গল্প: মেয়েটি কৃষ্ণচূড়া হতে চায়.... (শেষ পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগlast year


১.

-" অতশত বুঝি না, মা। তবে আমার কি মনে হয় জানো মা?? আমার তো মনে হয় জন্মের আগে আমাকে অপশন দিলে, আমি বোধ হয় মেয়ে মানুষ না হয়ে কৃষ্ণচূড়াই হতে চাইতাম... অথবা, আমার বান্ধবী পূজা, ওরা পূণর্জন্মে বিশ্বাস করে। আমি যদি পূণর্জন্মে বিশ্বাস করতাম, তবে পরবর্তী জন্মে আমি কৃষ্ণচূড়া হতে চাইতাম। তপ্ত গ্রীষ্মের দুপুর অথবা বর্ষার মেঘলা আকাশ, যে কোন সময়ে আমাকে দেখে কত মানুষ মুগ্ধ হতো। তাদের মনে আনন্দের কারণ হতাম। আবার ধরো আমার নিচ দিয়ে যারা হেটে যেতো, তারা কেউ কেউ মনে মনে ভাবতো- আহা! প্রকৃতি কী সুন্দর লাল গালিচার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। "- কথাগুলো একনাগাড়ে বলে গেলো তাথৈ

-"তুই যে এতসব চিন্তা করছিস, জানিস, আজকাল এসব দেখার কারোরই সময় নেই... সবাই যে যার যার মতোন ব্যস্ত। শুধু তুই একাই সব পড়াশুনা লাটে তুলে এসব ভাবিস বসে বসে সারাদিন। সারাদিন এসব না ভেবে পড়াশুনায় মন দে। ক্লাস, টিউশন গুলো মন দিয়ে কর। " রাগ করে বলেন তাথৈ এর মা।


২.
কয়েকদিন পর এক সোমবারের সকাল....

ঘরোয়া কিছু কেনাকাটার জন্য দোকানে গিয়েছিলেন মিসেস শাহানা বেগম। মাঝে এক পরিচিতের সাথে দেখা হয়ে যাওয়ায় কথা বার্তায় একটু দেরিই হয়ে গেছে। এদিকে তাথৈ এর স্কুল থেকে ফেরার সময় হয়ে গিয়েছে। ফিরতে ফিরতে মিসেস শাহানা বেগম দেখলেন রাস্তার পাশে একটা কন্সট্রাকশন বিল্ডিং এর পাশে অনেকগুলো মানুষের জটলা। কোনো এক স্কুল ছাত্রীর মাথায় নাকি কন্সট্রাকশন বিল্ডিং এর উপর থেকে ইট এসে পরেছে কতক্ষণ আগে! মেয়েটির মাথা ফেটে গিয়েছে, রাস্তায় টকটকে লাল রক্ত। লোকজন ধরাধরি করে মেয়েটিকে রিক্সায় তুলছে আশেপাশের হসপিটালে নিয়ে যাবে জন্য। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হুট করে শাহানা বেগমের চোখ আটকে গেলো মেয়েটির হাতঘড়িটার দিকে। ঠিক এই হাতঘড়িটাই তো তাথৈ এর গত জন্মদিনে ওর মামা গিফট দিয়েছিলো। শাহানা বেগম ছুট্টে গিয়ে দেখলেন রিক্সায় অপরিচিত লোকজন যাকে তুলেছে, সে আর কেউ নয়, তাথৈ......। রক্তভেজা তাথৈ এর অবস্থা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন শাহানা বেগম.........। তার জ্ঞান ফিরলো ২ দিন পর। ততক্ষণে পৃথিবীর বুক থেকে তাথৈ নামের পাখি উড়ে গেছে অজানায়। তাথৈ এর মাথায় খুব বাজে ভাবে ইটের আঘাত লেগেছিলো, তৎক্ষণাৎ রক্তক্ষরণ হয়েছে অনেক। হসপিটালে নিতে নিতে ডাক্তারদের চেষ্টা করারও আর তেমন কিছু ছিলো না।


মেয়েটিকে শেষ দেখার স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারে না শাহানা বেগম। বিড় বিড় করে সারাদিন একটা কথাই বলতে থাকেন -মেয়েটা আমার কৃষ্ণচূড়া হতে চাইতো..... মেয়েটা আমার কৃষ্ণচূড়া হতে চাইতো....... মেয়েটা আমার কৃষ্ণচূড়া হতে চাইতো......


হ্যাল্লো আমার বাংলা ব্লগবাসী। আজ আপনাদের সাথে নিজের লেখা একটি ছোটগল্প শেয়ার করতে হাজির হলাম। প্রথম পর্ব শেয়ার করিছিলাম আগের একটি পোষ্টে। আজ শেষ করলাম। আশা করছি আপনারা আপনাদের মতামত জানাবেন।

এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
@rme as your proxy
witness_vote.png

Posted using SteemPro Mobile


আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20211205_182705.jpg

আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



Sort:  
 last year 

এক কথায় অসাধারণ লেগেছে গল্পটা আমার কাছে। তাথৈ এর মৃত্যুটা সত্যিই ভীষণ করুন এবং তার মা কষ্টের তীব্রতায় পাথর হয়ে গেছে। যাইহোক সে সত্যিই হয়তো কৃষ্ণচূড়া হয়ে গেছে।
এধরনের গল্প আরো চাই।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

ধন্যবাদ ভাই, এভাবে উৎসাহিত করার জন্য।আসলে এটিই আমার লেখা প্রথম ছোট গল্প। আপনাদের উৎসাহ পেলে হয়তো সামনে আরো লিখবো।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

অনেক সুন্দর ছিলো গল্পটি।মেয়েটা হয় তো কৃষ্ণচুরা হয়ে গেছে। মৃতুর মুহুর্ত টা করুন ছিলো।অস্বাভাবিক মৃত্যু গুলো সত্যি অনেক কষ্টের হয়। সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 last year 

অস্বাভাবিক মৃত্যু গুলো আসলেই খুবই বেদনাদায়ক হয়। মেনে নেওয়া খুব কঠিন ই হয়। গল্পটি তোমার কাছেও ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

আপু আপনার শেয়ার করা গল্পটি আমার কাছে পরিবেশ ভালো লেগেছে। গল্পের কাহিনী বেশ সুন্দর ছিল। আসলে আপু পৃথিবীর বুক থেকে তাথৈ নামের পাখি উড়ে গেছে শেষ পর্যন্ত একটু খারাপ লেগেছিল। কিন্তু আশা করি পরপারে গিয়ে কৃষ্ণচূড়া হতে পারবে। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 last year 

আপু আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। তাতৈর মৃত্যুটা খুবই দুঃখজনক। এই ধানের ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। শাহানা বেগমের শেষ কথাটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। হয়তো মায়ের আশীর্বাদে পরপারে মেয়েটি কৃষ্ণচূড়া হয়ে জন্ম নিবে।

 last year 

জি ভাই। বিশেষ করে ইদানীং সময়ে এ ধরনের ঘটনা বেশি শোনা যায়। আগে এই ব্যাপার গুলো এতটা ছিলো না। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই গল্পটি লেখা

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

আপু আপনার গল্পের শেষ পর্বটি পড়ে সত্যিই ভীষণ কষ্ট পেয়েছি । মেয়েটি এভাবে পৃথিবীর বুক থেকে চলে যাবে সত্যিই চিন্তা করিনি। সত্যি মেয়েটি শেষে যেন কৃষ্ণচূড়ার মতো লাল টকটকে হয়ে রাস্তায় পড়ে রইল। বেশ ভালো লিখেছেন ধন্যবাদ।

 last year 

অনেক সুন্দর লিখেছেন দিদি আপনি গল্পটি। আগের পর্বগুলো না পড়ে মিস করে গেছি। তবে এই পর্বটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে। তাথৈ এর এর খুব খারাপ লাগলো দিদি। পরের জন্মে যেনো সে সত্যিই কৃষ্ণচূড়া হতে পারে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59378.58
ETH 2646.25
USDT 1.00
SBD 2.46