গল্প || প্রতারণা (২য় ও শেষ পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম


আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।


বন্ধুরা কয়েকদিন আগে আমি আপনাদের সঙ্গে একটি গল্পের প্রথম পর্ব শেয়ার করেছিলাম । আজ আবার গল্পটির দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি । আশা করছি আপনাদের কাছে আমার গল্পটি ভালো লাগবে । তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন চলে যাই মূল গল্পে।


couple-g8d2a5feb5_1280.jpg

source

গল্প ||প্রতারণা

             (২য় ও শেষ পর্ব)

সামিয়া ও দিপু একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসতো ।কিন্তু হঠাৎ সামিয়া জানতে পারে দিপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে । তার পর থেকে----


সামিয়া একদিন তার মায়ের কাছ থেকে হঠাৎ জানতে পারে দিপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে । সামিয়া যেন হঠাৎ করে একটা ধাক্কা খেলো । সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না দিপুর বিয়ে ঠিক হতে পারে । সে তার মাকে বলছিল হয়তো তুমি ভুল শুনেছো । তখন ওর মা বলল না আমি ঠিকই শুনেছি । বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়েছে । সবাই গতকাল যেয়ে মেয়েকে আংটি পরিয়ে এসেছে, বেশ ভালই হয়েছে । কিন্তু সামিয়ার বুকের ভেতর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছিল । এ আমি কি শুনছি ! সে কিছুতেই নিজের মনকে বিশ্বাস করাতে পারছিল না যে দিপুর বিয়ে হতে পারে। সামিয়া দিপুর সঙ্গে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠল ।


সে একটু পরে বাসা থেকে বের হয়ে বাইরে ঘোরাঘুরি করতে লাগলো । দিপুর দেখা পায় কিনা সেই উদ্দেশ্য নিয়ে। হঠাৎ বিকেল বেলায় দিপুর সঙ্গে দেখা হলো ।দিপুকে বলল কাল সকাল দশ টায় আমার সঙ্গে দেখা করবে আমাদের পুরনো দেখা করার জায়গায় । এই বলে সে বাড়িতে ফিরে এলো। তার পরদিন খুব সকাল সকাল উঠে সামিয়া কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিল দিপুর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্য নিয়ে। দিপুর সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্রই সে দিপুকে জড়িয়ে ধরে বলল এটা আমি কি শুনছি ?তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে। এটা কি করে সম্ভব ? তখন দিপু বলল আরে না সেরকম কিছু না । আমি তো তোমাকেই ভালবাসি ।বাসার সবাই বিয়ে দেবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে তাই মেয়ে দেখছে। এর বেশি কিছু না ।আমি বিয়ে তোমাকেই করব।


সামিয়া সহজ সরল মেয়ে সে সত্যি দিপুর মন ভোলানো কথায় ভুলে গেল । সে ভাবলো হয়তো দিপুর কথাই ঠিক । সে বলল সত্যি বিয়ে করবে না তো । দিপু বলল না । সে তাই মেনে নিল । তারপর বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে সে কলেজে চলে গেল । এভাবে বেশ কয়েকদিন পর দেখা গেল সত্যি সত্যি দিপুর বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো । বিয়ে বাড়িতে লোক সমাগম হতে লাগলো । বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল । তখন সামিয়া বুঝতে পারল সত্যিই তো দিপুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে । তাহলে দিপু তাকে মিথ্যে বলেছে । তারপর সে দিপুর সঙ্গে দেখা করার জন্য আবারো অস্থির হয়ে পরল । কিন্তু দিপুকে সে আর খুজেঁ পাচ্ছে না । সামিয়ার মোবাইলও ছিল না যে মোবাইলে যোগাযোগ করবে।


এভাবে সামিয়া খুব ভেঙ্গে পড়ে খাওয়া দাওয়া মোটামুটি ছেড়ে দেয় । বাড়ির সবাই একটু একটু বুঝতে পারে । তারপরেও কেউ কিছু বলে না । কিন্তু সে দিপুর সঙ্গেও আর যোগাযোগ করতে পারেনা । তখন সে মনে মনে ভাবতে থাকে দিপু তার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেছে । আসলে সে সত্যিকার অর্থে তাকে কোনদিন ভালোই বাসেনি । ভালোই যদি বাসবে তাহলে তাকে ছেড়ে কিভাবে বিয়ে করছে । আর তাকে বিষয়টা সে ক্লিয়ার করে বলেও নি। বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা সামিয়ার মনে আসতে লাগলো। সামিয়া ভাবতে লাগলো দীপুকে যদি জোর করে বিয়ে দেয় তবুও তো সে আমাকে বলতে পারতো সে পরিস্থিতির শিকার । সে তো আমার সঙ্গে পুরো যোগাযোগ টাই বন্ধ করে দিল । তাহলে অর্থ দাড়ালো সে আমাকে কোনদিন ভালোবাসেনি ।


বিয়ের একদিন আগে হঠাৎ দিপুর সঙ্গে বিকেল বেলায় সামিয়ার দেখা হয়ে যায় । দিপু চোখ নামিয়ে এড়িয়ে চলে যায় । সামিয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দিপুকে বুঝিয়ে দেয় এত বড় প্রতারণা আমার সঙ্গে কেন করলে? সে চোখের দিকে আর দ্বিতীয়বার তাকানোর সাহস দিপু পায় না ।তার মধ্যে একটা লজ্জার ভাব দেখা যায়। তারপর বাড়িতে এসে সামিয়া খুব কান্নাকাটি করে । তার পরদিন দিপু বিয়ে করে বউ নিয়ে আসে । সামিয়া সে রাতে চিন্তা করতে থাকে এত বড় প্রতারণার শিকার সে কি করে হলো। কষ্টে সে নিজেকে শেষ করে দেবে ভাবে। আবার ভাবে কার জন্য নিজেকে শেষ করে দিব । সে তো বউ নিয়ে বেশ আনন্দে আছে । তার পরেও মন কে মানাতে পারে না । কত স্বপ্ন দেখেছিল দুজন একসঙ্গে ।সব স্বপ্ন ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেল। আজ সে অন্য কারো ।


সে রাতে সারারাত সামিয়া কাঁদতে থাকে । পরের দিন সামিয়া জানতে পারে সামিয়ার ক্লাসমেটের সঙ্গে দিপুর বিয়ে হয়েছে । বেশ ভালো পরিচয় মেয়েটির সঙ্গে । একই সঙ্গে তারা স্কুল জীবনে পড়াশোনা করেছে । এখন কলেজেও পড়ছে । আহামরি কোন ভাল ফ্যামিলিও নয় বরং সামিয়াদের থেকে আরো খারাপ ফ্যামিলি।এতে সামিয়া আরও বড় একটা ধাক্কা খায় । সে ভাবতে থাকে একেই যদি বিয়ে করবে তাহলে আমাকে কেন করলো না ,আমি ওর থেকে কম কিসে।


তারপর রাগে দুঃখে সামিয়া আর কোনদিন দিপুর সঙ্গে কথা বলেনি । সে মন থেকে এখন ঘৃণা করে দিপুকে। যদিও দিপু একবার তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিল । কিন্তু সামিয়া পাত্তা দেয়নি । সামিয়ার চোখে দিপু এখন একজন মিথ্যাবাদী প্রতারক ছাড়া আর কিছুই নয় । যদিও এই ঘটনার পর থেকে সামিয়ার মনে পুরুষদের প্রতি একটি ভিন্ন ধারণা হতে থাকে । তারপরেও হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আসলে এই মিথ্যাবাদী প্রতারক গুলোরও শাস্তি হওয়া উচিত । যাতে কোন মেয়ের সঙ্গে এরকম প্রতারণা না করতে পারে।


আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফটোগ্রাফার:@wahidasuma
ডিভাইস:স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৪০

🔚ধন্যবাদ🔚

@wahidasuma

আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।

VOTE@bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

logo.gif

Sort:  
 last year 

সামিয়া শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে নিয়েছিল দেখে সত্যিই ভালো লাগলো। আসলে দিপুর মতো প্রতারক ছেলেদের পাল্লায় পড়ে অনেক মেয়ে নিজের জীবন দিয়ে দেয়। আর শেষ হয়ে যায় একটি পরিবার। আপু আপনি দারুন লিখেছেন। মনে হচ্ছিল যেন চোখের সামনে গল্পের সব চরিত্রগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে। আর সেই দৃশ্যগুলো অনুভব করতে পারছি। সত্যি আপু আপনার লেখনী অসাধারণ ছিল।

 last year 

হ্যাঁ আপু আপনি ঠিকই বলেছেন এভাবেই খারাপ ছেলেদের পাল্লায় মেয়েদের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। আপনার কাছে আমার গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো । অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 56006.20
ETH 2375.33
USDT 1.00
SBD 2.33