এক সময়ের গ্রাম বাংলার ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি। যা এখন বিলুপ্তির পথে।

in Steem For Traditionlast year

আজ শুক্রবার
৪ আগষ্ট ২০২৩

আসসালামু আলাইকুম

প্রিয় স্টিম বাসি সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আপনাদের জন্য রইলো অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসা ও শুভকামনা। আজকে আমি গ্রাম অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো এবং দেখাবো আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তো দেরি কেনো চলেন শুরু করা যাক।

Picsart_23-08-04_11-58-38-636.jpg
কভার ফটো
ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি

ঢেঁকি হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। একসময়ের এক অন্যতম মাধ্যম ছিলো ঢেঁকি যা গ্রামীণ জীবনের একমাত্র অনুষঙ্গ। ধান থেকে চাল তৈরি করার জন্য, এবং কি চাল থেকে চালের গুড়া তৈরি করার জন্য ঢেঁকি ব্যবহার করা হতো। গম থেকে আটা তৈরি করা হতো ঢেঁকির মাধ্যমে। এক সময় ঢেঁকি ছাড়া কল্পনা করাও কঠিন ছিলো।

IMG_20230627_141032_669.jpg

গ্রাম অঞ্চলের প্রত্যেকটি বাড়িতে ঢেঁকি ছিলো। বিভিন্ন প্রকার উৎসবে ঢেঁকির শব্দ পাওয়া যেতো। এ যেন এক মনমুগ্ধকর পরিবেশ। গ্রামের মা বোনেরা একসাথে মিলিত হয়ে ঢেঁকি দিয়ে আতপ চালের গুঁড়া বানাতো, সেই গুঁড়া দিয়ে চলতো পিঠা উৎসব ।দরিদ্র পরিবারের মা বোনেরা সারারাত ধান মাড়াই করে দিতো গ্রামের গৃহস্তের বাড়িতে, তার বিনিময়ে চাল পেতো, সেই চাল বাড়িতে নিয়ে এসে রান্না করে খেতো। অনেক কষ্ট করে তারা জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো ।

IMG_20230627_140900_542.jpg
IMG_20230627_140902_060.jpg

ঐ আলোকে একটি উপন্যাস লেখা হয়েছিল, সেই উপন্যাসের নাম ছিলো হাজার বছর ধরে। নবম শ্রেণীতে আমরা হাজার বছর ধরে উপন্যাসটি পড়েছিলাম। কে কে আপনারা হাজার বছর ধরে উপন্যাস পড়েছেন? গ্রামের মহিলারা একসাথে ঢেঁকিতে বারা ভানতো, এবং গান গাইতো।

IMG_20230627_141031_461.jpg

একসাথে ২-৩ জন নারী ঢেঁকিতে ধান ভানতে পারে। ঢেঁকির শেষ প্রান্তে পা দিয়ে পালাক্রমে চাপ দিতে হয়। পা সরিয়ে ফেললে ঢেঁকির মুখ সিমেন্টের খোঁড়ল এ গিয়ে চাপের সৃষ্টি করে সেখান থেকেই ধান এর খোলসটা ওঠে গিয়ে চালে রূপান্তরিত হয় ।গ্রাম বাংলার একটি গান আছে, ও ধান ভানিরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, ঢেঁকি নাচে আমিও নাচি হেলিয়া দুলিয়া, ও ধান ভানিরে। ঢেঁকি আমাদের গ্রাম বাংলার এক বিশেষ ঐতিহ্য। যার রাজত্ব ছিল গ্রাম বাংলার প্রতিটি জনপদে।

IMG_20230627_141015_741.jpg

আমি ঢেঁকিতে ধান ভানতে দেখেছি, আমাদের বাড়িতে এখনো ঢেঁকি রয়েছে। যে ঢেঁকির সাহায্যে চালের গুঁড়া করা হয় ।ঢেঁকি দিয়ে তৈরি চালের গুঁড়ার পিঠা অনেক সুস্বাদু। বর্তমান সময়ে কিছু কিছু বাড়িতে ঢেঁকি থাকলেও, তা আর ব্যবহার হয় না। হয়তো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ধান মাড়াই করার জন্য মোটর চালিত ইঞ্জিন চালিত নানারকম যান্ত্রিক মেশিন নামার কারণে ঢেঁকির ব্যবহার একদম বিলুপ্ত।

IMG_20230627_140914_146.jpg

মেশিন দিয়ে চালের গুঁড়া করে পিঠা বানালে সেই পিঠার স্বাদ তেমন একটা পাওয়া যায় না। তাইতো গ্রামে দুই একজনের বাড়িতে এখনো ঢেঁকি রয়েছে, যা দিয়ে চালের গুঁড়া করা হয়। যে বাড়িতে ঢেঁকি রয়েছে সেই বাড়িতে অনেকেই যায় ঢেঁকি দিয়ে চালের গুঁড়া করতে।

IMG_20230627_140840_462.jpg

বর্তমান সময়ের গ্রামগঞ্জে গড়ে উঠেছে রাইস মিল,যে মিলে তৈরি করা হয় চালের গুঁড়া ধান থেকে চাল ,গম থেকে আটা। অল্প সময়ের মধ্যে স্বল্প খরচে মানুষ চালের গুঁড়া করতে পারে।মানুষ এখন আর পরিশ্রম করতে চায় না। তাইতো ঢেঁকি হয়ে গেছে অচল, পরিশ্রম না করার কারণে মানুষের শরীরে নানা রকম রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। ধান ভাঙ্গা কল আসার পর থেকে গ্রাম থেকে বিলীন হয়ে গেছে ঢেঁকি। এখন আর গ্রামে ঢেঁকি দিয়ে ধান ভানার দৃশ্য চোখে পড়ে না। ভোরের সকালে ঢেঁকির শব্দ কানে এসে পৌঁছায় না।

IMG_20230627_140830_062.jpg

কালের বিবর্তনে এক সময় হারিয়ে যাবে এই ঢেঁকি, নতুন প্রজন্ম ঢেঁকি চিনবেই না। ঢেঁকি শব্দটি হয়ে যাবে অতীতের গল্প। তবে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত। কার কার বাড়িতে ঢেঁকি রয়েছে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। কেমন লাগলো ঢেঁকি নিয়ে আমার এই সামান্য পোস্টটা সেটাও কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আজ এ পর্যন্তই। আবারো লিখবো অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে।

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
মোবাইল সংক্রান্ত তথ্যঃ
মোবাইলTECNO CAMON 16 PRO
ধরণঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি
ক্যামেরা৬৪ মেগাপিক্সেল
ফটোগ্রাফার@aslamarfin
অবস্থানটাঙ্গাইল।
Sort:  
 last year 

ঢেঁকি নিয়ে আপনি সুন্দর একটি পোস্ট লিখেছেন। একটা সময় ছিল যখন ধান ভাঙ্গা, চালের গুড়া, গমের গুড়ো ইত্যাদি সবকিছুই করা হতো এই ঢেকিঁর সাহায্য। এই ঢেঁকিতে এই কাজগুলো করতে অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হতো।আমাদের পাশের বাসায় ও এইরকম একটি ঢেকিঁ ছিল।আমি ও ছোট বেলায় দাদির সাথে ঐ বাসায় যেতাম চাল গুড়ো করতে।কিন্তু বর্তমানে ধান ভাঙ্গা, চাল ও গম গুড়ো করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক মেশিন বের হওয়ায় এখন আর এই ঢেকিঁ দেখা যায়।পুরো এলাকা খুজলে একটিও ঢেঁকি পাওয়া যাবে না।ঢেঁকি নিয়ে আপনি খুব সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ ভাইয়া

 last year 

ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

বাহ্ অসাধারণ একটা বিষয় নিয়ে পোস্ট উপস্থাপন করেছেন ভাই।ঢেঁকি আমাদের ঐতিহ্যবাহী।আগের যুগে ঢেঁকি সবার বাড়িতে ছিল।চাল গুড়ো করে সেগুলো পিঠা তৈরি করে।কিন্তু এখন আফসোস আগের দিনের মত এখন আর হবে না।এখন ডিজিটাল যুগ। আপনি ঢেঁকি নিয়ে সুন্দর বিস্তারিত আলোচনা করছেন আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির চিত্র দেখে অনেক ভালো লাগলো ভাই।ছোটবেলায় আমাদের গ্রামে আমি দেখেছিলাম একটি ঢেকি ছিল।সেখানে আমার মা ও দাদীরা গিয়ে চালকুটে আনতো। কিন্তু সেই দিনগুলো এখন মনে পড়ে হয়তো আর সেই দিনগুলো আর ফিরে আসবেনা। ঢেঁকি দিন দিন বিলুপ্তির পথে দারুন একটি পোস্ট করেছেন আপনি ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

ঢেঁকি হলো গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বটে। আগেকার সময়ে দেখা যেত ধান,চাল,গম ইত্যাদি যাবতীয় খাদ্যসামগ্রী ভাঙ্গার জন্য এই ঢেঁকির প্রয়োজন ছিল। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি। ঢেঁকি নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন ভাই।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

ঢেকির ব্যবহার দিন দিন একেবারেই কমে যাচ্ছে। বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও গ্রামের বেশ কিছু বাড়িতে এখনো ঢেঁকি দেখা যায়। তবে এসব ঢেঁকি তেমনভাবে ব্যবহার করা হয় না। অনেক পুরনো একটি জিনিস নিয়ে আজকের পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year (edited)

ছোটবেলায় যখন গ্রামের বাড়িতে যেতাম তখন দেখতাম প্রত্যেকটি বাড়িতে এরকম ঢেঁকি রয়েছে। বর্তমানে ভাই পুরো গ্রাম খুঁজেও একটি ঢেঁকি পাওয়া মুশকিল। শুরুতে ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গা হত তারপর মেশিন আসার পর সেটা বন্ধ হয়ে গেল।তারপরও ঢেঁকিতে চাউলের গুড়া করা হতো বর্তমানে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ।অসাধারণ একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। শুভকামনা রইল

 last year 

ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

ভাইয়া আপনি এই ঢেঁকি কোথায় পেয়েছেন? আমাদের গ্রামে অনেক খুঁজেছি কিন্তু একটাও ঢেঁকি পাইনি।এই দৃশ্যগুলো গ্রাম বাংলার কিছু ঐতিহ্যবাহী দৃশ্য। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার মা এমন করে ঢেঁকিতে আটা কুটতেন।আমি পাশে বসে দেখতাম। সামনে একজন বসে থাকেন যিনি গর্তের ভিতরের চালগুলো বারবার নাড়িয়ে দেন। এই কাজটি খুবই রিস্কি। সুন্দর একটি বিষয় তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

এই ঢেঁকিতে কত আটা তৈরি করা দেখেছি, চাল গুঁড়ো করা দেখেছি, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এখন এই ঢেঁকি খুঁজেই পাওয়া যায় না, একবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আপনার মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি দেখে খুবই ভালো লাগলো, অনেক সুন্দর আলোচনাও করেছেন, শুভকামনা রইলো আপনার জন্য ভাইয়া।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

পিঠা বানানোর জন্য চাল দিয়ে আটা বানানোর জন্য ঢেকি একটা সময় খুবই জনপ্রিয় ছিলো। ছোটনেলায় আমিও আমার আম্মুর সাথে আটা বানতে যেতাম। আমাদের বাড়ির দুই বাড়ি পড়েই এক দাদির বাড়িতে ঢেকি ছিলো। পাড়ার মানুষ সেখানেই আটা বানতো। কিন্তু এখন কালের বিবর্তনে এই ঢেকি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ঢেকি নিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন ভাই।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 67163.45
ETH 2666.94
USDT 1.00
SBD 2.70