গল্প || অসহায়ত্ব

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

আসসালামু আলাইকুম


আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।



বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সামনে একটি গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি । আসলে গল্প মানেই আমাদের আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা । যেই ঘটনা গুলো এক একটি গল্প আকারে আমাদের কাছে এসে ধরা দেয় ।আসলে প্রতিটি গল্প আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা। আজ আমি যে গল্পটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব সেটি মূলত একটি বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা । আশা করছি আপনাদের কাছে গল্পটি ভালো লাগবে । তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন চলে যাই মূল গল্পে।


woman-2924698_1280.png

source

অসহায়ত্ব


আসলে আজকে যে গল্পটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব এটি আমার মায়ের বাসার ভাড়াটিয়ার ঘটনা। যেটি তার বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া ।তার কাছ থেকেই মূলত কাহিনীটা শোনা। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল গল্পে চলে যাচ্ছি। ওই ভদ্রমহিলার বাচ্চার বয়স যখন দুই বছর তখন তার স্বামী মারা যান ।স্বামী যখন বেঁচে ছিলেন তিনি ব্যবসা করতেন এবং তারা বেশ ভালোভাবেই চলছিলেন। ঢাকায় তারা বেশ ভালোভাবেই তাদের জীবন কাটাচ্ছিল ।হঠাৎ করে স্বামীর মৃত্যুতে মহিলাটির জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের কালো ছায়া।


শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার স্বামীর ব্যবসা নিয়ে নেন এবং তার হাতে সামান্য কিছু টাকা ধরিয়ে দেন। তিনি ছোট শিশু সন্তানকে নিয়ে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠেন না। তারপর তিনি অসহায়ের মত স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন নিজের বাবার বাড়িতে। কিন্তু সেখানেও তার খুব বেশি দিন ঠাই হয় না। তারপর একটি ভাড়া বাসায় আশ্রয় নেন এবং তার শ্বশুর বাড়ির লোকদের দেওয়া সামান্য অর্থ দিয়ে তিনি চলতে থাকেন।
তিনি তার ভাই বোন আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে হাত পেতে পেতে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে নিয়ে তার সন্তান এবং তিনি জীবনটা কোনরকমে পার করতে থাকেন।


এভাবে ধীরে ধীরে তার সন্তান বড় হয়ে ওঠে। এ ভাবে ছেলেকে আস্তে আস্তে মানুষ করে তোলেন এবং লেখাপড়া শেখান ।তারপর ছেলেটি একটি চাকরিও পেয়ে যায় ।খুব বেশি ভালো বেতনের চাকরি না তারপরেও মা ছেলের মোটামুটি কোনরকম চলছিল। ছেলেটির মা সব সময় পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে ছেলেটির নামে সুনাম করতো। আর বলতো আমার ছেলেটি এত ভালো আমি যা বলি তাই শুনে। এরকম ছেলে আজকাল পাওয়া যায় না। ছেলের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিল।


এরই মধ্যে ছেলেটির আবার একটি মেয়ের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক হয়। ছেলেটি মেয়েটিকে বিবাহ করার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। এদিকে মেয়েটির বাড়ির লোকজন তাদের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হয় না। তারপর ছেলে ও মেয়েটি পালিয়ে যায়। তারপরে আবার সবার সম্মতিক্রমে তাদের বিয়ে হয়। তারপর মেয়েটিকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসে এবং ছেলেটির মা তার সাধ্যমত ছোট্ট একটি অনুষ্ঠান করে। এভাবে বেশ কয়েকদিন তাদের ভালই চলছিল। কিন্তু মহিলাটি প্রথমে মেয়েটির উপর শাশুড়ি শাশুড়ি একটা ভাব নিচ্ছিল। নিজের ইচ্ছে গুলো জাহির করত ।এভাবে চলতে চলতে মেয়েটি তার স্বামীর কাছে সারাক্ষণ বলতে থাকতো ।তারপর একদিন ছেলেটিও মায়ের বিপক্ষে চলে যায়। তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় তারা তার মাকে রেখে আলাদা একটি বাসা নেবে। এদিকে মহিলাটি বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।


কারণ ছেলেটি ছাড়া তার আর কেউ দেখার মতো ছিল না। সে তখন কার কাছে যাবে, কি করবে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। তখন সে ছেলেটির হাতে পায়ে ধরে ও বউয়ের কাছে মাফ চায়। কিন্তু ছেলেটিও তার কথা শুনতে নারাজ ।আর মেয়েটি তো শুনবেই না ।এখন মহিলাটি বেশ অসহায় হয়ে যায়। মহিলাটি কি করবে খুঁজে পায় না। কারণ বাবার বাড়িতে গেলেও সেখানে ভাইয়েরা জায়গা দিবে কিনা তাইবা কে জানে। ছেলেটা কয়েকদিন পরেই নতুন বাসায় উঠে যাবে।


মহিলাটি যেহেতু পড়াশোনা জানতো না তাই সে অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটি দোকানে দশ হাজার টাকা বেতনের একটি কাজ ঠিক করে।তখন সে ঠিক করে এই টাকা দিয়ে কোন রকমে তার চলতে হবে। এভাবে কিছুদিন যাবার পর মহিলাটি ছেলেটির সঙ্গে থাকার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ করে ছেলেটির মনও গলে যায় মায়ের কাজ পাওয়া দেখে। তারপর আবার তারা একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় ।জানিনা পরবর্তীতে একসঙ্গে থাকতে পারবে কিনা। যেহেতু ছেলেটির বউ চায় না তার মা তাদের সঙ্গে থাকুক। কিন্তু তার মা ছেলেটির জন্য অনেক কষ্ট করেছে। যখন তার স্বামী মারা যায় তখন সে বিয়ে করতে পারতো। ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়েই বিয়ে করেনি । প্রতিবেশীরা মহিলাটিকে বলে আপনার তখন বিয়ে করা উচিত ছিল। এখন মহিলাটিও প্রতিবেশীদের কে বলছে আমি ভুল করেছি। তখন আমার বিয়ে করা উচিত ছিল । তাহলে আজ আমার এই দিন দেখতে হতো না ।জানি না মহিলাটি ভাগ্যে কি আছে?


আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফটোগ্রাফার:@wahidasuma
ডিভাইস:স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৪০

🔚ধন্যবাদ🔚

@wahidasuma

আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।

VOTE@bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

logo.gif

Sort:  
 11 months ago 

আপনার পোস্টটা পড়ে মহিলাটার জন্য অনেক খারাপ লাগলো। সত্যি এমন ঘটনা আমাদের চার পাশে প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে। আসলে কোন মা চায়না ছোট ছেলে রেখে আর একটা বিয়ে করতে। তবে ছেলেটার তার মায়ের সাথে এমন করা মোটে উচিত হয়নি। ছেলেটার বোঝা উচিত ছিল মার সাথে পৃথিবীর কোন কিছু তুলনা হয় না। যাইহোক মার সাথে এমন করেছে হয়তো এর প্রতিদান সে ও একদিন পাবে। দেখা যাক অবশেষে ছেলেটির সাথে থাকতে পারে কিনা।

 11 months ago 

আপনি ঠিকই বলেছেন মহিলার জন্য আমারও ভীষণ খারাপ লেগেছে। যাই হোক কিছুই করার নেই। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 11 months ago 

খুবই খারাপ লাগলো মহিলাটির কষ্ট দেখে। যেই ছেলের জন্য সারা জীবন কষ্ট করে গিয়েছেন সেই ছেলে এখন বিয়ে করে বউয়ের হয়ে গিয়েছে। মায়ের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। এরকম অকৃতজ্ঞ ছেলেদের সম্পর্কে আসলেই কিছু বলার নেই। যাইহোক মহিলা তারপরও একটা চাকরি পেয়েছে জেনে ভালো লাগলো। এখন ছেলে এই চাকরি সুবাদে মায়ের সঙ্গে থাকতে রাজি হলে হয়েছে তাই অনেক আশা করি তারা এখন একসঙ্গে থাকতে পারবে।

 11 months ago 

আসলে এ ধরনের ছেলেরা সত্যিই অকৃতজ্ঞ। মায়ের কথা চিন্তা করে না শুধু নিজের কথাই চিন্তা করে। তারপরেও সমাজে এরকম অসংখ্য মানুষ ঘুরে বেড়ায় ।ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 11 months ago 

এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর ছোট থেকে ছেলেটিকে এতো বড়ো করলো। তারপর বিয়েও দিলো। আর বিয়ের পর বৌয়ের কথায় মা থেকে আলাদা হয়ে গেলো। আবার মা চাকরি করছে দেখে এক হয়ে গেল।খুবই দুঃখজনক। মহিলাটির কষ্ট দেখে খুবই খারাপ লাগলো।

 11 months ago 

হ্যাঁ আপু আসলে মহিলাটির ভীষণ কষ্ট ।আমারও বেশ খারাপ লেগেছিল। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 11 months ago 

ঘটনাটি শুনে অনেক খারাপ লাগলো। আসলে যাদের কপালে দুঃখ থাকে তাদের দুঃখ কখনো শেষ হয় না। ছেলেটাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করার পরেও শেষমেষ কিন্তু আলাদা হয়ে যাওয়ার প্ল্যান নিল। আলাদা হয়েও গেল। কিন্তু আমার মনে হয় সেখানে বেশি দিন শান্তিতে থাকতে পারবে না। যেহেতু একটা চাকরি খুঁজে নিয়েছে সেজন্য তাকে ঠাই দিল। গল্পটি পড়ে ভীষণ খারাপ লেগেছে। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 11 months ago 

হ্যাঁ আপু আপনি একদম ঠিকই বলেছেন যাদের কপালে দুঃখ থাকে তাদের দুঃখ আসলেই কখনো শেষ হয় না ।ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 11 months ago 

মহিলার ভাগ্য আসলেই খুব খারাপ। স্বামী মারা যাওয়ার পর মহিলার শ্বশুর বাড়ি এবং বাবার বাড়িতে জায়গা হলো না। এতো কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করলো ঠিকই, কিন্তু বিয়ের পর সেই ছেলেও অমানুষ হয়ে গেল। তবে তার মা'কে কষ্ট দিয়ে সে কখনো সুখী হতে পারবে না। এর বিচার সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই করবে। মহিলাটি শেষ বয়সে একেবারে অসহায় হয়ে গেল। যাইহোক গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 11 months ago 

হ্যাঁ ভাইয়া মহিলাটি সত্যি ভীষণ অসহায় । ছেলেটি নিশ্চয়ই এর শাস্তি একদিন পাবে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 11 months ago 

আসলে মা তো মায়েই হয়।মায়ের সাথে অন্যকারো তুলনা হয় না।মহিলা সত্যি অনেক অসহায়।স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা অন্যয় ভাবে তাড়িয়েছ আবার বাপের বাড়িতেও জায়গা মেলেনি।অবশেষে ছেলে একটু চাকুরী করে মায়ের সুখের দিন আসতে না আসতেই আবার ছেলের বউ মা ছেলেকে আলাদা করেছিলো।তবে ভালো লাগলো অবশেষে ছেলের কাছে যেতে ও থাকতে পারছেন। ধন্যবাদ সত্য ঘটনা অবলম্বনে পোস্ট টি করার জন্য।

 11 months ago 

আসলে আপু কতদিন থাকতে পারে সেটিই দেখার বিষয় ।আসলে মা নতুন চাকরি পেয়েছে তাই রেখেছে ।যাই হোক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.16
JST 0.029
SBD 2.55