ওদের জন্য ভালোবাসা....
আজ ১ ৭ জুলাই, ২০২৩। রোজ সোমবার। ১লা শ্রাবণ, ১৪৩০।
গতকাল অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা অন্যরকম ছিলো। আমি আমার আগের একটি পোস্টে শেয়ার করেছিলাম যে আমি যে অফিসে চাকরি করি, সেটা মূলত হেড অফিস। আমাদের মূল ইউনিট বা ফ্যাক্টরি গাজিপুরে অবস্থিত।গতকাল আমাদের হেড অফিসের সবার একটি মিটিং এর জন্য ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার কথা ছিল। সে জন্য যথাসময়ে বাকিদের সাথে কো-অর্ডিনেট করে অফিসের গাড়িতে করেই ফ্যাক্টরিতে পৌছাই।
আজকের লেখা মূলত ফ্যাক্টরির এক সিনিয়র আপুকে নিয়ে। আমার খুব করে মনে আছে, আমি প্রথম যেদিন ফ্যাক্টরি গিয়েছি, খুব খুব অবাক হয়েছি। তার কারণ, একটা পাখি!! একজনের ডেস্কে একটা পাখি ছাড়া অবস্থায়। সে পাখি সেই আপুর ঘাড়ে চড়ছে, হাতে উঠছে অথচ আপু তার মতোন তার কাজ করে যাচ্ছেন।
সেই আপুর নাম লায়লা আপু। পরে কথা বলে জানলাম, আপুর পোষা পাখি, উনিও আপুর সাথে প্রতিদিন অফিস করেন 😎
লায়লা আপুর পশুপাখির প্রতি টান টা অন্যরকমের। অফিসের পরে বাকিটা সময় তার এইসব পশুপাখিদের নিয়েই কাটে বলা যায়। আপুর পোষা পাখি রয়েছে, রয়েছে বিড়াল ছানাও। তাদের সাথে আবার আপু কথাও বলেন! আবার নাকি রাগ-অভিমান পর্বও চলে আপুর সাথে তাদের।
গতকালকে যেমন লাঞ্চ করতে গিয়েছি ক্যান্টিনে। বলে রাখি, যেহেতু ফ্যাক্টরির এরিয়া বিশাল,সবার জন্য কমন ক্যান্টিন, তাই ক্যান্টিনটা এরিয়ার মাঝামাঝি। এই ক্যান্টিন আবার আমাদের বিল্ডিং থেকে বেশ একটু দূরে।৬-৭ মিনিট হাটা পথ। আমি আর লায়লা আপু পাশাপাশি বসেছি। খাওয়া শুরু করেছি কেবল, আপু বললো, তিথী, দেখো এই সিটে যেনো আবার কেউ বসে না পরে, আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।বলতে বলতে লায়লা আপু উঠে গেলো, আমি দেখলাম তার হাতের মুঠোয় ভাত। আমি তো অবাক! হাতের মুঠোয় ভাত নিয়ে আপু খাওয়া ছেড়ে কই যায়! লায়লা আপু ২ মিনিটের মাথায় ফেরত আসলেন। পরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে কোথায় গিয়েছিলেন খাওয়া ছেড়ে, কোনো ইমার্জেন্সি কিনা?
উনি উত্তরে বললেন, এই ক্যান্টিনের আসার আগে রাস্তায় একটা বিড়াল দেখেছেন, ওই বিড়ালটাকে তার ক্ষুধার্ত মনে হয়েছে, তাই সেই বিড়ালটাকে খাবার দিয়ে আসলেন।
খাওয়া শেষ এ যখন হাত ধুয়ে বের হয়েছি আমাদের ইউনিট এ ব্যাক করার জন্য, তখন দেখি হুট করে বিড়ালটা আপুর পায়ের কাছে এসে বসে পড়লো। আপুও সাথে সাথে ওখানে বসে বিড়ালটার সাথে কতক্ষন কথা বললো, আদর করে দিলো....
ব্যাপারটায় আমি অবাক হলেও আপু অবাক হয় নি। লায়লা আপু আমার অবাক হওয়াটা খেয়াল করে বললেন,- " আসলে কি, ওরা মানুষের মতোন কথা বলতে পারে না ঠিক ই, কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই ওরা কি বলতে চায়, সেটা বুঝে ফেলা যায়। ওরা কথা বলতে পারে না, তা অবশ্য একদিক থেকে ভালো। মানুষ তো কথা বলতে পারে, তাতে দেখো না, মানুষের ই বরং মুখে এক বলে অথচ মনে থাকে আরেক।"
ভেবে দেখলাম, আপু খুব একটা খারাপ কিছু বলেন নি। মুখে মধু অথচ অন্তরে বিষ এমন মানুষের তো অভাব নেই। তাদের থেকে এই প্রাণীগুলোই ভালো। নিরবে ভাব ভালোবাসা সবকিছু বুঝিয়ে দেয়...
অথচ অনেকে আছে, যারা এসব অবলা প্রাণীদের কারণ ছাড়াই অত্যাচার করে, মারে, দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমরা কি একবারও ভেবে দেখি, আসলেই কি এসব অবলা প্রাণীরা এমন ব্যবহার এর যোগ্য? মানুষের চায়ে অনেক ক্ষেত্রেই এরাই শ্রেষ্ঠ নয় কি?
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
বর্তমান সমাজে মানুষের চেয়ে অবুঝ প্রাণী গুলো হাজার গুণ ভালো।এক মুঠো ভাত দেওয়ায় কিছুক্ষণ পর বিড়াল টি তার পায়ের কাছে এসে বসলেন কিন্তু এটা যদি মানুষ হতো তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার উপকারের কথা ভুলে যেতো।লায়লা আপুর প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা দেখে খুবই ভালো লাগলো। ওনার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা ও শুভকামনা রইলো।🙏♥️এবং লায়লা আপুর গল্প টি সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য তোমাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই মনা।♥️