চলো মন বেন্দাবন - 2 || অফিসের দাবী মেনে আপাতত গুজ্রাটের পথে [ 10% reserved for shy-fox brother ]
তো হয়েছে কি , আমরা তো পৌঁছালাম ভুজ। ট্রেন ১০ মিনিট লেট ছিল । সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ভুজে নেমে দেখি ট্রেন লেট থাকার জন্য যে ড্রাইভারের আসার কথা ছিল সে ব্যাটা পালিয়েছে। ব্যাস আমার সাথে ছিল নাগপুরি ছোকরা রথীনরাজ কাক্কার। এই কাক্কারের কাহিনী অন্য একদিন বলবো, ব্যাটা খাঁটি রাজ পরিবারের সন্তান। গায়ে জমিদারী রক্ত। সবেতেই মেজাজ দেখানো এদের অভ্যেস। গাড়ি চলে গেছে সেজন্য ষ্টেশনে নেমেই একচোট খিস্তি করলো সবাইকে। যায় হোক এর পর স্টেশনে বেড়িয়ে চারিদিক দেখলাম।
হু হু সুমুদ্রের হাওয়া আসছে। যদিও সেটা আরব সাগর নয়, কচ্ছের রান এরিয়া। স্টেসনের গায়েই এয়ারপোর্ট। এই এরোড্রামটা আর্মি আর পাবলিক সবার জন্যই। অনবরত আর্মি প্লেন গুলো উঠছে নামছে বিকট শব্দ করে। যায়গাটা আমার দিব্যি লাগলো। বেশ বোঝা গেল সুবিশাল ভারত বর্ষের পশ্চিম প্রান্তে নোনা লবনাক্ত মাটি সাথে মরুভুমির বালু হাওয়ায় ভাসছে। যায় হোক স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটা স্টলে ঢুকলাম খেতে। সকাল সকাল গুজরাটি হলুদ চা আর ধোকলা দিয়ে চা খেয়ে একটা উবের খুজতে শুরু করলাম। আমাদের দেস্টিনেশন থেকে আমরা প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ভুজ ষ্টেশনে আছি। ক্যাব আসার পর সেটাই লটবহর তুলে শুরু হলো যাত্রা।
( হু হু হাওয়ায় গাড়ি চলছে ভারত বর্ষের শেষ প্রান্ত দিয়ে। একদিকে মেন ল্যান্ড, উলটো দিলে ৩০ ফুট দূর থেকেই সুমুদ্র )
এ এক অদ্ভুত যাত্রা, একদিকে ভারত, আমরা লম্বা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, যে ভুখন্ডে পোউছাব সেটা ভারতবর্ষের মধ্যেই পশ্চিম প্রান্তের গোলাকার দুটো যায়গা, ধু ধু রাস্ত্রার একদিকে লবনাক্ত কচ্ছ। মাইলের পর মেইল নুন মাখা কাদা। জল নেই, জোয়ার এলে একটু পায়ের পাতা ডোবার মত নোনা জল বেড়ে যায় বাকি সব কাদা। মাঝে মাঝে চোরা কাদা। ঢুকে গেলে অতলে তলিয়ে যেতে হবে। ড্রাইভার বলল মাত্র ২২ কিলোমিটার দুরেই পাকিস্থানের করাচি। সেটা আর্মির গাড়ির বহর দেখেই চোখে পড়ছে। আমাদের কাজ যেখানে সেটা আর্মি ক্যান্টের ভেতরেই একটা স্যাট কম স্টেশন। ইন্টারন্যানেশল জিও স্টেশনের সাথে কিছু ব্যাপার স্যাপার আছে, আমরা এত সব জানিও না কিছু। রাস্তায় যেতে যেতে চোখে পড়লো প্রছুর গির জাতের গরু, আর বলদ। এখানে চাষ হয় না তবে গরু গুলো দুধ আর পনীর এর জন্য পালন করা হয়। গুজরাট রাজস্থান পুরোপুরি নিরামিষ খাবার খাই। মাছ মাংস ডিম ছুঁয়েও দেখে না। যস্মিন দেশে যদাচার।
প্রায় ঘন্টা ২ পর আমরা আমাদের যেখানে পৌছালাম সেটা একটা প্যালেস। আসলে বহু আগে রাজা ভোজের প্যালেস ছিল , এখন সরকার সেটাকে হোটেল বানিয়েছে। আমাদের একটা দিন এখানে থেকে সমস্ত টেস্ট করে তবেই এগোনোর পারমিশন। অগত্যা গাড়ি থেকে নেমে ঢুকলাম হোটেলের ভেতরে।
( আমাদের হোটেল, পুরো রাজবাড়ি টাইপ ফিল দিচ্ছে )
ভেতরে ঢুকে তো চক্ষু ছানাবড়া। রাজকীয় বললেও কম বলা হবে। মাঝে কয়েকজন আর্মি অফিসার এসে গুড ডে জানিয়ে কিছু ফুল টুল দিয়ে গেল। সেসব শেষ করে হোটেলে সই সাবুদ করে আমরা যখন নিজেদের ররুমে ঢুকলাম তখন ঘড়িতে বেলা ১১ টা।
( হোটেলের লবি, এখানে সন্ধ্যে বেলা পানাহারের ব্যাবস্থা ছিল )
জানালা খুলতেই সামনে আদিগন্ত ধু ধু নোণা জলের কাদা আর নীল আকাশ। পোর্টাল জানালো আমরা যেখানে যাব সেখান থেকে এই হোটেল টা ২০ মাইলের মত দূরে। এখান থেকেই শুরু হচ্ছে আর্মি সেকেন্ড কর্প কমান্ড এরিয়া। সামনেই নারায়নী মাতার মন্দির। প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো দেবী মাতার মন্দির। প্লান হলো বিকেলে সেখানে যাব ঘুরতে। পোর্টাল জানালো আমাদের ওয়ার্ক ষ্টেশন যেখানে সেখান থেকে আকাশ পরিস্কার থাকলে করাচী বন্দরের ওপর পাকিস্থানি ফ্লাগ দেখতে পাওয়া যায়। শুনেই কেমন যেন শিহরণ হলো শরীরে। আদ্যান্ত দেশী এবং ভারতীয় মানসিকতার ফল এবং আড্রিনালিন বুঝতেই পারলাম। যায়হোক হোটেলে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের লাঞ্ছ করার পর লম্বা একটা ঘুম দিতেই সন্ধ্যে হব হব। এখানে বিকেলে সূর্য অস্থ যেতে প্রায় সন্ধ্যে ৮ টা বাজে। বিকেল ৫ টাই বেরিয়ে আমরা এলাকা টা চক্কর দিতে সুরু করলাম। তারপর রাতে ফিরে ৮টার মধ্যে খেয়েই ঘুম। কারন পরের দিন সকাল বেলা আর্মির গাড়ি এসে যাবে আমাদের নিতে সকাল ৫ টাই।
( আমাদের রুমের একাংশ )
কিছু ছবি থাকলো, যদিও এগুলো খুব র্যান্ডাম এবং তাড়াতাড়ি তোলা। গুছিয়ে লেখার পর অবস্থা তেও নেই কাজের চাপে। পর পর ফাঁকা হলেই লিখতে থাকবো আমাদের জন্য। ততক্ষন আলবিদা। ভালো থাকুন সবাই।
বাইরে থেকে হোটেলটি
( এটা হোটেলের একাংশ , এখানেই আমরা গুলতানি করছিলাম )
( চলবে )
এরকম একটা রাজকীয় হোটেলে দু এক রাত কাটাতে পারলে মন্দ হত না । আপনার পুরো জার্নির ভেতরে আমার কাছে এখন পর্যন্ত আপনাদের থাকার জায়গা টা সবচাইতে ভালো লেগেছে । একদম সত্যি কথা বলেছেন একটা রাজার মতো ফিল হওয়ার কথা এই জায়গায় থাকতে পারলে । দাদা পোস্টে বেশ কিছু বানান ভুল হয়েছে । সময় করে সংশোধন করে নেবেন । পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ।