বুক রিভিউ :(বিসর্জন নাটক) প্রথম পর্ব
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
হ্যালো প্রিয় বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই । আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। প্রতিদিনের মতো আজকেও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আমার আজকের পোস্টে বিষয় হচ্ছে বুক রিভিউ। আমি আজকে আপনাদের মাঝে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিসর্জন নাটকের বুক রিভিউ শেয়ার করব। এই নাটকটির মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,মূলত ধর্মের অর্থহীন নিষ্ঠুর সংস্কার ও আচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ প্রকাশ করেছে।দেবতার নামে কুসংস্কার ছিল এই নাটকের পুরোহিতের মধ্যে।যার জন্য তারই পালিত পুত্র জয়সিংহ কে জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে। যা এই নাটকটি পড়লেই আপনারা বুঝতে পারবেন।
বই পরিচিতি
বইয়ের নাম : বিসর্জন
লেখকের নাম: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বইয়ের ধরণ : নাটক সংকলন
প্রকাশক : জয় প্রকাশন
প্রকাশনা সংস্থা : গ্রন্থস্বত্ব
প্রচ্ছদ: মশিউর রহমান
পূনঃ মুদ্রণ- জানুয়ারি - ২০২২
মূল চরিত্র
গোবিন্দ মানিক্য : ত্রিপুরার রাজা
গুণবতী : রাজার স্ত্রী বা রানী
নক্ষত্র রায় :গোবিন্দ মানিক্যের ছোট ভাই
ধ্রুব : গোবিন্দ মানিক্যের পালিত পুত্র
নয়নরায় : মন্ত্রী
রঘুপতি : মন্দিরের পুরোহিত
জয়সিংহ : রঘুপতির পালিত পুত্র
অপর্ণা : ভিখারিনী
চাঁদপাল :দেওয়ান
বুক রিভিউ : বিসর্জন নাটকটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ভাইপো শ্রীমান সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর কে উৎসর্গ করেছেন। এই নাটকে গোবিন্দ মানিক্য হল ত্রিপুরার রাজা। নক্ষত্ররায় হলো গোবিন্দ মানিক্যের ছোট ভাই।রাজার কোন সন্তান ছিল না।ধ্রুব হচ্ছে গোবিন্দ মানিক্যের পালিত পুত্র। রঘুপতি হল রাজপুরোহিত। আর তার পালিত পুত্র জয়সিংহ। যে ছিল মন্দিরের সেবক ও রাজপুত্র। এই নাটকটি পাঁচটি অংকে বিভক্ত। আর এই নাটকে দৃশ্য রয়েছে একুশটি টি। নাটকটির দৃশ্য বেশি হওয়ায় আমি আজকে আপনাদের মাঝে প্রথম দুটি অংক শেয়ার করার চেষ্টা করব। চলন তাহলে প্রত্যেকটি অংক আপনাদের মাঝে শেয়ার করি।
প্রথম অংক : গোবিন্দ মানিক্যের স্ত্রী গুণবতী সন্তান লাভের আশায় মন্দিরে যায়।পুরোহিত রঘুপতিকে জানায় যে, দেবী যদি তাকে সন্তান দেই তাহলে সে প্রতি বছর একশত মহিষ ও তিনশত ছাগল বলি দিবে। সেজন্য রঘুপতির সহচররা বিভিন্ন স্থান থেকে মহিষ ও ছাগ সংগ্রহ করতে থাকে বলি দেওয়ার জন্য। অপর্ণার একটি ছাগল ছিল, যেটি ছিল তার সন্তানের মত। সেই ছাগ ছানা টিকে মন্দিরে এনে বলি দেওয়া হয়। অপর্ণা মন্দিরে এসে সিঁড়িতে রক্ত দেখে বুঝতে পারে তার ছাগল ছানাটিকে বলি দেওয়া হয়েছে। যার জন্য সে কান্না করতে করতে রাজা গোবিন্দ মানিক্যের কাছে বিচার দেয়। রাজা গোবিন্দ মানিক্য কষ্ট পেয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে পশু বলি নিষিদ্ধ করে দেন।
পশু বলি নিষিদ্ধ করার কারণে রঘুপতি মনে করেন তাকে অপমান করা হয়েছে। অন্যদিকে দেওয়ান চাঁদপাল, নক্ষত্র রায় ও মন্ত্রী মনে করেন এটা চিরাচরিত নিয়ম ভঙ্গ করা হচ্ছে। এত বছর ধরে দেবীর জন্য অনেক পশুই বলি দেওয়ার প্রচলন হঠাৎ বন্ধ করলে হয়তো অমঙ্গল হতে পারে।আর জয়সিংহ ও অপর্ণার দুঃখে দুঃখিত হয়। দেবীর কাছে পশু বলি সম্পর্কে জয়সিংহ জানতে চাই। যা দেখে অপর্ণা জয় সিংহের প্রতি মুগ্ধ হয়।এইদিকে রানী গুনবতি জানতে পারে যে তার পশু বলি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই সে রাজার কাছে জানতে চাই। রাজা গোবিন্দ মানিক্য বলে যে সে একটি স্বপ্ন দেখেছে চেয়ে দেবী তোর সহ্য করতে পারে না। তাই যেন এই রাজ্যে পশু বলি দেওয়া না হয়। অন্যদিকে রঘুপতি, সকল লোকদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে রাজা পুজা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। অথচ রাজা কিন্তু পূজা বন্ধ করতে বলিনি। তাই রঘুপতি ও গোবিন্দ মালিকের সাথে বিবাদের সৃষ্টি হয়। মন্ত্রী নয়ন রায় ও রঘুপতির দলে যায়। তাই তাকে বাদ দিয়ে চাঁদপাল কে মন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। রঘুপতি ও রাজার মধ্যে এভাবেই একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়।
দ্বিতীয় অংক : রঘুপতি মনে করে যে, তাকে রাজা অপমান করেছে। সেই প্রতিহিংসায়, রাজাকে হত্যা করার চিন্তা করে রঘুপতি। তাই রঘুপতি নক্ষত্র রায় কে বলে যে, সে স্বপ্ন দেখেছে নক্ষত্র রায় ত্রিপুরার রাজা হবে। এই কথা শুনে নক্ষত্র রায় অনেক খুশি হয়। আর জানায় যদি সে রাজা হয় তাহলে রঘুপতিকে মন্ত্রী বানাবে। রঘুপতি মন্ত্রী হতে চায় না। সে রাজপুরোহিত থাকতে চাই। এদিকে জয় সিংহ ভাতৃত্ব হত্যা পছন্দ করেন না। তিনি বিশ্বাস করেন না যে দেবী এটা চাইতে পারেন। তাই সে দেবীর সামনে গান গাইতে থাকে। এমন সময় অপর্ণা এসে জয় সিংহকে ডাকতে থাকে। রঘুপতি অপর্ণা কে মন্দির থেকে বের হতে বলে।
তখন জয়সিংহ অপর্ণা কে মন্দির থেকে চলে যেতে বলে। কিন্তু অপর্ণা জয় সিংহ কে সাথে করে নিয়ে যেতে চাই। অপর্ণা তাকে অভিশাপ দেই যাতে রঘুপতিকে ছেড়ে সে চলে আসে। রঘুপতি এতদিনের স্নেহ মায়া আবেগ দেখিয়ে, জয় সিংহকে আটকে রাখে।
দেওয়ান চাঁদপাল জানতে পারে যে নক্ষত্ররায় ও রঘুপতি রাজা গোবিন্দ মানিক্যের ক্ষতি করতে চাই। তাই রাজাকে সাবধানে থাকতে বলে। এই কথা শুনে গোবিন্দ মানিক্য ও জয় সিংহ দেবীর কাছে জানতে চাই যে, দেবী রাজ রক্ত চাই কিনা। অন্তরাল থেকে রঘুপতি জানাই চাই। রঘুপতির চাতুর্যতা জয়সিংহ ও গোবিন্দমাণিক্য বুঝতে পারে।দেবতার নামে অপসংস্কৃতি বৃদ্ধি করছে রোগপতি। সে প্রজাদেরকে বলে রাজা মুসলিম সংস্কৃতিকে বিশ্বাস করে। পশু বলি নিষিদ্ধ ও পূজা বন্ধ করতে চাই। প্রজারা ও তাই মনে করে, রাজার জন্য ত্রিপুরার অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। আর বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগছে অনেক ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য রঘুপতি রাজা মৃত্যু চাই। তাই রঘুপতি জানাই যে শ্রাবণ এর শেষ রাত্রে রাজ রক্ত চাই দেবী। তাই সে জয়সিংহ কে প্রতিজ্ঞা করায় শ্রাবণের শেষ রাত্রে দেবীর পায়ে রাজ রক্ত এনে দিতে।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
খুবই ভালো লাগলো বিসর্জন নাটকের প্রথম পর্বের রিভিউটি পড়ে। আসলে অনেকদিন হলো এরকম বই পড়ার সুযোগ পায় না। আগামীতে সময় পেলে অবশ্যই বিসর্জন নাটকটি পড়বো। দারুন একটি বুক রিভিউ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসলে ভাইয়া ভয় পড়তেও সময় লাগে। সময় হলে অবশ্যই টুপি পড়বেন। সুন্দর কমেন্টস করে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস পড়তে আমি খুব পছন্দ করি। সময় পেলেই উপন্যাস পড়া শুরু হয়ে যায়। তবে বিসর্জন নাটকের নাম শুনেছি কিন্তু পড়া হয়নি। আপনার রিভিউ পড়ে বুঝতে পেরেছি আপনিও বই পড়তে খুব ভালোবাসেন। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে বুক রিভিউ দেওয়ার জন্য।
জ্বী আপু বই পড়া অনেক ভালো একটি গুণ। বই পড়লে অনেক কিছু জানা ও শিখা যায়। আপনি যেহেতু নাটকটি পড়ার ইচ্ছা স্থাপন করেছেন অবশ্যই সময় পেলে একদিন এই বিসর্জন নাটকটি পড়ে দেখবেন। ধন্যবাদ আপু।
বেশ অনেকবার পড়া হয়েছে এই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিসর্জন নাটকটা। যখন অনার্সে পড়তাম তখন এই জাতীয় অনেক নাটক উপন্যাস পড়েছি। এ নাটকটা কিন্তু খুবই ভালো লাগার মত ছিল।
আপনার বুক রিভিউ বেশ দুর্দান্ত হয়েছে। বিসর্জন নাটকের প্রথম পর্ব পড়ে খুব ভালো লাগলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস পড়তে খুব ভালো লাগে আমার। এই ধরনের উপন্যাস সত্যি বেশ দুর্দান্ত হয়ে থাকে। এত সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষা রইলাম।