জেনারেল রাইটিং :- স্কুল জীবনের ২৬ শে মার্চের দিন গুলো।

in আমার বাংলা ব্লগlast year
আমি @tuhin002, আমি আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যগনকে আমার পক্ষ থেকে জানায় সালাম," আসসালামু আলাইকুম" সবাই কেমন আছেন ? আশা করি, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহুর অশেষ রহমতে ভাল আছি। আজকে আমি আলোচনা করবো স্কুল জীবনে ফেলে আসা ২৬ শে মার্চের দিন সম্পর্কে। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তাই শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ...


png_20230629_163403_0000.png

ছবিটি কেনভা দিয়ে তৈরি

তখন আমি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পড়ি। আমাদের স্কুলের নাম জুগির গোফা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আমাদের স্কুলে প্রতি বছরে ২৬ শে মার্চ উদযাপন করে থাকি। ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। আর এই দিবসটি খুব বড় মাপের উদযাপন করে থাকি আমরা। ২৬ শে মার্চ এর আগের রাত্রি, ২৫ শে মার্চ রাত্রে সেই সময় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্য ছিল একটা কালো রাত। কিন্তু আমাদের জন্য ২৫ শে মার্চ রাত্রি ছিল খুবই আনন্দের রাত। ২৫ শে মার্চ রাতে আমরা খুব আনন্দ করে থাকি। সত্যি কথা বলতে লোকের কাছে ডাব পেড়ে খাওয়া আমাদের কমন ব্যাপার ছিল। আমি আমার বন্ধুকে নিয়ে সবাই মিলে নারিকেল গাছে উঠে ডাব পেড়ে খাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেলাম সন্ধ্যা আটটার পরে।


এরপরে আমরা বাগানে গিয়ে বসে থেকে যখন রাত দশটা বাজে তখন দড়ি এবং কাটার নিয়ে গাছে উঠে পড়লাম। প্রায় ৮০ টা ডাব কেটে নিচে নামিয়ে দিলাম। আমরা প্রায় ৭-৮ জন ছিলাম। সবাই মিলে ডাব কেটে আমরা খেয়ে ফেললাম। এরপর আমরা স্কুলের মাঠে ফিরে আসলাম। আমাদের স্কুলে অনেক কাজ থাকে। স্কুলে সারা এরিয়াটা সুন্দরভাবে সাজানো আমাদের দায়িত্বেই থাকে। আমাদের প্রিয় স্যার খাইবার মাস্টার। তিনি সবসময় আমাদের উপরে ভরসা করেন। গান বাজনার জন্য আমরা সাউন্ড বক্স মাইক ভাড়া করে নিয়ে আসি। যদি জোসনা রাত হয় তাহলে আমাদের আনন্দটা আরেকটু বেড়ে যায়। আমাদের পুরো স্কুলের সাইটগুলো ডেকোরেশন করতে আমাদের অনেক সময় চলে গেল। ঐদিন বাজারে দোকান গুলো প্রায় ১১ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ক্ষুধা লেগে গেল আমি আমার স্যারকে বললাম স্যার কিছু খাওয়া-দাওয়া দিবেন ক্ষুধা লেগে গেছে। তখন স্যার আমাদেরকে কিছু টাকা দিলো, আমরা বিস্কিট চানাচুর নিয়ে আসলাম। এগুলো খাওয়ার পরে পুনরায় আমাদের কাজ শুরু করে দিলাম। রাত তখন একটা, আমাদের কাজ পুরোপুরি সম্পূর্ণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এরপর আমরা আর একবার চলে গেলাম নারিকেল বাগানে। আমি পুনরায় গাছে উঠে পড়লাম। আবার এক কাঁধি ডাব দড়ি বেঁধে নিচে নামিয়ে দিলাম। এবার আমরা চারজন ছিলাম। বসে এগুলো খেলাম এবং অনেকক্ষণ গল্প করলাম। রাত যখন প্রায় তিনটার কাছাকাছি তখন আমরা নিজেদের বাসায় ফিরে আসলাম।


বাড়িতে এসে হাত-মুখ ধুয়ে বিছানায় মাথা না দিতেই ঘুম চলে আসলো। মনে হল কিছুক্ষণের মধ্যে মা আমাকে ডেকে বললো তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো, স্কুলে যাবানা? আমার মনে হলো এইমাত্র আমি ঘুমালাম। উঠে দেখি অনেকটা সকাল হয়ে গেছে। খুব তাড়াহুড়া করে গোসল শেষ করে সকালে নাস্তা করেই চলে গেলাম স্কুলে। সত্যি বলতে আমি স্কুলে লিডার ছিলাম। যে কোন কাজে আমি আগে আগে থাকতাম। স্যার আমাকে ডেকে বললো ভেতরে যে টেবিল চেয়ার গুলো আছে এগুলো সবাইকে নিয়ে বাইরে সাজিয়ে দাও। যেহেতু বাইরে থেকে গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গরা আমাদের এখানে এই ২৬ শে মার্চ উদযাপনে তারা দেখতে আসে। সত্যি কথা বলতে মেহেরপুর জেলায় এই জুগির গোফা একটাই গ্রাম, যে গ্রামে এত সুন্দর ভাবে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে ২৬ শে মার্চ উদযাপন করা হয়। তাই আমাদের আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেক মানুষ আমাদের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য ছুটে চলে আসে।


আমাদের এই অনুষ্ঠানে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মোটরসাইকেল রেস, ন্যাংটা দৌড়, হাড়িভাঙ্গা, সাইকেল রান, কলা গাছে ওঠা, আরো মজার মজার কিছু খেলা থাকে। আমাদের স্কুলের সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত যারা ফাস্ট বয় তাদেরকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সবকিছু মিলে খুবই সুন্দর একটি পরিবেশ। ১১ টা থেকে শুরু করে বিকেল তিনটি পর্যন্ত সমস্ত প্রকার খেলাধুলা আমরা শেষ করে থাকি। এরপরে আমরা খাওয়া দাওয়া করে নেয়। তারপরে শুরু হয় আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরু হয় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে। কৌতুক গান নাটক আরো মজাদার কিছু সংগীত আমাদের এই অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে। সবকিছু মিলে ২৬ শে মার্চের দিনটা আমরা খুবই আনন্দের সাথে উপভোগ করে থাকি।


সেই ২০১০ সালে স্কুল ছেড়ে চলে এসেছি। কিন্তু আজও মনে পড়ে যায় সেই স্মৃতিগুলো। আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে তোমার জীবনের সব থেকে সেরা সময় কোনটি? আমি অবশ্যই বলবো আমার স্কুল লাইফ। ওই জীবনে আমি যত মজা করেছি এত মজা হয়তোবা পরে কয়েক জনম ধরেও যদি পৃথিবীতে বেঁচে থাকলেও আর পাব না। ওই সময় স্মৃতিগুলো ভুলে যাওয়া খুবই কষ্টকর। সত্যি বলতে চোখ বুঝলে এখনো সেই সমস্ত দৃশ্যগুলো আমার চোখে ভেসে ওঠে। মাঝে মধ্যে মনের ভেতরে খুব কষ্ট লাগে। কথায় আছে সময় স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। আজ যে আসন তুমি ধরে রেখেছো কাল ওই আসন তোমাকে ছেড়ে দিতেই হবে। আর এটাই পৃথিবীর নিয়ম। যদিও এখন আমরা ছাব্বিশে মার্চ উদযাপন করে থাকি। কিন্তু ওই দিনের মতো এত মধুর দিনগুলো আমরা আর পাইনা।


ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশা নিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।

আজ এই পর্যন্ত। সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ডিভাইস poco M2
লোকেশন মেহেরপুর, গাংনী, জুগির গোফা।

👨‍🦰আমার নিজের পরিচয়👨‍🦰


1666192548913_1666192548801_1666192548599_1666192548416_1666192548270_1666192548091_1666192547839_1666192547665_1666192022150.jpg

আমি তুহিন, আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি বাংলা ব্লগে কাজ করতে অনেক ভালোবাসি। এই ব্লগে কাজ করার মধ্যমে আলাদা প্রশান্তি পায়। এছাড়াও আমার একটি বাগান আছে। বাগানে অনেক ফল ও সবজির চাষ করে থাকি। আমি ছবি আঁকতে পছন্দ করি। এছাড়া আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করি। সংক্ষিপ্ত আকারে আমার নিজের পরিচয় আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য শুভকামনা রইল।


Logo.png

(১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য )


4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzLdXDsNijBKWNGJn5ogmozSiA7cyReMsKwomyC79dv8nHgZj3RKbXhPtULzHviAUBY9Vc8ousmvcnNywqK...hMHPzmtXdqcE25kuBukgtAciNVXSHonSRqmAmfHf9YgyuYwwZo1Nd9dUCogeVvSsKh3MRCxw1Khi2NyeZh4Rt4J9n7wTsZvJ1tiUMafwrMjZ5AQz2ERchsjjJv.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 last year 

অন্যের গাছ থেকে চুরি করে কখনো কিছু খাওয়া হয়নি। তাই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই। তবে আমার কাছে মনে হয় এই চুরির মাঝে আলাদা রকমের ভালোলাগা রয়েছে। আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া।

 last year 

আসলে আপু এগুলো মজা করে নিজের চাচার গাছ থেকে পেড়ে খেতাম। 😄😄

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 55971.81
ETH 2362.70
USDT 1.00
SBD 2.32