বেইলি রোডের আগুনের ভয়াবহতা
আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ভাল আছেন নিশ্চয়ই। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আজকে আমি আবার আপনাদের সামনে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম । আজকে শেয়ার করব বেইলিরোডের আগুনের ভয়াবহতা । বেইলিরোড আমার বাসা থেকে একেবারে পাঁচ মিনিটের দূরত্ব । আমরা তো প্রায় প্রতিদিনই ওই এলাকা দিয়ে ঘোরাফেরা করি । আর যে বিল্ডিং এ আগুন লেগেছে সেই বিল্ডিং এতো আমরা কয়েকদিন পরপরই যাই । বিশেষ করে সেই বিল্ডিং এর খানাস নামে একটু রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানে তো আমরা খুব বেশি পরিমাণে যাই এবং সেখানকার লোকজনদের সাথে অনেক বেশি পরিচয় আমাদের ছিল । বেশ কয়েকদিন হল যাব যাব করে যাওয়াই হচ্ছিল না । এর ভিতর একদিন আমাদের যাওয়ার কথা ছিল পাশের বাসার ফ্যামিলিদের সাথে । তারপর হুট করে তাদের ফ্যামিলিতে একজন মারা যাওয়ার কারণে সেই যাওয়াটাও ক্যান্সেল হয়েছে । তারপরে আবার মার্চের দশ তারিখে আমরা ঠিক করে রেখেছি ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে আমরা দুই ফ্যামিলিতে গিয়ে কাচ্চি খাব ।
এখন তো কোন রেস্টুরেন্টে যাওয়ার নাম শুনেই আমার কাছে কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। ওই দিনও আমাদের কাচ্চি ভাইতে যাওয়ার কথা ছিল তবে কোন কারণে সেটা ক্যান্সেল হয়েছিল । একদিন আগে আমার বোন ওর ফ্যামিলি নিয়ে আমার এখানে এসেছিল তাদের ব্যক্তিগত কাজে । আমরা ওই দিনই বিকেলবেলা বাসা থেকে বের হয়েছিলাম এবং কাজটা শেষ করে আমরা বেইলি রোডে বসে ফুচকা খেয়েছি চিকেন চিকেন চাপ খেয়েছি । এরপর বাচ্চাদের জন্য টুকটাক খেলনা কিনে ওই বিল্ডিং এর সামনে দিয়ে আমরা হাঁটতে হাঁটতে বাসায় এসেছি । মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে বিল্ডিং টা পুড়ে একেবারে ছাই হয়ে গেল ।
আমরা যখন আসলাম বাসায় তখন বিল্ডিংটা একেবারে আলো ঝলমল করছে । বিশেষ করে ওই বিল্ডিংটা সব সময় লাইটিং করা থাকে আলো ঝলমল করে দেখতে ভালো লাগে । আর অনেক ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট হওয়ার কারণে ওখানে লোকজনের ভিড় সবসময় লেগেই থাকে । কে জানত এই দিন মানুষের জীবনে এরকম কাল নেমে আসবে । অনেকে আছে সেদিন যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তবে আর যায়নি ক্যানসেল করেছে আল্লাহ তাদেরকে হয়তো নিজ হাতে বাঁচিয়ে দিয়েছে । আমার পাশের বাসার মেয়েটাই তো সেদিন ওই রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়ার কথা ছিল ওর বান্ধবী ও তার মায়ের সাথে ।তবে বাবার সাথে রাগারাগি করে সেদিন ও যাওয়া ক্যান্সেল করেছে । কিন্তু তার বান্ধবী ও ওর বান্ধবীর মা গিয়েছিল সেখানে খেতে তারা আর বাড়িতে ফিরে আসেনি । ওই আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলে গিয়েছে । এরকম কয়েকটা পরিবার একেবারে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে সেদিনের সেই আগুনে ।
আমরা বাসায় চলে আসার পরে আমার হাজব্যান্ড আমার ছেলেকে নিয়ে বেইলিরোডে গিয়েছে ছোট্ট একটা কাজে ।ওদের আসতে দেরি হচ্ছিল দেখে আমি ফোন করেছি তখন সে বলল যে বেইলি রোডে কাচ্চি ভাইতে আগুন লেগেছে আমরা সেটা দেখছি দাড়িয়ে দাড়িয়ে । কিন্তু আমি তখনো ভাবতে পারিনি যে এতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে । আগুন লেগেছে হয়তো একটু পর নিভে যাবে কিন্তু সে আগুন যে এতটা হবে কে ভেবেছিল । কয়টা পরিবার একেবারে ওখানে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে । ছোট ছোট শিশুদেরকে নিয়ে অনেকে পুড়ে একেবারে কয়লা হয়ে সেখানেই পড়ে রয়েছে । মানুষের আহাজারি আমরা যেটা বাইরে থেকে সেটা বোঝার চেষ্টা করছি সেটা কখনোই আমরা বুঝতে পারবো না । তারপরও যারা এই অগ্নিকাণ্ডে স্বজন হারিয়েছে আল্লাহ যেন তাদেরকে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা দান করে ।
পরের দিন আমরা আবার বিকেল বেলা সেখানে গিয়েছিলাম দেখতে । সেটা দেখে একেবারে সহ্য করা যায় না । কি বিল্ডিং ছিল আর কতটুকু সময়ের ভিতরে সেটা পুড়ে ছাই হয়ে গেল । রাস্তার উপর দিয়ে অসংখ্য মানুষ এসে ভিড় করেছে এবং সাংবাদিকরা এসেছে ক্যামেরাম্যানরা তোদের ক্যামেরার ছবি তুলছে আর রিপোর্ট করছে । মানুষের জীবন মরণ ঘটে আর কিছু কিছু মানুষজন সুযোগের সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করে । শোনা গিয়েছে ওখানে একটা মোবাইলের দোকান ছিল সেখান থেকেও নাকি মানুষ অগ্নিকাণ্ড চলাকালিন চুরি করে মোবাইল গুলো নিতে এসেছিল ।আসলে এসব মানুষের বিবেক বলতে কিছু নেই । কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ তাদের স্বার্থ নিয়ে পড়ে থাকে ।
অন্য কোন ধরনের ক্ষতি হলে সেটার ভেতর থেকে হয়তো বা দুই একজন বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু যেখানে আগুন লাগে সেখানে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে যায় মানুষকে শেষ করে দিয়ে যায় যেটা আজকে একেবারে চোখের সামনে দেখতে পেলাম । এখন তো আমার কাছে রেস্টুরেন্টের নাম শুনলে আতঙ্ক লাগছে । আমাদের যদিও সামনে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার ইচ্ছা আছে তবে বেইলিরোডে কোন রেস্টুরেন্টে খুব সহজে যেতে পারবো কিনা জানিনা এখন রেস্টুরেন্ট বলতেই মনে হচ্ছে যেন আতঙ্ক ।
আশা করছি আমার আজকের এই ব্লগটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
ফটোগ্রাফার | @tauhida |
---|---|
ডিভাইস | samsung Galaxy s8 plus |
ধন্যবাদ
আমি তৌহিদা, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।বাংলাদেশে আমার জন্ম।আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। আমি বিবাহিতা, এক সন্তানের মা। আমি রান্না করতে ও খেতে ভালোবাসি,আমি ঘুরতেও অনেক ভালোবাসি। |
---|
@tauhida
*** VOTE @bangla.witness as witness OR SET @rme as your proxy
আমিও আগে এই বেলিরোডের এই দোকানগুলোতে যেতাম আমারও বেশ খারাপ লাগছে এই ঘটনা দেখে চোখের সামনে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সব শেষ হয়ে গেলো।মানুষ গুলো বাচার জন্য কতই না ছটপট করেছিলো।আসলেই মানুষ সুযোগ সন্ধানী মানুষ মারা যাচ্ছে আর তারা আসছে মোবাইল চুরি করতে।যাই হোক আসলে বাহিরে বের হওয়াটাই ুখন আতংক। ধন্যবাদ
কিছু কিছু লোকজন থাকে সুযোগ সন্ধানী যাই হোক না কেন তারা তাদের কাজ চালিয়ে যায়।
এই ঘটনাটি ঘিরে আপু আমরা সবাই খুব মর্মাহত হয়েছি। কতগুলো প্রাণ এভাবে ঝরে গেল। কত মা বাবা ভাই বোনের বুক খালি করে তারা চলে গেল। কারো মনে ছিল কত স্বপ্ন। কারো জন্য অপেক্ষা করছিল সামনে সুন্দর ভবিষ্যৎ। কেউ খাচ্ছিল,কেউ কেনাকাটা করছিল, কেউবা ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল ঠিক ওই মুহূর্তে যে, ঘটনাটা ঘটে যাবে কেউ কি ভেবেছিল যে,পৃথিবী ছেড়ে তারা এইভাবে বিদায় নিবে। কত না বাঁচার আকুতি এক একজনের চোখে মুখে ছিল।দোয়া করি পৃথিবীতে কাউকে যেন এভাবে জীবন হারাতে না হয়। আর যারা এই ঘটনাটি ঘিরে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে তাদের জন্য আমাদের সবার অন্তরের অন্তস্থল থেকে অনেক অনেক দোয়া রইলো। আল্লাহ পাক যেন মানুষগুলোকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছে দেন। ধন্যবাদ আপু মর্মান্তিক ভয়াবহতা নিয়ে আমাদের মাঝে পোস্ট করার জন্য।
আসলে সত্যি অনেক মর্মান্তিক ছিল । এখনো ওই এলাকায় গেলে পোড়া পোড়া গন্ধ আসে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে ।
সত্যি আপু অন্য কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তাবুও দু একজন বেঁচে যায় আর আগুন লাগলে বাঁচার সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না। আপনারা সেদিনও ওই ভবনটিতে গিয়েছিলেন জেনে সত্যিই অনেকটা ভয় লাগছিল। আসলে বিপদ কখনো বলে আসেনা। কার জীবন কিভাবে শেষ হয়ে যাবে এটা বলা খুবই মুশকিল।
আগুনে একেবারে কয়েকটা পরিবার নিশ্বাস করে দিয়ে গেছে । সত্যি ভয়াবহ ছিল সেই আগুনটা এখনো বিল্ডিংটার দিকে তাকালে ভয় লাগে।
এরকম ঘটনা দেখলে সবারই মনের মধ্যে একটি কষ্ট অনুভূত হয়। বেইলী রোডের এরকম একটি ঘটনা সকলের মনের মধ্যে একটি আলাদা কষ্ট দেয় যা বলে বোঝানো যাবে না৷ বেইলি রোডে এইরকম আগুনের ঘটনায় বাঁচার সম্ভাবনা একেবারে কম ছিল৷ অন্যান্য দুর্ঘটনায় কিছুটা বাচার সম্ভাবনা থাকে৷ তবে যদি আগুন লেগে যায় তাহলে সেখান থেকে বাচার সম্ভাবনা একেবারেই কম থাকে৷ যারা বেঁচেও যায় তাদেরকে সারা জীবন কষ্ট করতে হয় এবং আগুনে পুড়ে যাওয়ার ফলে তখন এতটাই কষ্ট হয় যা দেখে মনের মধ্যে একটি আলাদা কষ্ট সৃষ্টি হয়৷ এরকম আগুনের ঘটনা প্রতিনিয়তই শোনা যায় এবং এটি প্রতিরোধ করাতে আমাদের সকলের অবস্থান করা উচিত৷
এইবার আগুনে আর কেউ বেঁচে যাইনি সারা জীবন কষ্ট করা তো দূরের কথা সবাই মারা গেছে।
বেইলি রোডের আগুনের ভয়াবহতা আমি বিগত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে দেখছি আপু। সত্যি কথা বলতে অনেক বেশি খারাপ লাগছে সেই সব মানুষগুলোর জন্য, যারা শখ করে এখানে পরিবার নিয়ে খেতে এসে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। যাইহোক, আপনাদের যাওয়ার কথা থাকলেও আপনারা যাননি, হয়তো সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ ছিল আপনাদের উপর। যে পরিবারের মানুষ গুলো মারা গেছে, তাদের তো আর কোন কিছু দিয়ে ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। তাদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করার ভাষাও আমি হারিয়ে ফেলেছি এইসব ঘটনা শুনে।
মাঝে মাঝে ওই বিল্ডিংয়ে আমরা যেতাম খেতে । তবে এবার ভাগ্য ভালো দেখে আর সেদিন যাওয়া হয়নি গেলে হয়তোবা আর ফিরে আসতাম না ।
সেদিন তাহলে ভাগ্য আপনাদের সাথে ছিল আপু। ঐদিন অনেক মানুষের ভাগ্য তাদের সাথে ছিল না, যার কারণে না ফেরার দেশে চলে যেতে হয়েছে তাদের। 😭😥😔
সত্যি আপু সেদিনের ঘটনাটা সত্যিই ভয়াবহ ছিল। আমরা কিছু সময় আগেই ওখান দিয়ে এলাম তখন কিছুই বুঝতে পারলাম না ।কতটুক সময়ের মধ্যে কি হয়ে যায় আসলে মানুষ কিছুই বুঝতে পারে না ।সত্যি ঘটনাটা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে ওঠে। বেশ ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রথমে তো বুঝতেই পারিনি কতটা ভয়াবহ হবে পরে না হয় বুঝলাম । আগে জানতে পারলে হয়তো তখন গিয়েই দেখে আসতাম ।