প্রতিযোগিতার বিষয়- আপনার এলাকার একটি ভিন্নধর্মী নামধারী স্থান | by @pea07
সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। আজকে আমি স্টীম ফর ট্রাডিশন কমিউনিটি কর্তৃক আয়োজিত অংশগ্রহণ করব। আজকের প্রতিযোগিতার বিষয় আপনার এলাকার একটি ভিন্নধর্মী নামধারী স্থান সম্পর্কের লেখা । আমাদের প্রত্যেকের নিজের বাসস্থান রয়েছে এবং এর আশেপাশে অনেক ভিন্নধর্মী জায়গা রয়েছে যা একটি থেকে আরেকটি আলাদা হয়ে থাকে আলাদা । আমি ধন্যবাদ জানাই এমন সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু নির্বাচন করার জন্য। এই কমিউনিটির পুরো টিমকে এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। চলুন শুরু করি আজকের লিখা,
ভিন্নধর্মী স্থানটির নাম এবং যে কারণে এই স্থানটির নাম এটি
যেহেতু এই প্রতিযোগিতাটি একটি ভিন্নধর্মী প্রতিযোগিতা তাই আমি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য এমন একটি জায়গা কে নির্বাচন করেছি যেটি প্রকৃত অর্থেই ভিন্নধর্মী। এই জায়গাটির প্রচলিত নাম হচ্ছে ছোট বটগাছ তলা বা আমাদের স্থানীয় ভাষায় এটিকে ডাকা হয় "দুরুঙ্গের বটগাছ তলা"।এই জায়গাটি একটি নদীর পাড়ে অবস্থিত এবং গ্রামের মানুষ যে জায়গায় বসবাস করে তার থেকে এই স্থানটি অল্প দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায় এইটির নাম এরকম হয়েছে বলে আমার ধারণা। এই জায়গাটি দুটো গ্রামের ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। তবে গ্রামবাসীদের কাছে এই জায়গাটির নাম *দূরুঙ্গ হওয়ার কারণ জানতে চাওয়ার পর অনেকেই বলেন যে স্থানীয় ভাষায় দুরুঙ্গু বলতে বড় মাঠ বা দূরের বড় মাঠকে বোঝায় তাই এই জায়গাটির নাম এটি।
এই জায়গাটিকে ভিন্নধর্মী জায়গা বলার কারণ -১
বটগাছ গ্রাম অঞ্চলের খুব সাধারণ একটি গাছ।কিন্তু আমি যে গাছটির কথা বলছি এটির পিছনে কিছু ঘটনা ঘটে যাওয়া এটিকে আর কেউ সাধারন ভাবে নেয় না। আমাদের গ্রামের কেউ এই গাছের নিচে গিয়ে বসে না। বাচ্চারা তো কখনোই গাছতলার নিচে যায় না। মেয়ে মানুষ এবং বাচ্চারা এই গাছতলা থেকে অনেক দূরে দূরে থাকে। তবে প্রয়োজনে পুরুষ মানুষেরা এই গাছের নিচে যাতায়াত করে এবং অল্প দূরে গরু, ছাগল, ঘোড়াকে ঘাস খেতে দেয়।
অনেক বছর আগে এই গাছ তলায় গ্রামের একজন লোক ঘুমিয়েছিল কিন্তু রাতে তার ভাষ্যমতে কেউ একজন এসে তার গলা চেপে ধরেছিল। যে কারনে তার হাত-পা অবশ হয়ে গিয়েছিল এবং ছোটাছুটি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল পাশাপাশি তার শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল। সেই রাতের পর সে বেশ কিছুদিন অসংলগ্ন আচরণ, কথাবার্তা এবং পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকে গ্রামের মানুষের মনে একটি ভীতি ঢুকে গিয়েছিল যে এই গাছে অস্বাভাবিক কোন কিছুর অস্তিত্ব রয়েছে। সেই রাতে আসলে কি ঘটেছিল পরবর্তীতে চেক করার জন্য কেউ দ্বিতীয় বার সেখানে রাত কাটায় নি।এই গাছটির বয়স অনেক বছর হবে। ৩০-৪০ বছর তো হবেই মনে হয়। সেই থেকে এই গাছতলায় আর কারো আনাগোনা হয় না, হলেও খুব কম।আমিও আমার ছোটবেলায় কোনদিন এই গাছের নিচে যাইনি। আমি বড় হওয়ার পর আসলে সেই রাতে কি ঘটেছিল সে ঘটনাটি বুঝতে পারি কিন্তু গ্রামবাসীর মনে এতই বেশি ভয় যে তারা সবকিছু বাদ দিয়ে ওই গাছ থেকে দূরে থাকাটাকে শ্রেয় মনে করেন। সবাই মনে করেন সেই গাছটিতে কোন অপশক্তি রয়েছে না হলে ঐ বটগাছটির নীচে রাতে ঘুমানোর পর লোকটির গলা চেপে ধরার মানুষের কাজ নয়।
আসুন জেনে নেই প্রকৃতপক্ষে সে রাতে কি ঘটেতে পারে
আমরা সবাই জানি যে মানুষের মতো গাছেরও প্রাণ আছে এবং গাছ শ্বাস প্রশ্বাস নেয়। প্রতিটি গাছ দিনের বেলা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাবার নিজে তৈরি করে। এই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তারা বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং উপজাত হিসেবে অক্সিজেন ছাড়ে। এজন্য দিনের বেলায় গাছ তলায় ঘুমাতে এত ভালো লাগে কেননা তখন সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন এবং ছায়া থাকে। কিন্তু রাতের বেলা তার উল্টো ঘটনাটি ঘটে থাকে। রাতের বেলায় গাছ শ্বসন কার্যের জন্য বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নেয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ে। একবার ভেবে দেখুন আপনি একটি গাছের নিচে কেবলমাত্র নাকের দুটি ছিদ্রের সাহায্যে অক্সিজেন নিচ্ছেন পক্ষান্তরে আপনার প্রতিযোগী হিসেবে একটি গাছ যার একটি পাতায় আছে হাজার হাজার পত্র রন্ধ্র যার মাধ্যমে গাছটি অক্সিজেন নিচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় নিশ্চয়ই গাছ বিজয়ী হয়ে যাবে এবং ফলাফল হিসেবে আপনার হবে তীব্র অক্সিজেনের স্বল্পতা। আমরা সবাই জানি আমাদের ব্রেনে নির্দিষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ না হলে তা স্বাভাবিক কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয় এবং ফলশ্রুতিতে শ্বাসকষ্ট এবং হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে একটি মানুষ সারা জীবনের জন্য পাগল কিংবা কোমায় চলে যেতে পারে। বিষয়টি এরকম স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও গ্রামের মানুষ তা মানতে নারাজ। এজন্যই বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন রাতের বেলায় গাছের নিচে শুয়ে না ঘুমানো কথা।
এই জায়গাটিকে ভিন্নধর্মী জায়গা বলার কারণ -২
আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে এখানে আরো একটি দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। দিনের বেলা সবাই যখন যার যার স্বাভাবিক কাজে ব্যস্ত তখনই কেউ একজন সে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন একজন বৃদ্ধ ব্যক্তির লাশ সেখানে পরে আছে।গ্রামের লোকজন অনেকে একসাথে জড়ো হয়েও সেই লোকটিকে চিনতে না পারেন নি।পরবর্তীতে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে গিয়ে তার পরিচয় সনাক্ত করেন।এই ঘটনার পর গ্রামবাসীর ভুল ধারণা আরো জোরালো হয়ে গিয়েছিল।ব্যক্তিগতভাবে এই ঘটনার সাক্ষী আমি নিজেও। সকাল দশটার দিকে পুলিশ ময়না তদন্ত করার জন্য ভ্যানে করে সেই বৃদ্ধ লোকটির লাশ থানায় নিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে অবশ্য সেই খুনের রহস্য উদঘাটন হয়েছিল কিন্তু তারপরও গ্রামের মানুষ সেটিকে একটি খারাপ এবং অভিশপ্ত জায়গা বলেই চিহ্নিত করে থাকে।
আসুন জেনে নেই প্রকৃতপক্ষে সেই বৃদ্ধ ব্যক্তির সাথে কি ঘটেছিল
যেহেতু বৃদ্ধ লোকটির লাশ পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল এবং ময়নাতদন্ত করে শেষ করে পুলিশ খুনিকে ধরার জন্য চেষ্টা শুরু করেন। অল্প কিছুদিন পরে পুলিশ সেই খুনের রহস্যাও উদঘাটন করতে সক্ষম হয় । সেই বৃদ্ধ লোকটি ছিল একজন গরুর ব্যবসায়ী। সেই রাতে বৃদ্ধ লোকটি গরু বিক্রি করে অনেকগুলো টাকা নিয়ে তার ভাতিজার সাথে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু তার অল্প বয়স্ক ভাতিজা সেই টাকার লোভে পড়ে যায় এবং তাকে শর্টকাট রাস্তা হিসেবে এই রাস্তাটি দিয়ে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করান।যেহেতু আমি আগেই বলেছি এই জায়গাটি অনেক নির্জন এবং দিনের বেলায় খুব বেশি লোকজন দেখা যায় না সেখানে রাতের বেলায় কাউকে দেখতে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই সে ছেলেটির এই সুযোগ নিয়ে লোকটিকে মেরে লোকটি সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং আমাদের গ্রামে নিয়ে আসে, সেই জায়গাটিতে দাঁড়িয়েই সে সমস্ত স্বীকারোক্তি এবং ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ দিয়েছিল আমি তা নিজ চোখে দেখেছি এবং শুনেছি।
এই ছিলো আজকে আমার গ্রামের ভিন্নধর্মী স্থানের বিরবণ। এখানে আমি কোনোরকম কুসংস্কার এবং ভ্রান্ত ধারণাকে সাপোর্ট করে লিখি নি বরং এর বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দিয়েছি।
আমি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি
@pathanapsana
@elisilva05
@majo12
@ahlawat এবং
@m-fdo
ধন্যবাদান্তে,
@pea07
Congratulations! Your post has been upvoted by @steemladies. The community where the Steemian ladies can be free to express themselves, be creative, learn from each other, and give support to their fellow lady Steemians.
টুইটার শেয়ার লিংক
https://twitter.com/pea079/status/1683365216070008832?t=mAlWOOxd6ukqLjBfOYVJGw&s=19
This post has been upvoted through steemcurator08. We support quality posts anywhere and with any tags. Curated by: @irawandedy
বাহ চমৎকার উপস্থাপন করেছেন আপু। আপনার এলাকায় ভিন্ন ধর্মী জায়গা সম্পর্কে অনেক সুন্দর উপস্থাপন করেছেন। দুরঙ্গের বটগাছ নামকরণ সম্পর্কে ফুটিয়ে তুলেছেন। জায়গাটা অনেক ভয়ানক যার কারণে ওই গাছ তলায় মানুষ পর্যন্ত যায় না, বৃদ্ধ লোকটির সাথে খুবই খারাপ হয়েছিল, সামান্য কিছু টাকার জন্য তাকে মেরে ফেলা উচিত হয়নি। আপনার এই পোস্টটি পড়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে গিয়েছি আপু। অসংখ্য ধন্যবাদ প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করার জন্য । শুভকামনা রইল
লিখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনার পোস্টটি পড়ে আমার শুধু একটা কথাই বলার ইচ্ছে করতেছে মানুষ কতটা লোভী এবং খারাপ হতে পারে সামান্য কিছু টাকার জন্য। আমাদের এলাকায় অনেকগুলো এরকম জায়গা রয়েছে যেগুলোতে মানুষ যেতে ভয় পায়। ধন্যবাদ আপু ভিন্নধর্মী একটি জায়গা নিয়ে আলোচনা করার জন্য আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে
আপনি ভয়ানক একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আপু। যদিও এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা গুলো সম্পন্ন বিষয়টিকে পরিষ্কার করে বুঝতে সাহায্য করে। আপনার কন্টেনটি অনেক সুন্দর হয়েছে। ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার। আপনার এলাকার ভিন্নধর্মী একটি স্থান দুরুঙ্গের বটগাছ তলা সম্পর্কে অসাধারণ লিখেছেন আপু।আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপু
আপনার এলাকার ভিন্নধর্মী স্থান ছোট বটগাছ তলা নিয়ে আপনি চমৎকার একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।আপনার পোস্টটি পড়ে আমি প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আপনার ফটোগ্রাফি গুলো ও দারুণ হয়েছে। ধন্যবাদ আপু
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু
আপনি আপনার এলাকার ভিন্ন ধর্মী জায়গার একটি খুব সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আসলে প্রথম কার ঘটনাটি শুনে আমারও খুবই ভয় লেগেছিল। কিন্তু সব বিষয়েরই একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখা অবশ্যই রয়েছে। আসলে আপনার পোস্টটি পড়ার সময় আমি এ কথাটি ভাবছিলাম। পরে দেখি যে, আপনিও এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এটা দেখে আমার খুবই ভাল লাগল। আপনার পোস্টটি পড়ে আমি মুগ্ধ হলাম।আপনি খুব সুন্দর সাজিয়েছেন আপনার পোস্টটিকে।প্রতিযোগীতার জন্য আমার কাছে পারফেক্ট মনে হচ্ছে। তবুও শুভকামনা জানাচ্ছি।ছবিগুলো অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে আপু।ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপু
আমরা কমবেশি সকলেই জানি দিনের বেলা বড় গাছ অক্সিজেন ছাড়ে এবং রাত্রেবেলা কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহন করে। গ্রামের মানুষ হয়ত অই লোকের গলা টিপের ধরার কাহিনি হিসাবে ভূতের ভয় ডেকে এনেছে তাই না আপু। পুরাটা পড়লাম অনেক সুন্দর হয়েছে।
That's great place for discussion..... thank you