★মৃত্যুর পরেও★-- (ছোটদের জন্য ভুতুরে গল্প) [ 10% reserved for shy-fox ]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

image.png

image source

কলকাতার আশুতোষ কলেজে পরে সৌম্য। সৌম্যদীপ দত্তগুপ্ত। গ্রামের ছেলে। তার বাবা শ্রী মুকুন্দমোহন দত্তগুপ্ত ওই গ্রামেরই উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন আজ প্রায় বছর পঁচিশ হতে চলল। শিক্ষক হিসেবে চাকুরিতে যোগ দিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায়। সেখান থেকে পরবর্তীতে ট্রান্সফার নিয়ে, নিজের গ্রামের বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন।

সৌম্যও তার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপর্ব সমাপন করেছে এই গ্রামের স্কুল থেকেই। তার ইচ্ছা, সেও তার বাবার মতই শিক্ষকতা করবে আজীবন। তবে সেটা শিক্ষক হিসেবে কোন স্কুলে পড়ানো হোক বা অধ্যাপক হিসেবে কোন কলেজে শিক্ষা দেওয়া, কোনটাতেই অরুচি নেই সৌম্যর। তাই গ্রামের পড়াশোনা শেষ করেই সে ভর্তি হয়েছিল কোলকাতার আশুতোষ কলেজে। কলকাতায় থেকেই পড়াশোনা করে সৌম্য।
আসলে কোলকাতা থেকে তার গ্রাম অনেক দূরে - দূরত্ব প্রায় একশো মাইলের কাছাকাছি। সঠিক ভাবে বলতে গেলে ছিয়ানব্বই মাইল। গ্রাম বর্ধমান জেলায়। গ্রামের নাম সীতারাম পুর। রেল স্টেশন থেকে মাইল তিনেক হেঁটে সীতারাম পুর যেতে হয়।

অজপাড়াগাঁ বলতে যা বোঝায়, সীতারামপুর মোটেও তেমন নয়। গ্রামে উচ্চবিদ্যালয় থেকে শুরু করে লাইব্রেরি, বাজার ঘাট, পোস্ট অফিস সবই রয়েছে। পাশের গ্রামটি আরো বর্ধিষ্ণু, সেখানে সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা প্রাইমারি স্কুল এসবও রয়েছে। পাশের গ্রামটির নাম হরিহর পুর।আশেপাশে কাছাকাছি কলেজ নেই যে তা নয়, কাটোয়া, বর্ধমান, নবদ্বীপ, কালনা এসব জায়গায় কলেজ রয়েছে। কোলকাতা থেকেও এই জায়াগা গুলো অনেক কাছে। কিন্তু ভালো পড়াশোনা হবে এই আশায় সৌম্য এত দুরে কলকাতায় এসে কলেজে ভর্তি হয়েছে।

যদিও তার বাবার ছেলেকে অত দুরে পাঠাবার ইচ্ছে তেমন ছিল না, কিন্তু সৌম্যের কলকাতায় ভর্তি হবার প্রবল ইচ্ছা দেখ্ব, তিনি আর সৌম্যিকে বারন করেননি। নিজে গিয়ে দেখে শুনে সৌম্যকে ভর্তি করে দিয়ে এসেছেন আশুতোষ কলেজে। কলেজের হোস্টেলে থেকে সে পড়াশোনা করে, আর গ্রামের বাড়িতে যায় মাসে এক বার।

সৌম্যর এখন সেকেন্ড ইয়ার চলছে। আজ শনিবার, সে বাড়ি চলেছে। রবি সোম মঙ্গল থেকে আবার বুধবার হোস্টেলে ফিরে যায়।
কোলকাতা থেকে ট্রেনে আসতে সময় লাগে প্রায় ঘন্টা তিনেক। সেই ট্রেন গ্রামের স্টেশনে পৌছোয় প্রায় সাড়ে আট টা নাগাদ। স্টেশন থেকে তার গ্রামের দুরত্ব খুব বেশি নয়, পায়ে হেঁটে গেলে ঘন্টা খানেক সময় লাগতে পারে। তাছাড়া ওই সময় স্টেশনের বাইরেও, স্ট্যান্ডে বেশ কয়েকটি টোটো থাকে।

সীতারামপুরের পাশের গ্রাম হরিহরপুরে বহু লোকের বাস। ঐ ট্রেন থেকে বা অন্য কোন ট্রেন থেকে সীতারামপুরের প্যাসেঞ্জার তেমন বেশি নামে না। দুই-চার জন অথবা পাঁচ-সাত জন নামে, কিন্তু হরিহরপুরের প্যাসেঞ্জার নামে বেশ কিছু। স্টেশন থেকে হরিহরপুর প্রায় মাইল পাঁচেকের রাস্তা। ওখানকার প্যাসেঞ্জার রা সকলে টোটো বা সাইকেল রিক্সাতেই যায়। সৌম্য যখন আসে এই ট্রেনেই আসে, আর টোটো অথবা রিক্সাতেই যায়। যখন ফেরে, তখনও এই টোটো, রিকশা এসবেই স্টেশনে ফেরে।

সেদিন ব্যান্ডেল স্টেশন ছেড়্ব আরও কয়েকটা স্টেশন পেরোতেই ইঞ্জিনের কিছু যান্ত্রিক সমস্যার কারনের ট্রেন থেমে গেল। আর সেই যে থামল, ঘন্টা খানেকের চেষ্টাতেও সেটাকে চালু করা গেল না। তখন অন্য একটি ইঞ্জিন আনিয়ে, ট্রেন ছাড়া হল। তবে এই গোলযোগের কারনে ট্র্বন প্রায় দুই ঘন্টার বেশি বিলম্ব হয়ে গেল। প্রায় রাত এগারোটার নাগাদ সেই ট্রেন পৌছোলো সৌম্যদীপের গন্তব্য স্টেশনে।

পল্লিগ্রামের রাত এগারোটা মানে অনেক রাত। চারিদিক শুনশান নিঃঝুম। প্যাসেঞ্জার নামল বারো- চৌদ্দজন, অবশ্য বেশিরভাগই, হরিহরপুরের লোক। কিন্তু দেখা গেল স্টেশনের বাইরে, একটিও টোটো নেই। শুধু তিনটি সাইকেল-রিক্সা দাড়ানো। হরিহর পুরের লোকরা সবাই হুরমুড় করে ছুটে গিয়ে একেকটা রিক্সায় তিনজন করে চেপে বসল।

সৌম্য পারল না। সৌম্য ছাড়া আরো জনা,চারেক লোক রয়েছে দেখা গেল, এরা কাছাকাছি গ্রামেরই লোক। এদের বাড়ি স্টেশন থেকে মাইল খানেকের মধ্যেই। রিক্সা না হলেও চলে। হরিহরপুরের লোক গুলোর ভাগ্য ভালো যে তারা সবকটাই রিক্সা পেয়ে গেছে। সৌম্য পরল অসুবিধায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে পরিস্থিতিটা একটু অনুভব করে নিল। যাক্ গে!! মাত্র তিন মাইলের মতো পথ, পা চালিয়ে হাঁটলে ঘন্টা খানেকের মধ্যেই দিব্যি পৌঁছে যাবে। হাঁটা শুরু করল সৌম্য। তার সঙ্গে আরো দু জন আসছে।খানিকটা আসার পরেই তারা, রাস্তার বাঁ দিকের মেঠো পথে নেমে গেল৷ এই মাঠ পেরিয়েই তাদের গ্রাম।

সৌম্য তারপর আর কতটুকু পথই বা গিয়েছে, সে লক্ষ্য করল আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে, সারা আকাশ জুড়ে একটিও তারা দেখা গেল না। সে বুঝল সারা আকাশই ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেছে। আরেকটু এগোতে এগোতেই ঝড় উঠল। সেই সঙ্গে একেক ফোঁটা বৃষ্টিও টুপ টাপ করে ক্রমাগত পরতে লাগল। সৌম্য বড় ভাবনায় পরল। এখনো বেশ কিছু পথ বাকী। এরই মধ্যে যদি আরও জোরে ঝড়-বৃষ্টি নামে তবে সে বাড়ি পৌছোবে কি করে। তাই আরও দ্রুত পা চালালো সৌম্য।

কিন্তু বিধি বাম। আরও জোরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। এখন উপায়? কোথায় দাঁড়ানো যায়? কাছে পিঠে তো কোন বাড়ি ঘর তো দুর ছাউনি পর্যন্ত চোখে পরছে না। এখনো প্রায় অর্ধ্বক পথ বাকি। সৌম্য ছুটতে আরম্ভ করল। হঠাৎ তার কানে এল - " ও দাদাবাবু... ওও সোম দাদাবাবু!
সৌম্য থমকে দাঁড়ালো, দাঁড়িয়ে বা দিকে তাকাতেই সেদিক থেকেই শোনা গেল সেই ডাক, " ও দাদাবাবু, এই যে.. এই দিকে এই দিকে আসেন.. এদিকে আমার ঘর !! "

সৌম্য দেখল বাঁ দিকে রাস্তার থেকে একটু ভেতরে, একটি চালাঘর। তার দরজা খোলা, ভেতরে আলো জ্বলছে। আএ দরজায় একজন দাড়িয়ে। সৌম্য ছুটে গেল সে দিকে। কোনরকমে হুড়মুড় ঘর টার মধ্যে গিয়ে ঢুকল সে। লোকটা বলল, "আমায় চিনতে পারছেন দাদাবাবু? আমি নীলিকন্ঠ। আপনাদের ধান ঝেড়ে দিই, খড়ের মরাই বাঁধি। সৌম্য বলল, " হ্যাঁ হ্যাঁ চিনতে পারছি। তুমি এখানে থাকো বুঝি? তোমার যে ঘর এখানে তা জানতাম। নীলকন্ঠের বয়স বেশ অনেকটাই হয়েছে। শরীরে প্রৌঢ়ত্বের ছাপ পরেছে স্পষ্ট। সে বলল - " একি দাদাবাবু? আপনার প্যান্ট শার্ট গুলা তো এক্কেরে ভিইজে গেছে। আপনারে কি পরতে দিই বলুন তো? " সৌম্য বলল, " না না খুব একটা ভেজে নি, তুমি চিন্তা কোরো না নীলকন্ঠ দাদা !!! ও এমনিতেই শুকিয়ে যাবে।"

নীলকন্ঠ ব্যস্ত হয়ে বলল, " না না!! তা হয় নাকি দাদাবাবু! বৃষ্টি কখন থামবে না থামবে আর ততক্ষন আপনি ভেজা কাপড়ে কষ্ট পাবেন, তা তো হয় নি বাবু। জামাকাপড় ভালো রকম ভিজেছে আপনার, আপনি বরং আমার ধুতিটা জড়িয়ে নিয়ে, গুছিয়ে বসুন। যখন যাবেন, ছেড়ে যাবেন না হয়।" বাস্তবিকই সৌম্যর জামা প্যান্ট বেশ ভালো মতোই ভিজে গিয়েছিল। বেশিক্ষন এই পোশাকে থাকা ঠিক হবে না তার। আজ বৃষ্টি খানা যা ঝেঁপে এসেছে। কখন থামবে কিচ্ছু ঠিক নেই। অগত্যা ভেজা প্যান্ট জামা ছেড়ে, সে ধুতিটাই জড়িয়ে নিল।

"ব্যস এই বার আরাম করে গুছিয়ে বসুন দেখি দাদাবাবু। সেই কখন টেরেনে উঠেছেন, ঠিক সময় ট্রেন টা পৌছলে হলে এতক্ষণে বাড়িতে গিয়ে, আরাম করে নিদ্রা যাইতে পারতেন।" - বলল নীলকন্ঠ। প্রত্যুত্তরে সৌম্য শুধু হাসল।

নীলকন্ঠ বলল, " দাদাবাবু!! আপনার নিশ্চয়ই খুব ক্ষিদে পেয়েছে। আহা বাচ্চা মানুষ, সেই কখন টেরেনে উঠেছেন ক্ষিদে তো পাওয়ারই কথা। "
সৌম্য বলল -" ট্রেনে খেয়েছি, টুকটাক। " নীলকন্ঠ - " কি আর খেয়েছেন? মুড়ি বাদাম তো? তা ওসব খেয়ে কি ক্ষিদে কমে? বলুন কি খাবেন? "
সৌম্য অপ্রস্তুত হয়ে বলল, " না না তোমাকে অত ব্যস্ত হতে হবে না গো, নীলকন্ঠ দা। বাড়ি গিয়ে তো খাবই"

নীলকন্ঠ, " কখন যাবেন বাড়ি, তার ঠিক আছেন বৃষ্টি থামতে এখন যথেষ্ট দেরি আছে। বলুন কি ভাবেন দাদাবাবু? লজ্জা করবেন নি একদম "

লজ্জা সত্যিই করছিল সৌম্যর। এরা কত গরীব লোক। পরের বাড়িতে জনমজুরের কাজ করে, কোন রকমে দু বেলার দু মুঠো খাবার জোটায়। ঘরে কিই বা এমন খাবার রয়েছে.. সেটুকুর মধ্যেও কি ভাগ বসালে চলে। নীলকন্ঠ বলল, " আপনার বাবা দেব্তা লোক সোম দাদাবাবু। তিনশো টাকা দিনের কাজে, পঞ্চাশ টা টাকা বেশি ধরে দেন। দুপুরে খাইতে বসাইলে.. পাশে বসে কি লাইগবে না লাইগবে সব তদারক করেন। পেট ভরে খাইতে দ্যান!! আর সেই বাবুর ছেলে আপনি, আজ আমার ঘরের অতিথি। আপনারে অভুক্ত রাখলে প্রভু জনার্দন কি আমাকে শান্তি দিবে।
আপনি রাইতে ভাত খান না ময়দা? সৌম্য বলল, "রাতে ভাত খেতে তেমন ভালো লাগে না। ময়দাটাই পছন্দ করি। ঠিক আছে দাদাবাবু ! আপনি একেনে বসুন, আমি একটু আপনার খাবার টা নিয়ে আসছি" এ ঘরটার পাশে আরও একটা ঘর ছিল, নীলকন্ঠ সেই ঘরটাতে চলে গেলো।

বেশ খানিকক্ষণ হয়ে গেল, তবুপ নীলকন্ঠ আসছে না দেখে সৌম্যর মন খানিক চঞ্চল হল। ভাবল, বোধহয় রুটি তরকারি কিছু বানাতে বসেছে।কিন্তু কোন সাড়া শব্দও তো পাওয়া যাচ্ছে না। পাশের ঘরটায় রুটি তরকারি তৈরী করলে আওয়াজ তো একটু আসবেই৷ কিন্তু কোন আওয়াজ নেই। চারিদিক অতি নিস্তব্ধ। মনে হচ্ছে সাড়া পৃথিবীটাই বুঝি ঘুমে নিথড় হয়ে পড়েছে। কেবল বাইরে অবিশ্রান্ত ধারায় ঝড় পরছে..অন্ধকার কালরাত্রী স্নাত অশান্ত বারিধারা। আরও বেশ কিছুক্ষণ কাটল। এবার সৌম্যর দুশ্চিন্তা হল। লোকটা ঘরে ঢুকে কোনভাবে মরে টরে যায় নি তো? কোন সাড়া শব্দও তো পাওয়া যাচ্ছে না।

সৌম্য এবার উঠে গিয়ে ভেতরের ঘরটায় উঁকি মারল, কিন্তু ঘন অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেল না। এই অন্ধকারের মধ্যে কি করছে লোক টা? কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না। সৌম্য লন্ঠিন টা নিয়ে ঘরে ঢুক্র এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল, কেউ কোথাও নেই। নীলকন্ঠ কই? এদিকে বলল রুটি তরকারি নিয়ে আসছি, অথচ গেল কোথায়? তবে কি সে বাইরে, অন্য কারো বাড়িতে গেছে তার খাবার জোগাড় করতে? তাই হবে হয়ত। আহা বেচারি... কিন্তু! সৌম্য অবাক হল একটা কথা ভেবে, যে ওই ঘর থেকে বাড়ির বাইরব যাবার রাস্তা এ ঘরের মধ্য দিয়ে। কিনতু সে তো নীলকন্ঠ তার সামনে দিতে যেতেও দেখেনি! তবে সে গেল কোথায়? সে তো ঠায় চৌকিতে বসেছিল।

এমন সময় নীলকন্ঠের গলা শুনতে পেয়ে, ফিরে তাকিয়ে দেখে, সে চৌকির পাশে হাতে খাবারবে থালা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সৌম্য জিজ্ঞাসা করল, " কোথায় গিয়েছিলে? নীলকন্ঠ বলল-, " আপনার খাবার আনতে দাদাবাবু।" নীলকন্ঠ আবার বলল, " আর দেরি করবেন না বাবু। এই চৌকিতেই বসে পরুন। মাটির মেঝে, কি পেতেই বা বসতে দেবো ঘরে তেমন কিছুই নেই।" খাবার দেখে সৌম্যর চক্ষু চড়কগাছ। অনেকগুলো লুচি,দু'টো বেগুন ভাজা,ছোলার ডাল, এক বাটি মাংস আর চারটে রসোগোল্লা!

সৌম্য অবাক! একি ব্যপার এত সব পেল কোথায় নীলকন্ঠ! "তুমি কোথা থেকে পেলে এই সব? " - সৌম্য জিজ্ঞাসা করল। নীল কন্ঠ হাসি মুখে বলল, " আজ্ঞে দাদাবাবু জোগাড় করে নে এলাম" এই ঝড় জলের মধ্যে এত রাতে কে তোমায় দিল এতসব খাবার দাবার, তাছাড়া তোমাকে আমি এই ঘর থেকেই তো বেরুতে দেখলুম না? কোথা,দিয়েই বা বেরিয়েছিলে বাইরে? " নীলকন্ঠ - " এই ঘরের মধ্যি দিয়েই তো বাইরিয়ে ছিলেম গো দাদাবাবু। আপনি হয়ত খেয়াল করেন লাই " মনের ভেতরটা কেমন যেন হয়ে গেল সৌম্যর, কেমন যেন একটা বিশ্রী দুশ্চিন্তায় তার মন আচ্ছন্ন হয়ে গেল। এর ফলে খানিকক্ষণ কথাই বলতে পারল না সে। নীলকন্ঠ আবার বলল , " তাড়াতাড়ি নুচি গুলো খেয়ে নিন দাদাবাবু, নইলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।"

সৌম্য অবাক হল, ঠান্ডা হয়ে যাবে মানে? এই ঝড় জলের গভীর রাতে কোথা থেকেই বা সে গরিম নিয়ে এল, আর এই আবহাওয়াতে বাইরে এতক্ষন ধরে, সেগুলো ঠান্ডা হল না, আর এখন কিনা ঠান্ডা হয়ে যাবে? সৌম্য ভালো করে নীলকন্ঠের গায়ের দিকে তাকালী। নীলকন্ঠ এতক্ষন ধরে বাইরে ছিল, এত ঝড় বৃষ্টি হয়ে চলেছে বাইরে অথচ তার গায়ে মাথায় একটুও জলের ছিঁটেফোঁটাও নেই। খাবারের থালাটাও একেবারে শুকনো খটখটে! এতো বড়ই আশ্চর্যের ব্যাপার! এত ও অবিশ্বাস্য! অলৌকিক ব্যাপার।

মনের মধ্যে এমন বিদঘুটে প্রশ্ন জাগায়, সৌম্য বিভ্রান্ত হয়ে পরল। তার ক্ষুধা তৃষ্ণা দূর হয়ে গেল। ক্রমে তার মনের মধ্যে একটা দুরন্ত ভয় এসে, ঘাঁটি গেড়ে বসল। এক্ষুনি তার এখান থেকে ছুটে পালিয়ে,যেতে মন চাইল। সৌম্যর গলা,শুকিয়ে আসছিল। সে মনে মনে একটা ফন্দি এঁটে কোনরকমে বলল, "একটু খাবার জল দাও"। জল আনতে নীল কন্ঠ যেই না পাশের ঘরে গেছে, অমনি সৌম্য পাশ থেকে ভিজে জামা প্যান্ট টা তুলে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় লাগালো। ঝোরো হাওয়া খানিক টা কমেছে তখন, বৃষ্টিও কিছুটা ধরে এসেছে। ছুটতে ছুটতে একসময় সে নিজের বাড়ির দরজায় এসে পৌছোলো। এত রাতে এই অবস্থায় ছেলেকে দেখে, সৌম্যর মা বাবা যারপরনাই অবাক হল।

বাড়িতে এসে মা বাবাকে সে সব কথা জানালো। ট্রেন লেট হওয়ার কথা,, ঝড় বৃষ্টিতে নীলকন্ঠের ঘরব আশ্রয় নেওয়া ও তার অদ্ভুত আচরণের কথা। শুনে মা তো ভয়ে সিঁটিয়ে উঠলেন। বাবাও ভীত হয়ে পড়লেন। বাবা বলল, " বড় বাঁচা বেঁচে গেছিস রে সমু। নীলু তো দিন সাতেক আগে, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে, গলায় দড়ি দিয়ে মরেছিল।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 63281.14
ETH 2674.11
USDT 1.00
SBD 2.79