"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩ || আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি
আসসালামু আলাইকুম
হ্যালো বন্ধুরা!
আমি @tashik121 বাংলাদেশের নাগরিক।
- স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি।
- ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
- বুধবার ।
কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি এখন। যদিও বা কিছুদিন আগে অসুস্থ ছিলাম! আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার স্কুল জীবনের ছোট্ট একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে যাচ্ছি! ঘটনাটি আমার সারা জীবন মনে থাকবে। চলেন আর বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক।😊
সময়টা ছিল ২০১৬ সাল। তখন আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। তখন আমার বয়স ছিল প্রায় ১৫ এর মত। পড়ালেখায় বেশ ভালো ছিলাম। আমি ছিলাম ক্লাসের সেকেন্ড বয়, মানে আমার রোল ০২ ছিল।
আমার বন্ধুর গ্রুপটা ছিল বেশ বড়। সবার সাথেই ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে আমাদের ৫-৬ জনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা ছিল বেশ গভীর। তন্ময়,আমিনুল, হিন্দু তন্ময়,শিহাব, প্রিন্স এবং আমি। এবারে বলা যাক আমাদের স্কুলের একজন রাগী স্যারের কথা, স্যারের নাম মোহাম্মদ কবির। তিনি বাংলাদেশ আর্মির রিটায়ার্ড অফিসার। বর্তমানে তিনি আমাদের স্কুলের শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। আমরা সকলেই তাকে অনেক ভয় করতাম। এবার গল্পের মূল কাহিনীটা শুরু করা যাক।
বছরের শেষের দিকে এসএসসি পরীক্ষার্থীর বিদায় অনুষ্ঠানের দিন। আমি এবং আমার বন্ধুরা সকাল সকাল স্কুলে চলে এসেছিলাম। সবাই অনুষ্ঠান পরিপূর্ণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আমাদের অডিটোরিয়াম এর স্টেজ খুব ভালোভাবে সাজানো হয়েছিল ফুল দিয়ে কারণ আমাদের বিয়ে অনুষ্ঠানে আমাদের এলাকার এমপি মহোদয় আসবে ।দিনাজপুর-৫ আসনের এমপি জনাব অ্যাডভোকেট মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। তাই সকলেই তাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য কাজে ব্যস্ত স্যার থেকে শুরু করে স্কাউট এর সকল ছাত্র-ছাত্রীরা এবং আমাদের ক্লাসের অনেক সহপাঠীরা। তবে আমার বন্ধু তন্ময় নতুন নতুন কার্ড (পাশ) খেলা শিখেছে! তাই তখন ওই সময় ক্লাসের মধ্যে কার্ড খেলার জন্য আমাদের সকলকে সে রিকুয়েস্ট করতেছে! তার আগ্রহ দেখে আমিও রাজি হয়ে গেলাম কারণ আমিও নতুন নতুন খেলা শিখেছি তার কাছ থেকেই! কার টা দুইজন মিলে খেলা যায় না তাই আমাদের বাকি চারজন বন্ধুকে রাজি করালাম। ছয় জন বন্ধু মিলে চলে গেলাম ফাঁকা একটা শ্রেণিকক্ষে। সেখানে শিক্ষকের যেই টেবিলটা থাকে শিক্ষকদের বেঞ্চ যেখানে বসে যে টেবিলের সামনে থেকে শিক্ষক আমাদের ক্লাস নিয়ে থাকে। সে টেবিলের সামনে আপনার চারজন চারদিকে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি তন্ময়,শিহাব এবং আমিনুর আর বাকি দুজন বন্ধু আমাদের খেলা দেখছিল। আমরা চারজন খুব মন দিয়েই খেলছিলাম। খেলার মাঝে কখন যে এমপি মহোদয় আমাদের স্কুলে ঢুকে পড়ে । তখন এমপি মহোদয় কে আমন্ত্রণ জানিয়ে আমাদের অডিটোরিয়ামে ঢোকানো হয় আমরা সে কথা বলতে পারিনা কারন আমরা তখন কার্ড খেলা নিয়ে ব্যস্ত। ওই সময় আমাদের ক্লাসের আমাদের একজন খারাপ বন্ধু আমাদের স্কুলের সেই রাগি স্যার কবির স্যারকে আমাদের কার্ড খেলার বিষয়টি জানিয়ে দেয়! আমরা যেই শ্রেণীকক্ষে কার্ড খেলছিলাম, সেই শ্রেণিকক্ষের সব দরজা জানালা বন্ধ করে রেখেছিলাম। বাহিরে কি হচ্ছিল সে দিকে আমাদের কোন খেয়াল নেই। আমাদের স্কুলের কবির স্যার বিষয়টি জানার পর অন্য আরেকটি স্যার কে নিয়ে সোজা চলে এলেন আমাদের সেই শ্রেণিকক্ষে, যে শ্রেণীকক্ষে আমরা চারজন বন্ধু মিলে কার্ড খেলছিলাম। আমাদের শ্রেণিকক্ষের দুটি দরজা ছিল একটি সামনের একটি পিছনে। কবির স্যার এবং অন্য আরেকটি স্যার পুলিশের মত স্টাইল নিয়ে দুই দরজা দিয়ে দুইজন স্যার ধীরে ধীরে প্রবেশ করল । স্যারদের দিকে আমাদের চোখ পড়া মাত্রই আমরা ছোটাছুটি শুরু করে দিলাম কার্ডগুলো নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলাম। আমাদের সকলের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল, হার্টবিট অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল, সবাই ভয়ে একদম শেষ! কবির স্যার প্রথমেই তন্ময় নামের আমার বন্ধুটাকে ধরে ফেলে। তাকে ধরেই কানের নিচে একটা থাপ্পড় দেয়! থাপ্পড় খেয়ে সে আরো ভয় পেয়ে যায় এবং কান্না কান্না ভাব নিয়ে স্যারকে বলে স্যার ভুল হয়ে গেছে স্যার! সবগুলো কার্ড জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়া সম্ভব হয়নি তাই কিছু কার্ড সহ স্যার আমাদেরকে ধরে ফেলেন সবাইকে। আমরা এতই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে আমাদের সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তখন কবির স্যার তন্ময়কে আরো একটা থাপ্পড় মেরে তার আব্বুর নাম্বার নিয়ে একটি খাতায় লিখে রাখে। তারপর আমাদের সবার নাম্বার আমাদের আইডি কার্ড দেখে লিখে নিয়ে আমাদেরকে শাসিয়ে
কবির স্যার চলে যায় ক্লাস রুম থেকে। সেদিন এমপি মহোদয় আমাদের বিদায়ী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায় আমাদের এই বিষয়টি নিয়ে আর কোনো বাড়াবাড়ি করা হয়নি । তখন আমরা সবাই ওই অবস্থায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বড় ভাইদের বিদায় জানিয়ে যে যার বাড়ি চলে যায়। তবে ভাই আমরা কেউ রাতে ঘুমাতে পারিনি না জানি কালকে কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য স্কুলে।
পরদিন সকালে যথাসময়ে আমরা সকল বন্ধু স্কুলে চলে যাই। স্কুলে আমরা ছয় জন বন্ধু এখনো ভয়ই আছি তবে কালকের তুলনায় পাওয়াটা একটু কম। প্রথম ক্লাসটা ভালোভাবে শেষ করলাম। তারপর ছয় জন বন্ধু মিলে ব্রেক টাইমে আলোচনা করছিলাম না জেনে কবির স্যার বিষয়টাকে কতদূর নিয়ে গেছে না জানি কোন কোন স্যার আমাদেরকে কত কি ভাবছে। তারপর দ্বিতীয় পিরিয়ডে আমাদের রানা স্যার আমাদের ইংলিশ ক্লাস নিচ্ছিলেন। রানা স্যার আমাদেরকে অনেক ভালো ছাত্র হিসেবেই চিনেন। তাই আমরা মন দিয়ে রানা স্যারের ক্লাস করছিলাম। ক্লাসের মাঝে রাগান্বিত মুখ নিয়ে আমাদের প্রধান শিক্ষক আমাদের ক্লাসে প্রবেশ করলেন, তারপর আমাদের নামগুলো একটি টোকেন দেখে বললেন এবং আমাদেরকে দাঁড়াতে বললেন। আমরা সবাই ভয় পেয়ে গিয়ে ক্লাসে দাঁড়াইলাম। তখন প্রধান শিক্ষক রাগান্বিত কন্ঠে আমাদেরকে গালিগালাজ করলেন এবং আমাদেরকে টিসি দেওয়ার হুমকি দিলেন বিদায় অনুষ্ঠানের দিন ক্লাস রুমে কার্ড খেলার জন্য। রানা স্যার বিষয়টি পুরোপুরি বুঝতে পারলেন কারণ প্রধান শিক্ষক তখন সংক্ষেপে রাগান্বিত কন্ঠে স্যারকে বিষয়টি বললেন। তারপর রানা স্যার আমাদের দিকে তাকিয়ে আমাদের মুখগুলো দেখে প্রধান শিক্ষককে বললেন স্যার এরা তো ক্লাসের অনেক ভাল স্টুডেন্ট এরা এমন করবে আমি ভাবতে পারিনি তবে মানুষ মাত্রই ভুল। বাড়ন্ত বয়সের এই ভুলটা করে ফেলছে আমি আপনার কাছে কথা দিচ্ছি পরবর্তীতে এরা এমন কোন ভুল করবে না। প্রধান শিক্ষক কোনভাবেই মেনে নিতে নারাজ। তিনি আমাদের অভিভাবক সহ আমাদেরকে তার কক্ষে করতে বলেন । এই বলে তিনি ক্লাস রুম থেকে বিদায় নেন।
তারপর রানা স্যার আমাদেরকে একটু শাসন করার পর আমাদেরকে একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিলেন। আমরা রানা স্যারের ক্লাস শেষ করে, রানা স্যারের বুদ্ধি অনুযায়ী ৬ জন বন্ধু মিলে প্রধান শিক্ষকের রুমে হাজির হইলাম কান্নাকান্না ভাব নিয়ে তারপর স্যারকে বললাম স্যার আমাদের ভুলে গেছে এমন বলার কোনদিনও করব না এ কথা বলেই সবাই মিলে প্রধান শিক্ষকের পা জড়িয়ে ধরলাম! তখন স্যার আমাদেরকে ক্ষমা করতে রাজি হলেন । তিনি বললেন ভবিষ্যতে যদি আমাদের নামে কোন কমপ্লেইন আসে , তাহলে আমাদেরকে সরাসরি টিসি দিয়ে দিবে! তন্ময় নামের বন্ধুটা, প্রধান শিক্ষকের পা ধরে কেঁদেই ফেলেছিল যার কারণে আমরা সবাই বেঁচে গেলাম। আমাদের বাসায় ব্যাপারটা জানাজানি হলে অনেক সমস্যা হয়ে যেত। আমাদের কোন অভিভাবক এই বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো কিছু জানে না। প্রধান শিক্ষকের রুম থেকে বের হয়ে আমরা অনেকটা স্বস্তি অনুভব করলাম আর বললাম যে বেঁচে গেলাম এই যাত্রায়। এবং সবাই মিলে রানা স্যারকে গিয়ে ধন্যবাদ জানাইলাম ।
image source
আজকে এই পর্যন্তই, জানিনা কতটুকু গুছিয়ে লিখতে পেরেছি।আমার বাস্তব জীবনের কাহিনীটি আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। 🙏
স্কুল জীবনে তিক্ত অভিজ্ঞতা অনুভূতিগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনি খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে আপনার ঘটে যাওয়া অনুভূতিগুলো প্রকাশ করেছেন। আসলে আপনার লেখনি খুব ভালো ছিল। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত কষ্ট করে আমার স্কুল জীবনের কাহিনীটি পড়ার জন্য।পরবর্তীতে আমার পোস্টগুলি আরো অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব ।😊
পোস্ট লেখার পরে সাবমিট করার আগে একবার ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে নেবেন। তাহলে এই ধরনের ভুল আর হবে না। আপনার এই পোস্টে প্রচুর পরিমাণে ভুল আছে। যদিও আপনার অভিজ্ঞতাটা পড়ে বুঝতে পারলাম যে আপনারা যথেষ্ট ভয় পেয়েছিলেন। ভুলের পরিমাণ বেশি হলে সেটা পোস্টের সৌন্দর্য নষ্ট করে।
আমি পরবর্তীতে চেষ্টা করব আমার পোস্টে কোনরকম কোনো ভুল না করার। আমার পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য এবং ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।😊