পঞ্চম শ্রেণীতে আমাদের কয়েকজন বন্ধুর ভয়ংকর একটি দিন।steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রতিদিনের মত আজকেও আপনাদের সামনে এসে হাজির হলাম নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। যেটা আপনাদেরকে আগেও বলেছি এখন আমি একটু লেখার চেষ্টা করি। এইজন্য আমি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু স্মৃতি নিয়ে আবারো আসলাম আপনাদের মাঝে। প্রাইমারি স্কুল কিংবা হাই স্কুল বলেন সবারই বন্ধু এমনকি মজার ঘটনা আছে। কিন্তু আমি আজকে আপনাদের সাথে যে ঘটনাটি শেয়ার করব এটি আসলে আমরা নিজেরা মজা করলেও আমাদের জন্য ভয়ংকর একটা দিন ছিল।

2022-09-15-12-13-49-877.jpg

আমাদের প্রাইমারি স্কুল ছিল আমাদের বাড়ির একদমই সামনে। সব থেকে মজার ব্যাপার আমাদের বাড়িতে আমরা চারজন ছিলাম যারা বাড়ির মধ্যে চাচাতো জেঠাতো ভাই বোন। আমরা চারজন একই ক্লাসে এক স্কুলে পড়তাম। যখন আমরা ক্লাস ফাইভে উঠি। তখন আমাদের ক্লাসে ছাত্রছাত্রী ছিল একদম খুবই কম। মনে হয় ১০-১৫ জন এইরকম হবে। এর আগের ক্লাসে অনেকজন ছাত্রছাত্রীকে রেখে দেওয়া হয়েছিল রেজাল্ট খারাপ করার কারণে। কিন্তু এদের মধ্যে আমরা চার-পাঁচজন ছিলাম যারা লেখাপড়ায় ছিলাম সমান এমন কি স্কুলের যেকোনো কাজে সবকিছুতেই আমরাই ছিলাম প্রথম। এমনকি ক্লাস ফাইভের সবার মধ্যে পড়ালেখাও বেশিরভাগ আমরাই পারতাম।

আবার সব থেকে বেশি দুষ্টামি করা এমনকি স্কুলের যে কোন কাজ আমরাই ছিলাম সেরা। আমাদের স্কুলে হেড ম্যাডাম পঞ্চম শ্রেণীর বেশিরভাগ ক্লাস গুলো নিতেন। এমনকি আমাদের বারোটা থেকে ক্লাস থাকলেও 9 টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত উনি আমাদেরকে কোচিং করাতেন। একদিন আমাদের হেড ম্যাডাম আমাদেরকে বাংলা বিষয়ের একটা রচনা এবং পত্র পরীক্ষা নিবেন বলেছেন। মানে রচনা এবং পত্র আমাদেরকে বাড়ি থেকে পড়ে আসতে বলেছিলেন। তারপর একটা পেপার এর মধ্যে আলাদাভাবে এই পরীক্ষাটা নিবেন বলেছে।

জানিনা আমাদের মধ্যে সেদিন কোন শয়তানে ভর করেছিল। আমরা সবাই কিন্তু রচনাটা এবং পত্র দুটোই পারতাম। কিন্তু তারপরেও সবাই একজোট হয় একটা দুষ্টামি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। যেটা হল আমরা বাড়ি থেকে এক্সট্রা একটা কাগজের মধ্যে পুরো রচনা লিখে নিয়ে আসব। আর ম্যাডামে যখন পরীক্ষা নিবে তখন এখানে বসে বসে শুধুমাত্র পত্রটা লিখে দিব। আর কিছুটা সময় লিখছি এটা বলে হাত গুড়িয়ে গুড়িয়ে অপেক্ষা করব। তারপর কিছুক্ষণ পর লেখা শেষ বলে কাগজ জমা দিয়ে দিব।

যথারীতি আমরা আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী আগে থেকেই রচনা লিখে নিয়ে আসলাম। যেহেতু আমাদের ক্লাসের স্টুডেন্ট কম ছিল। এইজন্য ম্যাডাম আমাদেরকে আলাদা আলাদা বেঞ্চে বসিয়েছিলেন। তারপর পরীক্ষা নেওয়া শুরু করলেন। আমরা আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী পত্রটা সেখানে বসে লিখলাম। এরপর সবাই লেখার অভিনয় করতে শুরু করলাম। স্টুডেন্ট কম থাকার কারণে ম্যাডাম এই বিষয়টা খেয়াল করে বুঝতে পেরে গিয়েছে। এরপর আমাদের সবার কাছে এসে চেক করতে গিয়ে দেখে সবার লেখা কমপ্লিট। এত তাড়াতাড়ি কিভাবে সম্ভব।

তখন ম্যাডাম সবকিছুই বুঝতে পেরে গেছে। আমরা সবাই ধরা খেয়ে গেলাম। এরপর ম্যাডাম আমাদের সবাইকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। যেহেতু আমাদের বাড়ি একদম স্কুলের সামনে ছিল আমাদের সকলের অভিভাবকদের খবর দিল। মজার ছলে আসলে এটা এতদূর পৌঁছাবে আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। সবাই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমাদের সবার অভিভাবকরা আসলো। ম্যাডাম সকল অভিভাবক কে বলল আমরা কি কি করেছি। আমাদেরকে পরীক্ষা নিবে বলেছিলেন আর আমরা সবকিছু বাড়ি থেকে লিখে নিয়ে আসলাম। তারপর আমার এক বন্ধুর বড় ভাই মানে উনি আমাদের চাচাতো ভাই হয়। উনি লেখাগুলো দেখে বলে দিলেন ঠিক বলেছেন এগুলো আগের লেখা। এগুলো এখন কার লেখা নয়।

উনি আসলে কোন একটা পদ্ধতিতে এই বিষয়টা চেক করেছিলেন। যে কিনা এখনকার লেখা হলে শুধুমাত্র একটু সামান্য হাত দিয়ে ঘষলে কিছুটা হলেও কালি হাতে লেগে আসতো। যেহেতু এগুলো আগেই লিখে ফেলেছিলাম লেখাগুলোর সম্পূর্ণ খাতায় বসে গিয়েছিল। কিন্তু হাতে লেগে আসেনি। তখন সবাই মিলে আমাদেরকে অনেক বকাবকি করেছেন। এরপর আমরা সবাই একসাথে ম্যাডামকে সবকিছু খুলে বলি এটা আমরা মজা করার জন্য করলাম। কিন্তু আসলে আমরা পরীক্ষা দেওয়ার বিষয় সবগুলোই পড়া পারতাম। এমনকি আমরা সেদিন ক্ষমা চেয়ে বলেছিলাম যে আমরা এরকম আর কোনদিন করবো না। তারপর বকাবকি করে আমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন।

এরপর কিন্তু সত্যি আমরা কোনদিন এই রকম কাজ আর করিনি। এর জন্য ম্যাডাম আমাদেরকে প্র ায় অনেক ঘন্টা সময় দিয়ে পড়াতেন। এমনকি আমাদেরকে ভীষণ আদর করতে। আমরাও ম্যাডামের সেই মর্যাদা রেখেছিলাম। আমাদের বাড়ির চারজন আমরা সবাই ভালোভাবে পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা দিয়ে সরকারি বৃত্তি পেয়েছিলাম। এটা ছিল আমাদের একটা গৌরবের বিষয়।

আজকে এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে আবারো আসবো নতুন কিছু নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন।

আমার পরিচয়

1635518106012.jpg

আমার নাম তাসলিমা আক্তার সনিয়া। আমি বাংলাদেশী। বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা বলে আমি অনেক গর্বিত। আমি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের একজন ছাত্রী। আমি ছবি আঁকতে ভালোবাসি। বিশেষ করে যে কোন ধরনের পেইন্টিং করতে পছন্দ করি। যখনই অবসর সময় পায় আমি ছবি আঁকতে বসে পড়ি। এছাড়াও আমি ভ্রমণ করতে পছন্দ করি। কিছুদিন পর পর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করার চেষ্টা করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের কারুকাজ করতে পছন্দ করি। রান্না করতেও আমার খুব ভালো লাগে। আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে পছন্দ করি। আমি যখনই সময় পাই আমার পরিবারের সবাইকে বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করে খাওয়াই। আমি সব সময় নতুন নতুন কিছু করার চেষ্টা করি।

🎀 ধন্যবাদ সবাইকে 🎀

আসুন সবাই মন খুলে বাংলায় ব্লগিং করি

IMG-20220501-WA0005.jpg

Sort:  
 2 years ago 

আপনি খুব সুন্দর করে পঞ্চম শ্রেণীতে আপনাদের কয়েকজন বন্ধুর ভয়ংকর একটি দিন শেয়ার করেছেন। আপনার লেখাটি পড়ে খুব মজা লাগলো। বাড়ি থেকে প্লান করে চারজন মিলে রচনাটি দেখে নিয়ে গেলেন। এরপর পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা খেলেন। প্রথম ম্যাডামকে ধন্যবাদ দিতে হবে। আপনাদের অভিভাবকদের খবর দিয়ে বকা সকা করে ক্ষমা করে দিলেন। এরপর পঞ্চম শ্রেণীতে উপবৃত্তি ও পেলেন সরকারিভাবে। আর কখনো এই ভুল করেননি। সুন্দর করে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আসলেই এরকম ভুল আর করিনি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 64344.02
ETH 3142.36
USDT 1.00
SBD 4.01