গল্প || অভাবে সন্তান হারানো এক মায়ের গল্প (শেষপর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

আসসালামু আলাইকুম


আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।



আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি গল্প শেয়ার করতে এসেছি।আসলে গল্প মানেই আমাদের আশেপাশে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা । যেই ঘটনা গুলো এক একটি গল্প আকারে আমাদের কাছে এসে ধরা দেয় ।আসলে প্রতিটি গল্পই আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা। আজকে আমি যে গল্পটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব এটি বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখেই মূলত লেখা। আশা করছি আপনাদের কাছে আজকের গল্পটি ভালো লাগবে । তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন চলে যাই মূল গল্পে।


kid-769030_1280.jpg

source

অভাবে সন্তান হারানো এক মায়ের গল্প (শেষপর্ব)


অভাবের কারণে নিজের ছেলেকে বোনের কাছে দিয়ে দেয় এক অসহায় মা।শুধু মাত্র তার ছেলে যাতে খেয়েপরে ভালো থাকতে পারে,মানুষের মত মানুষ হতে পারে এই আশায়। কিন্তু ছেলেকে যে সে সারা জীবনের জন্যে হারিয়ে ফেলবে সে চিন্তা করেনি একটি বারের জন্যও। তারপর দীর্ঘ কয়েক বছর পর জীবনের ছোট ভাই জীবনকে খুঁজতে শুরু করে ।খুঁজতে খুঁজতে যখন ঠিকানা পেয়ে যায় তখন জানতে পারে তার ভাই বেঁচে নেই। পরে তার ভাবী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চায় না ।তারপর থেকে ----

এভাবে বেশ কিছুদিন পর জীবনের ছোট ভাইও খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার সব সময় তার ভাইয়ের বাচ্চাদের কথা মনে পড়ত।কিন্তু দেখা সম্ভব ছিল না।সে সব সময় ভাবতো ভাই বেঁচে থাকলে কত আনন্দ হতো।ভাইয়ের বাচ্চাদের দেখতে পারতো। এভাবে ধীরে ধীরে সে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। অভাবের কারণে তার ঠিকমত চিকিৎসা করা সম্ভব হয়ে উঠে না তার মায়ের। শেষ সময়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ততদিনে তার শরীর একেবারে খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল । কিন্তু তারা তা করতে পারে না।


একবার হসপিটালে নেওয়া হয়, কিছুদিন থেকে আবার বাড়িতে নিয়ে আসে।এভাবে বেশ কিছুদিন হসপিটালে আশা যাওয়া চলতে থাকে।কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। একবার হুট করেই মারা যায়।মারা যাওয়ার একটু আগেও বেশ ভালো ছিল। যাই হোক খুব অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেও মারা যায় । দুটি ভাই প্রায় একই বছরে মারা যায়।বড় ভাই দুই বাচ্চা রেখে যায় আর ছোট ভাই তিন বাচ্চা রেখে মারা যায়।


চোখের সামনে এভাবে দুটি সন্তানের মৃত্যু তার মা যেন একেবারেই মেনে নিতে পারেনা। প্রথম সন্তানকে বোনকে দিয়ে ,পরবর্তীতে সন্তানকে হারিয়ে পাগল পাগল হয়ে গিয়েছিল ।তারপরও ছোট সন্তান কে নিয়ে বেশ ভালই ছিল। আর যখন দুটি সন্তানই মারা গেল সে তখন পুরোপুরি পাগলের মত হয়ে গেল। স্বামীকে হারিয়েছিল বেশ কয়েক বছর হয়েছে। ছোট ছেলে ও নাতি-পুতিদের নিয়ে বেশ ভালই দিন কাটছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দুটি ছেলের এরকম মৃত্যু তার জীবনটাকে যেন একদম স্থগিত করে দিল। তারপরেও বুকে পাথর বেঁধে বেঁচে থাকতে হয়। এটাই জীবন, এটাই নিয়তি।


আমাদের জীবন কত বিচিত্র।এই ঘটনা গুলো যখন চোখের সামনে আসে তখন বোঝা যায় জীবনের বৈচিত্র্য।কেউ সুখে থাকে আবার কেউ বা দুঃখের সাগরে ভাসে।মূলত বাস্তব ঘটনা কে কেন্দ্র করে লেখা এই গল্পটি। আশা করছি আপনাদের ভালো লেগেছে।


সমাপ্ত


আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফটোগ্রাফার:@wahidasuma
ডিভাইস:OPPO Reno8 T

🔚ধন্যবাদ🔚

@wahidasuma

আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।

VOTE@bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

logo.gif

Sort:  
 4 months ago 

আপনার গল্পের আগের পর্ব আমি পড়ে ছিলাম মনে হচ্ছে। যাইহোক অভাবের কারণে স্বভাব নষ্ট এটা একেবারে বাস্তব কথা। আসলে অভাব না হলে হয়তো এক অসহায় মা তার সন্তানকে দিত না।তারপর যখন অন্য সন্তানদের নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন কিন্তু নিয়তি তাও কেড়ে নিল।তারপরেও তাকে বুকে পাথর বেঁদে বাঁচতে হচ্ছে। আসলে এটাই জীবন। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর লিখেছেন।

 4 months ago 

গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবনে এক এক করুন কাহিনী লোকিত থাকে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আপনার শেয়ার করা প্রতিটি পর্ব আমি পড়েছি। খুব করুন কিছু অবস্থা ছিল। কারণ সন্তান ভালো থাকার জন্য তার বোনকে দিল। অবশেষে সে সন্তানকে পেল না এবং পৃথিবী থেকে একেবারে হারিয়ে ফেলল। শত খারাপ অবস্থার মাঝেও মানুষকে বেঁচে থাকতে হয় বুকে পাথর চাপা দিয়ে। অনেক ভালো লেগেছে আপনার গল্পটি বিস্তারিত পড়ে।

 4 months ago 

আপু প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমার গল্পটি পড়েছেন জেনে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগলো ।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য ।ভালো থাকবেন সব সময়।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

আসলে মানুষ অভাবে পড়লে অনেক কিছুই করে৷ যা তাদের মনের মধ্যে কষ্ট সৃষ্টি করে৷ এই গল্পের মধ্যে এক অসহায় মা অনেক দারিদ্রতার কারণে তার সন্তানকে দিয়ে দিয়েছে৷ তা না হলে তিনি তার সন্তানকে তার নিজের কাছে রেখে দিতেন৷ নিজের সন্তানকে অন্য কারো কাছে দিয়ে দেওয়ার মত কষ্ট আর কিছুই হতে পারে না৷ তবে তিনি তার অন্যান্য সন্তানদেরকে নিয়ে জীবন পরিচালনা করতে চাইলেও নিয়তি তার সংগ দেয়নি৷ এর ফলে তার মনের ভিতরে কষ্ট যেমন বেড়েছে তা আমরা বলে প্রকাশ করতে পারবো না৷ আপনি খুব সুন্দরভাবে এই গল্পের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন৷ অসংখ্য ধন্যবাদ৷

 4 months ago 

গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

খুব সুন্দর একটা গল্প শেয়ার করেছেন আপনি৷ সবগুলো পর্ব অনেক ভালো লেগেছিল৷ আশা করি নতুন কোন গল্পের মাধ্যমে আরো ভিন্ন কিছু জানতে পারবো৷

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

মা নিজের বড় সন্তানকে হারিয়েছিল, কিন্তু তেমন কোন কষ্ট হয়নি। কারণ আরো একটা সন্তান ছিল। কিন্তু শেষ পর্যায়ে ছোট ছেলেটাও মারা গিয়েছিল এটা ভাবতেই অনেক বেশি খারাপ লাগতেছে। যদিও বড় ভাইয়ের সন্তানদেরকে দেখার অনেক বেশি ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু মৃত্যুর আগের শেষ পর্যায় দেখতে পায়নি বড় ভাইয়ের সন্তানদেরকে। মা তো একেবারে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল দুই সন্তানকে একসাথে হারিয়ে। এখন ছোট ছেলের সন্তানদেরকে নিয়েই থাকতে হবে। সত্যি গল্পের শেষটা এত বেশি কষ্টের হবে এটা ভাবতেই পারিনি।

 4 months ago 

আপু প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পটা পড়ে চমৎকার চমৎকার মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এভাবেই পাশে থাকবেন আশা করছি। ভালো থাকবেন।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

নিজেদের অভাব থাকার কারণে বড় সন্তানকে বোনের কাছে দিয়ে দিয়েছিল। আর ছোট সন্তানকে নিয়ে ভালোই জীবন যাপন করছিল যদিও ওভাবে দিন কাটছিল। আর ছোট ছেলে নিজের ভাইয়ের সবকিছু খুঁজে বের করলেও ভাইয়ের সাথে দেখা হয়নি। কারণ সে মারা গিয়েছিল। আর তার কয়েক মাস পর ছোট ভাইও মারা গিয়েছিল শুনে অনেক খারাপ লেগেছে। যদিও ছোট ছেলেকে নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু ধ্বংস হয়ে গেল। এরকম সন্তানদের মৃত্যুর দেখলে একটা মা সত্যি একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়।

 4 months ago 

ভাইয়া আমার লেখা গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।ভাল থাকবেন ।শুভকামনা রইল।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

মহিলাটি জীবনে খুব একটা শান্তি পেলো না। অভাবের কারণে ছেলেকে বোনের কাছে দিয়ে সেই ছেলেকে হারালো। বড় হয়ে যদিও ছেলের খোঁজ পেল কিন্তু ততদিনে ছেলে মারা গেল। আবার ছোট ছেলে অসুস্থ হয়ে চোখের সামনে মারা গেল। এ অবস্থায় নিজের বেঁচে থাকাই বেশ কষ্টকর। তারপর ঠিকই বলেছেন আপু বেঁচে তো থাকতেই হয়। ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

আমার কাছে মনে হয় মহিলা সবচেয়ে বড় ভুল করেছিল তার বাচ্চাটাকে বোনের কাছে দিয়ে । মানুষের যতই অভাব অনটন থাক না নিজের বাচ্চাকে নিজের কাছেই আগলে রাখা উচিত । শেষ পর্যন্ত সে তার ছোট ছেলেটাকেও হারিয়ে ফেলল । আর বড় ছেলেটার সাথেতো আর কোনদিন দেখাই হলো না । আসলে অনেক মর্মান্তিক লাগল গল্পটি আমার কাছে ।

 4 months ago 

দুঃখ আসলে চতুর্দিক থেকেই আসতে শুরু করে। জীবন মারা গেলো এবং পরবর্তীতে চিকিৎসার অভাবে জীবনের ছোট ভাইও মারা গেলো। হয়তো জীবন বেঁচে থাকলে, তার ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে পারতো। জীবনের মায়ের তো আপন বলতে তেমন কেউ রইল না। আসলেই মানুষের জীবনটা খুব অদ্ভুত। জীবনে কখন কি হয়ে যায় সেটা বলা যায় না। তবে কিছু কিছু ক্ষত আমাদেরকে তিলে তিলে একেবারে শেষ করে দেয়। যাইহোক জীবনের মায়ের জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং শুভকামনা রইল। এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57020.43
ETH 3081.72
USDT 1.00
SBD 2.41