চলো মন বেন্দাবন || অফিসের দাবী মেনে আপাতত গুজ্রাটের পথে [ 10% reserved for shy-fox brother ]
তো হয়েছে কি, দিব্যি শুক্রবার সন্ধ্যে বেলা বসে বসে একটু পানাহারের প্ল্যান করেছিলাম বন্ধুদের সাথে। সেই প্ল্যানেই এগোচ্ছিলাম বেশ। ৫টা নাগাদ অফিস থেকে বেরিয়ে ক্যাবের জন্য অপেক্ষা করছি এমন সময় বড় সাহেব তলব করলেন। অবস্থা খারাপ বুঝে আমিও পেটখারাপ হয়েছে মর্মে আবেদন সাজিয়েছি। কিন্তু ঐ বলে না কিছু কিছু দিন থাকে যেদিন তুমি বাঁশ খাবেই। আজকেও তাই হলো।
বড়বাবু লাট সাহেব তো শোনো হে ছোকরা অনেক কেতাত্ত করেছ, এবার একটু সাইট ভিজিটে যাও দিকি বলে হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিল। মাইরি বলছি বিশ্বাস করুন আমার না মাথায় চড়াত করে রাগ উঠে গেছে। আমি শালা হার্ড কোর dev opt এর পাবলিক,সাইট ভিজিট করে আমি কি করবো। অতঃপর ভদ্রলোক আসল কেসটি বললেন, সাইটে নাকি কাল সকাল থেকে সার্ভার ইন্সটলেশন হবে সাথে সিস্টেম মডিউলের কিছু কাজ আছে। পুরো ব্যাপারটা ব্যঙ্গালোর টিমের সামলানোর কথা ছিল, কিন্তু ঐ টিমের সবাই নাকি কেটে পড়েছে, সবাই নাকি একসাথে গোয়া না মুন্নার কোথাও ঘুরতে চলে গেছে। অতঃপর নাকি আমরাই ভরসা। ভদ্রলোক আমার বাঁশ না দিলেও একান্তই বাধ্য না হলে আমাকে খুব বেশি ঘাঁটাই না লক্ষ্য করেছি। ব্যাপারটা অনেকটা তুমি তোমার মত আমি আমার মত একটা বাউন্ডারি লাইনের মধ্যেই থাকে। যায় হোক তা যেতে কোথায় হবে , কবে যেতে হবে শুনেই তো আমি এক্কেবারে ওখানেই কুপোকাত। বেরোতে নাকি ১ ঘন্টার মধ্যেই হবে। আর যেতে হবে সেই সেওয়াগ্রাম।
যায়গাটা ভারত বর্ষের সবথেকে দূরবর্তী অঞ্চল। এবং ততোধিক রিমোট এরিয়া। স্যার ক্রিক অঞ্ছলের ভেতর একটা তহশিলদার এলাকা। ভারত-পাকিস্থান বর্ডার থেকে মাত্র ১ কিলোমিটারের কিছু কম।
ভাবুন আমার অবস্থা। যায় হোক খাম খুলে দেখি ভেতরে একটা ফ্লাইট, একটা ট্রেন আর একটা ক্যাবের বুকিং নাম্বার ভরা আছে। গুগল ম্যাপে দেখলাম কাছাকাছি এয়ারপোর্ট নাকি ভুজ, সেখান থেকে ৩ ঘন্টার গাড়ি। কিন্তু ভদ্রলোক জানালো আমার বুকিং নাকি আহেমেদাবাদ ওবধি, তারপর সেখান থেকে আহমেদাবাদ স্টেশন গিয়ে ট্রেন ধরে ভুজ তারপর গাড়ি। মোটামুটি হিসেব করে দেখা গেল সাইটে পোউছাব সকাল ৮ টা নাগাদ। ৩০ মিনিট ট্রেন লেট, রাস্তা খারাপ ইত্যাদি ধরেই এই হিসেব এলো। অগত্যা ব্যাজার মুখে বাড়ি ফিরে একটু দুধ কর্ণফ্লেক্স গিলে সোজা বাইক হাঁকিয়েছি দিল্লি এয়ারপোরট এর উদ্দেশ্যে। সাথে অবশ্য আরো দুজন আছে, তারাও আমার অফিসের কলিগ এবং এই সেওয়াগ্রাম অভিযানের সঙ্গী। তবে তারা আসবে মুম্বাই থেকে। আমার সাথে আহেমাদাবাদ ষ্টেশনে দেখা হবে তাদের, সব মিলিইয়ে লাইফ একদম বংশদন্ড
সন্ধ্যে ৭ টার ফ্লাইট নিয়ে রাতে ৯ টা আহেমাদাবদ নেমে সেখান থেকে সোজা স্টেশন। মাঝে একবার ডিনারের জন্য থেমেছিলাম যদিও। গুজরাটি খাবার অত্যন্ত উপাদেয়, ততোধিক ঘি যুক্ত এবং মাছ মাংসের বালাই নেই।
যিনি খাবার দিচ্ছিলেন সেই সুন্দরীকে দেখেই আমার তো পরান্ডা প্রায় ... থাক। মনের দুঃখ মনে চেপে আবার স্টেসনে এসে দেখি আরেক প্রস্থ খানা পিনার আয়োজন আছে। সেটাও গিলে কুটে ট্রেনে উঠে আপাতত নিজের বার্থে বসে এই লেখাটা নামালাম। কিছু ছবি তুলেছি র্যান্ডাম। ইন ফ্লাইট ফোনের চার্জ ছিল না কাজেই তখন তোলা হয়নি। গুজ্রাটের রাস্তায় কিছু তুলেছি আর কিছু ট্রেনের মধ্যে। কাল সকালে ভুজ নেমে সেখান থেকে ক্যাব নিয়ে লোকেশনে পৌছাব সকাল ৮ টা। ততক্ষন অবধি লম্বা ঘুম দিই একটা।
উলটো দিকের বার্থে এক কাকিমা আছেন, ভদ্রমহিলা এতক্ষন চুপচাপ আমাকে লক্ষ্য করছিলেন। এবার সম্ভবত কথা বলার জন্য রেডি হচ্ছেন। আমি ভাই ঘুম নস্ট করতে চাই না, কাকিমা কে জয় শ্রী কৃষ্ণ বলে টুক করে শুয়ে পড়েছি।
কিছু র্যান্ডাম ছবি ভিডিও তুলেছি সেগুলো থাকলো আপনাদের জন্য । ট্রেনের ভেতর ওয়াই ফাই বন্ধ। রেলের নতুন নিয়মে রাত ১১ টার পর ট্রেনের ভেতর ওয়াই ফাই, রেডিও কিছু চলবে না, মোবাইল নেট স্লো ট্রেনের গতির কারণে। অনেক কস্টে এই ছবি গুলো আপলোড করতে পারলাম। বিস্তারিত কাল লিখবো সব।
খেতে বসেছি স্টেশনের সামনে একটা খাবার দোকানে।
টিম মুম্বাই পোঁছে গেছে এবং বিরাট ট্রলি থেকে ল্যাপ্টপ ক্যামেরা বের করতে শুরু করেছে।
ষ্টেশনের বাইরে স্কোকিং জোণে একটু পরিচিতি পর্ব চলছে আমাদের
স্টেশন পৌঁছে চারিদিক ফাঁকা ! আসলে আমরা নেমেছি উলটো দিকে, স্টেশন ৫০০ মিটার দূরে গোলাপি আলোতে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে
ওয়েটিং রুমের ভেতর বসে গুলতানি মারছি।
কোথা থেকে কয়েকটা গুজরাট পুলিস এসে একজনকে আসুন দাদা করে ডেকে নিয়ে গেল। সম্ভবত বিনা টিকিটের যাত্রী।
ট্রেনে উঠে পড়েছি এবার। প্যাসেজের ভেতর দিয়ে নিজের বার্থে যাচ্ছি।
এই সেই কাকিমা, তিনটে ছেলের বয়েসী ছোকরা কে দেখে কথা বলার জন্য ছটফট করছেন। আমরা ইচ্ছে করে চুপ আছি। কথা শুরু করলেই সকাল ওবধি টেনে দেবেন ইনি। ইতিমধ্যেই সেই ডেমো দেখিয়ে দিয়েছেন অলরেডি।
ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তোলা ছবি, এই ট্রেনটার নাম জানি না, লেখা আছে গুরদাসপুর পাঞ্জাব। মানে এটাও একদম পাকিস্থান লাগোয়া ভারতের শেষ গ্রাম অবধি যাবে।
ট্রেনের ভেতর থেকে র্যান্ডাম তোলা একটা ছবি।
ই - টিকিট ভেরিফিকেশন কাউন্টার
পোর্টার না পাওয়ার জন্য নিজেরাই সব ব্যাগ ঠেলছে টিম মুম্বাই। আমি একটা কাঁধের ঝোলা আর পিঠে ল্যাপ্টপের ব্যাগ নিয়েই বেরিয়েছি। কাজেই নো লোড ইন লাইফ।
স্টেশনের বাইরে একটা যায়গা যেখানে আবার এক রাউন্ড সিগরেট ফুঁকে নিলাম সবাই
এটা র্যান্ডাম ছবি।
আজকের মত এখানেই । ট্রেন আহেমেদাবাদ ছাড়িয়ে গেছে, রাতের গুজ্রাট দেখতে দেখতে এগোই। কাল সেওয়াগ্রাম পৌঁচে আবার দেখি কি করা যায়। ততক্ষন আলবিদা মিত্রো। খুশ রেহেনা। সুখী রেহেনা।
বাহ এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। আপনার লেখা পড়ার ভিতরে একটা মজা পাই। সবার ভেতর গল্প বলার ক্ষমতা থাকেনা। আপনার লেখার ভেতরে সেটা প্রবল। একজন স্টোরিটেলার খুব সহজেই অডিয়েন্সকে আকৃষ্ট করতে পারে। এই গুণটা আপনার ভিতরে পুরোপুরি আছে। চমৎকার লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।