গল্প || ক্ষণিকের ভালোলাগা
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।
গল্প || ক্ষণিকের ভালোলাগা
নীলা এইচ এস সি পাশ করেছে ।এখন সে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবে যার কারণে সে বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং এ ভর্তি হয়েছে ।সে নিয়মিত কোচিং করতে থাকলো ।একটা সময় তার পরীক্ষা ঘনিয়ে এলো। সে বিভিন্ন ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিতে লাগলো ।একবার সে ঢাকা ভার্সিটির পরীক্ষা দিতে গেল তার বাবার সঙ্গে। সে ঢাকায় গিয়েছিল ,তার বাবা তাকে এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে এসেছিল। পরীক্ষা শেষ হলে আবার তাকে এসে নিয়ে যাবে। এভাবে নীলা বেশ ভালোভাবেই তার পরীক্ষা শেষ করল। কয়েকদিন পর তার বাবা এলো তাকে নিতে। তারপর সে তার বাবার সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
তারা একটি বাসে করে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। বাসে ওঠার পর নিলা লক্ষ্য করল তার পাশের সারির এক সিট আগে দুটি ছেলে বসেছে। কর্নারের ছেলেটি বারবার নিলার দিকে তাকাচ্ছে।ব্যাপারটা কেমন যেন অদ্ভুত লাগলো নীলার কাছে। ছেলেটা তার দিকে এভাবে কেন বারবার তাকাচ্ছে। নীলার বেশ অস্বস্তি লাগতে শুরু করল ।কেননা সঙ্গে তার বাবা ছিল। একটু পরপরই ছেলেটা তাকে দেখছিল।
এভাবে বেশ দীর্ঘ সময় বাস চলতে থাকলো। আর ছেলেটা একটু পরপর নীলাকে দেখতে লাগলো। নীলার মাঝে খুব ঘুম পেয়ে গেল কিন্তু ছেলেটার কারণে সে ঘুমাতেও পারছিল না ।কেননা কেউ কাউকে ফলো করলে তার সামনে ঘুমানো একটু অন্যরকম লাগছিল নীলার কাছে। যাইহোক তারা একটা সময় লঞ্চঘাটে এসে পৌঁছালো ।সেখানে তাদেরকে লঞ্চ পার হতে হবে। লঞ্চ পারাপারের পর তাদেরকে আবার একটি বাসে উঠতে হবে। যাইহোক সবাই বাস থেকে নেমে পড়ল। নীলা আর তার বাবা হাঁটছে। আর সামনে ছেলে দুটো হাঁটছে। ছেলেটা পেছনের দিকে আবারো বারবার দেখছে।
এভাবে একটা সময় তারা লঞ্চের কাছে যেয়ে পৌঁছালো। সবাই একে একে লঞ্চে উঠতে শুরু করলো। নীলা দেখল লঞ্চ বেশ খানিকটা উঁচু। তার ভীষণ ভয় লাগল। সে বলে উঠল এত উঁচু লঞ্চে আমি কি করে উঠবো। তখন পাশ থেকে ছেলেটা বলে উঠল কেন হাত ধরে ওঠো ।নীলা বেশ অবাক হয়ে গেল। যাই হোক পরবর্তীতে নীলা তার বাবার হাত ধরে উঠলো।
তারপর লঞ্চ চলতে শুরু করল। সেদিন ভীষণ বাতাস ছিল ।লঞ্চ একটু হেলেদুলে চলছিল। নীলার ভীষণ ভয় লাগছিল। সে বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছিল। যাই হোক কোন রকম বিপদ ছাড়াই তারা লঞ্চ পার হয়ে গেল ।তারপর তারা আবার একটি বাসে উঠলো। তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। বাসে ওঠার পর বাসের লাইট বন্ধ করে দেওয়া হলো ।তখন সবাই একটু চোখ বন্ধ করলো। যাই হোক এভাবে কিছু সময় পর যখন কেউ কোথাও নামে বা থামায় তখন আবার লাইট জ্বলে উঠে। তখন ছেলেটি অবাক হয়ে নীলার দিকে তাকায়। তার চোখ দেখে মনে হয় নীলা চলে গিয়েছে কিনা সেই ভয় পাচ্ছে। তখন পাশ থেকে ছেলেটির বন্ধু বলে উঠলো তুই একদম পাগল হয়ে গিয়েছিস, কি করছিস এটা।
যাইহোক এভাবে আরও কিছু সময় বাস চলতে থাকলো। একটা সময় নীলার গন্তব্য চলে এলো। নিলা আস্তে আস্তে বাস থেকে নামতে লাগলো। ছেলেটা অসহায়ের মতো নীলার দিকে তাকিয়ে থাকলো। মনে হচ্ছিল অনেক কিছু বলবে কিন্তু কিছুই বলার সাহস পেল না। এমনকি সে নীলার নামও জানতে পারল না। ঘটনাটি বেশ কিছু বছর আগের যার কারণে তখন মোবাইলের এতটা প্রচলন ছিল না ।হয়তো এখনকার সময় হলে ছেলেটা নীলার মোবাইল নাম্বার চাইত ।কিন্তু তখন এরকম কিছুই হয়নি ।তারপর নীলা বাস থেকে নেমে গেল। নীলার মনের মধ্যেও কোথায় যেন একটু খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আর কখনও হয়তো দেখা হবে না। নীলা দেখতেও যেমন সুন্দর ছিল,ছেলেটাও বেশ সুদর্শন ছিল।পছন্দ না করার কিছু ছিল না।নিলারও মনে হচ্ছিল বাসার একটা নাম্বার দিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সে তো কিছু বলে নি। যাই হোক তার পর ছেলেটি অসহায়ের মত নীলার দিকে তাকিয়ে রইল। আবার ছেলেটার বাস ছেড়ে দিল। এভাবেই একটি ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল। আর কোনদিন তাদের কোথাও দেখা হয়নি। হয়তো ঘটনাটি কারও তেমন মনে নেই, আবার মনে থাকতেও পারে। জীবনে চলার পথে এরকম অসংখ্য ঘটনা অনেকের সঙ্গেই ঘটে থাকে ।আশা করছি আপনাদের কাছে আমার আজকের গল্পটি ভালো লেগেছে।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
| ফটোগ্রাফার: | @wahidasuma |
|---|---|
| ডিভাইস: | OPPO Reno8 T |
🔚ধন্যবাদ🔚
@wahidasuma
আমি ওয়াহিদা আফরোজ সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi @wahidasuma,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
অল্প সময়ের মধ্যে দুজনের মাঝে বেশ ভাব বিনিময় হয়েছিল। নীলা ছেলেটিকে চোখে হারাচ্ছিল এবং ছেলেটিও নীলাকে চোখে হারাচ্ছিল।যখন নীলা চলে যাচ্ছিল তখন ছেলেটি বেশ কষ্ট পেয়েছিল এবং অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। যেন তার খাঁচা থেকে পাখি উড়ে যাচ্ছে। বেশ সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন আপু।আপনার লেখা গল্পটি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য
আপু আমার লেখা গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে বেশ ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন সব সময়।
গল্পটি তো ভালই লাগছিল শেষ পর্যন্ত এটি যে এরকম পূর্ণতা পাবে না সেটা তো ভাবিনি । কোথায় মাঝপথে এনে শেষ করে দিলেন । আসলেই আগেকার দিনে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটতো। ঠিকইতো ছেলেটা তো নীলার কাছে কোন ফোন নম্বরও চাইল না শুধু দেখেই গেল । ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে কিন্তু শেষে আরো থাকলে আরো ভালো লাগতো।