একটি এম্বুলেন্স এর আত্মকাহিনী

in আমার বাংলা ব্লগlast year

হ্যাল্লো আমার বাংলা ব্লগবাসী। আশা করি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। আমি @tithyrani আপনাদের সাথে নিজের একটি লেখা নিয়ে এলাম। এধরণের লেখাতে আমি নতুন। সরাসরি মূল লেখায় চলে যাই...

Image source: www.pixabay.com

কাকভেজা বৃষ্টির মধ্যে আমি প্রচন্ড আওয়াজ করতে করতে রাস্তায় ছুটে চলছি। তবে তুমুল বজ্রপাত আর বৃষ্টির শব্দ আমার আওয়াজকে স্তমিত করে দিচ্ছে। আবার এই বৃষ্টির কারণে রাস্তর ধারে জল জমার কারণে আজ অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশিই ট্রাফিক জ্যাম। মরার উপর খাড়ার ঘা এর মতন, আমি টের পাচ্ছি আমার ইঞ্জিনে একটু একটু করে জল জমছে। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টায় ছুটে চলছি। আমি জানি, আমার উপর নির্ভর করছে একটা পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম। স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা গর্ভবতী মা' টি প্রসব যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। সাথে থাকা বেচারা স্বামীও খুব ঘাবড়ে আছে। তার ঘাবড়ে যাওয়া মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে তারা প্রথমবারের মতো মা-বাবা হবার আশায় আছেন।

অবশ্য অর্ধযুগ ধরে কাজ করছি তো, এখন অনেক কিছু এমনিই বুঝতে পারি আমি। যেমন আমি বুঝতে পারি, আমার পথচলা শুরু হলে বেশির ভাগ সময়েই ভেতরের মানুষগুলোর মনে হয় সময় যেন খুবই আস্তে যাচ্ছে, তারা যেন অনন্তকাল ধরে ছুটে চলছে তাদের গন্তব্যের দিকে, অথচ পথ যেন ফুরোচ্ছে না। বা, কখনোওবা বাধ্য হয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে আমি যখন প্রচন্ত চিৎকার করতে করতে উল্টো রাস্তায় ছুটে চলি, আমাকে দেখে রাস্তার বেশিরভাগ মানুষ খুব বিরক্ত হয়। অবশ্য সেগুলো গায়ে মাখলে আমার চলবে না। আমার উদ্দেশ্য- স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা মানুষটাকে যত যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে পৌঁছে দেয়া। কে কি ভাবলো অতশত ভাবার সময় নেই আমার। ঠিক এই মানুষগুলোর পরিবার -পরিজনের কেউ যদি আমার স্ট্রেচারে শোয়া থাকে, তারা শুধুমাত্র সেইদিনই অনুধাবন করতে পারে, নিয়মের চেয়েও প্রয়োজনের গুরুত্ব বেশি, জীবন বাঁচানোর গুরুত্ব বেশি।

আমার ভেতরের কামড়াটায় কত রকমের যন্ত্রপাতি যেমন স্ট্রেচার, ডিফিব্রিলেটর, মেরুদণ্ডের বোর্ড, অক্সিজেন এবং অক্সিজেন মাস্ক, সার্ভিকাল (ঘাড়) কলার, স্প্লিন্ট, ব্যান্ডেজ এবং বিভিন্ন ওষুধ এবং শিরায় তরল আরো কত কি ।সবই হাসপাতালে পৌছানোর আগ পর্যন্ত রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য। কখনোবা শহরের ভেতরে কখনো বা এ শহর থেকে অনেক দূরে অন্য কোন শহরেও আমার রোগী নিয়ে যেতে হয়। কখনো কখনো দূর্ঘটনার শিকার মুমূর্ষু রোগীর গাঁ- মাথা বেঁয়ে ঝরঝর করে রক্ত পরতে থাকে। সেই রক্তে আমিও মাখামাখি হয়ে যাই।

তবে খুব বেশি খারাপ লাগে, যখন দেখি আমার চিৎকার শুনেও যখন কেউ আমার আগে যাওয়ার গুরুত্ব টা বুঝে না তখন। আমাকে আগে যেতে না দিয়ে বরং সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে কোন কোন গাড়ির ড্রাইভার। অনেকে তাচ্ছিল্যের সাথে বাকাঁচোখে তাকায়ে ভাবে আদৌ কোন রোগী আছে ভেতরে, নাকি কোনো ভিয়াইপির আত্মীয় ভেতরে বসে আছে কে জানে! এমনটা যে কক্ষনো হয় না, তাও না। মাঝে সাঝে ওমনও হয়।

তবে আমার সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে যখন কেউ আমার স্ট্রেচারে শুয়ে তার শেষ নিঃশ্বাস টা ত্যাগ করে। যম দেবতার সাথে রোগীর পক্ষ হয়ে আমিও প্রাণপণেই লড়ি প্রতিবার। যখন হেরে যাই, মনে হতে থাকে আমি আরেকটু আগে হাসপাতালে পৌছে দিতে পারলে যদি প্রাণটা বেচেঁ যেত! কে জানে! অবশ্য দীর্ঘ কর্মজীবনে এই ঘটনাও অহরহ ঘটে।

ভালো লাগার মতোন কিছু যে ঘটে না, তা অবশ্য নয়। যেমন, এমনও দেখেছি যে আমার চিৎকার শুনে পাশের বাসের কেউ বা রাস্তার কেউ প্রার্থনাও করছেন যেন যাকে নিয়ে ছুটে চলছি, তিনি যেন সুস্থ হয়ে উঠেন...

ছুটতে ছুটতে হাসপাতাল এসে পৌঁছালাম মাত্র। রোগীকে নামানো হয়েছে। যাক, আরেকটা মিশন সাকসেসফুলি কমপ্লিট। আপাতত রেস্ট, যতক্ষণ পর্যন্ত পরের কল না আসে....

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 last year 

একটি এম্বুলেন্স এর আত্মকাহিনী গল্প টা পড়ে মুহূর্তের মধ্যেই গায়ের লোম গুলো শিউরে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।এত্তো এত্তো সুন্দর করে এম্বুলেন্স এর কথা গুলো তুলে ধরেছো যা সত্যিই অসাধারণ হয়েছে।অনেক সুন্দর তোমার লেখনী। এভাবেই চালিয়ে যাও অনেক অনেক শুভকামনা রইলো তোমার জন্য।♥️♥️

 last year 

ধন্যবাদ দিদিভাই। আমি আসলে এ ধরনের ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং এ একদম নতুন। তবে সাহস করে লিখে ফেললাম। সবাই পছন্দ করলে এবং অনুপ্রেরণা দিলে সামনে আরো লেখার চেষ্টা করবো....

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.19
JST 0.034
BTC 88275.41
ETH 3281.06
USDT 1.00
SBD 3.00