পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার বিশিষ্ট ২০১গম্বুজ মসজিদ

in Steem For Traditionlast year (edited)

আজ মঙ্গলবার
২৫ এ জুলাই ২০২৩

আসসালামু আলাইকুম

প্রিয় স্টিমবাসী সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আপনাদের জন্য রইলো অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসা এবং শুভকামনা। আমার জেলা টাঙ্গাইল জেলা, টাঙ্গাইল জেলায় গোপালপুর উপজেলায় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ বিশিষ্ট, এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতর মিনার বিশিষ্ট ২০১ গম্বুজ মসজিদ সম্পর্কে বলবো, টাঙ্গাইল জেলার এবং গোপালপুর উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে বলবো। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তো দেরি কেনো চলেন শুরু করা যাক।

Picsart_23-07-24_22-26-57-743.jpg
কভার ফটো
🕌২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ 🕌

ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত টাঙ্গাইল জেলা, টাঙ্গাইল জেলার নামকরণ সম্পর্কে চলেন সংক্ষিপ্ত ধারণা নেওয়া যাক

টাঙ্গাইল জেলার নামকরণঃ

ইতিহাস প্রণেতা খন্দকার আব্দুর রহিমের মতে টাঙ্গাইলের লোকেরা টান শব্দের ব্যবহারে বেশি অভ্যস্ত ছিল। বর্তমানেও টান শব্দের প্রচলন রয়েছে। টানের সাথে যুক্ত হয়েছে আইল, আইলটি রূপান্তরিত হয়ে হয়েছে টাঙ্গাইল। অন্যান্য দার্শনিকদের মতে, ইংরেজ সন্তোষ ব্রিটিশ আমল থেকে এই রাজস্ব আদায় করতো, রাজস্ব আদায়ের জন্য এসে ঢাকা যাওয়ার পথে, সবকিছুর লুটপাট করে নিয়ে যায়। এবং কিছু মানুষ মেরে টাঙিয়ে রেখে যায়, সেখান থেকে টাঙ্গাইল এর উৎপত্তি। কারো কারো ধারণা মতে,টাঙ্গাইলের উঁচু জমি , যেটাকে টং বলা হয়। উঁচু জমির আইল টঙ্গের সাথে যুক্ত করে টাঙ্গাইল হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলায় মোট ১২ টি উপজেলা রয়েছে।

  • টাঙ্গাইল উপজেলা
  • নাগরপুর উপজেলা
  • সখিপুর উপজেলা
  • গোপালপুর উপজেলা
  • ঘাটাইল উপজেলা
  • মধুপুর উপজেলা
  • ধনবাড়ি উপজেলা
  • দেলদুয়ার উপজেলা
  • বাসাইল উপজেলা
  • কালিহাতী উপজেলা

এই ১২ উপজেলার মধ্যে, গোপালপুর উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় ২০১ গম্বুজ মসজিদ অবস্থিত। যে মসজিদটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।

IMG_20230702_112219_822.jpg

যেহেতু ২০১ গম্বুজ মসজিদ টাঙ্গাইলের গোপালপুরে অবস্থিত। সুতরাং গোপালপুরের নামকরণ সম্পর্কে জেনে আসা যাক। চলেন গোপালপুর এর নামকরণ সম্পর্কের সংক্ষিপ্ত ধারণা নিয়ে আসি।

গোপালপুর উপজেলার নামকরণঃ

যমুনা তীরবর্তী ঝিনাই নদী সংলগ্ন উপজেলা গোপালপুর উপজেলা, কারো কারো মতে মুঘল শাসনামলে, এক দরবেশ এই স্থানে আস্তানা গড়েছিলো, তার নাম অনুসারে গোপালপুর নামকরণ করা হয়। আবারো বলা হয় গোপাল শাহ নামে জমিদার রানী ভবনের নিকট হতে মৌজা পওনি নেন, এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তার নাম অনুসারে গোপালপুর নামকরণ করা হয়। যমুনা নদীর তীরবর্তী হওয়ার কারণে বহুবার গোপালপুর এর মানচিত্রের পরিবর্তন ঘটে। গোপালপুরের নলিন বাজার সংলগ্ন যমুনা নদী অবস্থিত। এখানে পুর বলতে বাড়ি বা আস্তানাকে বুঝানো হয়েছে, তাই গোপাল শাহ এর নামের সাথে পুর যুক্ত হয়ে হয়ে গেছে গোপালপুর।

গোপালপুরে ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ অবস্থিত

টাঙ্গাইল জেলায় গোপালপুর উপজেলায় পাথালিয়া গ্রামে ২০১ গম্বুজ মসজিদ অবস্থিত। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্ট এর নিজস্ব উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ২০১৩ সালে জানুয়ারি মাসে এই মসজিদটির কাজ শুরু করা হয়।

IMG_20230702_112149_564.jpg

ঝিনাই নদীর তীরে এই মসজিদটি অবস্থিত। যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, ঢাকা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ২০১ গম্বুজ এবং নয়টি বিশাল মিনার রয়েছে। ২০১৩ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৪ বিগা জমির উপর মসজিদ এবং মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০২৩ সালে যার সমাপ্তি ঘটে।

IMG_20230702_112226_202.jpg
IMG_20230702_112103_117.jpg

বিদেশ থেকে আনা মার্বেল পাথর দ্বারা মসজিদটি নির্মিত। মসজিদ কমপ্লেক্সে লাশ রাখার হিমাগার রয়েছে পাশে রয়েছে বৃদ্ধাশ্রম, বিনামূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা। মসজিদ নির্মাণ করতে ৫৫ মন পিতল ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদে টাইলসে নির্মিত রয়েছে পূর্ণ কুরআন শরীফ। স্বর্ণাজ্জ্বল মার্বেলের তৈরি সোনালী রঙের এই মসজিদটি।

IMG_20230702_110126_174.jpg

মসজিদটি দেখে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। মসজিদটি যেদিন উদ্বোধন করা হয়, সেদিন কাবা শরীফের ইমাম দ্বারা মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়। যা বাংলাদেশের জন্য এক গৌরব দৃষ্টান্ত। মসজিদটি দেখতে দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক এবং দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। এবং কি ধর্ম প্রাণ মুসলমানরা মসজিদটিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। এবং জুম্মার নামাজ আদায় করতে অসংখ্য মুসলমানদের ভিড় থাকে।

IMG_20230702_110211_186.jpg

মহিলাদেরও নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই মসজিদটিতে। মসজিদটি এতটাই সাজ- সজ্জিত যে, দেখে মনের মধ্যে প্রশান্তি কাজ করে যে। মসজিদ দেখাশোনা করার জন্য ১০ জন খাদেম রয়েছে।

IMG_20230702_112708_956.jpg
IMG_20230702_112715_970.jpg

মসজিদের টাইলস গুলো স্বর্ণের মতো জ্বলজ্বল করছে। রাত্রিবেলা এর সৌন্দর্য আরো বেশি ফুটে ওঠে। মসজিদটির প্রত্যেকটি গম্বুজ স্বর্ণ কুচিত টাইলস এ মোড়ানো। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যে আলোকিত।

IMG_20230702_112648_162.jpg

মসজিদের ভিতরে বড় গম্বুজ রয়েছে ১ টি এবং ২০০ টি ছোট ছোট গম্বুজ রয়েছে। ২০১ গম্বুজ মসজিদ টি টাঙ্গাইল জেলাকে বিখ্যাত করে তুলেছে সারা বিশ্বের কাছে।

IMG_20230702_111443_200.jpg

ভিতর থেকে তোলা এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় গম্বুজ, এর পাশেই রয়েছে ২০০ টি ছোট ছোট গম্বুজ। এখন আমি আপনাদের ছোট গম্বুজ দেখানোর চেষ্টা করবো।

IMG_20230702_111820_800.jpg
IMG_20230702_111817_821.jpg

ছোট বড় বৃদ্ধ - বৃদ্ধা সবাই এই মসজিদ দেখতে আসে ,এবং নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া প্রার্থনা করে। পাথালিয়া গ্রামটি প্রতি শুক্রবার জনসমুদ্রে পরিণত হয়। একসাথে ৫০ হাজার মানুষ এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে।

IMG_20230702_111944_468.jpg
যেভাবে ২০১ গম্বুজ মসজিদ দেখতে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে হলে, ঢাকা মহাখালী থেকে টাঙ্গাইল গোপালপুর দ্রুতগামী বাস রয়েছে। যার ভাড়া নিবে জনপ্রতি ২৫০, ৩০০ টাকা করে। আমি মহাখালীর কথা বললাম আপনি অন্য জায়গা থেকেও দ্রুতগামী বাসে উঠতে পারবেন। তারপর গোপালপুর নেমে ৫ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে থানা মোড় চলে যাবেন।

IMG_20230702_112409_280.jpg

সেখান থেকে পাথালিয়া ২০১ গম্বুজ মসজিদ এ যাওয়ার অটো পাবেন। ভাড়া ২০ টাকা নিবে জনপ্রতি। আর যদি আপনি ট্রেনে করে যান তাহলে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব তে আপনাকে নামতে হবে। সেখান থেকে গোপালপুরের সিএনজি পেয়ে যাবেন। সিএনজি থেকে নেমে ৫ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে থানা মোড় চলে যাবেন। সেখান থেকে ২০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে ২০১ গম্বুজ মসজিদে চলে আসবেন।

IMG_20230702_112149_564.jpg

আপনাদের সবাইকে টাঙ্গাইল শহর, গোপালপুর উপজেলায় ২০১ গম্বুজ মসজিদ দেখার আমন্ত্রণ রইলো। আমি আমাদের টাঙ্গাইল জেলার নামকরণ সম্পর্কে, এবং গোপালপুর উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সামান্য চেষ্টা করেছি। সমগ্র বিশ্বের বেশি গম্বুজ বিশিষ্ট, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উঁচু মিনার সম্পর্কে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমার জেলা টাঙ্গাইল ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ রইল আপনাদের। আমার পোস্টটা কেমন লাগলো সেটি কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন, সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আজ এ পর্যন্তই। আবারো লিখবো অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে।

এই প্রতিয়োগিতায় আমি আমার ৫ জন বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি @fredkese, @sanaula, @iyanpol12, @zpzn & @kolkamkwan

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
মোবাইল সংক্রান্ত তথ্যঃ
মোবাইলTECNO CAMON 16 PRO
ধরণ২০১গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ
ক্যামেরা৬৪ মেগাপিক্সেল
ফটোগ্রাফার@aslamarfin
অবস্থানগোপালপুর, টাঙ্গাইল ।
আল্লাহ হাফেজ
Sort:  
 last year 

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ মিনার বিশিষ্ট ২০১গম্বুজ মসজিদটি একেবারেই অসাধারণ। আপনার করা প্রত্যেকটি ফটোগ্রাফি দেখে মনে হচ্ছে মসজিদটি অনেক নিপুন ভাবে তৈরি করা হয়েছে। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

এখানে আমার এক আত্মীয়ের বাসা। মসজিদটি দেখার আমার অনেক ইচ্ছা আছে।২০১ গম্বুজ মসজিদ আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি নিদর্শন। মসজিদের নান্দনিক ডিজাইন সবাইকে মুগ্ধ করে। ২০১ গম্বুজ মসজিদ সম্পর্কে আপনি অনেক কিছু তথ্য দিয়েছেন ফটোগ্রাফি গুলো খুব সুন্দর করেছেন ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করার জন্য।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই সুন্দর করার জন্য।

 last year 

ভাইয়া আপনি মসজিদটি সম্পর্কে অনেক সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। এই মসজিদটি আমি একবার টিভিতে দেখেছিলাম। তখন এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। আপনার পোস্টটি পড়ে জানতে পারলাম যে এ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তাছাড়া আরো নানান ধরনের তথ্য জানতে পারলাম। প্রতিযোগিতার জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আর ছবিগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে।

 last year 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

Loading...
 last year 

আমাদের দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। টাঙ্গাইলে অবস্থিত মসজিদটি শুধু দেশের নয় দেশের বাইরে অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। দেশ ও দেশের বাইরের অনেক ভ্রমন প্রিয় মানুষ এ মসজিদ দেখতে আসে। আপনি অসাধারণ একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন ভাইয়া। ফটোগ্রাফিগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

বাহ বস অসাধারণ ফটোগ্রাফি করেছো তুমি৷ অসম্ভব সুন্দর হয়েছে সব গুলো ছবি। অবশ্য ২০১গম্বুজ মসজিদ আমার কখন ও দেখা হয় নি। চেষ্টা করব দেখার জন্য। সুন্দর লিখেছেন বস। ধন্যবাদ

 last year 

অবশ্যই দেখার সুযোগ হবে ইনশাল্লাহ ❤️

 last year 

২০১ গম্বুজ মসজিদ সম্পর্কে আপনি অসাধারণ একটি পোস্ট লিখেছেন।সরাসরি মসজিদটি আমি কখনো দেখিনি তবে নাম শুনেছি অনেকবার।মসজিদটি সম্পর্কে অনেক তথ্য আপনি আপনার পোস্টে তুলে ধরেছেন।ফটোগ্রাফি গুলো দারুন হয়েছে ভাইয়া।লিখেছেন অনেক সুন্দর।

 last year 

ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year (edited)

এই মসজিদে আমার বেশ কয়েকবার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এই মসজিদের কারুকার্য গুলো যে কোন মানুষকে মুগ্ধ করবে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এই মসজিদ দেখতে আসে। শুক্রবার হলে প্রচন্ড ভীড় লক্ষ্য করা যায়। অসাধারণ একটি স্থাপনা এটি। ভালো লিখেছেন ভাই।ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার হয়েছে।শুভকামনা রইল

 last year 

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

Thank you for the invitation. It's a great article.

 last year 

thank you

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58097.21
ETH 2581.79
USDT 1.00
SBD 2.41