পথ হারা আত্মা || ছোটদের ভুতের গল্প ( 10 % for shy-fox )
আমার দাদা একটি প্রাইভেট ফার্মে, হিসাব রক্ষকের পদে কর্মরত। এই দাদা টি ভীষণ রকমের স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার দরুন ইচ্ছে করেই, রোজ সাইকেল নিয়েই বাড়ি থেকে অফিস যাতায়াত করে। সিব কাজ সামলে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায়শই রাত ন'টা বেজে যায়। দাদা এলে, আমরা বাড়ির সবাই মিলে একসাথে গল্প গুজব করতে করতে রাতের খাবার খাই।এটাই আমাদের প্রতিদিনের রুটিন।
কিন্তু কেন জানিনা আজ দশটা বেজে গেলেও, দাদা এখনো বাড়ি ফিরছে না। মা, বাবা,বৌদি, বোন সবাই দুশ্চিন্তায় ছটফট করছে। বাবা একবার উঠোনে আসছেন, আবার পরক্ষণেই সদর দরজায় গিয়ে পথ দিকে মুখ করে দাড়িয়ে থাকেন।
এমন সময় দাদা বাড়ি ফিরল, তার চোখে মুখে ভয়ার্ত ভাব। যেন কোন অস্বস্তিকর অস্তিত্বের অদৃশ্য অনুভূতিতে ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছে সে। শীতের রাতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
দাদার এমন অবস্থা দেখে মা ও বৌদি দুজনেই বেশ ভালো রকম বিস্মিত হয়। মা গিয়ে তাড়াতাড়ি দাদাকে ধরে, সোফাতে বসিয়ে দিয়ে শাড়ির আচলে সযত্নে কপালের ঘাম মুছিয়ে দেয়। বৌদি তৎক্ষনাৎ একগ্লাস জল নিয়ে এসে দাদাকে, আস্তে আস্তে দাদাকে সেটা খাইয়ে দেয়।
তখনকার মতো আমরা সবাই দাদাকে প্রথমত নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য সময় দিতে তাকে শান্তিতে বেশ কিছুক্ষণ সোফায় রেস্ট নিয়ে দিলাম। তারপর এক কাপ কফি বানিয়ে, দাদাকে দিয়ে বল্লাম এবার আগে শান্তিতে বসে, কফি টা খা। একটা সুস্থির হয়ে নে। তারপর ধীরে সুস্থে বলিস কি হয়েছিল না হয়েছিল।
অনেক্ক্ষণ চুপচাপ থাকার পর দাদা নিজেকে সামলে নিতে সক্ষম হল। তারপর ধীরে ধিরে বলত্ব শুরু করল,
" বুঝলি ভাই (আমি) !! প্রতিদিনের মতোই , আজও অফিস থেকে দিব্যি সাইকেল চালিয়ে, গুন গুন করে গান করতে করতে বাড়ি ফিরছিলস্ম ওই অহিরণ ব্রিজ দিয়ে। যেতে যেতে রাস্তার ধারে দেখলাম একটি বাঁচ্চা ছেলে বসে বসে অনবরত কেঁদে চলেছে। আমি সাইকেল থামিয়ে যখন ওর কাছে গেলাম, তখন ছেলেটাকে চিনতে পারলাম - এ তো সন্তুর ভাগনে। নির্জন ব্রিজে এই রাতে সন্তুর ভাগনে কে একা একা কাঁদতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, কাঁদছিস কেন?
ছেলেটা বলল মায়ের সাথে মামার বাড়ি যাচ্ছিলাম। মা আমাকে এখানে একলা রেখে কোথায় যে চলে গেল, এখনো আমাকে নিতে এলনা। আমি বাড়ি ফিরব কেমন করে? আমি কি আর কোন দিন বাড়ি যেতে পারব না? আমার খুব ভয় করছে.. কান্না পাচ্ছে।
আমি তখন ওকে বল্লাম, যে তোকে ভয় করতে হবে না।আমি তোকে তোর মামা বাড়িতে দিয়ে আসব। আয়! এসে বোস আমার সাইকেলে। ছেলেটা রাজী হয়ে তাড়াতাড়ি তার সাইকেলে গিয়ে বসল। আমিও সাইকেল ঘুরিয়ে সাজুর মোড় হয়ে বাড়ি ফেরার শর্টকাট ছেড়ে, মহেশাইলের পথ ধরলাম।
ছেলেটা একেবারে অকাল পক্ক, ওই টুকু বাচ্চা ক্রমাগত পাকা পাকা কথা বলেই চলেছে তখন থেকে। সামনে একটা বট গাছ দেখেই ছেলেটা দাদাকে বলল মামা, বট গাছ টা দেখো কি সুন্দর। আর তার চেয়েও সুন্দর বটগাছ টায় নাচতে থাকা মেয়েটা। তবে সব চেয়ে সুন্দর মেয়েটার নাচ। চলো মামা দেখি।
দাদা কোনো উত্তর না দিয়ে, সাইকেলের গতি বেশ কিছুটা বাড়িয়ে দিল। সামনে একটা আশ শ্যাওড়ার গাছ পরে। সেখানে আসতেই, ছেলেটা আবার ভলে, মামা দেখো কি সুন্দর মরার মাথা ঝুলছে গাছের ডালটায়, চলো আমরাও ঝুলি। তারপর বলে, না থাক, কাল একাই এসে ঝুলে যাবো। আমি এবারও নিরুত্তর থাকি। একটু পরেই পৌছে যাবো সন্তু দের বাড়ি। সাইকেল যখন মহেশাইল হাস্পাতালের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল, বেয়াদব ছেলেটা এক লাফে সাইকেল থেকে নেমে, দৌড়ে হাসপাতালেএ ভেতরে ঢুকে যায়।
আমি ভারি লজ্জায় পড়ে যায়। কেন না সন্তু এসব জানলে সে বন্ধু বৃত্তে এসব নিয়ে আলোচনা করবে, প্রচার করবে যে একটা বাচ্চা কে সামলাতেই তার এমব নাকানি চোবানি অবস্থা হয়েছে। সবার সামনে তার মুখ ছোট হবে। কাজেই আমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালের গার্ড কে জিজ্ঞাসা করলাম, যে - আপনাদের সামনে দিয়ে এই মাত্র যেই বাচ্চাটা দৌড়ে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পরল, সে কোথায় গেল একটু যদি বলেন খুব ভালো হয়। গার্ড অবাক হয়ে বলল, কোন ছেলেটা? কখন এলো, কোথায় গেল, কই? আমি তো কাউকে দেখি নি!হ
তোরা তো জানিস ভাই, আমি একটু রসকষহীন মানুষ, তারপর সারাদিন পেটে দানা পরেনি ঠিক মতো । তার ওপর আবার ওই হাসপাতালের ডাক্তারদের কিডনি চুড়ির একটি উড়ো খবর, আমি শুনেছি কলিগদের মুখে এই কিছু দিন আগে। তাই আর ধৈর্য্য রাখতে পারলাম না, চেঁচিয়ে বললাম, চালাকি ছাড়ুন।
এই কথা কাটাকাটির আওয়াজে, হাসপাতালে নাইট ডিউটিতে যে যেখানে ছিল দৌড়ে সেখানে চলে এলো। ডাক্তার বাবু অতি সজ্জন লোক। চট করে পরিস্থিতি টা বুঝে নিয়ে সবাইকে যার যার কাজে পাঠিয়ে, চশমার ফাঁক দিয়ে আমাকে ভালো ভাবে নিরিক্ষন করে নিয়ে বল্লেন, আমার সাথে ভেতরে আসুন ভাই।
ডাক্তার বাবুর ডাকে, চললাম তার পেছন পেছন। হঠাৎ একটা ঘরের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো ডাক্তার বাবু। ঘরের সামনে দরজার উপরে লেখা রয়েছে "মর্গ"। আমি ভাবলাম এদের চক্করব পরে কিডনি টাও অকালেই গেল বুঝি। আমি প্রশ্ন করলাম কি ব্যাপার ডাক্তার বাবু? আমাকে এখানে আনা হল কেন?
ডাক্তার বাবু, ভেতরে আসুন তো বলে আমার হাত টা খপ করব ধরে, আমাকে নিয়ে ভেতরে গেলেন।
ভেতরে গিয়ে একটি সাদা চাদড় ঢাকা শবের পাশে দাড়িয়ে লাশের কাপড় টা সরিয়ে বল্লেন, দেখুন তো এই ছেলেটাই কিনা?
আমি তাড়াতাড়ি ঝুকে পরে দেখতে নিয়েই অবাক হয়ে গেলাম। আরব এত সন্তুর ভাগনে। একেই তো এতক্ষন.... আমার সব কিছু কেমন গুলিয়ে গেলো।
ডাক্তারবাবু বললেন, এই বাচ্চা ছেলেটা আজ দুপুরে অহিরণ ব্রিজ থেকে পরে মারা গেছে। ছেলেটির মা নিখোঁজ। পুলিশি তদন্ত চলছে। এখন বডিটার পোস্ট মর্টেম হবে। আমার মাথা যেন ভোঁ ভোঁ করতে লাগল। হাসপাতাল থেকে কোন রকমে বাইরে এসে সাইকেলে উঠলাম। কিন্তু সারা রাস্তা আমার মনে হচ্ছিল ওই ছেলেটা আমার সাইকেলের পেছনেই বসে আমাকে লক্ষ্য রাখছে। একটা ঠান্ডা হাওয়া যেন সারাক্ষন আমাকে তারা করে এসেছে।
বাবা তাড়াতাড়ি দাদাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, " আচ্ছা আচ্ছা, যা হওয়ার হয়েছে। আর ভয় পাস না। বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত গৃহ দেবতা রয়েছেন। এখানে কোন অপশক্তি আসতে পারবে না। " এই বলে বাবা, ঠাকুর ঘড় থেকে, দৈবশক্তির চরণের ফুল নিয়ে দাদার মাথায় ছুইয়ে সেটাকে বালিশের তলায় রেখেই রাতে ঘুমোতে বলল।
এ সমস্ত গল্প গুলো শুনলে আগে খুবই ভয় লাগত, গায়ের মধ্যে সিউড়ি উঠতো। আর এখন সারারাত জেগে মাঠের বুকে পুকুর পাহারা দেই একা একা। যার জন্য এসব গুলো আর কিছু মনে হয় না, ফালতু লাগে। তবে বলব, গল্পটা বেশ মজার ছিল।