স্টীম ফর ট্রেডিশন এর সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। প্রিয় স্টীম বাসী সবাই কেমন আছেন? আমি আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রত্যেক জাতিরই ইবাদত করার জন্য নির্দিষ্ট কোন স্থাপনা রয়েছে , আমি বেশ কয়েকদিন যাবত, খুঁজে বেরিয়েছি একদম পুরনো কোন মসজিদ বা মন্দির। তবে আমি নীলফামারী জেলায় থাকার সুবাদে,পার্শ্ববর্তী জেলা দিনাজপুর এর মধ্যে খুঁজে পেয়েছি ১৭০৪ সালে নির্মিত পোড়ামাটির দ্বারা আবৃত কান্তজিউ মন্দির। আজ আমি আপনাদের সেই মন্দির দেখাবো এবং মন্দির নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি আপনাদের ভাল লাগব, তো চলেন শুরু করি ।
![Picsart_23-05-01_13-48-59-700.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWZU1hxUKHznQXwSYemg5zTPMJrNk9oRkdsFkgRDUgLyn/Picsart_23-05-01_13-48-59-700.jpg) |
দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার উত্তরে ঢেঁপা নদীর তীরে কান্তজিউ মন্দির অবস্থিত। পোড়া মাটির ফলক চিত্র শিল্পের অতুলনীয় নির্দশন বহনকারী এই নবরত্ন মন্দির উপমহাদেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শন। এত উৎকৃষ্ট চিত্রফলক সে যুগে বাংলার আর কোথাও দেখা যায় না। তাই আমি খুঁজে খুঁজে চলে গিয়েছিলাম এই কান্তজিউ মন্দির দেখতে। এবং সেখানে গিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কান্তজিউ মন্দির সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য মানুষের জানার জন্য একটি নির্দেশনা বোর্ড দেখতে পেলাম, সেখান থেকেই তথ্যগুলো আপনাদের আমি তুলে ধরছি।
শ্রীকৃষ্ণের ১০৮ নামের মধ্যে শ্রীকান্ত একটি নাম। তাই মহারাজা প্রাণনাথ শ্রীকৃষ্ণের কান্ত নাম অনুসারে মন্দিরটির নাম রাখেন কান্তজিউ মন্দির। অর্থাৎ কান্ত তো হচ্ছে কৃষ্ণের নাম, আর জিউ হচ্ছে সম্মান প্রদর্শন। মন্দির প্রতিষ্ঠার পর মন্দিরের নাম অনুসারে সেই গ্রামের নাম রাখা হয় কান্তনগর। কান্তনগর গ্রামটি ছিল দ্বীপের মত এর চারপাশে ঢেঁপা নদী প্রবাহিত ছিল। মন্দির নির্মাণের পূর্বে এখানে কোন জনবসতি ছিল না।
মহারাজা প্রাণনাথ শুধু একজন দক্ষ শাসক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন নির্জন ধার্মিক। তাই তিনি শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা ও পূজা চর্চার জন্য এমন একটি নির্জন জঙ্গলাকীর্ণ একটি দ্বীপকে বেছে নেন। কারণ প্রাচীন কালে মুণী- ঝষিরাও এরকম নির্জন ও গভীর অরণ্যের তাপস্যা করতেন। ১৯৬০ সালে কান্তজিউ মন্দির সরকার কৃতক সংরক্ষিত প্রাচীন কীর্তি হিসেবে ঘোষণার পর থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এর আবশ্যকীয় সংস্কার ও সংরক্ষণ কার্যাদি সম্পাদন করেছে।
এখন যে মন্দিরটি দেখতে পাচ্ছেন, এটি কান্তজিও মন্দির এর পাশে খোলা মাঠে অবস্থিত। মনে হচ্ছে এটা একসাথেই নির্মাণ করা হয়েছিল, এটাও বেশ পুরনো।
১৬০৮ সালে দিনাজপুরের রাজবংশের প্রথম রাজা শ্রীমন্ত দত্ত রাজবংশের ভিত্তি হিসেবে স্থাপন করেন। যা প্রায় সাড়ে তিনশত বছর স্থায়ী হয়েছিল। দিনাজপুরের রাজবংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা প্রাণনাথ শ্যামগর (বর্তমান নাম কান্তনগর) নামক দ্বীপের মত নির্জন জায়গায় বাংলার স্থাপত্যের গর্ব শ্রী শ্রী কান্তজিও মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় ১৭০৪ খ্রি.।রাজা প্রাণনাথ বেঁচে থাকতে মন্দিরে কাজ সমাপ্ত করতে পারেন নি। তাই তার দত্তক পুত্র রামনাথ ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরের কাজ সম্পন্ন করে বিগ্রহ স্থাপন করে। অপূর্ব সুন্দর অতুলনীয় রূপে শ্রী শ্রী কান্তজিউ মন্দিরের গায়ে আছে অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক চিত্র।
ফলকচিত্র গুলোর মাধ্যমে রামায়ণ, মহাভারতসহ অসংখ্য পৌরাণিক কাহিনী বর্ণনা করা আছে। দিনাজপুরের প্রখ্যাত জমিদার প্রাণনাথ ও তার পোষ্য পুত্র রামনাথ ১৭০৪-১৭৫২ খৃষ্টাব্দে এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। ৫০ ফুট বর্গাকৃতির ত্রিতল বিশিষ্ট ইটের তৈরি এ মন্দিরটি একটি উঁচু মঞ্চের উপর নির্মিত। প্রস্তর নির্মিত ১ মি. উঁচু বর্গাকার একটি ভিত্তি বেদীর উপরে কান্তজিউ মন্দির প্রতিষ্ঠিত। ভিত্তি বেদীর প্রত্যেক বাহু ১৮.৩৭ মিটার দীর্ঘ এবং বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরের প্রত্যেক বাহু ১৫.৫৪ মিটার দীর্ঘ।
এই মন্দিরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল পোড়ামাটির চিত্রফলক। সম্পূর্ণ মন্দিরটি ছোট বড় অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক দ্বারা আবৃত। মন্দিরটির নিচের অংশে রয়েছে মুঘল শাসনামলের বিভিন্ন নৌকা ভ্রমণ, হাতি ঘোড়া সব বিভিন্ন প্রাণী, সৈন্য সামন্ত, পাইক- পেয়াদাসহ নানা রকমের দৃশ্য বলি যা পোড়ামাটির ফলক দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে। মন্দিরের পাশে একটি গাছ রয়েছে যেটাতে ভক্তরা নানা রকম সুতা বেঁধে রাখে, তারা বিশ্বাস করে এ গাছে সুতা বাঁধলে তাদের মনের আশা পূর্ণ হয়।
![IMG_20230426_173823_505.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRTDfAA9mQUhrtp8jhM1PrbBCJuVUK5414SxKWPswnFur/IMG_20230426_173823_505.jpg) |
![IMG_20230426_173847_280.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZT3D9TECfoi9F2jMKu6fCHYDSiAQVmQBGBi6MD9QrQmt/IMG_20230426_173847_280.jpg) |
এখন এই দৃষ্টিনন্দিত পোড়ামাটির ফলক দ্বারা চিত্রিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধীনে রয়েছে। আপনারা চাইলে গিয়ে দেখে আসতে পারেন ঘুরে আসতে পারেন। এগুলো হলো প্রাচীন নিদর্শন, যা অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। ঠিক তেমনি আমি এই নির্দেশনটি দেখার জন্য ছুটে গিয়েছিলাম, বেশ ভালো লেগেছে। আজ এ পর্যন্তই আবারও লিখব অন্য কোন বিষয় নিয়ে, কেমন লাগলো তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। আর মন্দির নিয়ে সমস্ত তথ্যগুলো আমার ব্যক্তিগত নয়, এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের লেখা যা মন্দিরের সামনে টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে।দর্শনার্থীদের এ মন্দির সম্পর্কে জানার জন্য। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আজ এ পযন্তই
আমি আমার দুই জন বন্ধু কে এই প্রতিয়োগিতায় অংশ গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি : @radleking & @marialexandra.
ক্যামেরা | TECNO CAMON 16 PRO |
ধরণ | ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দির |
ক্যামেরা | ৬৪ মেগাপিক্সেল |
ফটোগ্রাফার | @aslamarfin |
অবস্থান | দিনাজপুর |
আল্লাহ হাফেজ
কান্তজির মন্দির নিয়ে আপনি অসাধারণ একটি পোস্ট লিখেছেন ভাইয়া। এটি দিনাজপুর জেলার টেপা নদীর পাড়ে অবস্থিত। আমি এই মন্দিরে দুই বার গেছিলাম ঘুরতে। আপনি খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে কান্তজির মন্দির নিয়ে একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদভাইয়া।
অনেক ধন্যবাদ আপু 🥰
কান্তজিউ মন্দির নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।এটি ১৭০৪ সালে নির্মান করা হয়। এটি দিনাজপুর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে বিভিন্ন জেলার মানুষ ঘুরতে আসে। সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
অনেক ধন্যবাদ ভাই 🥰
পোড়ামাটির ফলক নির্মিত কান্তজীর মন্দির দেখতে অসম্ভব রকমের সুন্দর। কান্তজীর মন্দির আমাদের দেশের একটি সম্পদ। দেশ বিদেশের অনেক মানুষ এই মন্দির দেখার জন্য ভিড় জমায় এইখানে। আপনি অনেক সুন্দর ছবি তুলেছেন ভাইয়া আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই 🥰
দিনাজপুর শহরের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দির সম্পর্কে খুব সুন্দর লিখেছেন আপনি।কান্তজির মন্দিরে বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েছিল তবে তিন থেকে চার বছরের ভেতরে যায়নি কখনো। এটি ঐতিহ্যে ভরপুর একটি মন্দির। খুব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন ভাই ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক ধন্যবাদ ভাই 🥰
দিনাজপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী মন্দির হচ্ছে কান্তজির মন্দির। এই মন্দিরটি অনেক পুরাতন একটা মন্দির। এই মন্দির দেখার জন্য অনেক দূর থেকে লোকেরা আসে।আমি প্রায় দুই বার গেছিলাম। আপনি কান্তজির মন্দির নিয়ে খুব সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন ভাই। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
অনেক ধন্যবাদ ভাই 🥰
এই মন্দির বেশ কয়েকবার দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। অসাধারণ একটি জায়গা।পুরাতন স্থাপনা গুলো দেখতে এমনিতেই অনেক ভালো লাগে। সাজিয়ে গুছিয়ে খুব সুন্দরভাবে পোস্ট করেছেন ভাই। শুভকামনা রইল আপনার জন্য
অসংখ্য ধন্যবাদ বড় ভাই 🥰
কান্তজির মন্দির নিয়ে অসাধারণ লেখছেন ভাই, কান্তজির মন্দির হলো নাম করা একটা মন্দির, এই মন্দির দেখার জন্য মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে,এই কান্তজির মন্দির অনেক পুরনো, আপনি সুন্দর একটা পোস্ট উপস্থাপন করেছেন ভাই, আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর একটা পোস্ট করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ ভাই 🥰
১৭০৪ সালে কান্তজীর মন্দির নির্মাণ করা হয়। এই কান্তজী মন্দির আমাদের বাসা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমি অনেক বার এই কান্তজী মন্দির গিয়েছিলাম।কান্তজীর মন্দির নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন।
অনেক ধন্যবাদ বড় ভাই 🥰
ঐতিহ্যবাহী কান্তজির মন্দিরে অনেকবার গিয়েছিলাম। পুরনো এই কান্তজির মন্দির সম্পর্কে অনেক কিছুই আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন যা আমার অজানা ছিলো। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি প্রতিযোগিতামূলক পোস্ট আমাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ ভাই 🥰