প্রচন্ড বাজে একটি ভুতের গল্প ।। এমন ভুতকে ধরে রাম প্যাদানি দেওয়া উচিৎ ( ১০ শতাংশ Shy-fox বাবুর জন্য ) )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

image.png

image source

এই ভূত জিনিস টি বড়ই অসভ্য প্রকৃতির জিনিস। কোন ভদ্রতা, নম্রতা, সামাজিকতা জ্ঞান একেবারেই নেই ব্যাটাচ্ছেলেদের। আচার আচরণ দেখে, দখলদারি গুন্ডা মনে হয়। সুযোগ পেলেই, কারুর নিম গাছটায়, কারুর তেঁতুল গাছটায়, কোনো পুরোনো শ্যাওড়া গাছের ডালে অথবা.. এর ওর ফাঁকা বাড়ি ঘরে গিয়ে , বলা নেই কওয়া নেই দিব্বি দখল করে জাঁকিয়ে বসে পরে। সেই জায়গার আশেপাশের সব্বাইকে সন্ত্রস্ত করে তোলে বা বলা ভালো একেবারে যারপরনাই অপদস্ত করে তোলে।

তবে ভূতেদের হাতে, সব সময়ই যে আমর মানুষরা অপদস্ত হই তা নয়। এমন বেশ কয়েক বার হয়েছে যে, এই ব্যাটা ভূতেরা, আমাদের মানুষের হাতে এমন শিক্ষা পেয়েছে যে তাদের ভূতগিরি প্রায় উধাও হবার জোগার হয়। আজ তোমাদের বলব সেরকমই একটি গল্প।

সে বহু দিন আগের কথা। আমাদের তখন যুবক বয়স।সেসময় এখন কার মত চাকরি পাওয়ার ইদুর দৌড় আঁচ তখনও গ্রাম বাঙ্গালার এই পল্লি সমাজে পরেনি। তারা দিব্যি কেউ জমিতে লাঙ্গল চষে, কেউ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত । সেই গ্রীষ্ম কালের শান্ত স্নিগ্ধ সন্ধ্যা গুলোয় আমরা গ্রামের ছেলে বুড়োরা সকলে বট তলায় বসে শীতল বাতাস সহযোগে আড্ডা মারতাম।

আমাদের গ্রামের নাম ছিল হরিহরপুর। গ্রামেরই উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত জেলে পাড়াটিতে ঢোকার মুখেই, রাস্তার পাশে একটি বহু পুরোনো শ্যাওড়া গাছ ছিল। এই গাছটিতেই বাস করত এই আস্ত মহা পাজি মামদো ভূত। মানুষ কে ভয় দেখিয়ে, চমকে দিয়ে, তার ঘাঁড়ে ভর করে, তাকে অসুস্থ করে দিয়ে, বা অনেক সময় ঘাঁড় মটকে দিয়ে চরম অনিস্ট করত গ্রামের মানুষ এই গাছের আশেপাশে ঘেঁষতেও ভয় পেত।
আর গ্রামের মানুষের তার (মামদো ভূত) প্রতি এই ভয়ানক ভয় থেকে সাহস পেয়ে সে নিজেকে মহাশক্তিশালী ভেবে বসল। এরপর থেকে গ্রামের তার অর্থাৎ শ্যাওড়া গাছটির সামনে দিয়ে যাওয়া সময় সেটাকে প্রণাম না করলে, প্রতি অমাবস্যায় এগারোটি কালো মোরগের বলি দিয়ে ভোগ না দিলে সে গ্রামের সবার প্রভূত ক্ষতি করত এবং পরের অমাবস্যা আসার আগেই গ্রামের কোন একজনের ঘাড় মটকে দিয়ে শাস্তি দিত। ধীরে ধীরে ভুতের উপদ্রব বাড়তে লাগল। ক্রমে এমন দাড়াল যে সামান্য পান থেকে চুন খসলেই, ভূতের হাতে প্রাণ যেত। এই ক্রমবর্ধমান ভৌতিক অত্যাচারে গ্রামের মানুষ ক্রমশ অতিষ্ঠ হয়ে উঠল।

এরই মধ্যে দিন পনেরো আগে গ্রামের বামুন পাড়ার সীতারাম ভট্টাচার্যের বাড়িতে, তার কোলকাতা নিবাসী শ্যালকের স্ত্রী এর এক মাত্র ভাই, রমাপদ আচার্য এসে উঠেছিল। উদ্দেশ্য শহরের কোলাহলের বাইরে কিছুদিন নিরিবিলিতে হাওয়া বদল করা।

তো সেই রমাপদ গ্রামের খোলস বাতাসে পায়চারি করতে করতে সেই শ্যাওড়া গাছ টির কাছে চলে যায়। শ্যাওড়া গাছ খানি দেখে সে চিনতে পারে, গ্রামের লোক সম্ভবত এই গাছেই নাকি ভূত থাকার কথা বলেছিলেন।
সে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে মুখ বেঁকালো। সে কলকাতায় থাকা ইংরেজি জানা যুবক সে কিনা এই ধরনে গ্রাম্য কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেবে? কখোনাই তাই সে ইচ্ছে করে গাছের এক্টি ডাল ভেঙে দেয়। তারপর মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বেচারা পথ দুর্ঘটনায় অক্কা পায়।

বছর কয়েক আগে আমাদের গ্রামের ওই জেলে পাড়ারই, টিঙ্কু নামের এক পেঁচো মাতাল ছোকড়া নেশার ঘোরে গাছটার গায়ে থুতু ফেলে ছিল। পরে বাড়ি ফিরে সারা রাত ভেদ বমি করতে করতে ভোরের দিকে অবশেষে পটল তোলে।

কেউ কেউ তো বলত, ওই শ্যাওড়া গাছের মামদো ভূতের বাঘা থাপ্পড় খেয়ে নাকি আমার ঠাকুরদাদার খুর্তুতো ভাইয়ের মুখে দুই পাটি সহ বত্রিশ খানা দাঁত আজও খুজে পায়নি। তো এরম আরও অসংখ্য ভয়ংকর ঘটনা ঘটার ফলে ওই হতভাগ্য রমাপদর পর আর কেই গাছটির সঙ্গে বেয়াদবি করার সাহস করেনি।

তো ইতিমধ্যেই বিশ্বাস বাড়িতে নতুন চাকর এসেছে। ছোকড়া কে একটু ক্ষ্যাপাটে ধরনের মনে হওয়ায় আমি আর মানিক দা বল্লাম,
" তোমার নাম কী হে ছোকড়া? "
" আমার নাম কেল্টু, পুরো নাম কেল্টু চন্দর পরামানিক। " ছেলেটি উত্তর দিল।

আমি একটু খোঁচা মেরে বল্লাম, " আচ্ছা কেল্টু বাবু শুনেছি তুমি নাকি ভূতে খুব ভয় পাও? ভূতের ভয়ে রাতে বাথরুমে যেতেও ভয় পাও ? " কেল্টু রেগে গিয়ে বল্লব, " ভূত কে আমি পুত আর পেত্নিদের আমার ঝি মনে করি। "

সুযোগ পেয়ে এবার মানিক দা বল্ল, " তাই নাকি হে বাবা কেল্টু চরন? তাহলে যাও তো দেখি৷ এই দিনে দুপুরে ওই ভুতুরে শ্যাওড়া গাছে পেচ্ছাব করে এসো তো, এলেম দেখি তোমার!!! কেল্টু কে ভাবতে দেখে, মানিক দ বাঁকা ভাবে খোঁচা মেরে বল্ল, " এতই যখন প্রাণে ভয়, তখন খামোখা বড় বড় বাতেলা বাজি করা কেন হে ছোঁকড়া? "

এই কথা শুনে কেল্টু রেগে মেগে এক দৌড়ে গিয়ে গাছটার গায়ে পেচ্ছাব করে এলো। গাছের ভূতটা হয়ত তখন কোন কাজে গেছিল তাই হয়ত কিছু হলনা, কিন্তু কাজ থেকে ফিরে কি অবস্থা হতে পারে তা সমস্ত উদাহরণ দিয়ে ভালো করে কেল্টু মাথায় ঢুকিয়ে দিলাম।

কেল্টু তখন কার মত বাড়ি চলে গেল। এর পরে কয়েকদিন আর কেল্টু চরনের দেখা নেই। খোঁজ নিয়ে জানলাম, যে কেল্টুর পেচ্ছাব বন্ধ হয়ে গেছে। ডাক্তার কবিরাজ সব ফেল। যন্ত্রণায় কেল্টু একবার বলছে "বাবাগো বাঁচাও, মরে গেলুম" এক নাদ চ্যাচায় " মা গো রক্ষা করো" আবার পরক্ষণেই বলে " হে ভূত বাবাজি ক্ষমা করো আমাকে, আমি রি জম্মের শিক্ষা পেলুম একেবারে,... দয়া করো ক্ষমা করো..."

তবে ভূতটি ক্ষমা করবার পাত্র নয়। কিছুতেই ক্ষমা করল না। এদিকে ষড়যন্ত্রের আসল নায়ক মানিকদাকে সবাই দোষারোপ করছে। এদিকে কেল্টু ভয়ানক চটেছে মানিক দার ওপর, তার মতে মানিকদাকে পিটিয়ে পিঠের চামড়া তুলে দেওয়া উচিত অথবা একেবারস মেরে হাত পা ভেঙে গুম করে দেওয়া উচিত।

মহাপুরুষেরা বলে গেছেন, নরম মাটি পেলেই বেশি আচড়াতে নেই, সেই নরম মাটিও একসময় শক্ত হয়ে ওঠে আর তখন আচড় দিতে গেলে নখ ভেঙে যায়।

সেরকমই, কেল্টুও কয়েকদিন ধরে লাগাতার অমানবিক যন্ত্রণা সহ্য করার পর, অবশেষে সে বাঁধ ভেঙে উঠে দাঁড়ালো।

মাথায় পাগড়ির মত করে গামছা বেঁধে, ধুতির কাছা গুটিয়ে শক্ত করে কোমড়ে গুজে, কুড়ুল হাতে, " জয় মা কালী" বলে হাওয়ার বেগে বাড়ি ছেরে বেড়িয়ে কুড়ুল হাতে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড় মারল। আমরা সবাই ধর ধর করে, ওর পেছনে ছুটলাম। কেল্টু এদিকে ছুটতে ছুটতে মানিক দার বাড়ির সামনে এসে পৌছেছে। । আমরা,তো ভাবলাম বেচারা মানিক দার বুঝি সময় শেষ হয়ে এলো।

কিন্তু আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে কেল্টু মানিকদার দিকে ফিরেও না তাকিয়ে, সোজা দৌড়ে গেল শ্যাওড়া গাছটার দিকে। সোজা দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পরল সেই ভুতুরে গাছের ওপর। প্রবল শক্তিতে, কুড়ুলে নিখুত কোপে কেটে ফেলতে লাগল গাছটা, আর এদিকে উন্মাদের মত মুখে আওড়ে চলেছে, " ছাড়ব না... ছাড়ব না শালাকে। জয় মা কালী, জয় মা কালী কি জয় । এই শালা ভূতের বাচ্চাকে আমি কচুকাটা করে ফেলব। কচুকাটা করে ফেলব, এলাকা ছাড়া করব,ছাড়ব।

কিছুক্ষণ পর যখন গাছে শেষ কোপ মারল কেল্টু৷ গাছটা উপড়্ব পরতে পরতে তার মধ্যে থেকে ক্ষোনা গলায় আওয়াজ এল,
" ছেঁড়ে দেঁ রে, ক্ষঁমা করে দেঁ রেঁ বাঁপ !!! বয়স্ক ভূতের সাথে এমন করতে নেই রে হতচভহাড়৷ আমাকে তাড়াস নে... "

কে শোনে কার কথা। গাছ কেটে পরার সাথে সাথে গ্রামের লোকজন এসে, কেরোসিন তেল ঢেলে সম্পুর্ন গাছ টা পুড়িয়ে ভূত কে গ্রাম ছাড়া করল।

আজকে এটাই থাক :D । ভয় না পেলে আমি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখাবো সবাইকে। ভয় পেতেই হবে। অত্যন্ত বাজে অসভ্য একটা ভুত এই ভুতটা। একে জেলে ঢোকানো উচিৎ ছিল কিন্তু কেলিয়ে পাড়ার লোক পাড়া ছাড়া করেছে। আমার সাথে রাস্তায় দেখা হলো তখন বলল ঘটনাটা, আমিও শুনে দু ঘা বসিয়ে দিয়েছি।

Sort:  

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

 2 years ago 

ভূতের কাহিনী শুনলে গা ছমছম করে ওঠে, তাই আমি ভূতের কাহিনী শুনতে খুবই ভয় পেয়ে থাকি। তাই ইচ্ছে হচ্ছিল না যে আপনার এই পোস্টটি আমি ভালোভাবে পড়ি, খুব দ্রুত জলে সরে পড়ে শেষ করে ফেললাম। যেহেতু এখন রাত তাই এ বিষয়ে বেশী কথা না বলাই ভাল মনে করে। ধন্যবাদ ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.23
TRX 0.12
JST 0.029
BTC 66209.23
ETH 3496.50
USDT 1.00
SBD 3.16