ছোট গল্প || ক্ষনিকের ভালোলাগা

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম


আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।


বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সামনে একটি ছোট গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি ।আসলে মানুষের জীবনে ছোটখাটো অনেক ধরনের ঘটনা ঘটে। কখনো কখনো কাউকে ক্ষনিকের জন্য ভালো লাগে । তবে ক্ষনিকের ভালোলাগাটা আমার কাছে মনে হয় না যে সেটা কোন ভালোবাসা । সেটা শুধুই ক্ষনিকের ভালোলাগা । কেননা ভালোলাগা আর ভালোবাসার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আজ আমি যে গল্পটি লিখেছি সেটি মূলত ক্ষণিকের ভালোলাগা নিয়ে লেখা । যা হয়তো অনেকের জীবনের সঙ্গে মিলে যেতে পারে । তবে সম্পূর্ণ ঘটনাটি কাল্পনিক।


fantasy-g9604244a3_1280.jpg

Source

ক্ষনিকের ভালোলাগা



মফস্বল শহরের একটি মেয়ে রুপা । সবেমাত্র এইচএসসি পাশ করেছে । বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে সে । তারপর সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পরীক্ষা দেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কোচিংয়ে ভর্তি হয় নিজের শহরেই। বেশ কয়েক মাস কোচিং করে অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময় হয় । তখন সে তার বাবার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যায় ঢাকা শহরে। পরীক্ষা মোটামুটি ভালো হয়েছিল । পরীক্ষা শেষে আবার তার বাবার সঙ্গে নিজ শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ।


তারা বাসে উঠে বসে। একে একে সব যাত্রীরা বাসে উঠতে শুরু করল। হঠাৎ রুপার পাশের লাইনের একটা সিট আগে একটি ছেলে এসে বসলো। রুপা তাকিয়ে দেখলো । ছিটে বসার সময় ছেলেটিও সাধারণ ভাবে রুপার দিকে তাকালো। একবার তাকিয়ে চোখ ঘোরাতেই আবার অবাক হয়ে পেছন ফিরে রুপার দিকে তাকালো । অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। রুপা অবাক হয়ে গেল ছেলেটি ওভাবে তাকিয়ে আছে কেন । তার একটু অস্বস্তি লাগতে লাগলো । কেননা পাশে তার বাবা রয়েছে।


ছেলেটি আর ছেলেটির এক বন্ধু দুজন উঠেছিল বাসে, ছেলেটি দেখতেও বেশ সুদর্শন । আর রুপা মেয়েটি দেখতেও বেশ চমৎকার । তাদের যাত্রাপথ বেশ দীর্ঘ ছিল । মোটামুটি তিন থেকে চার ঘন্টার ছিল । এভাবে বাস এগিয়ে যাচ্ছিল আর ছেলেটি কিছুক্ষণ পরপর রুপার দিকে তাকাচ্ছিল । রুপাও দু একবার লুকিয়ে তাকাচ্ছিল । এভাবে দীর্ঘ সময় তারা যেতে যেতে হঠাৎ তাদের বাস নদীর ঘাটে এসে পৌঁছল । তাদের এখন নদী পার হতে হবে লঞ্চে করে । সবাই বাস থেকে একে একে নেমে হেঁটে হেঁটে লঞ্চ ঘাটের কাছে পৌঁছল । ঘাট থেকে লঞ্চটা বেশ উঁচু । রুপা তার বাবাকে বলছিল এত উঁচুতে কি করে উঠবো ? তখন ছেলেটি পাশ থেকে বলে ওঠে হাত ধরে ওঠো । তখন রুপা তার বাবার হাত ধরে লঞ্চে উঠলো , আর ছেলেটি তাকিয়ে থাকলো।


সবাই লঞ্চে ওঠার পর ছেলেটিও রুপাদের আশেপাশেই থাকলো । আর রুপার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল । রূপাও মাঝেমধ্যে দুই একবার তাকালো। লঞ্চে প্রচন্ড ঢেউ ছিল রুপার বেশ ভয় ভয় লাগছিল । তবে কোন সমস্যা না হয়ে তারা খুব তাড়াতাড়ি লঞ্চ পার হয়ে গেল । তখন আবার তারা বাসে উঠলো । বাসে ওঠার সময় ছেলেটি একটু এগিয়ে রুপার কাছে এসে বললো তোমাদের বাসা কোথায়? রুপা কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় ছেলেটির বন্ধু ছেলেটির হাত ধরে টেনে নিয়ে বলে তুইতো একদম পাগল হয়ে গেছিস দেখছি ।


তারপর রুপা বাসে উঠে পড়ে । তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেল । বাসের সব লাইট অফ করে দেওয়া হলো । এভাবে দীর্ঘ সময় বাস চলতে থাকলো। তারপর একটু পরপর একেক স্টপে বাস থামে আর লাইট অন করা হয় । তখন সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটিও অবাক নয়নে রুপার দিকে তাকায় রুপা নেমে পড়বে এই চিন্তায় । তার একটু পরেই রুপাদের নামার সময় আসে । তাদের শহরে এসে বাস থামে। তখন রুপা তার বাবার সঙ্গে বাস থেকে নেমে যাচ্ছিল আর ছেলেটি করুণ চোখে রুপার দিকে তাকিয়ে থাকছিল । রুপাও ছেলেটির দিকে তাকালো । দুজনের ই বেশ খারাপ লাগলো । দুজনেই বুঝতে পারল এটাই তাদের শেষ দেখা। ব্যাস এভাবে রুপা বাস থেকে নেমে গেল । আর বাসটি আবার ছেলেটিকে নিয়ে চলতে লাগলো ছেলেটির শহরের উদ্দেশ্যে।

এভাবেই গল্পটির সমাপ্তি হলো । হয়তো আর কোনদিন তাদের দেখা হয়নি । হওয়ার কোন সুযোগও ছিল না। কেননা কেউ কাউকে চেনে না বা কারো ফোন নাম্বার জানেনা । হয়তো এই কাহিনী তাদের দুজনের কারোর মনে আছে বা নেই । কেননা ক্ষণিকের ভালোলাগা গুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় না।


আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফটোগ্রাফার:@wahidasuma
ডিভাইস:স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৪০

🔚ধন্যবাদ🔚

@wahidasuma

আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।

VOTE@bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

logo.gif

Sort:  
 last year 

আসলে ভালোলাগা আর ভালোবাসাটা একেবারেই এক না। এই বিষয়টার মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। এই ছোট্ট গল্পটিতে রুপা আর সেই ছেলেটির ভালোলাগাটা ছিল কিছুক্ষণের জন্য। যদিও যখন তারা বুঝতে পারল এটাই তাদের শেষ দেখা তখন খুব খারাপ লেগেছিল তাদের। গল্পটা পড়ে আমার কাছে খুব ভালোই লেগেছে। অনেক সুন্দর একটা গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরলেন দেখে ভালো লাগলো।

 last year 

আপু আমার লেখা গল্পটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে বেশ ভালো লাগলো । অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য । ভালো থাকবেন।

 last year 

সত্যি কথা বলতে, ক্ষনিকের ভালোলাগা ক্ষণিকের জন্যই থাকে। কিছুক্ষণের জন্যই শুধুমাত্র ভালোলাগাটা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ভালোবাসাটা তো কত বেশি পার্থক্য। অবশেষে সৃষ্টি হয় সারা জীবনের জন্য। রুপা এবং ছেলেটা দুজনেরই দুজনকে খুব ভালো লেগেছিল, কিন্তু এটা ছিল কিছুক্ষণের জন্য। যদিও ছেলেটা রুপাকে তার বাসার কথা জিজ্ঞেস করেছিল এবং রূপাও কিছু একটা বলতে যাবে , তখনই তার বন্ধু তাকে নিয়ে চলে যায়। সবশেষে তারা দুজন দুই দিকে চলে যায় এবং এখানেই সমাপ্তি ঘটে। ভালোই লেগেছে এমনিতে গল্পটা।

 last year 

আসলে ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন ভাল লাগা গুলো ক্ষণিকের যার ।আর ভালোবাসা আর ভালোলাগা এক নয় । গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 56182.86
ETH 2369.32
USDT 1.00
SBD 2.30