এরপর চলে আসি ২০১৭ সালের দিকে। তখন বাংলাদেশে মেয়েদের হয়রানির একটা বড় ধাক্কা চলছে। একের পর এক ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর মেরে ফেলার ঘটনা নিউজ হচ্ছে। আমার তখন ভার্সিটি লাইফ শেষের পথে। প্রতি সপ্তাহেই নবীনগর টু ঢাকা যাতায়াত করি। মায়ের চিন্তা, আমারো হ্যারাস হওয়ার ভয়... সামনে পড়াশুনা শেষে চাকরি লাইফে ঢুকবো, কিভাবে কি চিন্তা। এতসব নিউজ দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে প্রতিবাদ করি আমার অবস্থান থেকে। আমি ২০১৪ সাল থেকেই Lighter Youth Foundation নামে একটি ভলান্টারি গ্রুপে কাজ করতাম। তাদের সাথেই শাহবাগে ব্যানার হাতে প্রতিবাদে সামিল হই -
তখন পরিস্থিতি এমন ছিলো যে মেয়ে হিসেবে চলাচল করতে মনে মনে খুব ভয় লাগতো। এর থেকেই সিদ্ধান্ত নেই যে আমি সেল্ফ ডিফেন্স এর কোর্স করবো। একজন অভিজ্ঞ 'সেনসাই' এর কাছ থেকে কারাতের একটি বিশেষ ফর্ম " কিয়োকুশিন" এর শিক্ষা লাভ করি সাথে "সেল্ফ ডিফেন্স" এর বিশেষ কিছু টেকনিক। হয়তো আপনাদের মনে প্রশ্ন আসছে, এত কথা এই প্রতিযোগিতার পোষ্টে কেন লিখছি? এত কথা আসছে, কারণ আমার প্রথম অনলাইন ইনকাম এই বিশেষ কোর্সের মাধ্যমেই। সেল্ফ ডিফেন্স এবং কিয়োকুশিন আমি মূলত শিখেছিলাম আমার নিজের প্রয়োজনের তাগিদ থেকে৷ যখন আমার মধ্যে কনফিডেন্স চলে এসেছে, তখন আমি আমার আশেপাশের মেয়েদেরকেও উৎসাহিত করতে থাকি, তারাও যেন ভয় পেয়ে না থেকে নিজেদেত সেভ করার উপায় শিখে। তাহলে কুকড়ে জীবন যাপন করতে হবে না, বরং শয়তান গুলোকেও একটা শিক্ষা দেওয়া যাবে যেন ভবিষ্যতেও অন্য কারো সাথে খারাপ কিছু করার চিন্তাও না আসে৷
এমন সময়
Lighter Youth Foundation অর্গানাইজেশন টি তাদের সোশাল রেস্পন্সিবিলিটির থেকে ঠিক করলো তারা একটি অনলাইন সেশন নিবে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য। তিন দিন ব্যাপী সেই সেশনে বেশ কয়েকটি ধাপ ছিলো যেমন:- মেয়েদের সেলফ ডিফেন্স টেকনিক, পটেনশিয়াল রেপিস্ট কিভাবে আইডেন্টিফাই করা যায়, ধর্ষন প্রতিরোধে ফ্যামিলিগত দিক থেকে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, ধর্ষণের মতোন কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে কী কী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, কাদের থেকে আইনি সহায়তা পাওয়া যাবে, সাথে সাথে কী কী করা প্রয়োজন ইত্যাদি। আমি খুঁজে খুঁজে সেই ট্রেইনিং সেশনের একদিনের একটি সেশনের টপিক আপনাদের সাথে শেয়ার করছি আমার ভালোলাগার জায়গা থেকে।
[সোর্স: ফেসবুক গ্রুপ থেকে নেয়া স্ক্রিনশট]
তো এই আয়োজনে আমার পার্ট ছিলো আমি যেসব সেল্ফ ডিফেন্স টেকনিক শিখেছি, তা অনলাইনে ওই সেশনের মেয়েদের শিখাবো। তিন দিন ব্যাপী সেই প্রোগ্রামে আমি আমার জায়গা থেকে যতটুকু পেরেছি, শিখিয়েছি প্রায় ৪০ জন মেয়েদের। যেহেতু আমি নিজেও Lighter Youth Foundation এর একজন নিয়মিত মেম্বার ছিলাম, আমি এই কাজটি ভলান্টিয়ারী কাজ হিসেবেই করেছি৷ কিন্তু লাস্ট সেশনের পরে এক্সিকিউটিভ টীম থেকে আমার বিকাশ নাম্বারে কিছু সম্মানী হিসেবে পাঠানোর ডিসিশন হয়, যা আমি আসলে আগে জানতাম না। এবং আমার মনে আছে, যখন আমার বিকাশ নাম্বারে ২৫০০ টাকা আসে, আমি নোটিফিকেশন দেখে কিছুটা অবাক হই যে কোথা থেকে আসলো টাকা, কেউ কি ভুলে পাঠিয়ে দিয়েছে কি না! তার কিছুক্ষণ পরেই আমাকে এক্সিকিউটিভ টীম থেকে একজন কল দিয়ে জানায় যে আমার সেশনের জন্য একটি সম্মানী তারা আমার বিকাশ একাউন্টে পাঠিয়েছে, আমি সেটা পেয়েছি কিনা। তাদেরকে কনফার্ম করি যে পেয়েছি। এটা আসলে এক্সপেক্টেশনের বাইরে ছিলো। জিরো এক্সপেক্টেশনে যখন এতগুলো টাকা হাতে আসে, (যা তখন আমার পুরো একমাস চলার সমপরিমাণ অর্থ ছিলো), খুশী কী পরিমাণ হয়েছিলাম তা নিশ্চয়ই আপনারা অনুধাবন করতে পারছেন। এর থেকে কিছু টাকা দিয়ে আমি আমার উইশলিস্টে থাকা কিছু গল্পের বই কিনি এবং বাকি কিছু টাকা দিয়ে বাসায় সবার জন্য কিছু নাস্তা কিনি (ফুসকা এবং আইস্ক্রিম 😋😋) এরপরেও কিছু টাকা জমিয়ে রাখি পরবর্তীতে কাজে লাগাবো বলে। তো যেহেতু আমি সেশনটা অনলাইনেই করিয়েছি এবং তার থেকেই এই ইনকাম, সুতরাং এটিই আমার প্রথম এবং এখন পর্যন্ত আমার শেষ অনলাইন ইনকাম।
এরপর অনলাইন এ কাজ শুরু করলাম স্টিমিটে- আমার বাংলা ব্লগে। যেহেতু এখনো খুব বেশি দিনের অভিজ্ঞতা না, এখান থেকে এখনো আমি কোন এমাউন্ট
ক্যাশে কনভার্ট করে উইথড্র করি নি। এখানে উপার্জিত অর্থ আমি একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে করছি। সেটি যদি সফল হয়, অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো একদিন। তবে আজ এপর্যন্তই থাকলো।
পরিশেষে আমি আমার বাংলা ব্লগ কে বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই এমন একটি বিষয় কে এবারের প্রতিযোগিতার বিষয় হিসেবে সিলেক্ট করার জন্য। যখন ঘোষণা আসে, আমি ভেবেছিলাম এবার তো কমন পড়লো না বিষয়টা, তাহলে বোধ হয় এবার পার্টিসিপেট করা হবে না। পরে মনে পড়েছে, আরে! আমারো তো অনলাইন ইনকামের অভিজ্ঞতা আছে! হোক সেটা অন্যভাবে, তবুও অনলাইনেই তো। এবং এই পোস্ট লিখতে লিখতে পুরোনো অনেক স্মৃতি গুলোও আবারও নতুন করে মনের কোণে উঁকি দিচ্ছিলো।
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼
VOTE @bangla.witness as witness OR @rme as your proxy
আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।
Posted using SteemPro Mobile
এককথায় অসাধারণ ছিল আপনার জার্নি আপু। আসলেই আমাদের দেশে ঐ সময় তো বটেই এখনো মেয়েরা নিরাপদ না। কিন্তু আপনি সাহস করে নিজের সুরক্ষার জন্য এগিয়ে গেছেন। এটা অনেক নারীর জন্য অনুপ্রেরণা আপু। এবং আপনার স্টিমিট জার্নি ভালো হোক সেই কামনা করি। ভালো লাগল আপনার অনলাইন ইনকামের ঘটনা টা জেনে।।
অসংখ্য ধন্যবাদ ইমোন ভাই এত সুন্দর একটি গঠনমূলক কমেন্ট করে পাশে থাকার জন্য। আমি সব সময়ই মনে করি, সেল্ফ ডিফেন্স টা প্রত্যেকের জন্যই ব্যাসিক একটা জিনিস। যেটা প্রত্যেকের ই জানা প্রয়োজন।
আরে বাহ আপনার যে সেলডিফেন্সেও অভিজ্ঞতা আছে এটা তো জানা ছিল না। আপনি আসলেই মাল্টিট্যালেন্টেড। আপনার প্রথম অনলাইনের অভিজ্ঞতা পড়ে ভাল লাগল।ধন্যবাদ অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করার জন্য।
আমি যখন যা পারি, সুযোগ পাই শিখে ফেলতে ইচ্ছে হয়.... সব কিছুর মাঝেই শিখার ব্যাপার আছে। তুমি সংস্কৃত টা শিখছো, এটা জানার পর থেকে সংস্কৃত টাও শিখতে ইচ্ছে করছে... সামনের সেশনে ভর্তি হবো কি না বলো তো....
এই গুণ তো আমারো।যখন যা পাও শিখে নাও। হতে পারেন। তাইলে নেক্সট সেশন শুরু হলে জানাব নি৷
অবশ্যই জানায়ো...
চমৎকার ছিল আপু আপনার লেখাগুলো। খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছিলাম। আসলে আপনার সংগ্রাম টা এত সহজ ছিল না।তঁখুব যুদ্ধ করে আপনি একটি ভাল পর্যায়ে চলে আসলেন।শেষমেষ আপনি অনেক সুন্দর একটি সম্মানি ভাতা পেলেন। তার জন্য আপনার পুরো মাসের একটি টাকা হয়ে গেল। আসলে এই প্রথম ইনকামটা অনেক ভালোলাগার একটি মুহূর্ত অনলাইন থেকে। খুবই ভালো লেগেছে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করার জন্য।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনার এত সুন্দর কমেন্ট এর জন্য এবং আপনার শুভকামনার জন্য। আসলেই প্রথম ইনকাম বা প্রথম যে কোন ভালো কিছুরই নিজস্ব ভালোলাগা রয়েছে।
পোস্টটি বেশ মনোযোগ সহকারে পড়লাম আপু। আপনি সেল্ফ ডিফেন্স এর বিশেষ কিছু টেকনিক আয়ত্ত করেছেন,এটা জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। আমি মনে করি শুধু মেয়ে নয়, প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে এটা জরুরী। অনলাইনের মাধ্যমে আপনার প্রথম ইনকামের কথা জেনে সত্যিই ভালো লেগেছে। যাইহোক এতো সুন্দর অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।
প্রথম ইনকামের অন্য রকমের একটি অনুভূতি যা কখনো বলে শেষ করা যাবে না।ইনকাম যেমনই হোক না কেনো আনন্দ অনেক বেশি হয়।তোমার প্রথম ইনকামের অভিজ্ঞতা গুলো পড়ে খুবই ভালো লাগলো।সুন্দর করে গুছিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ মনা।অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
সেটাই দিদিভাই। টাকা উপার্জন করার অনুভূতি আনন্দ একেবারেই অন্যরকম, তা যদি হয় প্রথম ইনকামের তাহলে তো কথাই নেই। অবশ্য এর আগেই আমি টিউশনি করে নিজের হাত খরচ চালাতাম। তবে, যে কোন প্রথম কিছুরই আলাদা আলাদা ভালো লাগা আছে। তোমাকে ধন্যবাদ দিদিভাই এত সুন্দর একটি কমেন্ট করার জন্য।