★প্রতারণার অদ্ভুত কৌশল★10%shy-fox
আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ভাল আছেন নিশ্চয়ই। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আজ আমি আপনাদের সামনে একটি ভিন্ন ধরনের ব্লগ নিয়ে হাজির হয়ে গিয়েছি। আমাদের কমিউনিটিতে এ ধরনের লেখা পোস্ট অনেকেই করে থাকে তাই আমিও আজ ১০-১২ বছর আগের একটি ঘটনা নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। অনেক আগের এক রহস্যময়ী ভিক্ষুক নিয়ে আমি আমার কাহিনীটি লিখব। এটি অনেক আগের ঘটনা ভালো করে মনেও নেই, তারপর যতটুকু মনে আছে ততটুকু আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
অনেকদিন আগে আমাদের বাসায় একটি মহিলা ভিক্ষুক এসেছিল। তখন আমাদের বাসায় মিস্ত্রিরা কাঠের কাজ করছিল। এজন্য বাসার গেট খোলাই ছিল। সেই সুযোগে ভিক্ষুক মহিলাটি গেট খুলে আমাদের বাসার বারান্দায় চলে আসে। মহিলাটি খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। সে কোন রকমে এসে বারান্দায় ঠাস করে বসে পরে। তারপর সে আমার আম্মার কাছে খাবার জন্য ভাত চায়। আম্মা মহিলাটির ওই অবস্থা দেখে প্লেটে করে এক প্লেট ভাত খেতে দেয়। তখন মহিলাটি কিছু সময় বসে থেকে আস্তে আস্তে ভাত খাওয়া শুরু করে। সে কয়েক লোকমা ভাত মুখে দেয়ার পরে আর ভাত না খেয়ে বসে থাকে। তখন আম্মা মহিলাটিকে জিজ্ঞাসা করে কেন খাচ্ছ না। তখন মহিলাটি হঠাৎ করে আম্মার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে তোর সামনে অনেক বিপদ। এটা শুনে আম্মা একটু ভয় পেয়ে যায়। তখন আম্মা জিজ্ঞাসা করে বিপদ মানে কেমন বিপদ? তখন সে বলে যে তোর একটা ছেলে আছে সেই ছেলেটার সামনে অনেক বিপদ। এটা শুনে আম্মা কিছুটা ঘাবড়ে যায় কারণ সে কিভাবে জানলো আমার ছেলে আছে। তখন আম্মা আবার জিজ্ঞাসা করে কেন তুমি এই কথা বলছ? তখন সেই মহিলা বলে আমি দেখতে পাচ্ছি তোর সামনে অনেক বিপদ আছে। তখন সে আম্মাকে বলে যে আমার কথামতো কাজ করলে তোর বিপদটা কেটে যাবে। তখন জানিনা মহিলাটি আম্মার সাথে কি করেছে মহিলাটি যাই যা বলছে আম্মা ঠিক সেই মতোই কাজ করছে।
তখন মহিলা আম্মার হাতে একটি কাগজ দিয়ে বলে যে কাগজটা মুঠ করে ধরে রাখবি ছাড়বি না। আম্মা কিছু সময় মুঠ করে ধরে রাখার পর কাগজ গরম হয়ে ওঠে তখন কাগজটা ছেড়ে দেয় তখন মহিলা বলল যে তুই ধরে রাখতে পারলি না। আম্মা বলে এখন কি করতে হব। তখন আবার বলে ঘর থেকে তিন চার মুঠ চাল, একটা গামছা ও একটা বালতিতে করে একটু পানি নিয়ে আয়। আম্মা তখন ঘরের ভিতরে সেগুলো আনতে গেল। তখন আমার বোন ভেতর থেকে দেখল যে আম্মা এগুলো নিয়ে বাইরে যাচ্ছে। তখন জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে। আম্মা তখন ওকে বলল ও দেখতে গেল। তখন ও মহিলার সামনে গিয়ে মহিলা যা বলছে ও আম্মার সাথে সাথে সেই কাজটাই করছে। মহিলা তখন ওই চাল আর গামছাটা হাতে নিল। সে তখন চালগুলো গামছার সাথে পেঁচিয়ে দিয়ে বলল যে আড়ালে গিয়ে এই বালটির পানির ভিতরে গামছাটা ভেজাবি একটা চমক আছে। আম্মা আর আমার বোন মহিলার কথা মত ঠিক তাই তাই করার চেষ্টা করল। যখন ওরা গামছাটি নিয়ে পানির ভেতরে ভেজালো তখন সাথে সাথে গামছাটির সাথে আগুন ধরে গেলো। আর ওরা ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গেল ওটা মহিলা দেখে বলল যে পারলিনা তোরা ধরে রাখতে তোদের বিপদ আছে। তখন ওরা এই আগুন ধরা দেখে আরো ঘাবড়ে গেল। মহিলাটি তখন বলল যে তাহলে আমাকে কিছু টাকা দে সেই টাকা দিয়ে আমি আজমীর শরীফ গিয়ে ১০-১২টা কোরআন শরীফ কিনে কিছু লোককে দিব। তখন আরো একটা কাগজ দিয়ে বলল যে এটা বিছানার নিচে রাত্রে রেখে দিবি কাউকে কিছু বলবি না।
ওই সময় আমাদের বাসায় কোন পুরুষ ছিল না, আমিও বাসার বাইরেই ছিলাম আর আমার বোন যখন বসে বসে মহিলার কথাগুলো শুনছিল ঠিক তখনই আমি বাইরে থেকে বাসায় আসলাম। এসে দেখি ওরা কেমন একটা মহিলা সামনে এভাবে বসে আছে আমি তখন জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে। তারপর আমাদের বাসায় যে মিস্ত্রিরা কাজ করছিল তারাও চলে এসেছে। ওগুলো দেখে মহিলাটা কেমন যেন ইতস্ত করতে থাকে এবং সে লোকজন দেখে কোন কথা না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।ওদিন আবার ছিল আমার ভাইয়ের জন্মদিন বাসায় কিছু মেহমানও আসার কথা ছিল। তার কিছুক্ষণ পরে আমার বাসায় আমার খালা আসে, সে এসে এসব কাহিনী শুনে বলে সে নাকি আসার সময় রাস্তার পাশে আমার মামার বাসা ছিল সেখানে দেখে এসেছে আমার মামি একটা মহিলার সাথে বারান্দায় বসে কথা বলছে। এটা শুনে আমরা বুঝতে পারলাম যে ওই মহিলা নিশ্চয়ই আবার সেই বাসায় গিয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি করে আবার আমার মামার বাসায় গিয়ে দেখলাম যে ওই মহিলা মামির সাথে ঠিক একই কাজই করছে। আমাকে দেখে মহিলা চিনতে পারে সে তার কিছু সময় পরে ওখান থেকে চলে আসে। সে মামীকেও ঠিক একই একই কাজ করতে বলেছে এবং মামীকেও একটা কাগজ দিয়েছিল। কিন্তু মামী সে কাগজের কথা কাউকে বলেনি আমরা যখন বললাম তখন বলল যে আমাকেও দিয়েছিল। আমরা তখন ওই মহিলাটিকে আশেপাশে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করি কিন্তু আর কোথাও পাইনি। ওই মহিলাটিকে আর কোথাও কোনদিনও দেখিনি।
এ ধরনের গল্প ছোটবেলায় আম্মার কাছে অনেক শুনেছি। মহিলারা এসে নাকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য সহযোগিতা চায়। বিশেষ করে গ্রামে তখন বাসায় যদি কোন পুরুষ মানুষ না থাকে। সেই সুযোগে মহিলারা বাড়ির মহিলাদের কোনভাবে বশ করে তাদের গহনা গাটি সবকিছু চুরি করে নিয়ে যায়। এটা নাকি বাস্তব ঘটনা। ওইদিন আমাদের বাসায় এসেছিল তবে লোকজন থাকার কারণে হয়তোবা আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম। এই কাহিনীটা আমার জীবনে প্রথম ঘটেছিল প্রথম আমি দেখেছিলাম এজন্য হঠাৎ করে মনে পড়ায় আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
আশা করছি আমার আজকের এই ব্লগটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ
আমি তৌহিদা, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।বাংলাদেশে আমার জন্ম।আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। আমি বিবাহিতা, এক সন্তানের মা। আমি রান্না করতে ও খেতে ভালোবাসি,আমি ঘুরতেও অনেক ভালোবাসি। |
---|
ওই দিনটার ঘটনা এখনো আমার মনে পড়ে। সত্যি কি বোকাই না ছিলাম । কিভাবে হিপনোটাইজ হয়ে গিয়েছিলাম । মনে করেছিলাম সত্যি যেন অদ্ভুত কোন একটা ঘটনা ঘটবে । যা বলছিল বোকার মত তাই বিশ্বাস করছিলাম । আর তাই করে যাচ্ছিলাম । সবাই এসে পড়াতে ভুলটা ভেঙে গেল । ধন্যবাদ পুরনো ঘটনা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ।
ঠিকই বলেছেন আপু এরকম বোকামির কারণেই তো মানুষ তার সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। আসলেই সেদিনটার কথা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়।
আপনার পুরো গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে আপনি শিক্ষনীয় একটি গল্প আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আমাদের সমাজে অনেক সময় দেখা যায় এই ধরনের প্রতারণা শিকার হয় । বিশেষ করে মহিলারা অনেকে সাহায্যের জন্য এসে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে থাকে। আমাদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
আগেকার দিনে এরকম ঘটনা গ্রামাঞ্চলে প্রায়ই সোনা যেত এখন আর সেরকম শুনি না। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
আমাদের সমাজে এরকম কিছু মানুষ থাকে সহজ সরল মানুষদের কে বোকা বানানোর ধান্দা, এরকম দুর্ঘটনা আমার নিজের পরিবারের সাথে ঘটেছে অনেক বছর আগে, সেখানেও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি কিন্তু ক্ষতি হওয়ার পথে ছিল। আপনার ঘটনাটি পড়ে আমার সেই ঘটনাগুলো মনে পড়ে গেল।
গ্রামাঞ্চলে এরকম ঘটনা মনে হয় প্রায় পরিবারেই ঘটে থাকে। আমরা শহরে ছিলাম তাই ঘটেছিল। ধন্যবাদ আপনাকে
জী আপু আপনি ঠিক বলেছেন,গ্রামের মানুষদের সহজ সরল পেয়ে অনেক সময় তাদের থেকে অনেক টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যায়। পুরুষ মানুষ থাকলে তারা এটা করতে পারে না। বাড়ির মহিলাদেরকে তারা সহজে বশ করতে পারে। এমন অনেক ঘটনা শুনেছি আপু। আপনাদের বাড়িতে মানুষ থাকায় আপনারা বেচে গেলেন। আপনার ঘটনাটা পড়ে নতুন একটি অভিজ্ঞতা হলো। ধন্যবাদ আপু।
তারা মনে করে যে মহিলাদেরকে তো অল্পতেই ব্ল্যাকমেইল করা যায়। তাদেরকে যা বলব তারা তাই বিশ্বাস করে বসে। এই জন্যই তো তারা মহিলাদের সাথে এরকম ঘটনা ঘটায়। ধন্যবাদ আপনাকে আমার গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
কি আর বলবো আপু, এমন ঘটনা আমার মায়ের সাথেও হয়েছে। একটু ভিন্ন ভাবে সেটা আবার। মায়ের থেকে সোনার চেন, এবং কানের দুল নিয়ে চলে যায়। ভালো যে আপনারা ঐ যাত্রায় বড় কোন বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। আমাদের গ্রামের বাড়িতেও এমন কান্ড শুনেছি। অনেক সোনা আর টাকা নিয়ে চলে গেছে। আসলে মানুষ কত ভাবে যে বাটপারি করতে পারে সেটা বলে শেষ করা যাবে না। এই বুদ্ধি গুলো যদি একটু ভালো কাজে লাগাতো তাহলে সবার কত উপকার হতো! ভালো লাগলো আপনার অভিজ্ঞতাগুলো জানতে পেরে।
আপনাদের কাছ থেকে তো নিয়ে গিয়েছিল। ভাগ্য ভালো যে আমাদের কাছ থেকে কিছুই নিতে পারেনি আমরা আগে টের পেয়ে গিয়েছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া ।
এরকম ঘটনা আমিও আমার আম্মুর মুখে শুনেছি আসলে আমি মনে করি এসব মহিলারা শুধুমাত্র আসে লুট করার জন্য। বিশেষ করে এরা মায়েদের উপর নজর রাখে কারণ তাদের কাছে তারা সন্তানের খারাপ কথা বলে আর মায়েরা সন্তানের খারাপ চায়না কখনোই। তাই তারা তাদের কথামতো কাজ করে কিন্তু তারা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে অনেক কিছু নিয়ে চলে যায় আসলে এরা একটা ভন্ড। বিশেষ করে যে বাড়িতে ছেলে মানুষ তেমন একটা থাকে না সে বাড়িতেই তারা বেশি হানা দেয়। আপনার গল্পটা পড়ে আমারও এরকম একটা গল্প মনে পড়ে গেল একদম ঠিক আপনার মতই। যাইহোক গল্পটা পড়ে খুবই ভালো লাগলো আপু।
জানে যে মা-দেরকে তাদের সন্তানের বিষয়ে কিছু বললেই তারা ঘাবড়ে যাবে এজন্য তারা ওই ব্যাপারটাই আগে তোলে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমার লেখাটি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।