শৈশব স্মৃতি||একদিন ফুলের গাছ তুলতে যাওয়া
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।
বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সামনে আমার শৈশবের কিছু স্মৃতি নিয়ে হাজির হয়েছি । আসলে প্রতিটা মানুষের জীবনেই শৈশব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।প্রতিটা মানুষই আমার মনে হয় শৈশবে বেশ আনন্দঘন সময় কাটায় । পরবর্তীতে যখন সে তার শৈশব কে হারিয়ে ফেলে তখন শত চেষ্টা করেও আর শৈশব ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু শৈশবের সেই আনন্দঘন মুহূর্ত প্রতিটা মানুষের জীবনেই স্মরণীয় হয়ে থাকে, যা পুনরায় মনে করতেও ভীষণ ভালো লাগে । আজ আমি আমার শৈশবের মধুর স্মৃতির কিছু অংশ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব । আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
একদিন ফুলের গাছ তুলতে যাওয়া
আসলে আমার শৈশবের স্মৃতি বলতে আমার দাদু বাড়ি এবং নানু বাড়িতে কাটানো মুহূর্তগুলোই বেশি মনে পড়ে । যদিও আমার তিন চার বছরের সময় থেকেই আমরা শহরে থাকি। তারপরেও বিভিন্ন সময়ে ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি। মূলত তখনকার কাটানো মুহূর্ত গুলোই আমার স্মৃতিতে বেশি স্মরণীয় হয়ে আছে । তারপরেও শহরের জীবনের শৈশবের একটি ঘটনা মনে পড়েছে।যেটি আজ আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি।
তখন বেশ ছোট ছিলাম ।এলাকার প্রায় সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতাম । সবার বাসায়ও যাওয়া আসা ছিল। এলাকায় এর গাছের ফল পেড়ে খাওয়া, ওর বাগানের ফুল টোকানো বিভিন্ন কাজে বেশ ব্যস্ত ছিলাম।একদমই সময় পেতাম না ।এছাড়া বিকেল বেলায় খেলাধুলা করে বেশ ব্যস্ত সময়ের মধ্যে দিয়েই কাটছিল আমার শৈশব।
এখন আসি মূল ঘটনায়।আমাদের বাসার পাশেই ছিল একটি বাসা। সেই বাসায় বেশ কিছু ফুলের গাছ ছিল । যখন সেই বাসার ভেতরে যেতাম তখন ফুলের গাছ গুলো দেখে বেশ লোভ হত । ছোটবেলা থেকেই আমার ফুলের গাছের প্রতি একটা নেশা ছিল । যেটা এখনো আছে । তবে ওই বাসার ভেতরে কিছু ঝাউ গাছ ছিল যে গাছগুলো আমার ভীষণ পছন্দ ছিল ।প্রায় সময় মনে হতো এই গাছগুলো যদি আমার হতো। আমি যদি এই গাছগুলো নিতে পারতাম, এরকম বেশ চিন্তা করতাম।
এভাবে বেশ কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন শুনলাম ওই বাড়ির মালিক তাদের বাড়িটি বিক্রি করে দিয়ে ঢাকায় চলে গিয়েছে । এখন তারা বাসা ছেড়ে দিয়েছে ।বাসাটি এখন একদম ফাঁকা । আমি তো মহা খুশি ।তখন আমি ,আমার ছোট বোন ও আমার এক খালাতো বোন আমরা তিনজন মিলে গেলাম ওই বাসার মধ্যে ফুলের গাছ উঠানোর জন্য। তখন সেটা আমাদের কাছে ফুলের গাছ চুরি করা মনে হয়নি। মনে হয়েছে এখানে তো কেউ থাকে না ,গাছগুলি এমনিতেই পড়ে আছে । তার থেকে আমি নিয়ে আমার বাসায় লাগাই । এই চিন্তা থেকেই মূলত গাছগুলো তুলতে গিয়েছিলাম।
আমার যেহেতু অনেক দিন থেকে ওই ঝাউ গাছের প্রতি লোভ ছিল, তাই আমি অন্যান্য ফুলের গাছ বাদ দিয়ে প্রথম থেকেই ঝাউ গাছ তোলার খুব চেষ্টা করছিলাম । যেহেতু মাটিতে লাগানো, মাটি ছিল বেশ শক্ত । যার কারণে ঝাউ গাছগুলো ওঠাতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। অনেক টানাটানি করছিলাম। অনেক ছোট ছিলাম তো শরীরের শক্তিও ওতটা ছিল না । দীর্ঘ সময় টানাটানি করে যখন গাছটা প্রায় উঠে এসেছে ঠিক ওই মুহূর্তে লম্বা একটি লোক বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল । প্রবেশ করেই দরাজ কণ্ঠে বলে উঠল লুটের মহল পেয়েছ ?এভাবে আমার বাড়ির গাছ চুরি করছো । এখনই ভাগো এখান থেকে।
আমরা তিনজনই বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ওই লোকটিকে দেখে, আর ওই লোকটির ভয়ংকর কণ্ঠ শুনে । কত চেষ্টা করে গাছগুলো তুলেছিলাম কিন্তু একটি গাছও আনতে পারিনি। ভয়ে পালিয়ে এসেছিলাম । এখনো সেই কথাগুলো কানে বাজে। লুটের মহল পেয়েছো। আসলে ওই লোকটা ছিলেন একজন দারোগা । ওই বাড়ির নতুন মালিক। আমরা আসলে জানতাম না ,পরে জানতে পেরেছিলাম । যাইহোক ভীষণ কষ্ট নিয়ে সেদিন বাড়ি ফিরেছিলাম।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
| ফটোগ্রাফার: | @wahidasuma |
|---|---|
| ডিভাইস: | OPPO Reno8 T |
🔚ধন্যবাদ🔚
@wahidasuma
আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।
লুটের মহলের গল্পটা আমার মনে ছিল না আজকে আপনার গল্প পড়ে আবার চোখের সামনে মনে পড়ে গেল । সত্যি ওই দারোগার কন্ঠ শুনলে ভয় লাগতো যদিও আমি সেদিন ছিলাম না তারপরও ঘটনাটা শুনেছিলাম । ছোটবেলার দিনগুলো আসলেই অনেক ভালো ছিল ।
হ্যাঁ আপু আপনি ঠিকই বলেছেন ছোটবেলার দিনগুলো সত্যি অনেক মজার ছিল ।আপনার ঘটনাটি নতুন করে মনে পড়েছে জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে ছোটবেলায় মনটা অনেক সাদামাটা থাকে তাই ভুল করে অন্যায় কিছু করলেও সেটা খুব সিরিয়াস মনে হয় না। লোকটা দারোগা ছিল বলেই ওইভাবে চিৎকার করে বলেছিল লুটের মহল পেয়েছো।
হ্যাঁ ভাইয়া লোকটি একদম ভয়ার্ত কন্ঠে বলেছিল লুটের মহল পেয়েছ। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
গাছ চুরি করতে এসে হাতে নাতে ধরা পড়েছেন দেখছি। আসলে ঝাউ গাছগুলো মাটিতে লাগালে তার শিকড় অনেক নিচের দিকে চলে যায়। আর যেহেতু ছোট ছিলেন তাই গাছ তুলতে পেরেছিলেন না। যাইহোক লোকটির দরাজ কণ্ঠের ডায়লগটা কিন্তু খুবই ভয়ংকর ছিল।
হ্যাঁ ভাইয়া গাছ চুরি করতে গিয়ে একদম হাতেনাতে ধরা পড়েছিলাম । যার কারণে গাছটি শেষ পর্যন্ত নিতে পারছিলাম না । খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম । আর তার কণ্ঠ কিন্তু খুবই ভয়ঙ্কর ছিল। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।