"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২০ // আমার জীবনে প্রথম প্রেমের অনুভূতি//
আসসালামু আলাইকুম
হ্যালো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সৃষ্টি কর্তার অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আমি @tuhin002.আমি মেহেরপুর থেকে লিখছি।
সত্যি বলতে কখনো ভাবতে পারি নাই, যে লম্বা পথ আমি পাড়ি দিয়ে এসেছি,সেই পথে ঘটে যাওয়া সৃতি গুলো পুনরায় কোথাও আমি শোয়ার করবো। যায় হোক ধন্যবাদ জানাই @rme দাদা কে। যিনার কারণে মনে পড়ে গেল "একযুগ প্রেমের " সেই সৃতি গুলো। যখন আমি সম্পর্কে জড়ায় তখন আমার মনের মধ্যে আবেগ ছাড়া কিছুই ছিল না।বাস্তবতা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। তবে ঐ সময় প্রেমের অনুভূতিই ছিল অন্য রকম।তাই এখন আমি শেয়ার করতে যাচ্ছি আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি -
আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি।ঐ সময় একটা মেয়ে আমাকে খুব পছন্দ করেতো। দেখতে ফর্শা ছিলো এবং খুবই সুন্দরী ছিল। কিন্তুু আমার মন চাইতো অন্য একজন কে।তার নাম ছিল অবনী।আমরা একই ক্লাসে পড়তাম।অবশ্য সে ছিল শ্যামলা।তার কথা চলাচল প্রতিটা অঙ্গ ভঙ্গি ছিল চিত্র নায়িকা শাবনুরের মত।তার এই সব বিষয় গুলো আমার ভালো লাগতো। আর এই ভালো লাগা থেকে তার প্রতি দুর্বলতা কাজ করতে থেকে। এভাবেই বছর প্রায় শেষের দিকে। দু-জনাই একই ম্যাডামের কাছে পড়তাম।একদিন পড়তে গেছি হঠাৎ বৃষ্টি, কিছুক্ষণ পরে থেমেও গেল। ম্যাডামের বাড়ির কাছে একটা পার্ক আছে। ঐদিন ও আর একটা বান্ধবী ঐ পার্কের ভিতরে গেল, পিছনে আমিও গেলাম। ওরা দাঁড়িয়ে ছিলো, আমি ভাবলাম আজ বলে ফেলি অবনী আমি তোমাকে ভালোবাসি।অবশেষে বললাম কিন্তুু রাজি হলো না। ঠাস করে বাম হাত দিয়ে চড়।ও তো হতবাক।ও বললো আমাকে মারলে,মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া লাগল। এবার বিপরীত গালে একটা চুমা দিলাম ওতো আরো অবাক। যায় হোক চলে আসলাম।
তার পরের দিন একটা চিঠি লিখলাম।চিঠিটা একটা বান্ধবীর মধ্যেমে দিলাম। কিছু দিন পরে তার উত্তর আসলো। চিঠির এক অংশে লেখা ছিল,আমি তোমাকে ভালোবাসি সেটা কি ঢোল পিটিয়ে বলতে হবে। এই কথা শোনা মাত্র মনে হলো আমার বুকে সাগরের ঢেউ খেলছে। তখন মনে হয়েছে আমার মতো এতো সুখি আর কেউ নেই। যা দেখি সব কিছু রঙিন মনে হয়। আর সেই থেকে শুরু পথ চলা। সব থেকে বেশি ভালো লাগতো যখন তার দেওয়া চিঠি পেতাম। একবার পড়ে মন ভরতো না, তাই বারবার করে চিঠি পড়তাম।যতবার পড়তাম ততই বেশি ভালো লাগতো। সত্যি বলতে ঐ অনুভূতি লিখে বা বলে বোঝানো যাবে না।একই সময় স্কুলে আসা একই স্যারের কাছে পড়া।যা করতাম একসাথে।এভাবেই হাসি খুশিতেই কেটে গেল তিনটি বছর। এখন আমরা নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সব ঠিক ছিল হঠাৎ নতুন একটা মেয়ে আমাদের সাথে ভর্তি হলো। একটু বলে রাখি আমাদের ভালোবাসার কথা সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মন্ডলি সবাই জানতো।আর এর মধ্যে তিন জন মেয়ে আমাকে প্রপোজ করে।অবনী জানতে পারে কিন্তুু কিছু বলে না।কিন্তুু নতুন মেয়েটি যখন আসলো এবং কিছু দিন পরে আমাকে প্রপোজ করলো। এবার বাঁচার উপায় নেই। অবনী ততক্ষণে রেগেমেগে আগুন। এতদিন আমাকে হারানোর ভয় ছিল না,কিন্তুু ঐ মেয়ে ছিল আমাদের স্কুলের শ্রেষ্ট সুন্দরী। আমি অবনীকে বোঝাই।যাইহোক সে এতটুকু জানে এই তুহিন তাকে ছাড়া কিছু বোঝাে না।
তখন খুব বৃষ্টি হতো। নয়টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত স্কুলে তারপর ও বিকেলে দেখা করতে যেতাম।ওদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা ছিল মাটির। বৃষ্টি হলে এক হাঁটু কাদা হতো।তাতে কি প্রেম বাঁধা মানে।হঠাৎ স্কুল ছুটি হয়ে গেল।এক মুহূর্তের জন্য না দেখে থাকতে পারতাম না।তাই কাদার মধ্যেও দিনে দশবার করে যেতাম।কাঁদায় বেশি হাটা হাটি করে পায়ে ঘাঁ হয়ে গিয়েছিল।তাতে কি পায়ে পলিথিন কাগজ পরে দেখা করতে যেতাম। একটা মজার ব্যাপার হলো অবনী আমাকে প্রতিবারের ন্যায় একদিন আমাকে একটি চিঠি দিল।চিঠির মধ্যে লেখা ছিল আই লাভ ইউ।ব্যাপারটা স্বাভাবিক মনে হলেও আই লাভ ইউ কথাটা লেখা ছিল রক্ত দিয়ে। এখন সে রক্ত দিয়ে লিখেছে, আমি যদি না লিখি তাহলে কেমন হয়। আবার ঐ রক্ত নাকে শুকে দেখছি মানুষের না অন্য জীবের। যায় হোক সে যখন রক্ত দিয়ে লিখেছে আমাকেও লিখতে হবে কিন্তুু রক্ত পাবো কোথায়, অনেক চেষ্টা করে হাত কাটতে পারলাম না।ভয়ে হাত ঘেমে যায়। তখন সময়টা ছিল গরম কাল মশা লাগছিল খুব। তখন একটা বুদ্ধি বের করলাম।মশা যখন গায়ে বসে, তখন তাকে রক্ত খেতে দেয়। যখন দেখি রক্ত খেয়ে নড়তে পারছে না তখন তাকে ধরে পেছনের দিকটা কেটে নি।এভাবেই আমি আই লাভ ইউ লিখতে সক্ষম হয়।জীবন কত মধুময় হয় প্রেমে না পড়লে বুঝতে পারতাম না। অনাবিল আনন্দের সাথে কাটতে থাকে আমাদের দিন গুলো।
এখন আমরা দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। কিছু দিন পরে টেস্ট পরিক্ষা দিবো আর এর মাঝে ঘটে যায় একটা ঘটনা। রাতে দেখা করতে যায় আর দেখে ফেলে ওর বাবা।ধরে ফেলে আমাদের দু'জনেই তার বাবার হতে মা-র খেলাম।যদি মা-র খেয়ে এখনই শেষ হতো তাহলে কি কথা থাকে, কিন্তুু না ওকে আর পরিক্ষা দিতে দেবে না,বিয়ে দিয়ে দেবে। যাই হোক বাড়িতে হয়তো সবাই বলে কয়ে পরিক্ষা দিতে দেয়।কারণ আমি আর অবনী ক্লাসে প্রথম ও দ্বিতীয় ছিলাম ওয়ান থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। প্রায় দেড় মাস দেখা নেই। যেখানে এক মুহূর্তের জন্য একে অপরকে না দেখে থাকতে পারতাম না। তো পরিক্ষা চলে আসলো সকালে পরিক্ষা দিতে গেলাম। সবাই আছে ও নেই। আসার কথাও নেই। রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি হটাৎ দেখি ও আসছে। তখন ঐ সময় আমার মনের অনুভূতি বলে বোঝাতে পারবো না। ও পৌঁছাতেই মেয়েদের কমন রুমে ঢুকে যায়। আমি গেলাম দেখি অনেক মেয়েরা ওর সাথে কথা বলছে। স্কুল ও গ্রামের সবাই বিষয় গুলো জানতো।ঘরে ঢুকতে ও দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।রুমের ভিতরে বসে থাকা মেয়েরা সবাই দেখছে।আর ওদের প্রত্যেকের চোখে পানি। আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না।কিছুক্ষণ পরে আমাকে বলে যে,আমার বিয়ে দিয়ে দেবে তুমি কিছু একটা কর।ঐ সময় কি করবো আর কি বা জানি। ও বলে আমাকে বিয়ে কর।আমি বন্ধু বান্ধবী কে দিয়ে অনেক বোঝায়।কিন্তুু কে শোনে কার কথা।পরে আমি বললাম ঠিক আছে তুমি যা চাও তাই হবে। সে তো মহা খুশি। পরিক্ষা শেষ হলো। আমি ওকে নকিয়া ফোনসেট দেয়।তারপর থেকে ফোনে কথা হয়।
হঠ্যাৎ একদিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় পালিয়ে যাব।ও তার নানির বাড়িতে আসে, আর ঠিক ঐ রাতে আমরা পালিয়ে যায়। রাত তখন দুইটা বাজে।গ্রামের রাস্তা তখন চোর-ডাকাতের খুব ভয় ছিল। আমরা একে অপরের হাত ধরে হেটে চলেছি।প্রায় কুড়ি কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছি হেটে, রাত ভোর পাচটা ফজরের আজান হচ্ছে। রাস্তায় আসার সময় আমাদের গ্রামের একজন দেখে ফেলে। ঐদিন বিকেলে অবনীর চাচা ভাইদের হাতে ধরা পড়ি।অনেক মারও খেতে হয়। দুজনার পরিবার এক হয় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া জন্য। ওর বাবা ছিলেন মেম্বার।দুই পরিবার থেকে কেউ মেনে নিল না।এরপর তিন মাস কেটে গেল কোন দেখা নেই কথা নেই। এসএসসি পরীক্ষ চলে আসলো। পরিক্ষা দিতে গিয়ে দেখা হয় দুর থেকে কথা হয় না।
এভাবেই একে একে পরিক্ষা শেষ হলো। একমাস পরে রেজাল্ট বের হলো।দুজনেই পাশ করি অনেক ভালো রেজাল্টও করি। তবে আমার খালাতো বোন ফেল করে। আমার দুই বন্ধ সাথে করে সন্ধ্যাার সময় দেখা করতে যায়। ওদের বাড়ি ছিল অবনীদের বাড়ি থেকে একটু দুরে। সবকিছু ঠিক ছিল কিন্তুু বাড়ি আসার সময় অবনীর ভাই চাচারা আমাকে মারার জন্য লুকিয়ে আছে তা আমার জানা নেই। তাদের ইচ্ছে ছিল তাদের মেয়ের জীবন থেকে আমাকে চিরতরে সরিয়ে দিবে।যায় হোক রাখে আল্লাহ মারে কে,কোন রকম জীবন নিয়ে বাড়িতে আসি।আমার তখন কোন হুঁশ ছিল না। পরে দেখলাম পায়ের একটা আঙ্গুল ভেঙে গেছে। পরে শুনতে পায় ওর বাবার হাত ভেঙে গেছে। ঐ রাতে আমাকে মারতে গিয়ে হাত লাগে ইটের দেয়ালের সাথে।শুনে একটু ভালো লাগলো। এরপর আমার পা বেন্ডেজ করে বসে থাকা ছাড়া উপায় নাই।
একটা ডাইরি লিখতাম সারা দিন কি করছি কোথায় ভর্তি হবো এক কথাই সারা দিন যা করতাম তাই লিখে রাখতাম।একদিন সুযোগ হয় ডাইরিটা দেওয়ার। ওর বাড়ির কাছে একটা বোবা মেয়ে ছিল আমি তার ইঙ্গিত গুলো বুঝতে পারতাম। ওর মাধ্যমে ডাইরিটা পাঠায়।সব কিছু একে অপরে জানতে পারি। আমি রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজ ভর্তি হয়।ও ঢাকায় শাহিদ আনোয়ার গার্স কলেজ। প্রায় ছয়টা মাস কেটে গেছে দেখা কথা কোনটাই হয় না।হঠাৎ অচেনা নাম্বারে ফোন, মনের ভেতর কেমন করে উঠলো। ফোন ধরে হেলো করি কথা বলে না কিছুক্ষন পরে কেঁদে উঠে। তখন বোঝার কিছু বাকি থাকে না। অনেক কথা হয়।তারপর থেকে একটু কম বেশি কথা হয়।কারণ যে ফোনে কথা বলতাম ঐ ফোনটা ছিল ওর বান্ধবির।একমাস পরে দেখা করতে যায় ঢাকাতে।রাজশাহী হতে ঢাকায় যেতো ধুমকেতু নামে একটা ট্রেন।আমার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়তো।আমি ওর কাছে যায়। তার পরে আবারও নয় মাস পরে দুজনা সামনে আসি।একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি। এতদিন আমার বুকে যে ভাটা পড়েছিল সেই বুকে যেন আজ জোয়ার এসেছে। মনে হয়েছিল মরুভূমির বুকে এক ফোটা জল। অবনীর ভালোবাসা আমার জীবনে এক অন্য রকম অনুভূতি। সেই থেকে শুরু নতুন করে পথ চলা।
আপনার গল্পের মধ্যে মশার রক্ত দিয়ে চিঠি লেখার ঘটনা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। আমিও একবার চিন্তা করছিলাম এই কাজ করার জন্য, যদিও এমন কাজ করা হয় নাই।
পুরনো ঘটনা গুলো আবার নতুন করে চোখের সামনে ভেসে উঠলো। যদিও একই ক্লাসে পড়তাম তখন তারপরেও পঞ্চম শ্রেণীতে আপনারা দুজনে যখন গভীর প্রেমে মত্ত। আমার তখন ছেলেমিপনায় কাটেনি। রাত্রি বেলায় দেখা করতে গিয়ে বিপত্তি। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা এগুলো পরেরদিন স্কুলে গিয়ে শুনতে পেতাম। এত্ত সাহসী চিন্তাভাবনা কই থেকে আসে আমরা তখন ভেবেই দিশেহারা। যা ছিল আমাদের কাছে চিন্তা করাও মুষকিল আপনারা তা বাস্তবে করে ফেলছিলেন।
আমরা তো এসব কথা ভুলেই গেছিলাম কিন্তু যার জীবনের রাত দিন এক হয়েছিল প্রেমে সে কি করে ভুলে যাবে সে দিনের কথা। নতুন করে পড়ে বেশ ভালো লাগলো পুরনো স্মৃতি গুলো। আপনার অবনী ভাল থাকুক। বেচে থাকুক মধুর স্মৃতি নিয়ে আপনার প্রথম প্রেম।
ধন্যবাদ ভাইয়া এত্ত সুন্দর করে প্রথম প্রেমের স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আসলে দূরে থাকলে ভালোবাসার অন্য রকমের একটি অনুভূতি বলতে পারা যায়। আপনারা দুজন থাকতেন দুটি শহরে যার কারণে আপনারা সবসময়ই একে অন্যকে প্রচুর পরিমাণে মিস করতেন। এটা আপনি একদম সত্য কথা বলেছেন অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসলেই মনের মধ্যে কেমন একটা করে ওঠে।
আপনার সম্পূর্ণ প্রেম কাহিনী টি আমি পড়লাম । যদিও কাহিনীটি আমি আগে অনেকটাই জানতাম তারপরও পড়ার মাধ্যমে সকল বিষয়গুলো আরো সুন্দরভাবে বুঝতে পারলাম।
কি সাংঘাতিক, মশার রক্ত দিয়ে চিঠি🤪।ভালো ছিলো গল্পটা।ধন্যবাদ
ভাই আপনার এত সুন্দর প্রেমের ইতিহাস বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধশালী করেছে। লাইলি মজনুর পরে আপনাদের স্থান। আপনি চাইলে পুনরায় দ্বিতীয় প্রেমে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
ভাইজান আপনার প্রেমের কাহিনীর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গুলো আপনি এড়িয়ে গেছেন। কারণ আপনার প্রেমিকা আমার কাছের একজন বান্ধবী ছিল। আর আমি নিয়মিতভাবে আপনার প্রেমিকার জন্য কাঁচা এবং পাকা তেঁতুল সরবরাহ করতাম।
ওরে ভাই তোর দেখি এটাও মনে আছে।