|| সুন্দরবন ভ্রমণ || ( দ্বিতীয় পর্ব )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সকলে ভালো আছেন। সুন্দরবন ভ্রমন কাহিনীর এটি দ্বিতীয় পর্ব। এই অরণ্য এলাকায় আমার নানাবিধ অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই পর্বে মূলত গোসাবা ও পাখিরালয় অঞ্চলের বিস্তর বর্ণনা থাকলো।

20220902_145008.jpg

সোনাখালি থেকে গোসাবার পথে যখন বোট ছাড়লো তখন বোটের ছাদেও একরকম গরমে আমরা সবাই অস্বস্তির মধ্যেই পড়েছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে যখন বোট এগোতে থাকলো, যখন আরো খানিক গভীরে চলে গেল বোট চারিপাশে যখন আর জনবস্তির দেখা নেই, কেবল দুধারে বিরাট জঙ্গল তখন দেখলাম গায়ে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে।

20220902_144953.jpg

কিছুক্ষণ পর আমরা বোটের ভেতরে চলে গেলাম সেখানেও দেখি এলাহি ব্যবস্থাপনা। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম যে বোটের ভেতরে হয়তো এমনি চৌকি পাতা থাকবে। ছোট ছোট চৌকি গা হেলান দেওয়ার মতো কিন্তু দেখলাম বড় বড় খাটের মতো বিছানা পাতা রয়েছে এবং উঁচু গদিতে ভরা। আমরা একেবারে জানালার গা ঘেষে সে খাটের উপর হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম।

IMG_20220902_121120.jpg

বোর্ড এগিয়ে যায়। বাতাস একটু একটু করে বাড়ে। আমরা নদীর ঢেউ আর বিশাল আকাশ দেখতে দেখতে এগোতে থাকি। তারপর দেখলাম হঠাৎ বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। এই বৃষ্টির আবহাওয়া আমাদের আরো ভালো লাগতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম আমাদের জন্য সাদা কাগজে মোড়া মাছ ভাজা চলে এলো। সুন্দরবন এলাকার মাছ। ভালো মশলা দিয়ে মাখানো এই মাছ ভাজা দুর্দান্ত স্বাদের। আমরা সকলেই সেই মাছভাজা খেতে খেতে পৌঁছে গেলাম গোসাবায়। যারা বয়স্ক যাত্রী ছিল তারা তো নামতে ভয় করে, তাদের হাত ধরে একে একে নামিয়ে দিলাম গোসাবার ফেরিঘাটে।

IMG_20220902_160408.jpg

সব থেকে ভালো লাগলো ট্রাভেল এজেন্সি দাদাদের। তাদের আতিথিয়তা আপনারও মন কেড়ে নেবে যদি একবার সুন্দরবন ভ্রমণ করতে আসেন। আমাদের বোটে বেশিরভাগই ফ্যামিলি ছিল। বিশেষত সিনিয়র সিটিজেন কাপল বেশি ছিল। বাড়িতে থেকে একঘেয়ে হয়ে যাওয়া এই বয়স্ক মানুষগুলো একটু নিরিবিলি সময় কাটাতে, একটু একঘেয়ে জীবন থেকে আরাম পেতে ভ্রমণে আসে আর এমতাবস্থায় যদি এমন আতিথেয়তা দেখা যায় তা সত্যিই মনকে ভরিয়ে দেয়।

IMG_20220902_122648.jpg

গোসাবা অঞ্চলে যা দেখাবার ছিল তার মধ্যে একটি হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেখম বাংলো। কবি একসময় জমিদারির খাতিরে এ সমস্ত এলাকায় আসতেন।
আরেকটি হল হ্যামিলটন সাহেবের বাড়ি।

গোসাবায় নেমে আমরা প্রথমেই চলে গেলাম রবি ঠাকুরের বেখম বাংলোয়। চারিদিক পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এই বাংলোটি বাহির থেকে তালা ঝোলানো ছিল। অতএব আমরা আর ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি। তবে বাইরে থেকে দেখতে পেলাম বহু পুরনো একটি বাংলো। সেই আমলের কারুকার্য এখনো দেখা যায়। রবি ঠাকুরের একটি বড় মূর্তি রয়েছে এবং ওপাশে একটা বড় পু। বাইরে থেকেই গোটা কয়েক ছবি তুলে আমরা হ্যামিলটন সাহেবের বাংলোর দিকে রওনা দিলাম।
পথে দেখি একটি ডাব-অলা ছড়ার মত করে দুটি কথায় আমাদের ডাব খেতে ডাকছে। আমরা সবাই ডাবের জল খেয়ে হ্যামিলটন সাহেবের বাংলোর কাছে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি তেমন কিছু নেই। কোন পাঁচিল দিয়ে ঘেরাও নেই। অনেকগুলো পায়ের উপর বাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে। তারপর একটা ছবি তুলে আমরা আবার ফিরে এলাম বোটে।

বোটে ওঠার পর আমাদের লাঞ্চের জন্য আহ্বান করল। মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন ছিল রাজকীয়। ভাতের সাথে ছিল সরষে ইলিশ, দই ইলিশ, ইলিশ মাথা দিয়ে কচু শাক, ডাল, আলুর চিপস, পাপড়, মিষ্টি। সমস্ত খাবার খুবই উচ্চমানের ছিল। আমরা দেখলাম খাবারের দিকটায় এরা একেবারে সক্রিয়। আপনি বোটের উপরে থাকুন বা ভেতরে থাকুন খাওয়া ঠিক সময় আপনার কাছে পৌঁছে যাবে। আর মাঝে মাঝে চা তো আসতেই থাকছে।
আমরা সকলে লাঞ্চ সেরে বোটের চেয়ারে বসে আযোয়ান চিবোতে লাগলাম। আর এভাবেই দেখতে দেখতে আমাদের লঞ্চ পৌঁছে গেলো পাখিরালয়ে।

IMG_20220902_122612.jpg

পাখিরালয় জায়গাটি বেশ সুন্দর। এখানেই আমাদের হোটেল। এই এলাকার মানুষ জন ফল-মূল মধু , মাছ বিক্রি করে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই জীবিকা চালায়। কেউ কেউ ছোট খাটো ব্যবসা করছে। কয়েকজন দু একটা কাপড়ের দোকান খুলেছে। তাছাড়া রয়েছে মুদির দোকান যা না থাকলেই নয়। মাছের বাজারে মাছের দাম খুব বেশি নয়। হরেক প্রজাতির মাছ ও কাঁকড়া রয়েছে বাজারে।

আমরা টায়ার্ড হয়ে গেছিলাম গোটা দিন ঘুরে। তাই তাড়াতাড়ি করে হোটেলে গিয়ে আমরা যে যার মতো হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ি।

Location

পাখিরালয়, গোসাবা
সুন্দরবন
পশ্চিমবঙ্গ

আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

@tarique52

Sort:  
 2 years ago 

কেবল দুধারে বিরাট জঙ্গল তখন দেখলাম গায়ে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে।

আমি তো ভাবলাম ভয় লাগতে শুরু করলো হা হাহা। ভাইয়া বেখম বাংলো,হ্যামিলটন সাহেবের বাংলোর গল্পই বললেন,ছবি তো দেখালেন না। এগুলো দেখার আফেসোস তো রয়েই গেল হা হা হা। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

প্রচুর ছবি রয়েছে। এখানে সাত খানা মত দিয়েছি। ফটোগ্রাফি পোস্ট এ সমস্ত ছবিই আপনাদের সাথে দেয়ার করবো। ধন্যবাদ দাদা মন্তব্য রাখার জন্য।

 2 years ago 

আপনার লিখাগুলো পড়ে,আমারই যেতে ইচ্ছে করছে।বোর্ডের ভিতরে বিছানা পাতা।ভাবতেই বেশ ভালো লাগছে।আর মাছ ভাজা গুলো বেশ মজার মনে হচ্ছে। আবার এত রকম খাবার নাম দেখেই লোভ হচ্ছে। আপনি ঘুড়ে টায়ার্ড হয়ে গেছেন,আমি মনে টায়ার্ড এই হতাম না😜😜

 2 years ago 

খুব ভালো কথা। ট্রাভেলের জন্য এমনই এনার্জি দরকার🤗। সুন্দর একখানা মন্তব্য রাখার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আপনার সুন্দরবন ভ্রমণের কাহিনী পড়তে আমার কাছে বেশ দারুণ লাগছে। আর গিয়েছেন ইলিশ উৎসবের জায়গাই দুপুরের খাবারে কয়েক পদের ইলিশ না থাকলে হয় হি হি। চমৎকার ভ্রমণ করছেন। হ‍্যামিলটন সাহেব নামটা কোথায় যেন শুনেছি মনে হচ্ছে।।

 2 years ago 

সুন্দরবন এলাকায় আজ থেকে একশো বছর পূর্বে এই হ্যামিল্টন সাহেব এসেছিলেন। তারই প্রচেষ্টায় সর্বপ্রথম এই এলাকায় দাতব্য চিকিৎসালয়, স্কুল ও মানুষকে বাঘের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নানান ব্যবস্থাপনা করেন।

 2 years ago 

ও আচ্ছা। ধন্যবাদ আপনাকে।।

 2 years ago 

সুন্দরবন ভ্রমণ পর্বের দ্বিতীয় পর্ব দেখে অনেক ভালো লাগলো। আর আপনি যেহেতু বলছেন ওখানকার আতিথিয়তা অনেক বেশি ভালো লেগেছে আপনার তাহলে নিশ্চয়ই একবার যাওয়া দরকার। কেননা অতিথি পরায়ন মানুষ আমার অনেক ভালো লাগে।। আসলে এই ব্যস্ততার রেস কাটাতে এরকম জায়গায় যাওয়া খুবই দরকার।

 2 years ago 

হ্যাঁ একেবারেই এদের আতিথেয়তা মন কাড়া। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য রাখার জন্য।

 2 years ago 

ভাই পোষ্টের পাশাপাশি আলোকচিত্র গুলোও আসাধারণ হয়েছে।আর বর্ণনা পড়ে মনে হচ্ছে আপনার সাথে আমিও ভ্রমণ করছি।পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

 2 years ago 

হ্যাঁ ভাই সুন্দরবন ভ্রমণের স্মৃতি স্বরূপ বহু আলোকচিত্র সংগ্রহ করেছি। ভালো লাগলো আপনার সুন্দর মন্তব্য খানা।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার সুন্দর মন ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্বটি পড়েই বুঝতে পারলাম ভ্রমণ করতে করতে আপনারা সবাই দারুন ভাবে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের বিবরণ গুলো পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে ভাইয়া। নদীর মাঝ থেকে তোলা বিশাল আকাশের ফটোগ্রাফি মুগ্ধ করেছে আমাকে। আপনার সুন্দরবন ভ্রমণ সফল হোক এবং শুভ হোক।

 2 years ago 

হ্যাঁ দাদা সত্যই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য টি রাখার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59446.26
ETH 2613.63
USDT 1.00
SBD 2.41