গল্প|| অনিশ্চিত জীবন (শেষ পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু আলাইকুম


আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।



আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি গল্প শেয়ার করতে এসেছি।আসলে গল্প মানেই আমাদের আশেপাশে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা । যেই ঘটনা গুলো এক একটি গল্প আকারে আমাদের কাছে এসে ধরা দেয় ।আসলে প্রতিটি গল্পই আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা। আজকে আমি যে গল্পটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব এটি বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখেই মূলত লেখা। আশা করছি আপনাদের কাছে আজকের গল্পটি ভালো লাগবে । তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন চলে যাই মূল গল্পে।


stop-youth-suicide-3414467_1280.jpg

source

গল্প|| অনিশ্চিত জীবন (শেষ পর্ব)


রোজি ও নিলয় একে অপরকে ভালোবেসে পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করে। এক বছর পর নিলয়ের জন্মদিনের দিন নিলয় বাইক এক্সিডেন্টে মারা যায় ।তারপর রোজির জীবনে অনেক ঝড় ঝাপটা আসে। অবশেষে সে একটি চাকরি পায় ।সেখানে আবির নামের একটি ছেলের সঙ্গে রোজির পরিচয় হয়। আবির রোজিকে বিয়ে করতে চায় । রোজি বিয়েতে রাজি হয় না। তারপর থেকে -------

একটা পর্যায়ে যেয়ে রোজী আর না করতে পারে না ।সেও রাজি হয়ে যায়। যদিও রোজীর পরিবার এই বিয়েটা প্রথম প্রথম দিতে চাইনি। তাদের কাছে আবিরকে ভালো মনে হয়নি। কিন্তু রোজী বলেছে না আবির খুব ভালো ছেলে ।যাই হোক পরবর্তীতে তাদের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের বেশ কিছুদিন যাবার পর রোজি সন্তান নিতে চায় ।কিন্তু দেখা যায় যে তখন রোজির সন্তান হচ্ছিল না।তখন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললে প্রথমে ডাক্তার টেস্ট করে জানায় রোজি কোনদিন মা হতে পারবেনা ।তারপর আরো বিভিন্ন ডাক্তার দেখাতে থাকে ।এভাবে যেতে যেতে অনেক দিন কেটে যায়। একদিন হঠাৎ করে রোজি জানতে পারে সে মা হতে চলেছে। দীর্ঘদিন পর এরকম একটি ভালো খবর পেয়ে রোজি ভীষণ খুশি হয়।


এর আগে রোজি তার হাজবেন্ডের ভেতর অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করে। ধীরে ধীরে সে জানতে পারে আবিরের পূর্বের স্ত্রীর সঙ্গে আবিরের ডিভোর্স হয়নি। সে সেটা মিথ্যে বলেছে এবং তার দুটি মেয়েও আছে। সব শুনে রোজি যেন দিশেহারা হয়ে যায় ।সে কি করবে ভেবে পায় না। এত বড় প্রতারণা করেছে আবির সে ভাবতেই পারছে না ।তার নিলয়ের কথা খুব মনে পড়ে। নিলয় তাকে ছেড়ে না গেলে আজ তার জীবনে এরকম অবস্থা হতো না। যাই হোক এভাবে ভাবতে ভাবতে রোজি কয়েক মাস পার করে ফেলে ।তার বিভিন্ন রকম সমস্যা হচ্ছিল ।তাকে ডাক্তার রেস্টে যেতে বলে। যার কারণে সে চাকরি থেকে কয়েক মাসের ছুটি নেয়। সে ভাবছিল যা হয়েছে হোক, যে পৃথিবীতে আসছে তাকে আঁকড়ে ধরে রোজি বেঁচে থাকবে ।তারা আর কাউকে দরকার নেই ।আবির তার সঙ্গে থাকুক বা না থাকুক সে তার বাচ্চার জন্য বেঁচে থাকবে।


এভাবে ভাবতে ভাবতে রোজি নয় মাস পূর্ণ করে ফেলে। তারপর আসে সেই আনন্দঘন মুহূর্ত। রোজি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় ।কিন্তু জন্মের পর রোজি এবং তার বাচ্চা দুজনই খুবই অসুস্থ থাকে।তার বাচ্চা তিন দিন ইনকিউবেটরে থাকার পর মারা যায়। বাচ্চাটা জন্মের পর পরই শুধু একবার রোজিকে দেখানো হয়েছিল। তারপর আর রোজি তার বাচ্চাকে দেখতে পায়নি। কারণ সে নিজেও অসুস্থ ছিল। কিন্তু বাচ্চাটা মারা গেলেও তাকে দেখানো হয়নি। তার পরিবারের লোকেরা তাকে না দেখিয়েই বাচ্চাটার দাফন করে ফেলে। রোজি ভীষণ কষ্ট পায়।


এদিকে আবির তার পুরনো পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি এটাস্ট হয়ে যায়। সে রোজীকে একদমই সময় দেয় না ।এখন রোজি এক অনিশ্চিত জীবন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না সে কি করবে। সে আবীর কে ছেড়ে দেবে, নাকি আবিরের সঙ্গে থাকবে। এভাবে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে রোজী। এদিকে রোজির পরিবারের লোকেরাও রোজির উপর ভীষণ রাগ ।কারণ তারা আগে থেকেই আবীরকে পছন্দ করত না। আবির কে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত ছিল রোজির নিজের। যার কারণে তার পরিবারের লোকেরাও তাকে অনেক বকাবকি করে। কিন্তু রোজি বাচ্চাটিকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল ।কিন্তু নিয়তি তার কাছ থেকে তার বাচ্চাটি কেউ কেড়ে নিল।


তার ফ্ল্যাট, টাকা, চাকরি সবই ছিল ।শুধু ছিল একটু ভালোবাসার অভাব। রোজি মোটামুটি একটু সুস্থ হবার পর আবার চাকরিতে জয়েন করলো। সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না তার জীবনে এসব কি ঘটে যাচ্ছে। এখন কি করবে সে। আবিরের সঙ্গে থাকবে যে তার সঙ্গে এত বড় প্রতারণা করেছে। নাকি আবার একা হয়ে যাবে। । এই দুটানের মধ্যে পড়ে সে এখন এক অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছে।


আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফটোগ্রাফার:@wahidasuma
ডিভাইস:OPPO Reno8 T

🔚ধন্যবাদ🔚

@wahidasuma

আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।

VOTE@bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

logo.gif

Sort:  
 last month 

রোজি ও নিলয়ের বিয়ে হয় বিয়ে হওয়ার পর নিলয় মারা যায়। তারপর আস্তে আস্তে আবিরের সঙ্গে রোজির বন্ধুত্ব হয় এবং তারা দুজন বিয়ে করে ।বিয়ের আগে জানতো না আবিরের বাচ্চা আছে ।আবিরের সাথে বিয়ে হওয়ার পর রোজির একটা বাচ্চা হয় ।নিয়তি তার কাছ থেকে সেই বাচ্চাটাকে কেড়ে নেয়। আসলে কবিতাটি পড়ে অনেক কিছু জানলাম ধন্যবাদ ভাইয়া।

Posted using SteemPro Mobile

 last month 

প্রথমেই বলছি আমি ভাইয়া না, আমি আপু ।আর এটি কবিতা নয় একটি গল্প ছিল ।ধন্যবাদ আপনাকে।

 last month 

রোজির জীবনটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে কেননা আবীর যদি তার মনের মত হতো তাহলে তার জীবন অন্যরকম হতে পারতো। তাছাড়া রোজির পরিবার ও রোজিকে সাপোর্ট করছে না তাই রোজির জীবনটা যেন আরো কঠিন হয়ে পড়েছে।

Posted using SteemPro Mobile

 last month 

হ্যাঁ ভাইয়া আবির তার মনের মতো হলে তার জীবন টা পাল্টে যেত।ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

 last month 

রোজির জীবনটা আসলেই দুঃখে ভরা। টাকা সম্পদ দিয়ে যে জীবনের সুখ পাওয়া যায় না রোজিই তার প্রমাণ। প্রথমে সে নিলয়কে হারালো। তারপর আবিরের সঙ্গে সংসার করতে চাইলো। আবির ও তাকে ধোকা দিয়ে প্রথম পরিবারের সঙ্গে বেশি এটাস্ট হয়ে গেল। এদিকে তার সন্তানটিকেও হারিয়ে ফেললো। তারপরও আমার মতে রোজির আবিরকে ছেড়ে দিয়ে নিজের মত করে চলা।

 last month 

জানিনা আসলে রোজি কি করবে? তবে সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

 last month 

অনিশ্চিত জীবন গল্পটার শেষ পর্ব পড়ে সত্যি অনেক বেশি খারাপ লাগতেছে রোজির জন্য। নিলয় যদি মারা না যেত তাহলে কখনোই রোজির জীবনে এরকম পরিস্থিতি আসত না। যদিও তার শেষ ভরসা ছিল তার সন্তান, কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার দু'একদিনের মধ্যেই তো মারা গিয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত সে অনিশ্চিত জীবন যাপন করতেছে। তার উচিত ছিল নিজের বাবা-মায়ের কথা শুনে ওই ছেলেটাকে বিয়ে না করা। কারণ ছেলেরা তো একজন খারাপ মানুষ। আগের একটা স্ত্রী থাকতেও দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। সব মিলিয়ে ওর জন্য অনেক বেশি খারাপ লাগতেছে।

 last month 

হ্যাঁ আপু নিলয় মারা যাওয়ার কারণে রোজির জীবন টা এমন হলো।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

 last month 

রোজির জন্য আসলেই খুব খারাপ লাগছে। রোজির মেয়েটি বেঁচে থাকলেও, মেয়েটিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে পারতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটাও হলো না। আবির হচ্ছে প্রতারক টাইপের ছেলে। আর সেজন্যই আবির এভাবে মিথ্যা বলে রোজিকে ঠকিয়েছে বা ঠকাচ্ছে। তবে আমার মতে রোজির উচিত আবিরকে ডিভোর্স দিয়ে, রোজির মা বাবার সাথে থাকা। পরবর্তীতে যদি ভালো কাউকে পায়,তাহলে জীবনটা আবারও নতুন করে শুরু করতে পারবে। তিন পর্বের এই গল্পটি পড়ে আসলেই খুব ভালো লেগেছে আপু। আশা করি নতুন কোনো গল্প নিয়ে খুব শীঘ্রই হাজির হবেন আমাদের মাঝে। সেই অপেক্ষায় রইলাম আপু।

 last month 

হ্যাঁ ভাইয়া রোজির মেয়ে টি বেঁচে থাকলে সে মেয়েটিকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকত। যাই হোক আপনার ভালো লেগেছে গল্পটি যেনে ভালো লাগলো। পরবর্তীতে নিশ্চয়ই আবার নতুন কোন কিছু লিখবো ।ধন্যবাদ।

 last month 

এই গল্পের পূর্ববর্তী পর্ব আমার পড়া হয়েছিল৷ আজকে এর পরবর্তীতে পর্ব পড়ে খুব ভালো লাগছে৷ আবির একটা প্রতারক৷ সে প্রতিনিয়তই রোজিকে ঠকাচ্ছে৷ যেভাবে সে রোজি ঠকছে তার জন্য তা অনেক কষ্টকর৷ তাই রোজির উচিৎ তার মায়ের কাছে চলে যাওয়া এবং পরবর্তীতে যদি তার জীবনে কোনো ভালো মানুষ আসে তাহলে তার সাথে জীবন শুরু করা৷ ধন্যবাদ এই গল্পের শেষ পর্বটি সুন্দরভাবে শেয়ার করার জন্য৷ আশা করি পরবর্তী আরো নতুন কিছু গল্প দেখতে পাবো৷

 last month 

ভাইয়া গল্পটি পড়ে দারুন একটি মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।

 last month 

আশা করি ভবিষ্যতে আরো নতুন গল্প দেখতে পাবো।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.12
JST 0.032
BTC 66003.37
ETH 2964.08
USDT 1.00
SBD 3.66