( ডার্ক থ্রিলার ) ব্লাডি নেমেসিস | অনিন্দ্যর কথা - প্রথম পর্ব ( 10% For @shy-fox )

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

blood 1 .png
image source

ব্লাডি নেমেসিস - প্রথম পর্ব


সূর্যের আলোটা মুখের ওপর এসে পড়তেই জ্ঞান ফেরে অনিন্দ্যর। তাড়াতাড়ি চোখ খুলে চারিদিকটা দেখে গভীর বিস্ময়তায় ফেটে পরে সে। এখানে এই বাঁধের ওপরে সে কীভাবে এল? আর কখনই বা এল?
সে একটু গভীর ভাবে ভাবার চেষ্টা করে , এখন যদি সকাল হয়, তারমানে সারারাত এই বাঁধের ধারেই পরেছিল সে। নির্জন বাঁধের ধারের মতো জায়গায়, সে রাত কাটালোই বা কেন!? এসবই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে উঠে পড়ে অনিন্দ্য। জামাকাপড় ঝেড়ে বাড়ির পথে দ্রুত পা বাড়ায় ।বাড়ির থেকে এখানকার দুরত্ব খুব একটা বেশি না হলেও কম নয় । প্রায় পৌনে এক ঘন্টার পথ।তাড়াতাড়ি পা চালায় সে ।

মেইন রোডে উঠে চারিদিকে তাকিয়ে টোটো খোঁজার চেষ্টা করে। সারারাত বাড়ি ফেরেনি, কি করছিল এখানে সে নিজেও মনে করতে পারছেনা।বাড়ির লোক হয়ত এতক্ষণে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছে।তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌছোনো দরকার। ওই তো!ওই যে! একটা টোটো আসছে... তাই তাড়াতাড়ি হাত নেড়ে.. দাঁড়াও দাঁড়াও বলে চিৎকার করে টোটোওয়ালাকে থামতে বলে সে! কিন্তু টোটোটা অনিন্দ্যকে দেখতেই পায়নি এমনভাব করে , পাত্তা না দিয়ে তার সামনে দিয়ে গড়গড় করতে করতে বেরিয়ে যায়।

বিরক্ত হয় অনিন্দ্য! কিন্তু আপাতত কিচ্ছু করার নেই। অন্য কোন যানবাহনও চোখে পড়ছে না! অতঃপর! তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে, হেঁটেই বাড়ি ফিরতে থাকে ..আর হাঁটতে হাঁটতে মনে করার চেষ্টা করে,যে গত কাল অ্যাকচুয়ালি কি হয়েছিল তার সাথে। যে জায়গাটায় অনিন্দ্য এতক্ষন ধরে ছিল, সেই জায়গাটা সে বেশ ভালো করেই চেনে। কারন মাঝেমধ্যেই সে অঙ্কিতার সাথে এখানে ঘুরতে আসত।অঙ্কিতার এই জায়গাটা বেশ প্রিয়। তার নিজেরও এই জায়গাটা বেশ পছন্দের।বেশ ফাঁকা নিরিবিলি একটা জায়গা। সামনে নদী,তার থেকে কিছু পেছনে বাঁধ, চারপাশটা বড় বড় শাল গাছ আর জঙ্গলে ঘেরা, ছায়ায় ঢাকা।এককথায় লোকচক্ষুর অন্তরালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা প্রেম করার আদর্শ স্থান।

হাঁটতে হাঁটতে এবার প্রথম থেকে বেশ গুছিয়ে মনে করার চেষ্টা করে অনিন্দ্য। সে এটুকু একেবারেই নিশ্চিত যে তার মানসিক স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই,নইলে এমন জায়গায় বিণা কারনে একা সারারাত কাটালো কেন? উপরন্তু এখন আবার কিচ্ছু মনে করতে পারছে না। যাই হোক, স্বাস্থ্য নিয়ে পরে ভাবা যাবে না হয়।আপাতত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে বাড়ি পৌছোতে হবে। বাড়ির সবাই নিশ্চয়ই ভীষণ চিন্তা করছে।
একনাগাড়ে হাঁটতে থাকে অনিন্দ্য। আর হাঁটার সাথে সাথে মনে মনে গত কালকের স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করতে থাকে।

হুম এইতো আবছা ভাবে কিছু একটা মনে পড়েছে, উমমমম্... কাল ছিল সম্ভবত রবিবার। অফিস ছিল না । দাদাও সম্ভবত বাড়িতেই ছিল । হুমম.... ছুটির দিন। দুই ভাইয়ে সারা সকাল ক্যারম খেলে কাটিয়ে ছিলাম। হ্যাঁ হ্যাঁ আবছা ভাবে হলেও মনে পড়ছে ধীরে ধীরে। কাল দুপুরে তারপর বাবা দাদা বৌদি মা বোন সবাই একসাথে হাসি ঠাট্টা করতে করতে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া সেরেছিলাম, তাইই হবে মনে হয়।

প্রতি সপ্তাহেই রবিবার গুলো বেশ হাসি মজা করেই তো কাটত তাদের , কারন সারা সপ্তাহ তার ও দাদার অফিস, বৌদির আর বোনের দুজনেরই কলেজ, টিউশন থাকে, এদিকে তার মা বাড়ি সামলাতে, বাবা বই পত্র নিয়ে ব্যস্ত, । দুপুরে এক সাথে খেতে বসাই হত না প্রায়। তাই রবিবারটা পারতপক্ষে ওরা কেউ মিস করে না। হঠাৎ অনিন্দ্যর চিন্তার জালটি কেটে যায় অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের তীক্ষ্ণ শব্দে.. অনিন্দ্য থামে। বুঝতে পারে তার চিন্তা গুলো কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। পেছন থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজাতে বাজাতে পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

মহিলার কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেল মনে হয় ? মৃত পেশেন্ট নিয়ে যাচ্ছে হয়ত, তারই ফ্যামিলির লোকের কান্নার আওয়াজ. বেচারা... অনিন্দ্য হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়। হাঁটতে হাঁটতে আবারো ডুবে যায় গভীর চিন্তায়। ঘোলা কালো জ্বলে সাঁতার দেওয়ার মতো, স্মৃতির আবছা ধুলোয় ভরা পথে খুঁজতে থাকে তার নিজেরই পায়ের চিহ্ন। মনে পড়তে থাকে ধীরে ধীরে, কাল দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর অনিন্দ্য নিজের ঘরে এসে শুয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাটছিল। ঠিক তখনই হঠাৎ অঙ্কিতা হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ করে !

সাধারণত এই সময় অঙ্কিতা মেসেজ করে না। একটু অবাক হয় অনিন্দ্য। তারপর মেসেজ টা খুলে পড়তে থাকে..ঠোঁটের কোণে একটা হাসির রেখা ফুটে ওঠে তার। অঙ্কিতা আজ বিকেলে দেখা করতে চেয়েছে! অঙ্কিতা এই প্রথমবার নিজের থেকে দেখা করতে চেয়েছে।
"কোথায় দেখা করতে চাও ?" জিজ্ঞাসা করে অনিন্দ্য। অঙ্কিতা অনিন্দ্যকে জানায় যে বাঁধের পাশের যেই নিরিবিলি জায়গাটা আছে সেখানেই আজ বিকালে দেখা করতে চায় সে।অনিন্দ্যর ভারী ভালো লাগে।

আসলে কলেজ লাইফ থেকেই অঙ্কিতার সঙ্গে তার প্রেম চলছে।খুব ভালোবাসে সে অঙ্কিতাকে, বলাই বাহুল্য অঙ্কিতাও খুব ভালোবাসে তাকে।
তবে এই কয়েকমাস হল তাদের মধ্যে একটু ঝামেলা চলছিল।ঝামেলাটা ছিল এই নিয়ে যে, কলেজ শেষ হয়ে আজ পাঁচটা বছর হল সে অঙ্কিতার সাথে রিলেশনে রয়েছে। দুজনেরই বাড়িতে সবাই জানে। এই মুহুর্তে দুজনেই বিবাহযোগ্য। তাই অনিন্দ্যর ইচ্ছা এবার অঙ্কিতার সাথে বিয়েটা সেড়ে ফেলার, আর সেজন্য সে তার বাড়ির লোককে সমন্ধ নিয়ে পাঠাতে চায় অঙ্কিতার বাড়িতে যাতে করে দুই পরিবার বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা বলে এগোতে পারে।

অনিন্দ্য ভালো শিক্ষিত ছেলে, সে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে, বেতন ভালোই পায়। তার ভালো ফ্যামিলি। বাড়িতে বাবা মা দাদা বৌদি বোন রয়েছে। বাবা রিটায়ার্ড সরকারি চাকুরে, দাদাও ভালো মাইনের প্রাইভেট জব করে, এদিকে বোন আর এমনকি বৌদিও এখনো পড়াশোনা করছে। তা এমন স্বাভাবিক সুন্দর পরিবারে, কোন মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী পাত্রি দিতে চাইবে না !! অর্থাৎ অঙ্কিয়ার বাড়িতেও সমস্যা নেই।

কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে এতে বাধসাঁধে অঙ্কিতা। তার দাবী সে এখন কোনোমতেই বিয়ে করতে পারবে না।অথচ এমনটা করার কারন জিজ্ঞাসা করলে, তার কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারন ব্যাখ্যা করতে পারে না সে। উপরন্তু মাঝে মাঝে রীতিমতো এড়িয়ে যায়! অনিন্দ্য অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে অঙ্কিতা কে, কিন্তু সে কোনমতেই রাজি হয় না।উপরন্তু সেদিনের পর থেকে কথা বলাও বন্ধ করে রেখেছিল সে৷ তবে এক সপ্তাহ বাদে আজ অঙ্কিতা নিজে অনিন্দ্যকে দেখা করতে ডাকায় সে ভারি খুশি হয়। অগত্যা! দুপুরটা লম্বা রেস্ট নিয়ে বিকেলের দিকে, তৈরী হয়ে কথা মতো ঠিক সময়ে তারা দুজনেই এসে হাজির হয় বাঁধের ধারে।

অঙ্কিতাকে দেখেই মনের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে অনিন্দ্যর। এক সপ্তাহ পর দেখা। মনের ভেতরটায় একটা আনন্দ খেলে যায় তার। খুব ভালোবাসে এই মেয়েটাকে সে, কাছছাড়া করতে চায় না এক মুহুর্তও! আর আজ যেন অঙ্কিতা কে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে দেখতে, অঙ্কিতার ওই কাজল কালো চোখদুটির দিকে তাকিয়ে অনিন্দ্য ক্রমশ যেন তার মায়া ও স্নেহ মেশানো তার নিজস্ব এক স্বপ্নজগতে নিঃশব্দে পারি জমাতে থাকে। অঙ্কিতার এগিয়ে এসে অনিন্দ্যর হাতটা নিজের হাতের ওপর আলতো করে তুলে নেয় । টানা টানা কাজল চোখ তুলে এক দৃষ্টিতে তাকায় অনিন্দ্যর দিকে।

অনিন্দ্য তার কোমড়ে আলতো করে হাত রেখে হালকা টানে অঙ্কিতাকে নিজের কাছে সরিয়ে আনে, ধীরস্থীর ভাবে স্নেহ মাখা গলায় বলে, " এই মেয়ে! এইভাবে আমাকে কষ্ট দাও কেন? তুমি জানো তো সোনা তোমাকে নিয়ে আমি কতটা সেন্সেটিভ। তুমি এভাবে কথা না বললে, আমার ভীষণ কষ্ট হয়। আর এমন কখনো কোরো না প্লিজ!"।

অঙ্কিতা এবার আস্তে আস্তে অনিন্দ্যর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে তাকে বলে, "প্লিজ অনি, আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ, আমি মাঝে মাঝে কেন যে এমন করি, পরে আমার খুব কষ্ট হয় তোমার কথা ভাবলে। তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি আমি । আমি আর কখনো এমনটা করবনা সোনা ।তুমি যেমনটা বলবে, তোমার অঙ্কিতা তাই করবে। আমাদের বিয়ে হবে অনিন্দ্য .. আমার খুব সুন্দর একটা সংসার হবে...পরিবার হবে। আমরা সবাই মিলে একসাথে আনন্দে থাকব।

অনিন্দ্যর মনটা খুশিতে ভরে ওঠে । সে অঙ্কিতার মুখের দিকে ভালো করে তাকায়। তার বাম হাতটি ততক্ষনে লাগাম ছাড়া ঘোড়ার মত মাতাল আনন্দে ছুটে চলেছে অঙ্কিতার সুডৌল নিতম্বপ্রদেশে। আরেক হাত পরম যত্নে ও স্নেহে অঙ্কিতার গাল ছুঁয়ে যায়। অঙ্কিতাকে আরেকটু কাছে টেনে নেয় অনিন্দ্য দুজনের শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রমশ ভারী হয়ে ওঠে। প্রেম মাদকতায় মত্ত দু ধারি ছুরির ফলার মতো উদ্যত ঠোঁট দুটি পরস্পরে কাছে আসতে আসতে কোন এক সীমানায় গিয়ে মিলে যায়। অঙ্কিতা ধীরে ধীরে ক্রমশ অনিন্দ্যর কাছে সরে এসে তার বুকে মুখ লুকোয়। নিবিড় আলিঙ্গণে জড়িয়ে ধরে ধরল তাকে।অঙ্কিতার প্রতি ভালোবাসায়, স্নেহে অনিন্দ্যর চোখের কোনাটা ভিজে ওঠে , দুই হাত দিয়ে আগলে নেয় অঙ্কিতাকে।

moon-g432998940_1920.jpg
image source

( ক্রমশ )

( পুনশ্চ - এই পোস্টে আমি গতকাল ১০% ফর @shy-fox লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম, এখন লক্ষ্য করার পর নতুন করে এডিট করেছি। আর বেনিফিশারিতেও Shy-fox কে অ্যাড করেছি কিনা মনে করতে পারছি না। অত্যন্ত বড় ভুল হয়ে গেছে আমার দ্বারা। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী )

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62410.74
ETH 2445.09
USDT 1.00
SBD 2.67