গ্রাম বাংলার বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য : হাটের নাউয়া

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)

হ্যাল্লো আমার বাংলা ব্লগবাসী। আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় বেশ ভালো আছি।আজ- ১৫ আগস্ট, ২০২৩। ৩১ শে শ্রাবণ ১৪৩০। রোজ: মঙ্গলবার।


আজ আপনাদের সাথে হাজির হয়েছি একটি নতুন পোস্ট নিয়ে। আশা করছি পোস্টটি আপনাদের কেমন লাগছে, তা কমেন্ট করে জানিয়ে পাশে থাকবেন।



কদিন আগেই শ্বশুড়বাড়ি থেকে আসলাম। এবার শ্বশুড়বাড়িতে গিয়ে একটা বিষয় দেখে আমার পুরানো দিনের কথা মনে পড়ে গেছে। সে বিষয়টি নিয়েই আমার আজকের পোষ্ট।

বেশ অনেক আগে আমাদের গ্রামে-গঞ্জে হাটের দিন গুলোয় হাটে সিরিয়াল ধরে ১০-২০ জন নরসুন্দর বসে থাকতো। গ্রামের মানুষেরা গিয়ে গিয়ে ওদের থেকে চুল কাটানো, দাড়ি কামানো, কলপ করে নেয়া ইত্যাদি কাজ করে নিতো। তাদের বলা হতো -" হাটের নাউয়া"। সময়ের পরিবর্তন এ সেসব দিন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। এখন আর একজনকেও এভাবে হাটের দিনে বসতে দেখা যায় না। আর শহরে মেয়েদের জন্য তো আগে থেকেই পার্লার ব্যবস্থা রয়েছে, পরবর্তীতে ছেলেদের জন্যও এখন এসি সেলুন অহরহ দেখা যায়। নরমাল সেলুন ই এখন আর দেখা যায় না শহর গুলোয়।

এবার যেহেতু আমার শ্বশুড় বাড়িতে অনেকদিন পরে এসেছেন, তার চুল- দাড়ি সব বেশ বড় হয়ে গিয়েছিলো। উনি চাচ্ছিলেন চুল-দাড়ি গুলো কাটাতে। তাই আমার হাসবেন্ড কে বললেন যেন বাইকের পেছনে বসিয়ে উনাকে সেলুনে নিয়ে যায়। আমার হাসবেন্ড করলো কি, যেহেতু সেদিন হালকা হালকা বৃষ্টিও হচ্ছিলো, তাই উনাকে স্যালুনে নিয়ে না গিয়ে, একজনকে কল করে বললো যে, ভাই আমাদের বাসায় একটু আসতে হবে, আমি গিয়ে আপনাকে নিয়ে আসতিছি। বলে বাইক নিয়ে বের হলেন আবার কিছুক্ষণ পর একজন নাপিতকে সাথে করে নিয়ে আসলেন। নাপিত সাথে করে একটা পলিথিনের ব্যাগে তার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস (সেভিং ফোম, ব্রাশ, খুর, কাচি, চিরুনী, ট্রিমার আরো দুইটা টিউবে কি জানি ছিলো) ইত্যাদি নিয়ে চলে এসেছেন।



নাপিত আমাদের আঙ্গিনায় প্রথমে ট্রিমার এর সাহায্যে শ্বশুড়রের চুল গুলো ছেটে দিলেন। এরপর উনার দাড়ি গুলোও শেভ করে দিলেন। শ্বশুড় এর দেখাদেখি আমার ৩ বছরের ভাতিজিকেও ম্যানেজ করানো হলো চুল কাটার জন্য। প্রথমে ও ভয় পেলেও পরে তার দাদুর দেখাদেখি রাজি হয়ে যায়। এবং আমার শ্বাশুড়ি মায়ের কোলে বসে ওর চুলও কাটানো হয়।



এসব দেখে আমার পুরোনো দিনের কথা গুলো মনে পড়লো যে আসলে এককালে তো নাপিতেরা তাদের বাক্স নিয়ে এভাবে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েই চুল-দাড়ি কামিয়ে বেড়াতো। আবার রাস্তার পাসগে একটা চেয়ার আর ছোট একটা আয়না নিয়েও দেখা যেতো কোন কোন নাপিতদের। এখনকার সময়ে এত পরিবর্তন যে তাদের আর দেখাই যায় না। আর এসি সেলুনে গেলে পকেটের দিকে একটু মায়া তো মনে হয় প্রায় সব বুঝদার ছেলেদেরই লাগে।


আজ এ পর্যন্তই। এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 🌻🌻




VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 last year 

আমার তো ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল, যদিও নাপিত কাছেই ছিল ঢাকা শহর হাতের কাছেই স্যালন থাকে, তবুও সেলুনে গিয়ে চুল কাটতাম না। নাপিত বাসায় আসতো বাসার সব ছোট ছোট বাচ্চাদের চুল কাটা হতা সেদিন হাহাহা।

 last year 

হ্যা ভাই, নাপিত বাসায় আসলে একনাগারে ছোট থেকে বড় সবার মাথায় হাত পরতো... হা হা হা! ছোটদের কারো কারো তো পাত্তাও পাওয়া যেত না, আবার কতজনের যে কান্নার রোল পরে যেতো সেদিন!!

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

আমাদের এখানে এগুলো কে নাপিত বলা হয়। হাটে বাজারে এখন এদের দেখাই যায়না আগে বাজার এবং হাটে মোরে মোরে তারা বসে থাকতো আধুনিকতার এই যুগে এগুলো বিলুপ্ত এখন মেশিনের সাহায্য সব হয়ে থাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

জি ভাই। নাপিত তো বলেই। কিন্তু যারা হাটের দিনে ওভাবে বসতো, ওদেরকে ডাকা হতো "হাটের নাউয়া" সে কথা বলেছি।
আসলেই সেই সব পুরোনো দিনগুলো আর নেই, হারিয়ে গেছে, হয়তো একেবারেই...

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

আজকের পোস্ট টি পড়ে আগেরদিন গুলোর কথা মনে পড়ে গেলো।আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন বাড়িতে নাপিত আসলে আমরা চুল কেটে নিতাম।আমাদের পারমানেন্ট নাপিত ছিলো উনি একবার আমাকে আর মায়া পিসিকে বাটিছাট দিয়ে দিছিলো কি যে ভয়ংকর দেখা যাচ্ছিো তা মনে হলে এখনো হাসি পায়।পুরোনো দিনের হারনো ঐতিহ্য নতুন করে তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ মনা।

 last year 

হ্যা দিদিভাই। আগে তো বাড়িতে বাড়িতেও আসতো... কত ছোট বাচ্চাদের ত্রাস ছিলো তারা যেদিন বাড়িতে আসতো.. পুরানো সেইসব দিনগুলো হারিয়ে গেছে...

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58482.75
ETH 2615.94
USDT 1.00
SBD 2.42