কাপড় তৈরি করা হয় সেটি হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। সিল্কের কাপড় রেশম থেকে প্রস্তুত করা হয় বলে এটি তৈরি করা একটু সময় সাপেক্ষ কিন্তু সিল্কের কাপড়ের বাজার দর অত্যান্ত বেশি। বাংলায় রেশম চাষ বহু বছর আগে থেকেই হয়ে আসছে।ঔপনিবেশিক কাল হতেই বাংলায় এটির চাষ। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে যখন দেশ বা সমগ্র বাংলা বিভক্ত হয় তখন রেশম প্রধান অঞ্চলগুলো ভারতে অংশে চলে যায়। আমরা সবাই জানি ১৯৪৭ সালের দেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান এ দুটি অংশে ভাগ হয়। যেহেতু রেশম প্রধান অঞ্চল গুলো ভারতের অংশে চলে যায় এবং অল্প কিছু অংশ এপার বাংলায় থাকে তাই পাকিস্তানি সব তৎকালীন সরকার রেশম চাষে উদাসীন হয়ে যায় যার ফলে এপার বাংলার বেশ কিছু অংশ রেশম চাষ করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এদেশের মানুষর রেশম চাষের আগ্রহ অনেক বেড়ে যায় ব্যক্তি মালিকানার পাশাপাশি সরকার কর্তৃক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যার উদাহরণ হলো রাজশাহী জেলায় রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। দেশ স্বাধীন হওয়া তিন বছরে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
রেশম আবিষ্কারের ইতিকথা :
রেশম প্রথমবার কিভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল সেটি জানার আগ্রহ নিশ্চয়ই আপনাদের রয়েছে। চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের রচনা ও চীনের ইতিহাস থেকে রেশম আবিষ্কারের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ রয়েছে চীনের সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞীর মাধ্যমে রেশম সুতার সর্বপ্রথম আবিষ্কার হয়।
চীনের সম্রাজ্ঞী বা রানি একদিন তাদের বাগানের তুঁত গাছের নিচে বসে চা পান করছিলেন । হঠাৎ তিনি দেখেন তার গরম চায়ের মধ্যে কিছু একটা পড়েছে। সেটি ছিল রেশমের গুটি বা কোকুন। তখন তিনি চা থেকে সেই কোকুনটি তুলতে গেলেন তখন খেয়াল করলেন কোকুনটি প্রসারিত হয়ে খুলতে শুরু করেছে এবং সেখান থেকে সুতা বের হচ্ছে। তারপর তিনি এই এটির রহস্য বের করার জন্য চারপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন এবং সবশেষে লক্ষ্য করেন তুঁত কাছে কিছু রেশম পোকা বাসা বেধেছে এবং এই কোকুনটি রেশমপোকা তৈরি করেছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো এটি আবিষ্কার করার পরে চীনেরা তাদের এই আবিষ্কার প্রায় তিন হাজার বছর লুকিয়ে রেখেছিল গোটা বিশ্ব হতে। আজ আমাদের রাজশাহী সেই সিল্কের কাপড়ের জন্য অনেক দেশেই সুপরিচিত কেননা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে রাজশাহী সিল্ক ।
রাজশাহী সিল্কের সবচেয়ে বড় শোরুম হলো সপুরা। আপনারা হয়তো অনেকের সাথে পরিচিত। রাজশাহীর সিল্কের কাপড়ই বিখ্যাত নয় এর পাশাপাশি রাজশাহীর সপুরা সিল্ক ইন্ড্রাস্ট্রিজও ঐতিহ্যবাহী, কেননা বহু বছর ধরে তারা সিল্কের উৎপাদন এবং বিক্রি করে আসছেন। তাদের বাংলাদেশ মোট পাঁচটি শো-রুম রয়েছে। একটি রাজশাহীতে, একটি চট্টগ্রামে ও তিনটি ঢাকায়। রাজশাহীতে শোরুমের নীচেই রয়েছে তাদের মূল কারখানা। যেখান থেকেই পুরো বাংলাদেশে সিল্কের কাপড় সরবরাহ করে থাকে তারা।
উপরের ছবিতে যে দুটো প্রিন্টের কাপড় দেখতে পাচ্ছেন তা রাজাশাহী মসলিন সিল্ক। এগলো ঐতিহ্যবাহী সপুরা থেকে নেওয়া। এদের এখানে অনেক কালেকশন রয়েছে সিল্কের কাপড়ের বিশেষ করে শাড়ির। এছাড়াও থ্রিপিস রয়েছে, এক কালার কাপড়, শাড়ি রয়েছে। এই দুই ছবিতে যে কাপড় দেখতে পাচ্ছেন সেগুলো ৯৫০ টাকা গজ আর এখানে মোট ৫ গজ কাপড় রয়েছে। নরমাল সুতি কাপড় সর্বনিম্ম গজ হলো ৮০ টাকা গজ আর এই সিল্কের সর্বনিম্ন গজ হলো ৯৫০ টাকা। এছাড়াও সিল্কের শাড়ি, মসলিন সিল্ক সহ আরো অনেক কাপড় রয়েছে যেগুলোর দাম ২ হাজার থেকে শুরু করে ২ লক্ষ টাকার উপরেও রয়েছে।
সবশেষে আমি এই সিল্কের কাপড় সম্পর্কে বলতে চাই, নরমাল সুতোর কাপড় আর রেশম সুতোর কাপড়ে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। সিল্কের কাপড় দূর থেকে গ্লেজ দেয় বা চকচক করে। এই কাপড় দেখে যে কেউই বলতে পারবে এটি সিল্কের কাপড়। মিহি রেশমি সুতোর দারুন বুননে তৈরি করা এই কাপড় দেশের ঐতিহ্যে এবং গৌরব।
ধন্যবাদান্তে,
@pea07
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্ক শিল্প নিয়ে আপনি দারুন ভাবে তুলে ধরেছেন। রেশম সুতা আবিষ্কারের ঘটনা আপনার পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমাদের এলাকায় আগে রেশম পোকার গুটি চাষ করা হতো। তখন আমি খুবই ছোট ছিলাম। তখন আমাদের এলাকায় অনেক তুঁতের গাছ ছিল। তারা তুঁত গাছের পাতার এসব পোকা কে খেতে দিতেন। আপনার পোস্টটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি আমার পোস্টটি পড়েছেন মনোযোগ দিয়ে বোঝা যাচ্ছে। আবিষ্কার গল্প নিয়ে আপনিই মন্তব্য করেছেন শুধু। অনেক ধন্যবাদ।
এক্স সোশাল মিডিয়া শেয়ার লিংক :https://twitter.com/pea079/status/1692857483256365437?t=mVeCLbTDdFbI1h2i1W2a4Q&s=19
শাড়ি নারীদের প্রধান আকর্ষণীয় পোশাক। রাজশাহীর জনপ্রিয় সিল্কের শাড়ি নিয়ে অসাধারণ উপস্থাপন করেছেন। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে শাড়ি নিয়ে অনেক তথ্য জানতে পেলাম। শাড়ি বাঙালি মেয়েদের প্রধান পোশাক। রেশম সুতার মাধ্যমে সিল্কের শাড়ি তৈরি হয়। আপনার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আমি এই হালকা শাড়ি দেখতে পেলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে
মেয়েরা শাড়ি অনেক পছন্দ করে।রাজশাহীতে কখনো যাওয়া হয়নি তবে আপনার এ পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানা হলো ধন্যবাদ আপনাকে।সিল্ক শাড়ি আমারও পছন্দের, সিল্ক শাড়ি পরতে অনেক আরাম দায়ক হয়ে থাকে।ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপু
We expected you to be friendly and active in the Steem For Tradition Community. We appreciate your effort. Thank you for sharing your beautiful content with us ❤️.
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে যে -শাড়িতেই নারী। রাজশাহীর বিখ্যাত সিল্ক শাড়িগুলোর ডিজাইন গুলো দেখতে অনেক সুন্দর হয়। সিল্ক শাড়ি আমার অনেক পছন্দের। তবে সিল্ক শাড়ি গুলো খুব পাতলা হয়। তাই অনেকেই পছন্দ করে না। রাজশাহীর এই বিখ্যাত সিল্ক শাড়ি নিয়ে বিস্তারিত একটি আলোচনা আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনার শাড়ির ডিজাইন গুলো অনেক সুন্দর।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি পোস্ট আমার সাথে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু
সত্যি বলতে আপু আমার সিল্ক শাড়ি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তবে শুনেছি সিল্কের শাড়ি নাকি অনেক সুন্দর হয়। তবে আপনার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে দেখলাম যে পাতলা। এসব ব্যবহার না করাটাই উত্তম। ভুল বললে ক্ষমা করবেন আপু। সিল্কের শাড়ি সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
আসলে সিল্কের কাপড়ে জামাগুলো দুইটি লেয়ার দিয়ে বানানো হয়। এই কাপড়ের সাথে মোটা কাপড় যুক্ত করে বানানো হয় যার কারণে এটি পাতলা থাকে না। ধন্যবাদ আপনাকে
বিষয়টি জানানোর জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ আপু।
রেশমের বানানো পোষাক গুলো দেখতে অনেক বেশি পাতলা এবং মজবুত হয়ে থাকে। রেশম তৈরির ইতিহাস তো প্রাচীন আপু। তবে দেশ বিভক্ত হওয়ার পর রেশম তৈরির কারখানা গুলো ভারতের দিকে চলে গেলেও আমাদের দেশে এখন নতুন করে ওর সম্ভাবনা বেড়ে চলেছে। ঠাকুরগাঁও এলাকায় একটি পুরাতন রেশম তৈরির কারখানা চালু হয়েছে যেখানে প্রতিনিয়ত উৎপাদন করা হচ্ছে সুতা। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন আপু।
ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা আছে জানতাম না আমি। ধন্যবাদ আপনাকে
সিল্কের কাপড়-চোপড় মানেই অন্যরকম একটি ভালো লাগার বিষয়। সিল্কের কাপড় খুবই পাতলা এবং মজবুত হয়ে থাকে। বিশেষ করে সিল্কের শাড়ি অসম্ভব সুন্দর হয়ে থাকে। যত দামি সিল্কের শাড়ি নেওয়া হয় তত বেশি সুন্দর এবং পাতলা হয়ে থাকে। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্ক শিল্প নিয়ে অনেক বিস্তারিত আলোচনা করেছেন আপু। পোস্টটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। শুভকামনা রইল আপনার জন্য
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া