স্বপ্নার জীবনের করুন অধ্যায় (২য় ও শেষ পর্ব)
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।
বন্ধুরা একদিন আগের পোস্টে আমি আপনাদের সঙ্গে একটি গল্প শেয়ার করেছিলাম । আজ তার দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব নিয়ে হাজির হয়েছি । আশা করছি আপনাদের কাছে আমার গল্পটি ভালো লাগবে । তাহলে চলে যাচ্ছি মূল গল্পে ।
স্বপ্নার জীবনের করুন অধ্যায় (২য় ও শেষ পর্ব)
স্বপ্না ভাবতে লাগলো এত খারাপ অবস্থা আবার ডাক্তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিল । হয়তো ঠিক হয়ে গিয়েছে ।
প্রথম পর্বের পর-----
আসলে এরা এমন পর্যায়ের লোক ছিল যে তারা বুঝতেও পারেনি, যে তার স্বামীর চিকিৎসার সময় নেই, যার কারণেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে । আসলে এই শ্রেণীর লোক এতটা অসহায় যে তারা তাদের চিকিৎসাটাও ঠিকমতো করাতে পারে না । কেননা তাদের ডক্টরের সঙ্গে কথা বলার লোক পর্যন্ত নেই । আর ডাক্তার রাও এ ধরনের লোকদেরকে খুব একটা পাত্তা দেয় না । যার কারণে এদেরকে খোলাসা করে জানানো হয়নি তার স্বামীর আয়ু শেষ হয়ে এসেছে ।হয়তো বাঁচবে দু -তিন দিন ।তাই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে ।
আর তারা ভেবেছে হয়তো ঠিক হয়ে গিয়েছে তাই ছেড়ে দিয়েছে। বাড়িতে যাবার পর স্বপ্না তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলছিল আর বকাঝকা করছিল সিগারেট না খাবার জন্য । তার স্বামীও হাসির ছলে বলছিল সবাই খায় ,আর আমি খেলেই দোষ। স্বপ্না রাগ করে ফোন রেখে দেয়। পরের দিন হঠাৎ করে স্বপ্না আবার একটি ফোন পায় ।সে জানতে পারে তার স্বামী হঠাৎ করেই মারা গিয়েছে । সপ্নার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল । এইতো গতকাল রাতেও কথা হল বেশ ভালো দেখলাম । সে চিৎকার আহা জারিতে ফেটে পরল ।বেশ কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর এলাকার লোকজন ও মেম্বারদের সঙ্গে তার কথা হল । সে বলল আমার জন্য লাশ রেখে দিন , আমি দু-তিন দিনের মধ্যেই চলে আসব ।
কিন্তু এদের যাওয়া যতটা সহজ দেশে ফেরা ততটা সহজ নয় । কেননা এদেরকে গৃহকর্মী হিসেবে তিন চার বছরের জন্য বাইরে পাঠানো হয় । ইচ্ছা করলেও আসা যায় না । কিন্তু স্বপ্না প্রথমে এটা বুঝতে পারেনি । তারপর যখন জানতে পারলো দেশে আসতে হলে তাকে দেড় লাখ টাকা জমা দিতে হবে , তারপর তার মাথায় যেন নতুন করে আবার আকাশ ভেঙে পড়ল । এদিকে তার স্বামীর লাশ দাফন করা হলো তার সম্মতিতেই । তারপরেও স্বপ্না তার বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে দেশে আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল ।
দেশের পরিচিত যাদের বাসায় বাসায় কাজ করেছে তাদেরকে ফোন দিল তাকে কিছু টাকা ধার দেবার জন্য । কিন্তু দেড় লাখ টাকা সে তো কম টাকা নয় । এভাবে কিছুদিন চেষ্টা করার পর অবশেষে নিয়তিকে মেনে নিয়ে আবারো সেখানেই থাকার জন্য মন স্থির করল । কেননা সে নিরুপায় ছিল । সবাই তাকে বোঝালো এত ধার দেনা করে দেশে এসে কি করবে । তার থেকে ভালো এখানে টাকা পাঠালে তার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অন্তত খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারবে । তারপর সে সকলের কথা শুনে সেখানেই রয়ে গেল ।
কিন্তু বুকের ভেতর একটা চাপা কষ্ট তার রয়ে গেল ।স্বামীকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারলো না । ওদিকে বাচ্চা গুলিও এতিম হয়ে গেল। কে দেখাশোনা করবে।তারপরেও এক ব্যবস্থা ঠিকই হয়ে যায়। কিন্তু সে যা হারিয়েছে তা আর ফিরে পাবার নয় । এই ছিল তার নিয়তি । দেশের বাইরে যাবার সময় একবার সে চিন্তাও করেনি এভাবে তার জীবনে পরিবর্তন আসবে।কত কি স্বপ্ন দেখেছিল । কিন্তু স্বপ্ন সপ্নই থেকে গেল। এভাবেই শেষ হলো সপ্নার গল্প ।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফার: | @wahidasuma |
---|---|
ডিভাইস: | স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৪০ |
🔚ধন্যবাদ🔚
@wahidasuma
আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।
একজন মেয়ে যখন তার জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে ফেলে তখন কতটা নিঃস্ব হয়ে যায় শুধু সেই মেয়েটি বুঝতে পারে। শেষ দেখাটাও দেখতে পারলো না সে। অন্যদিকে তার বাচ্চারাও এতিম হয়ে গেল। হাজারো স্বপ্নার জীবনে এরকম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। আমরা কারো খোঁজ রাখি না। আপু আপনার লেখা গল্পটি পড়ে ভালো লাগলো। আপনি কিন্তু দারুণ লিখেন।
এই প্রথম গল্প লেখার চেষ্টা করেছি আপু । আপনার ভালো লেগেছে জেনে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো ।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
আপনার গল্পের আগের পর্ব আমার পড়া হয়নি। তবে আজকের পর্ব পড়ে যতটুকু বুঝতে পারলাম। আসলে স্বপ্নার মত এমন হাজারো স্বপ্না নিরুপায় হয়ে বিদেশ পাড়ি দেয়। আর এভাবে কত আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ছেড়ে তাকে নিরুপায় হয়ে বিদেশের মাটিতে পড়ে থাকতে হয়। তবে স্বপ্নার বাচ্চাদের জন্য অনেক কষ্ট লাগলো।আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।আপনার জন্য শুভকামনা রইল । ভাল থাকবেন।
গল্পটির শেষ পর্ব পড়ে যেটা বুঝলাম স্বপ্না গৃহকর্মীর কাজে দেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমায় এবং সেখানে যাওয়ার আগে তার অনেক স্বপ্ন ছিল কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। স্বামীকে হারিয়ে শেষ দেখা পর্যন্ত দেখতে পারলো না নিয়তি এমন একটা জিনিস। আসলে গরিব মানুষের নিয়তি এমনই হয় ছেলেমেয়েগুলোকে নিজের কাছে রাখতে পারল না। তারপর নিয়তিকে মেনে সেখানে সে রয়ে গেল ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। বেশ ভালো লাগলো এ ধরনের গল্পগুলো পড়লে মনের ভিতর কেমন যেন একটা নাড়া দিয়ে ওঠে বোঝা যায় একটু কষ্ট পেয়ে যাই এই আর কি।
আসলে এরকম হাজারো স্বপ্না আমাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে যার খোঁজ আমরা রাখি না । তারপরেও এ ধরনের ঘটনা গুলো সত্যিই মনকে নাড়া দিয়ে ওঠে । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য ।
আপনার গল্পের প্রথম পর্বটি আমি পড়ি নাই ।তবে আজকের পর্বটি পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। সপ্না গৃহী কর্মী হিসেবে বাইরে গেছে অথচ এদিকে তার হাজবেন্ড অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। আসলে অনেক সময় বাহির থেকে আসতে হলে অনেক নিয়ম-কানুন মানতে হয়। সপ্নার মত এরকম হাজারো স্বপ্না বাংলাদেশের বসবাস করে। আসলে নিয়তি অনেক নিষ্ঠুর কখন কে কোথায় যাবে এবং মরবে নির্দিষ্টভাবে বলা যায় না। অনেক সুন্দর করে গল্পটি শেয়ার করছেন তাই ধন্যবাদ আপনাকে।
আপু আপনার কাছে গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো । অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য । ভালো থাকবেন।