গল্প : জন্ম না দিয়েও মা হওয়া যায়
আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ভাল আছেন নিশ্চয়ই। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আজ আমি আবার আপনাদের সামনে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম । আজকে আমি আপনাদের সাথে একটি গল্প শেয়ার করে নেব । আসলে মানুষের জীবন কাহিনী নিয়ে গল্প লিখতে ভালোই লাগে । প্রতিটি সত্যি ঘটনা পাঠ বই পাঠ তুলে ধরতে পারলে সুন্দর একটি গল্প হয়ে যায় । মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তা থেকে আমরা যদি কিছু একটা লিখার চেষ্টা করি তাহলে সে লিখার কোন শেষ নেই । কিন্তু তার ভিতর থেকে কিছু কিছু গল্প আছে যেটা লেখার মত হয়ে থাকে এবং মানুষের সামনে সুন্দর ভাবে তুলে ধরা যায় । আজকে আমি সেরকম একটি সত্যি ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি ।
অভি নামের একটি ছেলেকে নিয়ে আমি আমার গল্পটি লিখেছি । আসলে জন্ম দিলেই শুধু মা হওয়া যায় না । মা হতে হলে মায়ের যে মমতা সেটা থাকতে হয় । এমন অনেক মা আছে যারা শুধু সন্তানকে জন্মই দিয়েছে আর যে লালন পালন করে সন্তানকে বড় করে নিজের আত্মার সাথে বেঁধে রেখেছে সেই হলো প্রকৃত মা ।সেরকম একটি কাহিনী আমার চোখের সামনে আমি দেখেছি । ছেলেটাকে চোখের সামনে বড় হয়ে উঠতে দেখলাম । অনেক প্রাণচঞ্চল হাসিখুশি একটা ছেলে ।এতদিনে ছেলেটাকে নিয়ে একটা কাহিনী আমি জানতাম । কিছুদিন আগে নতুন করে আবার ছেলেটার আসল কাহিনী জানতে পেরেছি ।
অভির বাবা মা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবেসে পছন্দ করে বিয়ে করেছিল । এরপর তাদের সুখের সংসার সুন্দরভাবে চলছিল । কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের সুখের সংসারে অভি নামের এই ছেলেটির জন্ম হয় । ছেলেটাও বাবা মায়ের সাথে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে শুরু করেছে । এরই ভেতরে অভির মায়ের ব্যবহারের কিছুটা চেঞ্জ আসতে শুরু করেছে । কিছুদিন যেতে না যেতেই শোনা যায় যে অভির মা অন্য একজনকে ভালোবেসে ছেলেটাকে একা করে দিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছে । আবির বাবা তখন অভিকে নিয়ে একেবারে অথই সাগরে পড়ল । কিন্তু তারপরও সে তাকে নিয়ে সুন্দরভাবে চলছিল । এর ভিতরে অভির বাবারও আরো একজনের সাথে সম্পর্ক হয় এবং সেই মহিলা সব কিছু জেনে শুনে অভির বাবাকে বিয়ে করে এবং অভিকে তার নিজের ছেলে বলে বুকে টেনে নেয় । তার নিজের সন্তানের মত অভিকে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করতে থাকে ।
এভাবে দেখতে দেখতে বেশ কিছু সময় পার হয়ে যায় । অভিও আগে থেকে কিছুটা ঝরঝরে হয়ে ওঠে ।অভির বাবা অভিকে তার মায়ের সাথে এরকম হাসিখুশি খোলামেলা দেখে সেও খুশি হয় । আস্তে আস্তে অভির নতুন মা অভিকে একেবারে নিজের সন্তানের মত ভাবতে শুরু করে এবং অনেক বেশি ভালোবাসা দিয়ে বড় করতে থাকে । এভাবে চলতে চলতে আবির বাবাও কিছুটা নিশ্চিত হয় । কিছুদিন যেতে না যেতে অভির বাবা আবার নতুন করে অন্য আরেকজনের প্রেমে পড়ে যায় । সে ওই মহিলার টানে অভি আর অভির নতুন মাকে রেখে বাসা থেকে চলে যায় । বাসায় শুধুমাত্র অভি ও অভির মা থাকে । অভির মা কিছুদিন পর সেই বাসা থেকে চলে যায় কারণ তার স্বামী তাকে ধোকা দিয়ে অন্য আরেকজনের হাত ধরে বাসা থেকে চলে গিয়েছে সেই বাসায় পরে থেকে কোন লাভ নেই । সে বাসা থেকে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু ছোট্ট অভিকে রেখে সে কিছুতেই বাসা থেকে আসতে পারেনা । যার কারণে সেই অভিকে নিজের সাথে করে নিয়ে চলে আসে ।
তারপর অভির মা নতুন আরো একজনের সংসারে যায় সাথে অভিকে নিয়ে যায় । অভির নতুন মায়ের নতুন স্বামী নিজের ছেলের রূপে গ্রহণ করে । এই ফ্যামিলির সাথে অভি থাকে এবং দেখতে দেখতে অভি এখন অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছে কলেজে পড়ে । আসলে এই ঘটনাটা শোনার পর থেকে আমার নিজের কাছেই অনেক আশ্চর্য লেগেছে । যে ছেলেকে তার আসল বাবা-মাই ফেলে রেখে চলে গেল । তাকে বুকে টেনে নিলো অন্য একজন মহিলা আর অন্য একজন পুরুষ যারা কিনা তার মা বাবা না অথচ তারা তাকে ফেলতে পারেনি । এখনো পর্যন্ত তাকে তার নিজের সাথেই রেখে দিয়েছে এবং নিজের ছেলে হিসেবেই বড় করছে । এই সংসারে তার আরো একটি ছেলে হয়েছে দুই ভাই মিলে খুব সুন্দরভাবে রয়েছে । অভির এই নতুন বাবা-মা অভিকে এবং ছোট ভাইটাকে অনেক বেশি ভালবাসে । এই ঘটনা থেকে বুঝতে পারলাম যে জন্ম দিলেই সত্যিকারের মা হয় না । মা একেই বলে যে বিপদে আপদে সন্তানকে সব সময় নিজের বুকে আগলে রাখে । অভির মা তার নিজের মা না হয়েও অভিকে কিভাবে বুকের সাথে আগলে রেখেছে । এখন অভি বড় হয়েছে জানিনা সে পরবর্তীতে কি করবে কিন্তু তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আসলে হৃদয়বিদারক ছিল ।
আশা করছি আমার আজকের এই ব্লগটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
ডিভাইস | samsung Galaxy s8 plus
ধন্যবাদ
আমি তৌহিদা, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।বাংলাদেশে আমার জন্ম।আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। আমি বিবাহিতা, এক সন্তানের মা। আমি রান্না করতে ও খেতে ভালোবাসি,আমি ঘুরতেও অনেক ভালোবাসি। |
---|
বর্তমান সময়ে এমন মানুষ রয়েছে? ওই মহিলার প্রতি সম্মান হাজার গুনে বেড়ে গেল। যেখানে নিজের স্বামী ধোঁকা দিয়ে চলে গিয়েছে সেখানে স্বামীর সন্তানকে পালন করার কথা তো চিন্তাই করা যায় না। আর ওই মহিলার ওই সন্তানকে নিজের সাথে করে তার নতুন সংসার নিয়ে গিয়েছে। তার নতুন হাসবেন্ডও নিশ্চয়ই অনেক ভালো। তা না হলে এমন বাচ্চাকে তার কাছে রাখতো না। এই গল্প থেকে বোঝা গেল যে এখনো পৃথিবীতে ভালো মানুষ রয়েছে।
আমিও তো শুনে অবাক হয়েছি প্রথমে ভেবেছিলাম এই মহিলারই ছেলে । পরে ঘটনাটা শুনে সত্যি অনেক আশ্চর্য লেগেছিল । মহিলাটা সত্যি ছেলেটাকে ভালোবেসেছিল ।
আমার কাছে একদম আশ্চর্য ঘটনার মতোই লাগছে। ছেলেদের আসল বাবা-মা কেউই পাশে নেই। অথচ অভীর সৎ মা নতুন সংসারে অভিকে রেখেছেন আর অভির আসল বাবা মা কতটা নিষ্ঠুর ও নির্দয় তা বুজা যাচ্ছে। আসলে জন্ম দিলেই মা হওয়া যায়না।
কিছু কিছু সৎ মা আছে আসলে আপন মায়ের থেকেও অনেক বেশি করে এটাই তার বাস্তব প্রমান ।
আসলে অনেক বাবা মারা রয়েছে যারা নিজের কথা চিন্তা করে, সন্তানদেরকে ফেলে চলে যায় অন্য মানুষের কাছে। অভির বাবা মাও এভাবে চলে গিয়েছিল। আর ওই মহিলাটা অর্থাৎ তার সৎ মা এবং তার সৎ বাবা তাকে দেখাশোনা করেছে, একেবারে নিজের সন্তানের মত করে। আর তার সৎ মায়ের একটা ছেলেও হয়েছিল , কিন্তু দুই ভাই বেশ ভালোই রয়েছে তাহলে। এটা কিন্তু ঠিক, জন্ম না দিলেও মা হওয়া যায়। আবার জন্ম দিলে শুধু মা হয় না।
আজকালকার দিনে বাবা-মা কোন কিছু ভুল করে বসলে কষ্টটা সন্তানেরই হয় । তারপরও তো মানুষ ভুলের পর ভুল করেই যায় ।
নিজের মা কিভাবে এরকম হতে পারে আমি শুধু এটাই ভাবি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় যারা সন্তানের মা না, তারাও ঐ সন্তানটাকে নিজের সন্তানের থেকেও বেশি ভালোবাসে। ছেলেটাকে ছেড়ে তার মা চলে যাওয়ার পরে, তার সৎ মা তাকে দেখাশোনা করেছে। আবার তার সৎ মাকে ছেড়ে তার বাবা চলে গিয়েছিল। পরবর্তীতে দেখছি তার সৎ মা অন্য একটা বিয়ে করেছিল। সেখানেও ওই সৎ বাবা তাকে নিজের সন্তানের মত দেখেছিল। খুব ভালো লেগেছে আপনার লেখা গল্পটা।
আমার গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।