বুক রিভিউ -(বিসর্জন নাটক) দ্বিতীয় পর্ব
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
হ্যালো প্রিয় বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই । আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। গতকাল বোনের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার কারণে কালকে কোন পোস্ট করতে পারেনি। আজ একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আমার আজকের পোস্টের বিষয় হচ্ছে বুক রিভিউ। আমি আপনাদের মাঝে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিসর্জন নাটকের দ্বিতীয় পর্ব শেয়ার করবো। এই নাটকটি সম্পর্কে আমি প্রথম পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাই এখন বিস্তারিত আলোচনা না করে সরাসরি নাটকের মূল অংশে চলে যাব। প্রথম পর্বে আমি এই নাটকের পাঁচটি অংক থেকে দুইটি অংক শেয়ার করেছিলাম। এখন আমি তিনটি অংক শেয়ার করব। নাটকটি মূলত ধর্মের নামে অপসংস্কৃতি প্রচার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। যা আপনারা এই নাটকের রিভিউ পড়লেই বুঝতে পারবেন। তাহলে চলুন আপনাদের মাঝে শেয়ার করি।
বুক রিভিউ : বিসর্জন নাটকটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ভাইপো শ্রীমান সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর কে উৎসর্গ করেছেন। এই নাটকের রাজা হলো গোবিন্দমাণিক্য। তিনি ত্রিপুরার রাজা ছিলেন। নক্ষত্ররায় হলো গোবিন্দ মানিক্যের ছোট ভাই। রাজা গোবিন্দমাণিক্য ছিল নিসন্তান। আরেকটি পালিত পুত্র নাম হচ্ছে ধ্রুব। আর তার স্ত্রীর নাম গুণবতী। রঘুপতি হল রাজপুরোহিত। আর তার পালিত পুত্র জয়সিংহ। যে ছিল মন্দিরের সেবক ও রাজপুত্র।অপর্ণা হচ্ছে এই নাটকের একজন ভিখারিনী। চাঁদপাল হচ্ছে দেওয়ান। এই নাটকটি পাঁচটি অংকে বিভক্ত। বিসর্জন নাটকের এই চরিত্র গুলো আমি প্রথম পর্বে সুন্দরভাবে উল্লেখ করেছিলাম। এখন আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে আবারও উল্লেখ করছি । আমি আপনাদের মাঝে প্রথম ও দ্বিতীয় অংক শেয়ার করেছি তাই আমি এখন তৃতীয় অংক থেকে নাটকটি শুরু করছি।
তৃতীয় অংক: তৃতীয় অংকে দেখা যায় পুরোহিতর রঘুপতি ত্রিপুরার প্রজাদের জানায় যে, রাজা গোবিন্দ মানিক্য পরশু বলি নিষিদ্ধ করার কারণে দেবী মন্দির ছেড়ে চলে গেছেন। সকলকে জানাই গোবিন্দমাণিক্য পূজা বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ রঘুপতি দেবীর প্রতিমা উল্টো করে রেখেছে। অপর্ণা এসে প্রতিমা টি সামনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। তখন রোগীদের পালিত পুত্র জয়সিংহ ব্যাপারটি বুঝতে পারে। রঘুপতিকে জয় সিংহ জিজ্ঞাসা করে কেন সে এই কাজ করেছে। তখন সে ধর্মের প্রতি জয় সিংহকে বুঝাতে থাকে। অন্যদিকে গোবিন্দ বাণিকের কাছে প্রজারা জানতে চাই কেন সে করেছেন। রাজা গোবিন্দ মানিক্যপ্রাজাদের বুঝায় যে মা রক্ত চাই সে প্রকৃত মা হতে পারে না। তাই মন্দিরের পূজা হলে কোন প্রকার পশু বলি দেওয়া যাবে না। এইদিকে গোবিন্দ মানিকের স্ত্রী সন্তান হারায় এজন্য সে গোবিন্দ মানিক্যের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
নক্ষত্ররাই রাজা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভাবতে থাকে। গোবিন্দ মানিক্য তার ভাই নক্ষত্র রায় কে বলে, সেকি তার মৃত্যু চাই, যে ভাই একই প্লেটের খাবার খেয়ে একই সাথে বড় হয়েছে সে কিভাবে বড় ভাইয়ের মৃত্যু চাই। এই কথা শুনে নক্ষত্র রায় গোবিন্দ মানিকের কাছে ক্ষমা চাই। এবং রঘুপতি সকল কথা রাজাকে বলে দেয়। এই দিকে রানী গণবতী নক্ষত্র রায় কে বলে যে, রাজা গোবিন্দমানিক্য তার পালিত পুত্র ধ্রুবকে সিংহাসনে বসাবে। আর যদি এই রাজ্যকে রক্ষা করতে চাই তাহলে যাতে ধ্রুবকে বলি দেয়। সেজন্য নক্ষত্র রায় ঘুমন্ত ধ্রুবকে নিয়ে পুরোহিত রঘুপতির কাছে নিয়ে যায়। মায়ের পায়ের কাছে সমর্পণ করে। এবং বলে মদ্যপান করে যাতে তাকে বলে দেয়। হঠাৎ এমন গোবিন্দমানিক্য মন্দিরে এসে প্রবেশ করে। ধ্রুবকে বলি দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে পারে। তাই নক্ষত্ররায় ও রঘুপতিকে সাথে সাথে বন্দি করে। বিচার করার জন্য মন্ত্রিপরিষদের সামনে নিয়ে যায়।
চতুর্থ অংক: নক্ষত্র রায় ও পুরোহিতকে রাজা আট বছরের নির্বাসন দন্ড দেয়। পুরোহিত রঘুপতি রাজার কাছে আরও দুইদিন সময় চাই। গোবিন্দ মানিক্য তাকে দুই দিন সময় দেয়।রঘুপতি তার পালিত পুত্র জয়সিংহ কে বলে যে সে আর এখানে থাকবে না। সে রাজার কাছ থেকে দুই দিন সময় চেয়ে নিয়েছে। গরু হিসেবে না পিতার মমতার কথা বলে জয়সিংহ কে রাজ রক্ত এনে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করায়। জয়সিংহ গোবিন্দ মানিক্যের রক্ত এনে দিবে বললে রঘুপতি প্রতিমার জয় গান গাইতে থাকে। এদিকে নয়ন রায় গোবিন্দ মানিককে জানাই যে, মোগলরা রাজার সাথে যুদ্ধ করতে চাই। আর এর সাথে জড়িত আছে চাঁদ পালও। কথা শুনে নয়ন রায়কে পুনরায় মন্ত্রী পদে থেকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলে রাজা। রাজার কাছে মোবাইলদের একটি চিঠি আসে, সেই চিঠিতে লেখা রাজার নির্বাসন তাই তারা। তাই রাজার সাথে তারা যুদ্ধ করবে। গোবিন্দমাণিক্য জানতে পারে, তার ভাই নক্ষত্ররাই এই চিঠিটি অনের মাধ্যমে লিখেছে। তাই গোবিন্দমাণিক্য কোন প্রকার যুদ্ধ ছাড়া নির্বাসিত হতে চাই। নক্ষত্র রাই রাজা হতে চাই বলে ভাইয়ের সাথে এমনটা করেছে। তাই গোবিন্দমাণিক্য চায়না ভাইয়ে ভাইয়ের সংঘাত হোক।
পঞ্চম অংক: রঘুপতি প্রতিমার সামনে বসে গোনো কীর্তন গাইছে। এমন সময় অপর্ণা এসে হাজির হলে তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে চাইছিল রঘুপতি। সে ভাবছে জয় সিংহ রাজ রক্ত আনতে গিয়েছে। অপর্ণা যদি তাকে এখান থেকে নিয়ে যায় তাহলে রাজ রক্ত প্রতিমার পায়ে বিসর্জন দিতে পারবে না। এমন সময় জয়সিংহ খালি হাতে ফিরে আসে। যা দেখে রঘুপতি আশ্চর্য হয়। রাবণের শেষ রাত্রে জয়সিংহ রাজ রক্ত এনে দিবি বলেছিল।তাই জয়সিংহ নিজেকে নিজে বলি দিয়ে দেয়। কারণ সে ছিল একজন রাজপুত্র। যার শরীরে রাজ রক্ত বইছে। জয়সিংহের রক্তমাখা দেহের সামনে অপর্না বসে কান্না করছে। রঘুপতি পিতৃ স্নেহে কাদের হয়ে যায়। এবং প্রতিমাকে ঘুমোতে নদীতে বিসর্জন দিয়ে দেয়। এইদিকে রাজা গোবিন্দ মানিক্য দেখতে পারে যে তার রাজসভা আলোয় ঝলমল করছে। রানী গুনবতী তাকে বলছে যে, শেষবারের মতো পূজা দিয়ে তারা যেন রাম ও সীতার মত নির্বাসিত হয়ে যায়। তাই গুণবতী পূজার জন্য মন্দিরে গেলে প্রতিমাকে না দেখতে পেয়ে রঘুপতি কাছে জিজ্ঞাসা করে।ওগো বতি বলে যে দেবী উর্ধ্বে নিম্নে কোথাও নাই। সে একজন পেশাশিনী রাক্ষসী। এমন সময় গোবিন্দমানিক্য তার জন্য ফুলের মালা নিয়ে আসে। এসে দেখে প্রতিমা নেই। রঘুপতি জানায় যে জয় সিংহ তার প্রাণ দিয়ে সকল অন্ধ এবং অপসংস্কৃতির অবসান ঘটিয়েছে। যা দেখে গোবিন্দ মানে খুব খুশি হয়ে জয় সিংহর গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেয়। আর গুণবতী জয় সিংহকে দেবতার মত মনে করে তাকে পূজা করে। রঘুপতির ভুল বুঝতে পারার কারণে অপর্ণা তাকে পিতা বলে ডাক দেয়। অপর্ণার মুখে পিতা ডাক শুনে জয় সিংহ সবকিছু ভুলে তাকে মায়ের মত জড়িয়ে ধরে। গোবিন্দ মানিক্য আপনার মাঝেই খুঁজে পেয়েছে প্রকৃত জননীকে।
পাঠকের মন্তব্য: এই নাটকটি পরে বুঝতে পারলাম যে, ধর্মের নামে অপসংস্কৃতির কারণে,অনেক পশুর প্রাণ, জয়সিংহর প্রাণ,মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলানোর একটি মূল মন্ত্র সৃষ্টি করেছে মন্দিরের পুরোহিত। যার জন্য অনেকগুলো প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। আমি মনে করি এই জন্য নাটকটির নাম দেয়া হয়েছে বিসর্জন। শেষ পর্যন্ত ধর্মের জয় হয়েছে।
Thank you, friend!
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7of2TpLGqvckkrReWahnkxMWH6eMg5upXesfsujDCnW/image.png)
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWDnFh7Kcgj2gdPc5RgG9Cezc4Bapq8sQQJvrkxR8rx5z/image.png)
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
কিছুদিন আগে বিসর্জন নাটকের প্রথম পর্ব আমাদের মাঝে শেয়ার করেছিলেন,বেশ ভালো লেগেছিল। আজকেও দেখছি দ্বিতীয় পর্ব তুলে ধরেছেন। আসলে রবি ঠাকুরের বেশ কিছু নাটক রয়েছে, উপন্যাস রয়েছে আমার খুবই প্রিয়। আমি অনেকগুলোই পড়েছি। আমার জীবনে এই সমস্ত নাটকগুলো সম্পর্কে বেশ ধারণাও রয়েছে। অনেক ভালো লাগে এই নাটকটা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক উপন্যাস ছোট গল্প নাটক রয়েছে। সেগুলো পড়লে অনেক কিছু শেখাও জানা যায়। যেহেতু আপনার এই নাটক এবং উপন্যাস গুলো সম্পর্কে ধারণা আছে। সেহেতু আপনার কাছে আমার বুক রিভিউতে ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।