আমার শখের মাটির ব্যাংকটা ভেঙ্গে ফেললাম।।

in আমার বাংলা ব্লগ16 days ago

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ তায়ালার নামে আরম্ভ করিতেছি
-

হ্যালো আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসি বন্ধুরা। আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। এখন ভালো থাকারই কথা। কারণ দুই তিন দিন যাবত বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে বৃষ্টি হইতেছে। আর বৃষ্টি হলে আমরা সবাই অনেক খুশি। আমাদের দিকে গত দুইদিন যাবত বিকালের দিকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আজকে বিকালেও বৃষ্টি হয়েছে। ভেবেছিলাম আজকের বৃষ্টিতে ভিজবো,কিন্তু আমার বাবুর জন্য আমার শাশুড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে দেইনি। বাবু একটু বড় না হওয়া পর্যন্ত অনেক কিছু মেনটেইন করে চলতে হয়। যার ফলে আজকে প্রচুর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টি বিলাস করা হয়নি। যায় হোক মূল বিষয়ে ফেরা যাক।

প্রায় দুই বছর আগের কথা। আমার বিয়ের তিন মাস পরে আমাদের গ্রামের বাড়ির নদীর পাড়ে একটি মেলা হয়েছিল। মেলাটির নাম বর্তমানে আমার জানা নেই। একদিন বিকেলবেলা আমি আর আমার হাজব্যান্ড নদীর পাড় দিয়ে হাটতেছিলাম। হঠাৎ করে আমরা এক জায়গায় মানুষের জমায়েত দেখতে পাই। তারপর আমরা এগিয়ে গিয়ে দেখি সেখানে একটি মেলা বসেছে। আমি আর আমার হাজব্যান্ড মেলাতে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করেছিলাম। মেলার শেষের দিকে আমরা বিভিন্ন ধরনের মাটির তৈরি জিনিসপত্র দেখেছিলাম। এগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি নজর কেড়েছিল মাটির তৈরি ব্যাংক। ব্যাংক ছোট থেকেই আমার খুব প্রিয় একটি বস্তু। আমি যখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তাম তখন থেকেই আমি অল্প অল্প করে ব্যাংকের মধ্যে টাকা জমা করতাম। ঈদের সময় অথবা দরকার পড়লে আমি সেই ব্যাংক ভেঙ্গে টাকা বের করতাম।

মেলাতে অনেক বড় বড় ব্যাংক দেখে আমি আমার হাজব্যান্ডকে বললাম আমাকে যেন একটি ব্যাংক কিনে দেয়। তিনি আমার কথা শুনে বড় বড় দুইটি ব্যাংক কিনলেন। এই ব্যাংক নিয়ে তিনি আপনাদের সাথে ব্লগ শেয়ার করেছিল। তখন হয়তো আপনারা ব্যাংক গুলো দেখেছিলেন। আমরা ব্যাংকগুলো বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরে একটি ব্যাংক আমার ভাগ্নি নিয়ে সিলেটে নিয়ে যাই। আরেকটি ব্যাংক আমি আমার শশুর বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। আমার হাজব্যান্ড যখন ঢাকা থেকে বাড়িতে আসতো তখন আমাকে নতুন নতুন টাকা দিত। তাছাড়া ঈদের সময়ও আমি অনেক নতুন টাকা উপহার পেয়েছিলাম। আমি নতুন টাকাগুলো বেছে বেছে এ ব্যাংকের মধ্যে জমা করতাম।

প্রায়ই ছয় সাত মাস টাকা জমানোর পরে আমি ঢাকা চলে গেছিলাম। শুধু ঈদের সময়ই বাড়িতে আসলে তখন কিছু কিছু টাকা জমাতাম। টাকা জামাতে অনেক ভালো লাগে। এই মাসের ১৬ অথবা ১৭ তারিখে আমাদের দেশে পবিত্র ঈদুল আযহা পালন করা হবে। ঈদ উপলক্ষে সবাই কমবেশি শপিং করে থাকে। বেশি অংশ মানুষ রমজানের ঈদের সময় শপিং করে থাকে। আমিও ঈদের সময় অনেক শপিং করেছি। এই ঈদে আমার তেমন শপিং করার ইচ্ছে নেই। কিন্তু আমি ইচ্ছে করেছি আমার জমানো টাকা দিয়ে এই ঈদে আমার হাজব্যান্ড ও আমার মেয়েকে কিছু শপিং করে দিবো। সেজন্য আমি আমার ব্যাংকটি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলাম।

গতকাল দিনের বেলা আমাদের বাবু যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন আমি ধীরে ধীরে মাটির ব্যাংকটি ভাঙ্গা শুরু করলাম। প্রায় দুই তিন মিনিট ধীরে ধীরে আঘাত করে মাটির ব্যাংকটি ভেঙ্গে ফেললাম। ব্যাংকটি ভেঙ্গে ধীরে ধীরে আমি টাকাগুলো বের করলাম। নতুন টাকাগুলো কচ কচ করতে লাগলো। এতগুলো নতুন টাকা একসাথে দেখে আমি অনেক খুশি হয়েছি। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রকারের টাকার নোট গুলো আলাদা করতে লাগলাম। এখানে ২০০ টাকা, ১০০ টাকা,২০ টাকা, ১০ টাকা ও ৫ টাকার নোট ছিল। সব মিলিয়ে এখানে ৪ হাজার ৬০০ পয়তাল্লিশে টাকা হয়েছিল।

আজকে বৃষ্টির কারণে শপিং করতে যেতে পারি নাই। দু-একদিনের মধ্যেই এই টাকা দিয়ে শপিং করতে যাবো ইনশাল্লাহ। আমার বাবু এবং আমার হাজবেন্ডের জন্য কেনাকাটা করার পরে যদি টাকা একটা থাকে তাহলে আমার নিজের জন্য কোন কিছু কিনবো। তাছাড়া কিছু টাকা ঈদে সালামি দেওয়ার জন্য রেখে দিবো। একটি প্রবাদ আছে "বিন্দু বিন্দু জল থেকে সমুদ্রের সৃষ্টি " কয়েক মাস আমি অল্প অল্প করে টাকা জমিয়েছিলাম। আজকে সেই অল্প অল্প টাকা প্রায় ৫ হাজার টাকা হয়েছে।

সঞ্চয় খুব ভালো একটি অভ্যাস। ছোট থেকেই অভ্যাসটি ঘরে তোলা উচিত। আমরা বাংলাদেশিরা প্রচুর অর্থ অপচয় করি। আমাদের কাছে যখন অর্থ থাকে তখন আমরা সেটার মূল্য বুঝিনা। দরকার ছাড়াও অনেক জিনিস ক্রয় করে অর্থ নষ্ট করি। আমরা যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকাটি কোথাও জমা রাখি একসময় সেটা আমাদের বিপদের সময় কাজে আসবে। অল্প অল্প করে অর্থ জমা করলে এক সময় অনেক অর্থ জমা হয়ে যায়।

বন্ধুরা আজকে আর বৃদ্ধি করছি না। অনেক রাত হয়ে গেছে আপনারা সবাই ঘুমাতে যাবেন। আমি আমার ব্লগটি এখানে সমাপ্ত ঘোষণা করলাম। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।।

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,আল্লাহ হাফেজ।।

ফটোগ্রাফির বিবরণ:

2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSj1ATxRsaEvyH89EyziiK3D1ksn1tTDvDwLCveqrhctVcDnDqtNbsqFMtuqD1RetzrgjG.png

ডিভাইসমোবাইল
মডেলরেডমি নোট-৮
টাইটেলআমার শখের মাটির ব্যাংকটা ভেঙ্গে ফেললাম।
স্থানকসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া,ঢাকা। ।
তারিখ০৩/০৬/২০২৪
কমিউনিটিআমার বাংলা ব্লগ
ফটোগ্রাফার@titash

2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSfQKFP87GjNCaLdCLKkYFWdxRmYuKurkfDpnYWoUUypXiwgziwKKNP24nNC65i32Am8Fp.png

JvFFVmatwWHRfvmtd53nmEJ94xpKydwmbSC5H5svBACH7xbS7ungTbMjNMsQ7fPnm8uUBT2bU8Azf8zCDQrq3tkzHjjCFyraxJQeY79tPTN45w8XxU9wtvaFmWRaLhgHSy5GYKQ6bg.png

আমার পরিচিতি

আমি মোছাঃ মুসলিমা আক্তার নীলা। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @titash নামে পরিচিত। আমার জন্মস্থান চট্রাগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভাদুঘর গ্রামে। আমি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে বাংলা বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করতেছি। আমি বিবাহিত,আমার একটি কন্যা সন্তান আছে। আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত নারায়নগঞ্জ জেলায় বসবাস করছি। আমি আমার হাসবেন্ডের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। প্লাটফর্মটার বিষয়ে জেনে আমি এখানে কাজ করার আগ্রাহ প্রকাশ করি। তারপর ২০২৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। আমি ভ্রমন করতে,মজার মজার রেসিপ করতে,বই পড়তে, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে ও সৃজনশীল জিনিষ তৈরী করতে ভালোবাসি। আমি বাঙ্গালী জাতি হিসাবে ও আমার বাংলা ব্লগের সদস্য হতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9uuNWjCEgJj5LnknUa3pWA9yop6dT9GDfEUZtz2oDgA9ocMHrCEtkFpngXowo13q8Mn1YvzEMh5bSRg1SNaKSZwbsLwb3YA.png

mCz6aUXpYgcE9hndDxJeFHNCvijWNENnxm5KqcEUM3o1siCoMX3by8iWdE4qYzWA7pZHzh4KthdoHPj2eEciPaXhHTdxhx5dKApkU8hxE3mUrybeUbtQCvbs4JC247APSjksrR6prneL2GBtrunMiz4r5CiYySVGKj1e3nT19qBCX5ekz5F.png

5QqP4NVdsPNcDeePyfoZLTLv8efTACU5P6GADTBgMgfXR7uJx5fN91AE46tFfFA7GwMq22wjUwwY5XDyUBMksyZSJGUEyK1Re6UWVZ1PqVR2ntgu73qAW8iDh6yPt8YVsiJ7enc87gmY874JVVHPQo6hSZvUs47FymTjqs43bSUF1Wvtd8T.jpg

4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzL1as2zt5nA5iP9iEBmXtJKZZD3SHGtdFKZ13Up5EmSAxpDYtwYvvxyhsR48F5wdZ6ZhgEKtW9w1csKVawJHrqc3fgSkcpz8WsTY1MvhswZsey8zNe3vkwTdKjCivA3Z6dpaPre.png

ddddoo.png

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 16 days ago 

ছোটবেলায় এভাবে আমিও মাটির ব্যাংকে টাকা জমাতাম। এক সময় আয়োজন করে ঘরের সবাইকে নিয়ে ব্যাংটি ভাঙতাম। তখনকার অনুভূতির সত্যি অসাধারণ ছিল। আজকে সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেল।

 14 days ago 

ছোটবেলা আমরা এরকমই করতাম। টাকা জমিয়ে আয়োজন করে ব্যাংক ভেঙে অনেক কিছুই কিনতাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

 15 days ago 

মাটির ব্যাংক কিছুদিন আগে আমিও একটা নিয়েছি। আজকে আপনার মাটির ব্যাংক থেকে টাকা বের করার মুহূর্ত দেখে ভালো লাগলো। মেয়ে ঘুমিয়ে ছিলো এজন্য আস্তে আস্তে মাটির ব্যাংকটি ভেঙেছেন খুব ভালো করেছেন। বেশ ভালো টাকা জমিয়েছেন। আশাকরি কোন একটা কাজে লাগাতে পারবেন। শুভ কামনা রইলো ভালো থাকবেন।

 14 days ago 

জ্বী ভাইয়া বিশেষ একটা কারণেই এই ব্যাংক ভেঙে ফেললাম। আর আপনিও একটি ব্যাংক কিনেছেন যেন ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 15 days ago 

অবশেষে মাটির ব্যাংক ভেঙে ৪৬৪৫ টাকা বের করলেন যেটা মোটামুটি বেশ ভালো একটা এমাউন্ট। ছোটবেলায় এমন মাটির ব্যাঙে অনেক টাকা জমাতাম তবে এগন এই কাজটা করা হয় না । যাইহোক আপনার পোস্টটা দেখে ছোটবেলার সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেছিল ধন্যবাদ আপনাকে।

 14 days ago 

জি ভাইয়া, এখন কেউই মাটির ব্যাংকে টাকা জমাতে চাই না। তবে এটা আমাদের ছোটবেলার একটা স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।

 15 days ago 

আপনার বাবু যেহেতু ছোট তাই বৃষ্টিতে না ভেজাই ভালো হবে আপু। না হলে আবার বাবুর ঠান্ডা লেগে যাবে। যাই হোক আপনি আপনার মাটির ব্যাংকে অনেক টাকা সংগ্রহ করেছেন দেখে ভালো লাগলো। মাটির ব্যাংকে টাকা জমাতে আমারও অনেক ভালো লাগে।

 14 days ago 

জি ভাইয়া তাইতো বৃষ্টিতে ভিজপ মার্কেটে যায়নি। ধন্যবাদ আপনাকে।

 14 days ago 

আসলেই সঞ্চয় খুবই ভালো অভ্যেস। আমাদের অনেকের মাঝেই এই ভালো অভ্যেসটা নেই। যদিও আমি ও চেষ্টা করি মাটির ব্যাংকে টাকা জমাতে। গত বছর হুট করে আমার হাজবেন্ড এর মোবাইলটা নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমার মাটির ব্যাংক ভেঙে জমানো ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। সেটার সাথে আরও কিছু যোগ করে নতুন মোবাইল কেনা হয়েছিলো। আপনি আপনার পরিবারের জন্য ঈদের শপিং করবেন জমানো টাকা দিয়ে, আপনার জন্য শুভকামনা রইলো আপু। তবে আপনার এত গুলো নতুন চকচকে নোট দেখে লোভ সামলানো মুশকিল আপু! নতুন নোটের উপর থেকে লোভ যায় না কেন বলেন তো, এটা কেমন বাচ্চামো! 🤦‍♀️

 14 days ago 

আপু আপনার জামানো টাকা দিয়ে আপনার স্বামীকে মোবাইল কিনে দিয়েছেন। ব্যাপারটা কিন্তু খুবই দারুণ হয়েছে। আসলে টাকা জমানার অভ্যাসটা খুবই ভালো একটি ধিক। ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 65100.88
ETH 3526.71
USDT 1.00
SBD 2.36