গল্প|| বৃদ্ধ বয়সে অসহায় বাবা-মা
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।
আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি গল্প শেয়ার করতে এসেছি।আসলে গল্প মানেই আমাদের আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা । যেই ঘটনা গুলো এক একটি গল্প আকারে আমাদের কাছে এসে ধরা দেয় ।আসলে প্রতিটি গল্প আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা। আজকে আমি যে গল্পটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব এটি একটি বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা। আশা করছি আপনাদের কাছে আজকের গল্পটি ভালো লাগবে । তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন চলে যাই মূল গল্পে।
গল্প|| বৃদ্ধ বয়সে অসহায় বাবা-মা
সমাজের একটি মধ্যবিত্ত পরিবার।পরিবারের বাবা একটি সরকারি কলেজের প্রফেসর।আর পরিবারের মা সরকারি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করেন।সমাজে তাদের বেশ সম্মান রয়েছে।তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।মেয়ে সবার বড়।তাদের সব গুলো ছেলেমেয়েই পড়ালেখায় বেশ ভালো।বেশ সুখের সংসার তাদের।দেখতে দেখতে ছেলে মেয়ে গুলো বড় হয়ে উঠলো।বড় মেয়ে অনার্স শেষ করলো ।তারপর তার জন্য ভালো একটি বিয়ের প্রস্তাব আসলো।ছেলেটা ভার্সিটির লেকচারার। তার পর মেয়েটার ধুম ধাম করে বিয়ে হয়ে গেল।
কিছুদিন পর মেয়েটার বাবা অবসরে গেলেন।মেয়েটার হাসবেন্ড পি এইচ ডি করতে বাইরে চলে গেল। তার কিছুদিন পর মেয়েটাও বরের কাছে বাইরে চলে গেলো।এভাবে সময় যেতে যেতে মেয়েটার মাও অবসরে চলে গেল।তার পর বড় ছেলেটা ডাক্তার হয়ে বের হলো।ছোট ছেলেটাও বিশ্ব বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করলো।তারপর তার বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আরো পড়তে বোনের কাছে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেলো।
এভাবে সময় যেতে যেতে তাদের বাবা মা তাদের দুই ছেলের জন্য মেয়ে ঠিক করলো।তারপর দুই ছেলেকে বিয়ে দিয়ে দিল।বড় ছেলের বউ ও ডাক্তার।বিয়ের পর বড় জোর এক সপ্তাহ শ্বশুর বাড়িতে থেকেছে।ছোট ছেলের বউ ও তাই।ছেলে বিয়ে করে এক সপ্তাহ ছিল।বউ ও ওই কয়দিন শ্বশুর বাড়ি ছিল।তার পর ছোট ছেলে আবার বাইরে চলে যায়।তারপর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বউ কেও নিয়ে যায়।আর বড় ছেলের বউ বিয়ের কিছু দিন আগেই বাইরে আরো ডিগ্রী নিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে নেয়।সব কিছু ঠিক হয়ে যায় তাদের ছেলে কেও নিয়ে বাইরে চলে যায়।
এভাবে দেখতে দেখতে তাদের চোখের সামনে তিনটি ছেলে মেয়ে বিদেশে স্থায়ী হয়ে গেল।থেকে গেল তারা দুই জন।এই বৃদ্ধ বয়সে তারা একা হয়ে গেল।যেখানে ছেলে মেয়ে নাতি নাতনি নিয়ে সুখে থাকার কথা সেখানে আজ অসহায় বাবা মায়ের কথা বলার মানুষ পর্যন্ত নেই।এই বৃদ্ধ বয়সে এখনো তাকে বাজার করে খেতে হচ্ছে।তারা এখন এতটা অসহায় হয়ে পড়েছে যে আফসোস করে বলছে ছেলে মেয়েকে বেশি ভালো পড়াশোনা করাতে নেই।কত টা কষ্ট পেলে মায়ের মুখে এই কথা আসে।আরো বলতে থাকলো বড় ছেলেটাও বউয়ের পিছু পিছু বাইরে চলে গেল।আমাদের কথা একটু চিন্তাও করলো না।এই ভেবে ভেবে এখন তাদের দিন কাটছে। হয়তো এখন তাদের কাজ করে খাওয়ার সামর্থ্য আছে কিন্তু আরো কিছু বছর গেলে যখন থাকবে না তখন তাদের কে দেখবে সেটাই হলো চিন্তার বিষয়।
আসলে যে ছেলেকে ডাক্তার বানালো সেই ছেলে বাবা মা অসুস্থ হলে দেখা তো দূরের কথা মৃত্যুর পর ও বাবা মাকে দেখতে পারবে কিনা সন্দেহ। এটাই হল আমাদের সমাজের বাস্তবতা।বাবা মা কষ্ট করে ছেলে মেয়েকে ডাক্তার বানায় ঠিকই। কিন্তু ছেলে মেয়ের বাবা মায়ের জন্য প্রেসক্রিপশন লেখার সময় হয়ে উঠে না।বাবা মায়ের শেষ বয়স টা কিভাবে কাটছে সেই চিন্তা করার সময় তাদের হয়ে উঠে না। তখন তারা তাদের ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত সময় পার করে।এভাবে সময়ের সাথে দুঃখ কষ্টে বাবা মায়ের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যায়।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফার: | @wahidasuma |
---|---|
ডিভাইস: | OPPO Reno8 T |
🔚ধন্যবাদ🔚
@wahidasuma
আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।
বর্তমান সামাজিক অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এতই খারাপ অবস্থায় চলে গেছে বলার মতই না। শুধু পড়ালেখা করে বিদেশে চলে গেলে হয়না আপু। দেশের ভিতরে যারা সন্তান আছেন তারা ভালোভাবে দেখে না। ওটা বলতে পারেন জানাযার সময় কিংবা অসুখ-বিসুখে দেখাশোনা করে সামান্য সেটা। কিন্তু কিছু কিছু সন্তান আছে মা বাবার প্রতি এতই খারাপ আচরণ করে। এমন সন্তান থাকার চেয়ে না থাকাটা ভালো। আপনার শেয়ার করা গল্পটি পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। আসলে অতিরিক্ত ডিগ্রী ধারণ করে কোন লাভ নেই।
হ্যাঁ আপু আপনি ঠিকই বলেছেন এমন সন্তান থাকার থেকে না থাকাই ভালো ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।
আপু বর্তমান যুগের বেশিরভাগ মানুষ একেবারে স্বার্থপর। শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে। তবে এই ধরনের ঘটনাগুলো হৃদয়বিদারক। মা বাবা কতো কষ্ট করে তিন ভাই বোনকে মানুষ করলো,কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে এখন তাদের পাশে কেউ নেই। বড় ছেলে এবং তার ওয়াইফ চাইলে পারতো, দেশে কোনো ভালো হসপিটালে জয়েন করতে এবং মা বাবার দেখাশোনা করতে। শেষ বয়সে মা বাবা কতোটা কষ্ট করছে। এটা জেনে আমারও খারাপ লাগছে। যাইহোক সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক সেই কামনা করছি। এমন বাস্তব একটি ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
হ্যাঁ ভাইয়া সবার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এই কামনা আমারও। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
আপনার গল্পটি সাথে বাস্তবতার অনেক মিল রয়েছে। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ রয়েছে যারা পড়ালেখা করার জন্য বিদেশে যায় এবং বিদেশি সেটেল হয়ে যায়। দেশে পড়ে থাকে বাবা-মা। আর বাবা-মার কষ্ট দেখার মত কেউ থাকে না। বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মার পাশে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে যে ছেলেকে ডাক্তার বানিয়েছে সে আজ বাবা-মার সেবা করতে পারছে না। বাবা-মার মৃত্যুর পরও দেখতে পাবে কিনা সন্দেহ। আসলে এরকম ছেলে মেয়েকে বেশি শিক্ষিত করে কি লাভ যদি নাই বাবা মার সেবা করতে পারে।
ভাইয়া এই গল্পটি আমার চোখে দেখা একদম সত্যিকারের ঘটনা। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য ।ভালো থাকবেন।
আসলে উচ্চ শিক্ষিত কিংবা উচ্চ পদে যারা আছেন তাঁরা অনেক সময় পরিস্থিতিতে বাধ্য।কিন্তুু তাই বলে বাবা,মা কে বাদ দিয়ে জিবন গঠন করতে হবে এটা কেমন কথা।ইচ্ছে করলেই তাঁরা বাবা,মাকে নিয়েই সব করতে পারে।বাবা মায়ের স্থান সবার উপরে রাখা উচিত যে কোন মূল্যে।আপনার পোস্ট টি পড়ে খারাপ লাগলো কারণ সারাজিবন কষ্ট করে ছেলে মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করে আজ তাঁরা অসহায়।এরকম ঘটনা অনেক আছে। ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আসলে আপু যারা অনেক উঁচু পর্যায়ে যায় তারা তাদের বাবা মাকে সঙ্গে রাখে না ।যার জন্যই
এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করলে যেমন নিজেদের কাছে ভালো লাগে আবার একটা অসুবিধাও আছে বৃদ্ধ বয়সে তারা বাবা মাকে ছেড়ে নিজের ভালোর জন্য দূর দেশে পাড়ি জমায় । ওনাদের দুজনের এখন আসলেই কষ্টের সীমা নেই । এই বয়সে ছেলে মেয়ে দের সাথে নাতি নাতনি নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করবে অথচ একাকীত্ব জীবন যাপন করতে হচ্ছে । বড় ডাক্তার বানিয়ে কি লাভই হল বাবা-মার অসুখ বিসুখ এইতো সেবা করতে পারবে না ।
হ্যাঁ আপু শেষ বয়সে এখন একাকিত্ব পাওয়া ছাড়া তাদের আর কিছুই পাওয়ার নেই। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।