★ছেলের স্কুলের প্রথম দিন★
আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ভাল আছেন নিশ্চয়ই। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব আমার ছেলের স্কুলের প্রথম দিনের অনুভূতি। দেখতে দেখতে স্কুলের দিন চলে আসলো এই দিনটার জন্য আমরা অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম। এতদিন আরাম করে ঘুমিয়েছি আজ থেকে আমার নতুন করে একটা ডিউটি শুরু হলো। ভালোই হলো সারাদিন ঘরে বসে থাকতে থাকতে আমি অনেকটা অলস হয়ে যাচ্ছি এখন থেকে বাইরে যাওয়ার এবং কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকার একটা সময় তৈরি হলো। তবে আর একটা দুঃখের বিষয় হলো যখন তখন আর ফরিদপুরে মানে বাবার বাড়িতে যেতে পারবো না। এখন যেতে হলে একটু বুঝেশুনে সময় বের করে তারপরে যেতে হবে। যথারীতি আজকে ৯ তারিখ স্কুলের প্রথম দিন ছিল আমরা আগে থেকে স্কুলের সব কিছু রেডি করে রেখেছিলাম। আর ওর স্কুল শুরু হয়েছিল সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে। যার জন্য আগের দিন রাতে তারাতারি ঘুমাতে যেতে কারণ ও সাধারণত দুইটা আরাইটার আগে রাতে কখনোই ঘুমায় না। পাশের বাসায় মানুষদের সাথে রাত একটা দুইটা পর্যন্ত আড্ডা না দিলে তার যেন চলে না। কালও তার আড্ডা চলছে এবং কে কে স্কুলে তার সাথে প্রথম দিন যাবে সেটা আগে থেকে ঠিক করে রাখা হয়েছে। পাশের বাসায় ভাই আগে থেকেই বলে রেখেছে আমি আমার ছেলের প্রথম দিন স্কুলে যাব। তারপর সেই হিসাব করে তাকে রাতের বেলায় ঘুমিয়ে দেওয়া হল। তারপরও অনেক লেট করে রাতে ঘুমালো। সকালবেলা দশটার সময় ওকে ডেকে তোলা হলো তারপর কোনরকম একটু হালকা খাবার দিয়ে স্কুলের জন্য রেডি করলাম। সে তো স্কুলের ইউনিফর্ম পড়ে খুবই খুশি হোয়াইট কালারের শার্ট তার অসম্ভব পছন্দ হয়েছে। শার্টের উপর কিছুতেই সোয়েটার পড়তে চাইছে না, তারপরও পড়ানো হলো।
এরপর আমরা রেডি হয়ে গেলাম স্কুলে যাওয়ার জন্য। পরে দেখি পাশের বাসার ভাই ও তার মেয়ে দুজনই যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে চলে এসেছে। তারপরে আমরা ১১ টায় বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। আমরা মোট পাঁচজন গেলাম আমি ছেলের বাবা পাশের বাসার ভাই ও তার মেয়েটা। পড়ে আমরা যখন স্কুলে গিয়ে পৌছালাম তখন দেখলাম যে একে একে সব বাচ্চারা স্কুলে ঢুকছে এবং স্কুলটাকে খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। আমার ছেলে খুব ইজিভাবে স্কুলে ঢুকল এবং সে বলেছে সে সুন্দরভাবে স্কুলে সবার সাথে বসে ক্লাস করবে । যথারীতি ক্লাস টাইমে সবাইকে ডেকে ডেকে ক্লাসে ঢোকানো হলো সুন্দরভাবে ছেলেটা ক্লাসে ঢুকে গেল। বিপত্তিটা ঘটল তার কিছুক্ষণ পরে দেখলাম যে একটা বাচ্চা কান্না করতে করতে বের হয়ে এসেছে আমি ভাবলাম অন্য বাচ্চা পড়ে তাকিয়ে দেখি আমার বাচ্চা কান্না করছে। সে কিছুতেই আমাদেরকে ছাড়া ক্লাসে বসবে না। তারপর আমি ও তার বোন দুজনে মিলে ওকে আবার ক্লাসে নিয়ে গেলাম। শুধু কান্না করেই যাচ্ছে কিছুতেই বসবে না। টিচার তখন বলল যে আপনারা সাথেই থাকেন অল্প কিছুক্ষণ পরে ওদেরকে গানের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে অন্য রুমে তখন ভালো লাগবে।
একটু পরেই দেখলাম যে সবাইকে লাইন ধরে পাশের ক্লাসে যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পিটি করানো হয় সেই রুমে নিয়ে আসলো। সবাইকে লাইন ধরে দাঁড় করানো হল। তারপর সে কিছুতেই দাঁড়াবেনা অনেক বলে দাঁড় করানো হলো। এখানে টিচাররা সবাই অনেক সুন্দর সুন্দর রাইমস ছড়া এবং জাতীয় সংগীত পড়ে শোনালো। তারপর বাচ্চাদেরকে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নিলো। এখানে একটা জিনিস আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে যে এখানে অনেকগুলো টিচার এবং সবাই খুব সুন্দর ভাবে একই কালারের শাড়ি পরে এসেছে। পরিপাটি হয়ে এসেছে দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। তারপর বেশ খানিকটা সময় এখানেই পার হয়ে গেল ছেলে এই সময়টাতে ভালোই ছিল। তারপর যখন ক্লাসে নিয়ে যাওয়া হল তখন সে কিছুতেই যাবে না পরে তার বোনকে নিয়ে সে ক্লাসে ঢুকলো এবং যতক্ষণ ছিল ও সাথে ছিল। ক্লাসে টিচাররা বাচ্চাদের সাথে পরিচিত হলো এবং কি করতে হবে সবকিছু বলে দিলে এবং মাঝখানে আবার গার্ডিয়ানদেরকে ডেকে বাচ্চাদের সাথে দেখা করিয়ে দিল। প্রথম দিন দেখে এটা করেছে পরের দিন থেকে এই নিয়মটা আর থাকবে না বাচ্চারা যার যার মত ক্লাস করবে। আমি তো টেনশনে আছি পরের দিন ক্লাসে বসবে কিনা কে জানে। শুধু ও না আরো কয়েকজন বাচ্চাকে দেখছি খুব কান্নাকাটি করছে এবং মারা সাথে করে নিয়ে বসেই আছে।
তারপর স্কুল যখন ছুটি হয়ে গেল তখন ওদেরকে একটি করে রজনীগন্ধার স্টিক ও কিটক্যাট চকলেট দিল সাথে একটি নোটিশ ধরিয়ে দিয়ে দিল। পরের দিন কি নিয়ে স্কুলে আসতে হবে সেসব জিনিস নোটিশে লেখা ছিল এবং আমরা স্কুল থেকে নোটবুক সংগ্রহ করলাম এবং ঢুকেই আগে বাচ্চার আইডি কার্ড নেয়া হয়েছে, যেটা ওর গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই আইডি কার্ডটি টেম্পোরারি। স্কুলের ড্রেস পরে সুন্দরভাবে ছবি তুলে সেই ছবি জমা দিলে প্রপার আইডি কার্ড তৈরি হয়ে যাবে। এবং আমরা স্কুল থেকে যাওয়ার সময় ছবিটা তুলে নিয়ে তারপর বাসায় গেলাম। এ ছাড়া আরও একটি বিষয় ছিল যেটা বাচ্চাদের স্কুল থেকে বলে দেওয়া হয়েছে। ওদের কোথা থেকে পেন্সিল রাবার এগুলো কিনতে হবে ওখান থেকেই কিনতে হবে। যখন সেটা কিনতে গেলাম দেখলাম যে ওরা সুন্দরভাবে প্যাকেট করে দিয়ে দিয়েছে। তবে দাম রেখেছে ৭০০ টাকা এই জিনিসটা আমার কাছে একটুও ভালো লাগেনি, কারণ বাচ্চার জন্য জিনিস আমরা যেখান থেকে ইচ্ছা কিনব কিন্তু সেটা না করে তারা বলে দিয়েছে এখান থেকেই কিনতে হবে। এখনকার দিনে স্কুলের এরকম একটা ধরা বাধা নিয়ম তারা করে দেয় যেটা আমরা করতে বাধ্য।
আশা করছি আমার আজকের এই ব্লগটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
ফটোগ্রাফার | @tauhida |
---|---|
ডিভাইস | samsung Galaxy s8 plus |
ধন্যবাদ
আমি তৌহিদা, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।বাংলাদেশে আমার জন্ম।আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। আমি বিবাহিতা, এক সন্তানের মা। আমি রান্না করতে ও খেতে ভালোবাসি,আমি ঘুরতেও অনেক ভালোবাসি। |
---|
মাশাল্লাহ!পিচ্চিকে অনেক সুন্দর লাগছে ইউনিফর্মে।আমার নিজেরও প্রথম স্কুলের যাওয়ার দিনের কথা মনে পরে গেলো।বাবা আর আম্মুর সাথে গিয়েছিলাম।
ওর জন্য ভালোবাসা ও দোয়া রইলো,মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠুক।
একদম ঠিক বলেছেন ওদেরকে দেখে নিজেদের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায় । দোয়া করবেন ভাই আমার বাচ্চার জন্য। ধন্যবাদ আপনাকে।
বাবুর জন্য অনেক শুভকামনা রইল। ছোট বাবু তো তাই প্রথম প্রথম একটু ক্লাসে যেতে চাইবে না যখন মজা পাবে দেখবেন ওর আগ্রহ বেশি হবে।যাইহোক নতুন ডিউটি শুরু। সুখের দিন শেষ। ধন্যবাদ আপু ছেলের প্রথম দিন স্কুল যাওয়ার অনূভুতি শেয়ার করার জন্য।
এই কামনাই করছি আস্তে আস্তে যেন ঠিক হয়ে যায় স্বাভাবিক হতে পারে। ধন্যবাদ আপু আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
মাশাল্লাহ আপনার ছেলেকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। প্রথম প্রথম ছোট বাচ্চারা স্কুলে এরকমই করে। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। হয়তো একটু কষ্ট হবে প্রথম কয়েকদিন। এখনকার স্কুলগুলোতে এরকম বাধা নিয়ম আমার কাছে একদমই ভালো লাগেনা যে তারা যেখান থেকে যেটা কিনতে বলবে সেখান থেকে কিনতে হবে। যাইহোক আজ থেকে আপনার নতুন ডিউটি শুরু হল। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ঠিকই বলেছেন আমাদের জিনিস আমরা যেখান থেকে ইচ্ছা কিনব না তাদের ইচ্ছামত কিনতে হয় আর না কিনলেই তো সমস্যা। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
স্কুলের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা পড়ে ভালই লাগলো। আসলে প্রথম দিন তাইতো ভয় পেয়েছে। সেজন্য কান্নাকাটি করেছে। হয়তো ঠিক হতে ১০-১৫ দিন সময় লাগবে। তবে ক্লাসে মন বসানো সত্যি অনেক কঠিন ব্যাপার। আপনাকে বেশ কষ্ট করতে হবে এবং সাথেই থাকতে হবে। যখন অভ্যাস হয়ে যাবে তখন ধীরে ধীরে সবকিছুই বুঝতে শিখবে। যাইহোক আপু বাবুর ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক এবং সে একজন ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠুক এই কামনাই করি।
আল্লাই জানে কত দিন সময় লাগে তবে তাড়াতাড়ি যেন স্বাভাবিক হতে পারে এই দোয়াই করবেন। ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
আপু আপনার বাচ্চার প্রথম দিনের স্কুলে যাওয়ার অনুভূতি পড়ে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো। আসলে বাচ্চারা প্রথম দিন স্কুলে গেলে অনেক বাচ্চা এরকম কান্নাকাটি করে। আস্তে আস্তে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। স্কুলের সবগুলো জিনিসই ভালো লেগেছে তবে লাস্টের বিষয়টি আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগলো না ।তাদের নির্ধারিত জায়গা থেকে কেন পেনসিল রাবার কিনতে হবে? আমাদের যেখান থেকে ইচ্ছে সেখান থেকে কিনব ।এটা একটু বেশি হয়ে গিয়েছে। হয়তো এটার দাম বেশি রাখবে এই জন্য এটা করেছে। যাই হোক কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার উপায় নেই।হাত বাঁধা থাকে। ধন্যবাদ
অনেক বাচ্চারাই কান্নাকাটি করে দেখেছি কিন্তু আমারটা যে এভাবে কান্নাকাটি করবে এটা চিন্তাই করিনি। দেখি কতদিনে কি হয়। ধন্যবাদ আপনাকে।
মাশাল্লাহ স্কুল ড্রেস পরা দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে, আর প্রথম দিন অনুভূতি গুলো সুন্দর ভাবে আমার সাথে শেয়ার করলেন খুবই ভালো লাগলো। বাবুর জন্য শুভকামনা রইল এবং জীবনের নতুন অধ্যায় যেন অনেক ভালো হয় এই দোয়া করি।
ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্য করার জন্য । সব সময় দোয়া করবেন আমার ছেলেটার জন্য। ভালো থাকবেন।