পর্ব - ১ ★ আলোকচিত্রের অলৌকিক ছায়া★ [ ১০% shy-fox ভাই এর জন্য ]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

image.png

image source

নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারে নি সেদিন সুদীপ্ত। এখনো কখনো কখোনও বিশ্বাস নিজেকে বিশ্বাস করতেও তার ইচ্ছে হয় না।

শিলিগুড়ি শহরের উপকন্ঠে হিলকার্ট রোডে, তেনজিং নোরগে সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাসের পাশেই তার সাধের ফটোগ্রাফি স্টুডিও - ওয়াইল্ড ফোটো ল্যাব। ছোট থেকেই ছবি তুলতে ভীষণ ভালোবাসে সুদীপ্ত। বিশেষত বন্যপ্রাণী অথবা বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি তোলার ব্যাপার তার খুব আগ্রহ। যখন তার বছর দশেক বয়স, তখন তার বাবা তাকে কিনে দিয়েছিল একটা হটশট্ ক্যামেরা।

ব্যস, সেই ক্যামেরা নিয়েই, ফটোগ্রাফি তে হাতেখড়ি হয়েছিল সুদীপ্ত দাশগুপ্তের। তারপর এখানে সেখানে কত ছবি সে তুলেছে, তার ইয়ত্তা নেই। বারো বছর বয়সে প্রাকৃতিক ছবি তুলে পুরস্কা পেয়েছিল সে। তার পুরস্কার পাওয়া ছবি দু্টো প্রদর্শিত হয়েছিল, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস -এর বার্ষিক প্রদর্শনীতে।প্রায় বছর চৌদ্দ বয়স থেকেই সুদীপ্ত একা একা সাইক্লিং করে, শিলিগুড়ি শহরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা জায়গা গুলিতে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে বেড়ায়। সে জানে তার পছন্দ গুলো তার বন্ধু-বান্ধবদের পছন্দের চেয়ে আলাদা।

ওর পাড়ার বন্ধুরা যে সময় ফুটবল নিয়ে রেলওয়ে কলোনির বড় মাঠটিতে হুটোপুটি করে, তখন সেখান থেকে প্রায় মাইল ছয়েক দুরের একটি ছোট ফরেস্টে, শ্যাওড়া গাছের মগডালে চেপে মা পাখিটির তার ছানাদের খাবার খাওয়ানোর সেই সুন্দর দৃশ্যটা ক্যামেরা বন্দী করার জন্য, ধীরস্থীর স্নায়ুতে ক্যামেরায় চোখ রেখে সে একনাগাড়ে অপেক্ষা করে সেই পারফেক্ট শট টির জন্য।। তারপর যখন সুদীপ্ত গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট করল, সে ভাবলো, চাকরির বাজারে মাথা না খুঁড়ে, একটা ফটোগ্রাফির বিজনেস খুললে কেমন হয়?

যেমন ভাবা তেমন কাজ। অবিলম্বে ব্যাবসা ও ফোটোগ্রাফিএ খুঁটিনাটি বিষয় সম্বন্ধে প্ল্যানিং সসম্পুর্ণ করে করে, হিলকার্ট রোডের একটি জমজমাট মার্কেট কমপ্লেক্সের দোতালায় দুটি ঘর নিয়ে সুদীপ্ত শুরু করে তার সাধের ফটোগ্রাফি স্টুডিও 'আলোকচিত্রা'। আবেগতাড়িত হয়ে ভালোবাসার সঙ্গে কাজ তো সে আগে থেকেই করত। এবার তার সাথে যুক্ত হল নিঁখুত পেশাদারী বৈশিষ্ট্য। যা ক্রমশ সুদীপ্তকে তার কাঙ্ক্ষিত উচ্চতার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া শুরু করল।

স্টুডিওতে অন্যান্য কাজকর্মের পাশাপাশি কোডাক ফিল্ম বিক্রি করা এবং ক্যামেরার ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিয়ে নিয়েছে সুদীপ্ত, তার মধ্যেই সময় করে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফিতেও ধীরে ধীরে হাত পাকানো শুরু করেছে সে। টুকটাক ছোট বড় প্রতিযোগিতা জিতে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছে। আর মাস গেলে বেশ ভালোই টাকা পকেটস্থ হচ্ছে তার।

এই সুদীপ্ত, বছর বাইশের টগবগে তাজা মনের এক যুবক। দু-চোখের তারায় আঁকা অসংখ্য স্বপ্নের রামধনু। সুদীপ্ত স্বপ্ন দেখে .. তার ফটোগ্রাফি প্রদর্শিত হবে, বিশ্বের নামজাদা ফটোগ্রাফারদের ফটোর সাথে সেই ইন্টান্যাশনাল ফেস্টিভ্যালে। সেখান থেকে যদি ছিনিয়ে আনতে পারে কোন পদক। তাহলেই তার স্বপ্ন পুরন হবে।

কিন্তু গত কয়েকমাস মাস ধরে, এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সুদীপ্ত দাশগুপ্তকে। ডিজিটালি কাজ করার পাশাপাশি প্রথাগত ভাবেও ছবি ডেভেলপের কাজ করে সে। সবার সাথে ভালো ব্যাবহার করে। পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতার মেল বন্ধনে প্রত্যেকটা প্রোজেক্ট সামলায়।
এভাবেই তো ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে সুনাম। কিন্তু এ কি ঘটনা ঘটছে? প্রথম এই ঘটানাটা যবে ঘটেছিল, চোখ বুজে সেই দিনটার কথা মনে করার চেষ্টা করে সুদীপ্ত,

পূজোর পরে, তার ছোটবেলার বন্ধু অনুপ এসেছিল ফিল্ম নিয়ে। বলেছিল - " ভাই !!! ফিল্ম নিয়ে এসেছি, প্রথাগতভাবেই যত্ন করে ছবি গুলো রেডি করিস। বুঝতেই পারছিস, পারিবারিক ছবি। এসবই স্মৃতি হয়ে থাকে বল। তাছাড়া তোর মত তো এক্সাপার্ট নই, শুধু টুকটাক শখের ফটোগ্রাফি করি। সাবধানে ওয়াশ করিস, যদি পঞ্চান্ন খানা ছবির সবকটাই আসে তাহলে আমার আনন্দের সীমা থাকবে না। অনুপের কাঁধে হাত রেখে সুদীপ্ত বলেছিল, " তুই কিছু ভাবিস না অনুপ। আমি চেষ্টা করছি সব গুলো ডেভেলপ করার।

ছোটবেলার বন্ধু অনুপ, সুতরাং তার কাজ টা আগে শেষ করা প্রয়োজন। অ্যাসিড সলিউশনে ডুবিয়ে রাখার পর সে যখন ছবি গুলোকে চোখের সামনে মেলে ধরল, তখন দেখা গেল একটা অদ্ভুত জিনিস- অনুপ দাঁড়িয়ে আছে তার ছোট বোনের সাথে। কিন্তু তার পেছন দিকে ছবিতে কারো একটা আবছা অস্বচ্ছ গোছের ছায়া যেন ধরা দিয়েছে।

সুদীপ্ত ভীষণ অবাক হয়। স্বাভাবিকভাবেই এমনটা হবে, সে আশা করে নি। সে নিজেও এটা বুঝে উঠতে পারে না যে, এই ঘটনা কোন যান্ত্রিক ত্রুটির ফল নাকি অন্য কিছু ? একটা সম্ভাবনার কথা মাথায় এসেছে বটে, তবে তার উৎস প্রামাণ্য নয়। তবে আরও একবার ট্রাই করে সূদীপ্ত পুরোপুরি নিশ্চিত হতে চায়। কিন্তু তার আগে, অনুপ কে এ বিষয়ে জানানো প্রয়োজন, আফটার অল ছবি গুলো তারই।

অনুপকে ফোন করে সুদীপ্ত। জানতে চায় কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর। কিন্তু সব শুনে অনুপ হেসে উড়িয়ে দেয়। বলে - " যখন আমি আমার বোনের সাথে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম, তখন ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল আমাদের বসবার ঘরের সাদা দেওয়াল। সেখানে অন্য কারো ছবি কি করে আসবে রে? আমার মনে হয় তুই বড্ড বেশি কাজের চাপ নিচ্ছিস ভাই। তুই ক দিন রেস্ট নে,.. তারপর ফ্রেশ হয়ে আবার শুরু কর।"

" আচ্ছা ঠিক আছে। ছাড়ছি তবে এখন, গুড নাইট ভাই" - বলে ফোন টা রেখে দেয় সুদীপ্ত। সে জানে, সে এতটাও টায়ার্ড নয়, যে চোখে ভুল দেখবে। তারপর খুব ভালো করে ফটো খানা ডেভেলপ করেছিল সে। এইই তো !! এবার আরও স্পষ্ট ও স্বচ্ছ হয়ে ফুটে উঠেছে আগের সেই ছবির আবছা ছায়ামুর্তি গুলি। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখন, এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক, আর এক বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা, আবছায়াতে দাঁড়িয়ে আছেন। পরদিন সকাল হতে না হতেই সুদীপ্ত ছুটেছে অনুপদের বাড়িতে। ওয়াস করা ছবিটা দেখিয়েছে অনুপকে।

( চলবে )

Sort:  
 2 years ago 

আলোকচিত্র অলৌকিক গল্পটি দারুন ছিল অনেক সুন্দর করে গল্পটি লিখে আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 57428.63
ETH 2425.69
USDT 1.00
SBD 2.34