গল্প|| কালো রংয়ের মেয়ে(শেষ পর্ব)
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।
আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি গল্প শেয়ার করতে এসেছি।আসলে গল্প মানেই আমাদের আশেপাশে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা । যেই ঘটনা গুলো এক একটি গল্প আকারে আমাদের কাছে এসে ধরা দেয় ।আসলে প্রতিটি গল্পই আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা। আজকে আমি যে গল্পটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব এটি বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখেই মূলত লেখা। আশা করছি আপনাদের কাছে আজকের গল্পটি ভালো লাগবে । তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন চলে যাই মূল গল্পে।
গল্প|| কালো রংয়ের মেয়ে(শেষ পর্ব)
গ্রামের একটি মেয়ে ময়না। তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয় । শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে দেখে শুনেই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেয়। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পর কালো বলে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তারপর থেকে----
যাই হোক এভাবে যেতে যেতে একটা সময় ময়নার স্বামী ময়নাকে মারধর করতে শুরু করে। পরিবারের স্বামীসহ অন্যান্য সদস্যও তার সঙ্গে সারাক্ষণ দুর্ব্যবহার করে, যার কারণে ময়না আর পরিবারের সবার সঙ্গে টিকে থাকতে পারে না। সে একদম বাধ্য হয়ে যায় সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে। ময়নার বাবার বাড়িতে যাওয়ার অবস্থাও ছিল না। কেননা তার বাবা মারা গিয়েছিল। তাদের সংসারের অবস্থাও খুবই খারাপ। তাকে কে খাওয়াবে যার কারণে সে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
ময়না ঢাকায় তার এক খালাতো বোনের আশ্রয়ে থাকে। কিন্তু তার বোন শহরে মানুষের বাড়িতে কাজ করতো। গ্রামের এই দরিদ্র মেয়েগুলোর আর কি বা করার থাকে। কেননা তারা অশিক্ষিত থাকে। মানুষের বাসায় কাজ করার যোগ্যতা ছাড়া তাদের আর কিছুই থাকে না ।যার কারণে বিপদে পড়লে তারা ঢাকা শহরে এসে মানুষের বাড়ির কাজের লোকে পরিণত হয়। ময়নার জীবনেও ধীরে ধীরে তেমনটি হতে লাগলো।
যদিও ময়না প্রথম প্রথম একেবারেই ঢাকা শহরের কাজ বুঝে উঠতে পারছিল না। এক বাসায় কাজ করতেই তার প্রচুর সময় লেগে যাচ্ছিল। তার বোন এসে তার কাছে সাহায্য করত। এভাবে সময় যেতে যেতে ময়নার সঙ্গে তার মেয়েদের দূরত্ব বেড়ে যায়। অনেকদিন যোগাযোগ না থাকার কারণে তার মেয়েরা তাকে ভুলতে বসে । তার বাড়ির লোকজন তার সম্পর্কে মেয়েদের কাছে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলে। যার কারণে মেয়েরা তার মাকে আর দেখতে চায় না।
এর মধ্যে একদিন ময়না বাড়িতে ফোন দিলে তার মেয়েরা বলে তার সঙ্গে কথা বলবে না ।ময়না এতে ভীষণ কষ্ট পায় ।সে চিন্তা করে এ জীবন রেখে লাভ কি? যেখানে স্বামী বাচ্চা কেউই আমাকে পছন্দ করে না ।আমি অসুন্দর, গায়ের রং কালো যার কারণে আজ আমার এই পরিণতি ।তাহলে বেঁচে থেকে কি করব? মাঝে মাঝে সে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আবার ভাবে আত্মহত্যা করেই বা কি হবে? জীবন তো একটাই । আত্মহত্যা মহাপাপ। এভাবে এক অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছে ময়না ।
অবশেষে ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছে। মনে আশা রেখেছে হয়তো তার স্বামী একদিন তাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। হয়তো আবার সে তার সুখের সংসার ফিরে পাবে। কিন্তু আদৌ তা হবে কিনা তার জানা নেই । তবুও আশায় বুক বেঁধে বেঁচে আছে। হয়তো একদিন সুখের দেখা পাবে।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফার: | @wahidasuma |
---|---|
ডিভাইস: | OPPO Reno8 T |
🔚ধন্যবাদ🔚
@wahidasuma
আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।
এরকম ময়না হাজারো আছে। যাদের কিনা গায়ের রং কালো বলে কেউই তাদেরকে পছন্দ করে না। ময়না তো আর নিজের থেকে নিজের গায়ের রং এরকম করেনি। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে অনেক বেশি অত্যাচার করতো দেখছি। তার স্বামী তো তার গায়ে হাতও তুলত। ময়না এখন ঢাকা শহরে মানুষের বাড়িতে কাজ করে দিন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে তার মেয়েরাও দেখছি তাকে দেখতে পারেনা অন্যদের মতোই। ময়না যে আশায় বসে রয়েছে এটা পূরণ হবে কিনা এটাই তো বুঝতে পারছি না। তার স্বামী যদি কখনো নিজের ভুল বুঝতে পারে অবশ্যই ময়নার কাছে আসবে। অনেক সুন্দর করে গল্পটা লিখলেন পড়ে ভালো লাগলো।
আপনার কাছে আমার গল্প টি ভালো লেগেছে জেনে সত্যিই বেশ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
কালো মেয়েদের ওতো সুখে থাকার অধিকার রয়েছে। কিন্তু কেন ময়নার সাথে এরকমটা হয়েছে। ময়নার তো বিয়ে হয়েছে তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে। কিন্তু বিয়ের পর তাদের রূপ যে পরিবর্তন হবে এটা তো বুঝতেই পারিনি। এই গল্পের প্রথম পর্বটা পড়েছি। শেষ পর্বটা পড়ে তো খুব খারাপ লাগলো। তার দুই সন্তানের কাছ থেকেও এখন তাকে দূরে থাকতে হচ্ছে, এমন কি অবহেলা পেতে হচ্ছে তাকে। ময়না তো এখনো চায় সুখের সংসার করতে কিন্তু পারছে না। তার স্বামী তাকে ফিরিয়ে নেবে এই আশায় আছে এখনো। তবে এটাই কামনা করছি যেন পরবর্তীতে সে সুখের জীবন কাটায়।
হ্যাঁ ভাইয়া সে যেন তার সংসারে ফিরে যেতে পারে এটাই প্রত্যাশা করছি।ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
ময়নার শ্বশুর বাড়ির লোকজনেরা ময়নাকে এত কষ্ট দিয়েছে যে সে বাড়ি থেকে ছেড়ে চলে গেল। এখন ঢাকা গিয়ে তো সে খুব আরামে নেই। শুধু শুধু পরিবারের লোকজনকে ছেড়ে চলে আসলো। মেয়েরাও তাকে ভুল বুঝলো। আসলে ময়নার গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো ময়নার জন্য।
আসলে এরকম হাজারো ময়না রয়েছে আমাদের আসে পাশে।যাদের গল্প হয়তো আমরা জানি না।খুব কষ্ট না হলে আমার মনে হয় একটি মেয়ে তার সংসার ছেলে চলে আসে না। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
তারা কেন বিয়ের পরে ময়নার সাথে এরকম ব্যবহার করছে । বিয়ের সময় কি তারা ময়নাকে দেখেছিল না দেখেশুনে বিয়ে করার পরও যে খারাপ ব্যবহার করে এসব মানুষের আসলে শাস্তি হওয়া দরকার । ময়না বাধ্য হয়ে চলে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু পরে তো তার মেয়েরাও তাকে আর পছন্দ করছে না । তারপরও সে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে একটু নিজের মতো করে বাঁচতে পেরেছে এটাই বড় কথা । পরবর্তীতে হয়তোবা তার স্বামীর মন গললেও গলতেও পারে ।
মানুষের মন বোঝা বড় দায় ।নিজেরা দেখে শুনে নিয়েই পরবর্তীতে আবার দেখতে পারেনা। যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।