হঠাৎ পাশের বাসার ভাবিকে নিয়ে হাসপতালে গেলাম।।
পরম করুনাময় অসীম দয়াল মহান আল্লাহ তায়ালার নামে আরম্ভ করিতেছে
প্রিয় বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন, আশা করি সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। গত কয়েকদিন যাবত আবার গরম বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগে যখন বৃষ্টি হয়েছিল, তখন ভেবেছিলাম গরম কমে যাবে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে গরম আবার বেড়ে গেছে। এই গরমে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
আমরা যে বাসায় থাকি তার পাশের রুমে এক ভাবি ও তার হাজবেন্ড থাকেন। তাদের পাঁচ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ। ভাবির হাসবেন্ড একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। তবে তিনি এক সপ্তাহ দিনে ও এক সপ্তাহ রাতে ডিউটি করেন। পাশাপাশি ভাবির হাসবেন্ড ছোট একটি কাপড়ের দোকান চালান। আর ভাবি ও টেইলার্সের কাজ করেন। ভাবি আমাদের বাসায় আসেন ও আমিও তার বাসায় যাই। ঢাকায় আসার পরে আমার সবগুলো কাপড় ভাবির মাধ্যমেই বানিয়েছিলাম। গতকাল সকাল প্রায় ১০ টার সময় ভাবির ছেলেটি আমাকে এসে ডাকতেছে। আর বলতেছে তার মা নাকি খুব অসুস্থ। ভাবির হাসবেন্ড সকালবেলা অফিস থেকে এসে মিরপুর চলে গেছে কাপড় আনার জন্য। আর আমার হাজব্যান্ড ও অফিসে চলে গেছে।
আমি আমার বাবুকে কোলে নিয়ে ভাবির রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি ভাবি পেটের ব্যথায় কান্নাকাটি করতেছে। আর এমন ব্যথা তিনি সহ্য করতে পারতেছেনা। ব্যথার কারণে তিনির হাত পা কেমন যেন বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। আমি ভাবিকে এই অবস্থায় দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। এখানে আমাদের পরিচিত কেউ নেই, এই অবস্থায় আমি কি করবো কিছুই বুঝতেছিলাম না। আমি আমার হাজব্যান্ডকে বিষয়টা জানালাম। তিনি আবার ভাবির হাসবেন্ডকে ফোন দিয়ে জানালো। ভাবির হাসবেন্ড বলতেছে তিনি মিরপুর থেকে আসতেছে।
এদিকে ভাবির অবস্থা এতই খারাপের দিকে যাচ্ছিল,যে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তিনিকে এখনই ডাক্তারের কাছে নেওয়া প্রয়োজন, সেজন্য আমি সাহস করে ভাবিকে নিয়ে বাসার নিচে গেলাম। আল্লাহর কুদরতে বাসার নিচে একটি অটো পেয়ে গেলাম। ভাবির ছেলেকে পাশের একটি রুমে রেখে আমার বাবুকে কোলে নিয়ে ভাবিকে নিয়ে সোজা ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চলে গেলাম। সেখানে ভাবিকে একটি কর্নারে বসিয়ে আমি টিকেট কাটার জন্য সিরিয়ালে দাঁড়ালাম। গতকাল এত পরিমান রোগী ছিল যে সিরিয়াল বাহির পর্যন্ত চলে গেছিল। আমি দরজার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম, আমার আগে ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ ছিল। বাহিরে প্রচন্ড রোদ ছিল আর গরমের অবস্থা কি বলবো। এ অবস্থায় বাবু ও কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। অনেক কষ্ট করে আমি একটি টিকেট পেলাম।
টিকেট পেয়ে ভাবিকে নিয়ে অনেক কষ্ট করে দ্বিতীয় তলায় গেলাম। সেখানে ভাবির এ অবস্থা দেখে ডাক্তার সাহেব ভাবিকে একটি ইনজেকশন দিলেন। আরেকটি ট্যাবলেট খেতে দিলেন। তারপর ভাবির অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন। ভাবি বললেন প্রায় দুই তিন মাস পর পর তিনির পেটের মধ্যে প্রচন্ড আকারে একটি ব্যথা ওঠে। সেই ব্যথার সাথে সাথে তার হাত পা কেমন যেন বাঁকা হয়ে যায়। সেজন্য গত বছর কিশোরগঞ্জে একটি বড় হসপিটালে তিনি অনেক গুলো টেস্ট করেছিলেন। কিন্তু টেস্টের মধ্যে কোন রোগ ধরা পড়ে নাই।
ডাক্তার সাহেব ভাবিকে কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। আর সেই সাথে সাতটি টেস্ট লিখে দিলেন। ডাক্তার সাহেব বললেন টেস্টগুলো করিয়ে যেন আবার তিনির সাথে দেখা করেন। ভাবিকে নিয়ে ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার পরে আমার হাজব্যান্ড আসলো। সবকিছু শোনার পরে তিনি আমাদের দুইজনকে নিয়ে ফার্মেসিতে গেলেন। তারপর ভাবীকে যে ওষুধগুলো লিখে দিলেন সেগুলো নিলেন। তারপর ভাবির হাসবেন্ডকে ফোন দিলেন। ভাবির হাসবেন্ড জানালো তিনি যাত্রাবাড়ীতে আছেন। আধা ঘন্টার মধ্যে তিনি হসপিটালে আসতে পারবেন। তখন ভাবি বললো তিনির ব্যথা মোটামুটি অনেকটা কমে গেছে। এখন তিনি বাসায় চলে যাবেন। পরে তার হাজবেন্ডকে নিয়ে এসে টেস্টগুলো করাবেন। তারপর আমার হাজব্যান্ড একটি অটো নিয়ে আমরা সোজা বাসায় চলে আসলাম। ভাবির হাসবেন্ডকে বাসায় চলে আসতে বলা হলো। আমরা বাসায় আসার ১০ মিনিট পরে ভাবির হাসবেন্ড আসলেন। তারপর তিনিকে বিস্তারিত সবকিছু বলা হলো। তিনি আমার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন।
আজকে বিকালে ভাবিকে নিয়ে টেস্টগুলো করার জন্য মর্ডান হসপিটালে গিয়েছিলেন। সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে সবগুলো টেস্ট করলেন। আগামী শনিবারে সবগুলো টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবেন। দেখা যাক রিপোর্ট গুলো দেখে ডাক্তার সাহেব কি সাজেশন দেন।
কিশোরগঞ্জে আগের রিপোর্টগুলো দেখে ডাক্তার সাহেব ভাবিকে বলেছিলেন তিনি যেন বাহিরের খাবার, তৈলাক খাবার ও জাল জাতীয় জিনিস না খায়। যখন এই জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হয় তখনই ভাবির পেটের ব্যাথা শুরু হয়। দোয়া করি ভাবির সবগুলো রিপোর্ট যেন ভালো হয়। অসুস্থ হলে তখন বুঝা যায় সুস্থতা কত বড় আল্লাহর নিয়ামত। বন্ধুরা এ প্রচণ্ড গরমে বেশি বেশি পানি খাবেন। সবাই সতর্ক থাকবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,আল্লাহ হাফেজ।।
ফটোগ্রাফির বিবরণ:
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | রেডমি নোট-৮ |
টাইটেল | হঠাৎ পাশের বাসার ভাবিকে নিয়ে হাসপতালে গেলাম। |
স্থান | ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল,নারায়ণগঞ্জ,ঢাকা। । |
তারিখ | ২২/০৫/২০২৪ |
কমিউনিটি | আমার বাংলা ব্লগ |
ফটোগ্রাফার | @titash |
আমার পরিচিতি
আমি মোছাঃ মুসলিমা আক্তার নীলা। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @titash নামে পরিচিত। আমার জন্মস্থান চট্রাগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভাদুঘর গ্রামে। আমি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে বাংলা বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করতেছি। আমি বিবাহিত,আমার একটি কন্যা সন্তান আছে। আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত নারায়নগঞ্জ জেলায় বসবাস করছি। আমি আমার হাসবেন্ডের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। প্লাটফর্মটার বিষয়ে জেনে আমি এখানে কাজ করার আগ্রাহ প্রকাশ করি। তারপর ২০২৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। আমি ভ্রমন করতে,মজার মজার রেসিপ করতে,বই পড়তে, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে ও সৃজনশীল জিনিষ তৈরী করতে ভালোবাসি। আমি বাঙ্গালী জাতি হিসাবে ও আমার বাংলা ব্লগের সদস্য হতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
আপনি তাহলে বেশ ভালো কাজ করলেন আপনার পাশের বাসার ভাবিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে। এমন বিপদে সহযোগিতা করলেন অনেক ভালো লাগলো আপু। যদিও আপনার ছোট বাচ্চা সবকিছু সাহস করে চলে গেলেন। অবশেষে আপনার কারণে একজন মানুষ অনেক বড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেল। দোয়া রইলো আপনাদের পরিবারের সবার জন্য।
বাবুকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর বাবু অনেক কান্না করেছিল ঠিকই। তবে একজনকে উপকার করতে পারে মনে অনেক শান্তি পেয়েছি। আপনার পরিবারের জন্য অনেক দোয়া রইলো আপু। ধন্যবাদ আপু।