জেনারেলের রাইটিং:- নিরবতায় সফলতার পথে বাঁধা।
আমি @tuhin002, আমি আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যগনকে আমার পক্ষ থেকে জানায় সালাম," আসসালামু আলাইকুম" সবাই কেমন আছেন ? আশা করি, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহুর অশেষ রহমতে ভাল আছি।আজকে আমি আপনাদের মাঝে খুবই সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। আর যেটি হল নিরবতায় সফলতার পথে বাঁধা। পৃথিবীতে অনেক মানুষ রয়েছে যারা নীরবতা থাকার কারণে তাদের অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেনা। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তাই শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ... |
---|
গরিবের মেয়ে রজনী। পিতা একজন রাজমিস্ত্রি। মা হলো গৃহিণী। নিজেদের থাকার মত একটা বসতভিটা এবং একটা মুদির দোকান ছাড়া তেমন কিছুই নাই। নিজেদের জমি নেই যে, চাষ করে কিছু বাড়তি আয় উপার্জন করবে। তার বাবা প্রতিদিন রাজমিস্ত্রির কাজ করে সেখান থেকে যা পায় তা দিয়েই তাদের সংসার চলে। সে বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা। যেহেতু বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা সে তো দোকানে বসার মত কেউ নেই তাই তার লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে সেখানে বসতে হয়। যদিও সে খুবই মেধাবী। দারিদ্র্যের কাছে তার মেধাবী হার মেনেছে। প্রতিদিন তার বাবা সকালে চলে যায় এবং সে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং দুপুরে পর থেকে রাত পর্যন্ত সে দোকানে থেকে যায়। এর মধ্য দিয়ে তা লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। তার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে লেখাপড়া করতে পারে না। এভাবে চলতে থাকে তাদের সংসার। রজনীতে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে এর কারণে সে অধিক কষ্ট পায় কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না তার বাবা মাকে। এমনকি এর মধ্যে তার বিয়েও ঠিক হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে তার লেখাপড়া টা পুরোটাই বন্ধ হয়ে গেল।
রজনীর বাবা রমজান চাচা যখন দোকানে বসতো ঠিক তখন প্রতিদিন একটা ছেলে তার দোকানে আসতে। ছেলেটা অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। এই ছেলেটা প্রত্যেকদিন তার দোকানে এসে এক প্যাকেট করে চানাচুর নিয়ে বাড়ি যেতো। বেশ কয়েকদিন ধরে এই ছেলেটা লক্ষ্য করছে তার দোকানে ওই রমজান চাচা আর বসে না। একজন মেয়ে দোকানে বসে থাকে। এভাবে বেশ কিছুদিন চলতে থাকে হঠাৎ করে একদিন সে জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা তোমার বাবা কি দোকানে বসে না? তখন রজনী বলে জি না আমার বাবা দোকানে বসে না। আমার বাবা রাজমিস্ত্রি কাজ করতে যায় আর আমি দোকানে বসে থাকি। ছেলেটির নাম ছিল মিরাজ। মিরাজ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমার মনে হয় তুমি এসএসসিতে এ প্লাস পেয়েছিলে না। তখন রজনী বলেছি আমার এসএসসি তে প্লাস ছিল। তখন সে বলে তুমি এত ভালো ছাত্রী অথচ তুমি পড়ালেখা বন্ধ করলে কেন? সে তার কথার কোন জবাব দেয় না। চুপচাপ বসে থাকে এবং মাঝেমধ্যে ছেলেটার দিকে তাকায়। ছেলেটা তাকে অনেকগুলো প্রশ্ন করে তার প্রশ্নের কোন উত্তর দেয় না। এরপরে সে প্রতিদিনের মতো একটি চানাচুর নিয়ে আবারো চলে যায়।
পরের দিন মিরাজ পুনরায় ওই দোকানে আসে এবং একটি চানাচুর হাতে নেই। মিরাজ ওয়েদার লক্ষ্য করে দেখে যখন সে তাকে টাকা দেয় ওই টাকাটা সে খাতায় লিখে রাখে এবং ওই লেখাটা সেই ইংরেজিতে লেখে। তার এই লেখা দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করে তোমার ইংরাজের প্রতি আগ্রহটা খুব বেশি। তখন সে মাথা নেড়ে তার জবাব দেয়। মিরাজ মেয়েটাকে বলে যদি আমি তোমার লেখাপড়া সব কিছু ব্যবস্থা করে দিই তুমি কি লেখাপড়া করবে। সে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং সে বলে আর সেটা করে কোন লাভ নেই কারণ একমাস পরে আমার বিয়ে হয়ে যাবে। এই কথা শোনার পরে মিরাজ মনটা খারাপ করে ফেলে। মিরাজ তার সাথে অনেকগুলো কথা বলে এবং পরে সেখান থেকে চলে যাই। রাত্রে পড়াশোনার করতে করতে তার কথা মনে পড়ে তখন সে ভাবে এত একটা মেধাবী ছাত্র তার লেখাপড়া হবে না যে করেই হোক কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে। এমনকি মিরাজ মনে মনে ভেবে নেয় যে রজনীর বাবার সাথে কালকে সকালে গিয়ে এসে দেখা করবে। এই ভাবনা নিয়ে এসে রাত্রে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল হল মিরাজ ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের ন্যায় ফ্রেশ হয়ে সে বেরিয়ে পড়ে। কলেজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে এসে রজনীর সাথে দেখা করে এবং তাকে বলে আমি তোমার বাবার সাথে একটু দেখা করবো। রজনী তাকে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং তার মায়ের সাথে কথা বলে এবং পরে তার বাবার সাথে কথা বলে।
মিরাজ যখন তার বাবার সাথে কথা বলতে শুরু করে তখন মিরাজ বলে চাচা আমি একজন ছাত্র। আমি অনলাইনে কিছু কাজ করে থাকি। সেখান থেকে যা আয় করি তাতে আমার লেখাপড়া চলে যায়। আপনার মেয়ে অনেক ট্যালেন্ট। তার লেখাপড়ার প্রতি খুবই আগ্রহ। দয়া করে আপনি তাকে লেখাপড়া করান। আর এটা করার জন্য সর্বোচ্চ সাহায্য আমি করবো। আমি তাকে অনলাইনের কাজ শেখাব এবং সেখান থেকে সে বেশ কিছু টাকা ইনকাম করতে পারবে এবং সেই টাকা দিয়ে তা নিজের লেখাপড়া খরচও পরিবারের জন্য কিছু টাকা দিতে পারবে। এসব কথা শোনার পরে খুব সহজে রজনীর বাবা রাজি হয়ে যায়। এবং তাকে পুনরায় লেখাপড়া করাতে রাজি হয়ে যায়। এখানে মিরাজের উদ্যোগে রজন যদি এই উদ্যোগে সম্মতি না দিত তাহলে কখনোই রজনী লেখাপড়া করবে এই স্বপ্ন সে দেখতে পারত না। বর্তমানে এমন মেয়ের সংখ্যা অনেক রয়েছে যারা বাবা মায়ের অভাবের কারণে নিজের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু তারা যদি একটু নিজের মেধা কে খাটিয়ে কিছু বাড়তি ইনকামের মধ্য দিয়ে এবং তাদের বাবা মায়ের সাথে ভালোভাবে কথা বলে তাহলে কিছু স্বপ্ন বেঁচে থাকে। কিন্তু এর জন্য তাদের সাথে কথা বলতে হবে নিস্তব্ধতা থাকলে কখনোই তা সম্ভব নয়। নিজের মনের কথাগুলো নিজের ইচ্ছাগুলো বাবা মাকে জানাতে হবে তাহলে অনেক সময় নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করা সম্ভব হয়ে থাকে।
ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশায় নিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
👨🦰আমার নিজের পরিচয়👨🦰
আমি আবুল বাশার খায়রুল আলম তুহিন। আমার জন্ম ১১ এপ্রিল ১৯৯৫ সালে। আমার বাসা মেহেরপুর জেলা,গাংনী থানা, জুগীর গোফা গ্রাম। আমি বিবাহিত। বর্তমানে আমার একটা পুত্র সন্তান আছে। আমি গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি রাজশাহী নিউ গভমেন্ট ডিগ্রী কলেজ থেকে। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি বাংলা ব্লগে কাজ করতে অনেক ভালোবাসি। এই ব্লগে কাজ করার মাধ্যমে আলাদা প্রশান্তি পায়। আমি ছবি আঁকতে,গান গাইতে,কবিতা লিখতে অনেক পছন্দ করি। এছাড়া আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করি। আর আমি স্টিমেটে জয়েন করেছি (২৭ - ০৬ - ২০২২) সালে। সংক্ষিপ্ত আকারে আমার নিজের পরিচয় আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য শুভকামনা রইলো।
(১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য )
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। সত্যি ভাই নিরবতা সফলতার পথে বড় বাঁধা। আসলে সবাই বাবা-মার অর্থের অবস্থা দেখে বলার সাহস পায় না। তেমনি রজনেও পায়নি বলার মতো কোন সুযোগ। যাইহোক অবশেষে রজনী মিরাজের পাল্লায় পড়ে পড়ালেখার সুযোগ পেল। সত্যি রজনীর মতো এমন হাজারো রজনী আমাদের সমাজে রয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট মাঝে মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্য করেছেন।
https://twitter.com/ABashar45/status/1721496965115166975?t=FpJ8UuKzPvkFlm0rPQuMTQ&s=19