গল্প || মাতৃত্ব (শেষ পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগ8 months ago

আসসালামু আলাইকুম


আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।



আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি গল্প শেয়ার করতে এসেছি।আসলে গল্প মানেই আমাদের আশেপাশে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা । যেই ঘটনা গুলো এক একটি গল্প আকারে আমাদের কাছে এসে ধরা দেয় ।আসলে প্রতিটি গল্পই আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা। আজকে আমি যে গল্পটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব এটি বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখেই মূলত লেখা। আশা করছি আপনাদের কাছে আজকের গল্পটি ভালো লাগবে । তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন চলে যাই মূল গল্পে।


গল্প || মাতৃত্ব (শেষ পর্ব)



adult-1807500_1280.jpg

source

ছোট বোনের বাচ্চা না হওয়ার কারণে বড় বোন তার নিজের বাচ্চা জন্মের পরপরই ছোট বোনকে দিয়ে দেয় ।তারপর থেকে----

তারপর ছোট বোন তাকে নিয়ে যায় । তার নাম রাখে নীলা। তারপর থেকে ছোট বোন একটু একটু করে বাচ্চাটিকে বড় করতে থাকে। ভীষণ ভালোবাসে সে বাচ্চাটিকে, একদম নিজের বাচ্চার মত করে । এভাবে সময় যেতে যেতে বাচ্চা টিও একটু একটু করে বড় হতে থাকে ।যদিও পরবর্তীতে তার মায়ের সঙ্গে তার অনেকবার দেখা হয় ।তবে সে খালা হিসেবে জানে । তার নিজের মা তাকে অনেক আদর করে। তবে কখনো তাকে বুঝতে দেয় না সে তার নিজের মেয়ে । বোনের মেয়ের মত করেই কথাবার্তা বলে ।


এভাবে সময় যেতে যেতে একটা সময় নীলা বড় হয়ে ওঠে। সে যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাই যায়। সবাই বেশ আনন্দ উৎসব করছিল ।এরই মধ্যে এক আত্মীয়র মাধ্যমে সে জানতে পারে সে যাকে মা হিসেবে জানে আসলে সে তার মা নয় ,তার খালা হচ্ছে তার নিজের মা ।নীলা এই বিষয়টা জানার পর ওখান থেকে একা একাই তার বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে খুব চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। তার মা তাকে কিছুতেই থামাতে পারেনা ।সে শুধুই বলতে থাকে তুমি আমার মা নও। আমার মায়ের কাছ থেকে তুমি আমাকে কেন এনেছ? মেয়েটা একদম পাগলের মত করতে থাকে।


তার মা খুব কান্নাকাটি করতে থাকে এবং বলতে থাকে তুই আমার মেয়ে। তুই আর কারো মেয়ে নয় ।তুই এরকম করলে আমি মারা যাবো। তোকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। কিন্তু সে কিছুই শুনতে রাজি নয়। সে শুধু বলছে যে আমার আপন মা আমি তার কাছেই যাব ।তারপর সে তার খালার বাড়িতে যেয়ে উপস্থিত হয়। চিৎকার করে তার খালাকে ডাকতে থাকে ।তখন তার খালা অবাক হয়ে তার সামনে আসে। তখন মেয়েটি তার খালাকে শক্ত করে ধরে বলতে থাকে আমাকে তুমি কেন তোমার বোনকে দিয়ে দিয়েছো ?আমি কি তোমার কাছে এতটাই বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম যে আমাকে তুমি তোমার কাছে রাখতে পারো নি?


আমি এখন থেকে এখানেই থাকবো ।আর কোথাও যাবো না ।দেখি এবার তুমি আমাকে কেমন করে অন্য কোথাও রেখে আসো ।এ কথা শুনে তো মেয়েটির আপন মা আকাশ থেকে পড়ে ।তার মাথা কাজ করে না এখন সে কি করবে। এদিক দিয়ে তার ছোট বোনও তার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। ছোট বোন চিৎকার করে কাঁদতে থাকে ।বড়বোন ও কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা। কিন্তু মেয়েকে কোনভাবেই বোঝানো যায় না। সবাই মিলে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে মেয়েকে তার মায়ের কাছে পাঠাতে চায়। কিন্তু সে কিছুতেই সেখানে যেতে রাজি নয় ।সে এখানেই থাকবে ।


তাকে সব ঘটনা বলা হয়। কি কারনে তাকে তার মা জন্ম দিয়েছিল এবং তাকে তার খালার কাছে কেন দিয়েছিল ।সবকিছু শোনার পরেও নীলা কিছুই শুনতে চায় না, কিছুই বুঝতে চায় না।এভাবে কয়েকদিন চলে যায়। নীলা তার আপন মায়ের বাড়িতেই থাকতে চায়। কিছুতেই তাকে সেখানে পাঠানো যায় না ।তখন সবাই হাল ছেড়ে দেয়। কেউ কিছু বুঝতে পারে না কি করবে।তারপর থেকে মেয়েটি তার মায়ের কাছেই থেকে যায়। ওদিক দিয়ে নীলার পালিত মা মেয়ের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়ে ।


নীলা তার পরেও তার পালিত মায়ের কাছে ফিরে যায় না। নীলা তার পালিত মায়ের কাছে ফিরে না গিয়ে প্রমাণ করে পর কখনোই আপন হয় না ।সে তার আপন মায়ের কাছেই থেকে যায় ।তার মা তাকে রাখতে না চাইলেও বাধ্য হয়ে তাকে রাখতে হয়। নীলার বয়স তখন কম ছিল, বেশ আবেগপ্রবণ ছিল। যার কারণে হয়তো এরকম করেছিল। পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে সে হয়তো কিছুটা পরিবর্তন হবে । সবকিছু বুঝতে পারবে। সে আবার তার মায়ের কাছে ফিরে যাবে এটাই প্রত্যাশা করছি।
(সমাপ্ত)



আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফটোগ্রাফার:@wahidasuma
ডিভাইস:OPPO Reno8 T

🔚ধন্যবাদ🔚

@wahidasuma

আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।

VOTE@bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

logo.gif

Sort:  
 8 months ago 

আপনার গল্পটা পড়ে নীলার পালিত মায়ের জন্য অনেক খারাপ লাগলো। আসলে মায়ের সাথে যদিও কারো তুলনা হয় না। তবে নীলাকে ছোট বেলা থেকে লালন পালন করেছে তাই নীলার তার পালিত মাকে ছেড়ে আসা মোটেও উচিত হয়নি।এটা সত্যি সত্য কখনো গোপন থাকে না। আস্তে আস্তে নীলাকে একটু সত্যিটা বললে হয়তো এমন হতো না। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর লিখেছেন।

 8 months ago 

মেয়েটা এরকম একটা ঘটনা শোনার পর অনেক বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে। যার কারণে সে রকম একটা ডিসিশান নিয়েছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 8 months ago 

একদম ঠিক বলেছেন আপু পর কখনো আপন হয় না। নীলা তার বাস্তব প্রমান। ছোটবেলা থেকে তার খালা তাকে নিজের মায়ের মত করে বড় করলো। কিন্তু সে সত্যিটা জানার পরে এক পলকে সবকিছু ভুলে গিয়ে তার মায়ের কাছে চলে গেল। এমনকি তার খালা এত অসুস্থ হওয়ার পর সে তার কাছে গেল না। তার খালার জন্য খুব খারাপ লাগছে।

 8 months ago 

হ্যাঁ আপু এরকমই হয় বাস্তবে ।বাস্তবতার নিরিখে লেখা গল্পটি ছিল ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 8 months ago 

এই গল্পটার আগের পর্ব আমার পড়া হয়েছে, যার কারণে পরবর্তী পর্বটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। কিন্তু নীলার খালার জন্য অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। যে মানুষটা তাকে ছোটবেলা থেকেই নিজের মেয়ের মতো করে বড় করে তুলেছে, তাকে ছেড়ে এসেছে এসব কিছু জানার পর। সে এটা প্রমাণ করেছে যে পর কখনো আপন হয় না। তার খালা চেয়েছিল নিজের মেয়ের মতো করে তাকে মানুষ করতে। তার কারণেই হয়ত তার খালা এতো দিন বেঁচে ছিল। না হলে তো কত আগেই মারা যেত সন্তানের শোকে। তবে এটাই কামনা করি যেন নীলা সবকিছু বোঝার পর তার পালিত মায়ের কাছে যায়।

 8 months ago 

হ্যাঁ আপু এরকম পরিস্থিতিতে সবারই একই প্রত্যাশা থাকবে নীলা যেন তার মায়ের কাছে ফিরে যায়। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য ।ভালো থাকবেন।

Posted using SteemPro Mobile

 8 months ago 

আপু আপনার গল্পটি প্রথম পর্ব আমি পড়েছিলাম দ্বিতীয় পর্ব পড়লাম আমার কাছে গল্পটা অনেক ভালো লাগলো ।তবে মেয়েটির আচরণটা একদমই ভালো লাগলো না ।মেয়েটি তার আসল মার কাছে কেন ফিরে গেল তাই বুঝলাম না । তার নকল মাতো তাকে মায়ের মতই আদর স্নেহ দিয়ে এতটা বড় করেছে তারপরও সে তাকে ছেড়ে চলে গেল । আসলে পর পরই হয় পর কখনো আপন হতে পারে না ।

 8 months ago 

আপু আপনি আমার লেখা গল্পটির প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব পড়েছেন এবং আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 8 months ago 

খুব সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন আপনি। এই গল্পের প্রথম পর্ব আমি পড়েছিলাম। আজকে এর শেষ পর্ব পড়েও খুবই ভালো লাগলো৷ আসলে এরকম গল্প পড়ার মধ্যে অনেক কিছুই থাকে৷ যা আমাদের সকলকেই অনেক ধরনের শিক্ষা দেয়৷ এই শিক্ষা আমরা গ্রহণ করে আমাদের নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারি৷ এখানে নীলার খালা তাকে লালন পালন করে বড় করে তুলেছে এবং তিনি তাকে নিজের মেয়ের মত করে বড় করেছিলেন৷ যাতে করে তিনি তার সন্তানদের যে না থাকার কষ্টগুলো ছিল তা পূরণ করতে পারেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত নীলা যখন তার খালাকে ছেড়ে চলে গেল তা দেখে অনেকটাই খারাপ লাগলো৷ আসলে যে মানুষটি তাকে এতদিন ধরে কষ্ট করে বড় করে তুলেছে সে এরকম একটি কষ্টের ধাক্কা সহ্য করতে পারেনি৷ এরকম ধাক্কা কেউই সহ্য করতে পারেনা৷ আশা করি নীলা তার ভুল বুঝতে পারবে এবং আবারও তার খালার কাছে ফিরে আসবে৷ অনেক ধন্যবাদ এরকম একটি গল্প শেয়ার করার জন্য৷

 8 months ago 

ভাইয়া আপনি প্রথম পর্ব টি পড়েছেন এবং আজকের পর্ব টিও পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো।গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

 8 months ago 

আমার মনে হচ্ছে যেন পুরো পর্ব আমার চোখের মাঝে ভাসছে।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 76576.73
ETH 3043.84
USDT 1.00
SBD 2.62