★রাঙামাটি ঘোরাঘুরি আরো★
আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ভাল আছেন নিশ্চয়ই। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ।
শীতের ভিতরে কাঁপতে কাঁপতে আবার আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়ে গেলাম নতুন একটি ব্লগ নিয়ে। আজকে আমি আপনাদেরকে আবার রাঙ্গামাটি ঘোরার কিছু মুহূর্ত শেয়ার করব । বেশ কিছুদিন আগে রাঙ্গামাটি থেকে ঘুরে এলাম। ধীরে ধীরে আপনাদের সাথে সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত গুলো শেয়ার করার চেষ্টা করছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব রাঙ্গামাটির একটি ইকো পার্কে ঘোরার মুহূর্ত। আমরা যেদিন চলে আসবো সেদিন ওই জায়গাটার উদ্দেশ্যে আমরা বেরিয়ে পড়েছিলাম। আমরা মোট চার দিন রাঙ্গামাটিতে ছিলাম তার ভিতরে তিন দিন আমরা শুধু একটা বোট নিয়ে পানির বুকে ভেসে বেরিয়েছি। আর শেষের দিনটা রেখেছিলাম রাস্তা দিয়ে ঘোরার জন্য। সকাল ৯ টায় আমরা ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নিচের হোটেলে চলে গিয়েছি নাস্তা করার জন্য। আর আমাদের গাইডকে দশটার সময় নিচে থাকার জন্য বলে রেখেছিলাম। কারণ সকাল সকাল বের না হলে সব কিছু ভালোভাবে দেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনা। একেতো শীতের সকাল উঠতে মন চায় না এজন্য একটু দেরি করেই আমরা বের হওয়ার জন্য রেডি হয়েছি। হোটেলে খাওয়া দাওয়া করি আমরা দুটা সিএনজি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ইকো পার্কের উদ্দেশ্যে। ওখানে দূরে যেতে হলে সিএনজি নিয়ে যেতে হয়। ওখানকার সিএনজিগুলা একটু ভিন্ন রকম আমাদের ঢাকার মতো অতটা চাপা নয় একটু খোলামেলা সিএনজি, এজন্য বসতে অতটা অসুবিধা হয় না।
আমরা দুটো সিএনজি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা রাস্তা দিয়ে শুধু যাচ্ছি আর যাচ্ছি রাস্তা কিছুতেই শেষ হয় না। তখন আমাদের সাথে যে ছেলেটা ছিল ওকে জিজ্ঞাসা করলাম আর কত দূর ও তখন বলল যে আরো ঘন্টাখানেক সময় লাগবে, অলরেডি ১ ঘন্টা গাড়িতে বসে আছি। তারপর ও যখন বলল যে আরো ঘন্টাখানেক সময় লাগবে তখন তো আমাদের একেবারে অবস্থা খারাপ হওয়ার কথা। তখন ওকে বললাম যে এত দূরের পথ আগে বলনি কেন। ও তখন বলল যে আমি তো মনে করেছি আপনারা জানেন। কিন্তু কি আর করার আমাদের তো ভালোই লাগছিল এত সুন্দর রাস্তা দিয়ে যেতে। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে খুব সুন্দর করে রাস্তাটা চলে গিয়েছে দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগছে। আর পাহাড় থেকে একেবারে নিচের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে যে মানুষজনের বসতি। মনে হচ্ছে যে ৪-৫ তলা নিচে মানুষজন ঘরবাড়ি উঠিয়ে রয়েছে। ওই মানুষজন যে কিভাবে অত নিচ থেকে রাস্তায় উঠে এসে জীবিকা নির্বাহ করে তাই আমি ভেবে পেলাম না।
রাস্তাটা এত সুন্দর লাগছিল দুই পাশে পাহাড় এবং গাছ পালা ভর্তি হবার মাঝে মাঝে এত সুন্দর সুন্দর কিছু ফুল ফুটে রয়েছে তা বলার অপেক্ষায় রাখে না। যে ফুলগুলো আমাদের ঢাকাতে নার্সারিতে কিনতে পাওয়া যায় সেই এই ফুল গুলো রাঙ্গামাটির আনাচে কানাচে রাস্তা ঘাটের সব জায়গায় ফুটে থাকতে দেখা যায়, যেটা আসলেই চোখে লাগে। আমরা তো ভালোই রাস্তাটা এনজয় করছিলাম। কিন্তু আমাদের সাথে যে দুই একজন মুরুব্বী টাইপের ছিল তাদের তো বসে থাকতে থাকতে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। তারা কিছুতেই ওদিকে যাওয়ার জন্য রাজি হচ্ছিল না বলছিল যে ওখানে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আমরা ফিরে আসবো। কিন্তু আমাদের মনটা খারাপ হয়ে গেল এত কষ্ট করে এত দূরে যাব আর জায়গাটা ভালোভাবে উপভোগ করবো না। ছেলেটা বলল যে ইকোপার্ক থেকে দশ মিনিটের দূরত্ব দূরত্ব সব স্পট গুলো রয়েছে যেটা আমরা খুব সহজেই ঘুরে দেখতে পারবো। মুরুব্বিরা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না পরে আমাদের জোরাজোরিতে তারা রাজি হল। আমরা মাঝ পথে এক জায়গায় নেমে চা খেয়ে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিলাম রাস্তার পাশে বসে তারপর আবার আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে আমরা যাত্রা করলাম।
বেশ খানিকটা সময় যাওয়ার পরে আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের সেই নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানে ভিতর ঢুকে দেখলাম যে পরিবেশটা আসলেই অনেক সুন্দর টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। মাঝখান দিয়ে লেকের মত দারুন সুন্দরভাবে পানি বয়ে চলেছে। তারপরে আর দুই পাশে শুধু গাছ আর গাছ আর মাঝখান দিয়ে রাস্তা পাহাড়ের উপর দিয়ে রাস্তাগুলো শুধু উপরের দিকে উঠতে থাকে হাঁটতে অনেকটাই কষ্ট হচ্ছিল। তারপরেও আমাদের যেতে ভালোই লাগছিল। কিছুদূর যাওয়ার পরে দেখলাম যে ওখানে কি কি আছে তার সাইনবোর্ড টানানো শুধু হাঁটতে হবে। এখানে খুব বেশি হাঁটতে হয় হাঁটা ছাড়া কোন যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আমরা তো যারা হাঁটতে পারি তারা যাওয়া শুরু করলাম এবং অন্যান্য যারা ছিল তারা ওখানেই রয়ে গেল আর তারা হাঁটবে না, বলল যে তোমরা হেটে দেখে চলে আসো আমরা পরে আবার এখান থেকে যাব। আমরা হাঁটতে থাকি আবার কিছুদূর যাওয়ার পরে দেখলাম যে খাঁচায় বন্দি করে রেখেছে কিছু ময়ূর। আরো অনেক পশু পাখি রয়েছে চিড়িয়াখানার মতো তৈরি করেছে। আমরা ময়ূর দেখার পরে এতটাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম যে ওখানেই অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকলাম। অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকে কিছু ছবিও তুললাম কিন্তু তারা কিছুতে পাখনা মেললো না।আমরা যখন ওখান থেকে চলে গেলাম আমাদের পরের লোকজনরা এসেছে ওরা ময়ূরের পেখম মেলা দেখেছে। আফসোস আমরা অনেক সময় অপেক্ষা করার পরও এত সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারিনি।
তারপরে আমরা অনেক সময় হাঁটতেই থাকি হাঁটতেই থাকি। তখন ছেলেটা একটা গুহার মতো রাস্তা দেখিয়ে বলল যে এটি একটি গুহা এর ভিতর দিয়ে যেতে হবে। আমরা তো প্রথমে ভয়ই পেয়ে গেলাম যে এই জঙ্গলের ভিতরে আবার গুহার ভিতরে ঢুকতে হবে পরে গুহার ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলাম। কারণ একটা দরজা দিয়ে ঢুকে আর একটা দরজা দিয়ে বের হতে হয়। ওটা একটা গুহার মতো বানিয়ে রেখেছে যাতে মানুষ একটু ভয় পায়। কিন্তু এটা আসলে কিছুই ছিল না। তারপর আরো কিছুদূর যাওয়ার পরে মাঝখানে আবার বসার মত বেঞ্চের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে আমরা বসে বসে আবার হাঁটতে শুরু করি। আবার যারা ফেরত আসছে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি সামনে কি আছে ওরা বলে যে সামনে আরো কিছু আছে আপনারা যেয়ে দেখে আসতে পারেন। পরে আমরা আরো কিছুদূর যাওয়ার পরে দেখলাম যে এখানে শুধু গাছপালা ছাড়া আর কিছুই না যদিও সামনে আরো পশুপাখি ছিল যেটা আমাদের দেখার ইচ্ছা ছিল না। হাঁটতে হাঁটতে আমরা ক্লান্ত পরে আমরা শেষ সময় সেখান থেকে আবার ফিরে আসে এবং আসার পথে আবার একটা দোকানে খাওয়া দাওয়া করে আমরা পেছনদিকে আবার ফেরত আসতে শুরু করলাম। কিন্তু ইকো পার্কের গাছপালা ও রাস্তাঘাট সেটা আমরা অনেক বেশি ইনজয় করেছি। এতটা সুন্দর যেটা ঢাকার বাইরে বের না হলে আমরা বুঝতেই পারতাম না। রাঙ্গামাটি শহরটা আসলেই অনেক সুন্দর ছিল।
এটি নাকি একটি গুহা
আশা করছি আমার আজকের এই ব্লগটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
ফটোগ্রাফার | @tauhida |
---|---|
ডিভাইস | samsung Galaxy s8 plus |
ধন্যবাদ
আমি তৌহিদা, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।বাংলাদেশে আমার জন্ম।আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। আমি বিবাহিতা, এক সন্তানের মা। আমি রান্না করতে ও খেতে ভালোবাসি,আমি ঘুরতেও অনেক ভালোবাসি। |
---|
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হচ্ছে রাঙ্গামাটি। আপনি রাঙ্গামাটি ভ্রমণ করেছেন দেখে খুব ভালো লাগলো। উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজে গেরা বিস্তৃত অঞ্চল দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। ফটোগ্রাফি গুলো অনেক দুর্দান্ত হয়েছে। এত সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
ঠিকই বলেছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে হলে রাঙ্গামাটি অবশ্যই যেতে হবে। সময়টা অনেক ভালো ছিল। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
রাঙামাটির এলাকাটি আমার খুবই পছন্দের একটি জায়গা। বেশ ভালই মুহূর্ত কাটিয়েছেন দেখছি।আমিও তো ঠিক আপনাদের মত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যখন আপনি গুহার কথা বললেন।এটা কিন্তু বেশি দারুন একটি দরজা দিয়ে ঢুকে আরেকটি দরজা দিয়ে বের হওয়া। সত্যি এরকম জায়গায় ঘুরতে কার না ভালো লাগে। খুব সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফিও করেছেন দেখছি বেশ ভালই ছিল ফটোগ্রাফি গুলো। অসংখ্য ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
রাঙামাটি শহরটি আমার অনেক পছন্দ হয়েছে, এতটা ভালো লাগবে বুঝতে পারিনি। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
আমি বেশ কয়েকবার রাঙামাটি ঘুরতে গিয়েছিলাম যা আমার খুবই পছন্দের একটি জায়গা। এই জায়গাটিতে ঘুরতে কিন্তু বেশ ভালোই লাগে। আপনিও বেশ ভালো ইনজয় করেছেন রাঙ্গামাটি ঘুরতে গিয়ে তা আপনার পোস্টগুলো পড়ে বুঝতে পারলাম। মুরুব্বীরা এমনিতেই কোথাও যেতে পছন্দ করে না তাদেরকে জোর করে রাজি করাতে হয়। অবশেষে রাজি হলো এটা জেনেই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
ঠিকই বলেছেন আপু এই জায়গাটিতে ঘুরতে আমারও অনেক ভালো লেগেছে। খুব সুন্দর একটি জায়গা ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মতামত দেওয়ার জন্য।
রাঙ্গামাটি শুনেছি খুব সুন্দর এলাকা। রাঙ্গামাটি আমার কখনো যাওয়া হয়নি। যাক আপনারা চার দিন রাঙ্গামাটিতে কাটিয়েছেন। প্রথম তিনদিন সমুদ্রে কাটিয়েছেন। আপনার ফটোগ্রাফি দেখে বোঝা যাচ্ছে রাঙ্গামাটি পার্কে খুব সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছেন। গুহার কথা শুনে আমারও অনেক ইন্টারেস্ট লাগলো। পরে বুঝতে পারলাম এটা একটি গুহার মতো করলো। ধন্যবাদ আপনাকে খুব সুন্দর মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
কখনো যাননি আপু সময় করে অবশ্যই একদিন চলে যাবেন ভালো লাগবে। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।